কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। শেষ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব দুই
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চার
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পাঁচ পর্ব
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। দশ পর্ব
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব এগারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। বারো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব তেরো
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। পর্ব চৌদ্দ
- কিশোর উপন্যাস।। আলোর পথিক।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী।। শেষ পর্ব
ঠিক দু’ঘণ্টা পরই তারা মহাসড়কে রাখা গাড়ির কাছে ফিরে আসে। উদ্ধারকারীদের চোখ আনন্দে চকচক করলেও
অপহরণকারীদের চোখমুখে গাঢ় অন্ধকারের ছায়া। কান্টিবান্টি বাসায় ফিরে আসে।
আতিকন জড়িয়ে ধরে। তার চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে। কান্টিবান্টি বলল, জয়িতারই সব কৃতিত্ব পাওনা মা।
কাশেম পাটোয়ারীর মুখে হাসি। জয়িতাও হাসতে থাকে। দুপুরে খাবার দেওয়া হয়েছে টেবিলে। কাশেম পাটোয়ারী বললেন,
আজ আমরা সবাই এক সঙ্গে খাব। আজই প্রথম দিন ওরা চারজন এক টেবিলে খেতে বসেছে। খেতে খেতে কাশেম পাটোয়ারী বললেন,
তোমার আর বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি আর তোমার মাকে আমি তেতলার একটা ফ্ল্যাট খালি করে দিচ্ছি।
তোমরা সেখানেই থাকবে। আর তোমার নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে তুমি যদি মনে করো দেশের বাইরে যেতে,
আমি তোমাকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেব। কান্টিবান্টি বলল, মাকে ছেড়ে আমি আর কোথাও যাব না। আমি এখানেই থাকব।
তুমি ইচ্ছে করলে তোমার মাকেও নিয়ে যেতে পারো। না, আমি এখানে থাকব।
কাজটি করার জন্য মাঝে মাঝে আমাকে জয়িতার পরামর্শ নিতে হবে। ঠিক আছে, তোমার ইচ্ছেই চূড়ান্ত। তুমি এখানেই থাকো।
তবে আগামী মাস থেকে তেতলার ফ্ল্যাটে তোমরা থাকবে। আতিকন আমি তেতলায় থাকলেও জয়িতার দায়িত্ব আমার কাছেই।
আমি জয়িতা ছাড়া থাকতে পারব না। জয়িতা আপনার দায়িত্বেই থাকবে। আমাদের সৌভাগ্য যে,
আপনার মতো একজন বিদুষী মানুষ পেয়েছি। আতিকন বলল, আমাদেরও সৌভাগ্য যে, এমন একটি বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ের সঙ্গে থাকতে পারছি।
আর আপনার মতো এতো বড় মনের মানুষের দেখা পেলাম। আসলে আমার মেয়েকে ঘিরেই আমার জীবন।
ও যে এতো সুন্দর সুন্দর ধারণা মাথায় নিয়ে বসে আছে তা কি আর আগে জানতাম। জয়িতা একটু একটু হাসে।
এবার কথা বলল, বাবা, খালা আর আমাদের রান্নাবান্নার কাজ করবেন না। তিনি শুধু আমাকে পড়াবেন।
তিনি পড়বেন, আমি শুনে শুনে শিখব। কাশেম পাটোয়ারী বললেন, হ্যাঁ মা। আমিও তাই ভেবে রেখেছি।
উনি এখন থেকে তোমার জীবনের গাইড। আর রান্নাবান্না আর গৃস্থালী কাজের জন্য আমি অন্য কাউকে রাখব।
এ-রকম আলাপ-আলোচনা করে তাদের দুপুরের খাওয়া শেষ হয়। রাত থেকে কান্টিবান্টি কাজ শুরু করে। প্রোগ্রামিং করতে থাকে।
বারবার সে ব্যর্থ হচ্ছে। আবার শুরু করছে। এই কাজ তো সাধারণ কোনো কাজ নয়। বিভিন্ন বইপত্রও তাকে কিনতে হয়।
শেষ পর্যন্ত কান্টিবান্টি একটা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। শব্দের কোড তৈরি করে একটা রিডিং স্ক্রিন তৈরি করে।
এক গভীর রাতে কান্টিবান্টি এই কাজটি করতে পারে আর তখনই সে আনন্দে লাফাতে থাকে।
পরদিন জয়িতার সামনে ল্যাপটপ নিয়ে আসে। ডেকে আনা হয় কাশেম পাটোয়ারীকে। ডেকে আনা হয় আতিকনকে।
ড্রয়িং রুমে একটি কাচের রাউন্ড টেবিলের ওপর ল্যাপটপ রাখে। জয়িতার হতে দেওয়া হয় মাউস। সবাই জয়িতাকে ঘিরে বসে।
সবার চোখ কম্পিউটার স্ক্রিনে। অপলক। মাউস নিয়ে সে কম্পিউটারের বিভিন্ন মেন্যুতে যায় আর মেনুবারে শব্দ উচ্চারিত হয়।
মেন্যুবার পরীক্ষা করে জয়িতা ফেসবুকে লগইন করে। পুরনো পাসওয়ার্ড তার মনেই ছিল। চালু হয়ে যায় ফেসবুক।
বন্ধুