কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। প্রথম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। তৃতীয় পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। চতুর্থ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। পঞ্চম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। সপ্তম পর্ব ।।
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। অষ্টম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস ।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা ।। শামস সাইদ ।। নবম পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। এগারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। বারো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। তেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। চৌদ্দ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। পনেরো পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। কিডন্যাপ হলো চার গোয়েন্দা।। শামস সাইদ।। শেষ পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
বাবার সামনে থেকে চলে গেল অয়ন। বিষয়টা বন্ধুদের জানাতে হবে। মায়ের কক্ষে এলো ফোন নিতে। মা জানতে চাইলেন, কাকে আবার ফোন করিস?
মামাকে ফোন করব।
কিছু বললেন না মা। ভাবলেন মামার সাথে পরামর্শ করবে হয়তো। ওর মামা একটা পথ বের করে দিতে পারবে। খুব চিন্তা হচ্ছে তার। ছেলেটা কোন বিপদ টেনে আনল। কী হয় ভাবতে পারছেন না।
নিলয়কে ফোন করল অয়ন। চিন্তিত মুখে বলল, খারাপ খবর আছে নিলয়।
চমকে উঠল নিলয়। খারাপ খবর! কী বলছিস, কোথায় কী হয়েছে?
আমাদের গ্রামে একটা কালো গাড়ি ঢুকেছে।
কালো গাড়ি ঢুকেছে! এটা কেমন খারাপ খবর! কী সব বলছিস। মনে হ”েছ তোর মাথা ঠিক নেই। তারে প্যাচ লাগছে।
আরে পুরাটা শোন। অর্ধেক শুনেই কথার মেশিন চালু করে দি”িছস। ওটার ভেতর চারজন মানুষ ছিল। যাদের মুখ বাঁধা।
বুঝলাম মুখ বাঁধা। তাতে কী হয়েছে ? কালো গাড়ি বিস্ময়কর কিছু না! কতজনেরই তো আছে। তা নিয়ে এত ভাবছিস কেন? তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে অয়ন। বুঝতে পারছি! ঘিলু নড়ে গেছে হয়তো। কাজ হবে না ওটা দিয়ে। সকালে আসিস। ঠিক করে দেব। চিন্তা করিস না, ডানে বামে দুইটা থাপ্পড় মারব, সচল হয়ে যাবে। সামি ঠিকই বলে, অয়নের মাথার ফিউজ কেটে গেছে। আবোল-তাবোল বকে। এরপর হাসল হা হা শব্দ করে।
তেতে উঠল অয়নের মেজাজ। ধমকের সুরে বলল, আরে রাখ, কথা কম বলিস। বকবক করা অভ্যাসটা গেল না তোর। ফোনেও বকিস। সবাই সন্দেহ করছে গাড়ির ভেতর ওরা ছিল।
হঠাৎ নিভে গেল নিলয়ের হাসি। মুখে চাপল দুশ্চিন্তা। অস্থির কণ্ঠে বলল, কারা?
কঙ্কাল বাড়ির ওই লোকগুলো।
কী বলিস! ধাক্কা লাগল নিলয়ের বুকে। কণ্ঠে ভয়, আড়ষ্ট। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল, সত্যি বলছিস? না মজা করছিস?
তোর মতো গাধা না আমি। এসব নিয়ে কেউ মাজ করে?
ওরা আসবে কেন ?
জানি না। গাড়িটা কঙ্কাল বাড়ির দিকে গেছে। নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। হয়তো আবারো কঙ্কাল বানানো শুরু করবে। নাহয় আমাদের পিছু নেবে।
রাখ তুই। ওসব নিয়ে চিন্তা করিস না। একটা কঙ্কালও পাবে না। কবরের লাশও তুলে এনেছি। ফিরে যাবে খালি হাতে। তখন বুঝবে আমরা কি জিনিস।
আমার তো ভয় হচ্ছে।
তোর ভয় হচ্ছে! কী বলছিস। কেন ভয় হচ্ছে?
শুধু আমার না, বাবারও ভয় হচ্ছে। আমাদেরকে তুলে নিতে পারে। সাবধানে থাকিস। একা বের হইস না। দল বেঁধে স্কুলে আসিস।
অয়নের কথা কেয়ারই করল না নিলয়। হেসে উড়িয়ে দিল। তোর বাবাও ভয় পেয়েছে! হো হো করে হেসে উঠল এবার। তাহলে ভয়টা তোদের জিনগত। তোর বাবার থেকে তুই পেয়েছিস। রাখ তোর ভয়। এই সাহস নিয়ে বাঁচা যায় না। আগের অয়ন নেই তুই , পাল্টে গেছিস। কি”ছু করতে পারবে না ওরা। ওসব ভয়টয় রাখ। কালই ওসি সাহেবকে ডাকব। ব্যবস্থা নিতে বলব। নাহয় কঙ্কাল বাড়িতে যাব আমরা। দৌড়ানি দেব ওদের। পালানোর পথ পাবে না। সব পথ বন্ধ করে দেব।
নিলয়ের সাথে কথায় পারল না অয়ন। কোনো দিনই পারে না। হার মানতেই হয়। ফোন রাখল। ভাবল সামি, আবির ওদের ফোন করবে। আবার মনে হলো ওরাও হেসে উড়িয়ে দেবে। গুরুত্ব হারাবে তার কথা। তুড়ি মেরে বলবে, তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? ভীতুর ডিম। কাল স্কুলে হাসির হাট বসাবে। হাসতে হাসতে গলে পড়বে। সে হবে হাসির খোরাক। কিছুক্ষণ ভেবে ফোন করল না। তবে চিন্তাটা মাথা থেকে সরাতে পারছে না। বসেনি পড়ার টেবিলেও। ভাবল রেজা স্যারকে জানানো উচিত ব্যাপারটা। ফোন করল রেজা স্যারকে। ফোন ধরেই মৃদু হাসলেন স্যার। হ্যাঁ অয়ন, সব ঠিক আছে?
না স্যার, ঠিক নেই। একটা খারাপ খবর আছে। অয়নের কণ্ঠে আতঙ্ক।
চমকে উঠলেন রেজা স্যার। খারাপ খবর! কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললেন, কী খারাপ খবর?
কাঁপা গলায় অয়ন বলল, আমাদের গ্রামে একটা কালো গাড়ি ঢুকেছে স্যার। যাতে চারজন মানুষ ছিল। মুখোশ পরা। কঙ্কাল বাড়ির দিকে গেছে গাড়িটা। গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সবাই মনে করছে ওরা এসেছে।
কঙ্কাল বাড়িতে গিয়ে লাভ হবে না। কিছুই পাবে না। ওরা আবার ফিরে যাবে।
সেটা না স্যার।
তাহলে?
আমাদের তুলে নিতে পারে। সেটা ভেবেই সবাই আতঙ্কিত।
হঠাৎ অন্য চিন্তা চাপল রেজা স্যারের মাথায়। তুলে নিতে পারে! ধাক্কা লাগল তার বুকে। এভাবে ভাবেননি। হ্যাঁ, ওরা ছেড়ে দেবে না। ওদের আস্তানা ভেঙে দিয়েছেন তারা। সহজে তা মেনে নেবে এটা ভাবা ভুল। ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। কিছু দিন সাবধানে থাকো তোমরা। কাল স্কুলে আসো। ওসি সাহেবকে ফোন করব। এসব নিয়ে নতুন করে আলোচনায় বসব আমরা।
ফোন রাখল অয়ন। ভাবল নতুন কোনো আইডিয়া বের করতে হবে। এমন আইডিয়া যাতে সবাই চমকে যায়। দেখা যাক, স্যার কী বলেন। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তখন ডাকলেন মা। রাতের খাবার খেতে। অয়ন গেল খাবারঘরে। বাবাও এলেন। বাবার ভয় তখনো কমেনি। খাবার টেবিলে আবারও তুললেন সেই কথা। ওই লোকগুলো যদি আমাদের বাড়িতে আসে অয়ন। তখন কেমন হবে! আমার তো ভয় হ”েছ।
খাবার রেখে অয়ন তাকাল বাবার দিকে। কী হয়েছে বাবার আজ। ভুলতেই পারছে না ওদের কথা। মাথা নষ্ট হয়ে গেল নাকি! ওরা কেন আসবে আমাদের বাড়িতে?
মাও প্রশ্ন করলেন, কেন আসবে?
আসবে কেন বুঝতে পারোনি। আমাদের তুলে নেবে। হাত পা বেঁধে নিয়ে যাবে। মুখ আটকে দেবে প্লাস্টিক দিয়ে। কথা বলতে পারব না। তারপর কঙ্কাল বানিয়ে বিক্রি করে দেবে।
আতঙ্কে বড় হয়ে গেল মায়ের চোখ। খানিক পরে বললেন, কিসব বলছেন, জ্যান্ত মানুষ তুলে নিয়ে যাবে! কঙ্কাল বানিয়ে ফেলবে। মুখের কথা নাকি।
মুখের কথাই। কথা মুখেরই হয়। ইশারা হয় চোখের। ওরা সব পারে। চোখ তাড়িয়ে বললেন বাবা।
অয়ন কিছু বলছে না। ভাতও তুলছে না মুখে। কিছু একটা ভাবছে। মা তাকালেন অয়নের দিকে। মোতালেবের মতো ওদেরও ধরিয়ে দিতে পারলি না। সাপ মেরে লেজে বিষ রাখতে নেই। তোর মামা কী কইলেন?
মামাকে পাইনি। চিন্তা করো না। ওদের ছাড়ব না। এমন শিক্ষা দেব বাবার নাম ভুলে গিয়ে দাদার নাম বলবে।
বাবার খুব রাগ হচ্ছে। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মা ছেলের কথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ছে তার মাথায়। এতটা সাহস কোথায় পাচ্ছে এরা? ছেলেকে একটু শাসন করবে, তা সাহস জোগাচ্ছে। উৎসাহ দিচ্ছে। ধরিয়ে দিলি না কেন! রূপকথার গল্পের মতো ছেলে বলছে ওদের শিক্ষা দেব। তা শুনে আনন্দে নাচছে মা।
হঠাৎ একটা শব্দ থামিয়ে দিল সবার ভাবনা। খাওয়াও। শব্দটা গাড়ির। আর গাড়িটা অয়নদের বাড়ির সামনের রাস্তায়। বড় হয়ে গেল বাবার চোখ। নিশ্চয়ই ওরা এসেছে। রক্ষা হবে না আজ। ভাত রেখে উঠলেন। অয়নও আর খেল না। পেছনের দরজায় দাঁড়ালেন বাবা। ওরা এলে পালিয়ে যাবেন। তাছাড়া বাঁচার পথ নেই। মা বললেন, এখন বাইরে বের হওয়া যাবে না। দরজায় দাঁড়াতে পারে ওরা। খুললেই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়বে। তখন আর রক্ষা হবে না। সবাইকে তুলে নেবে।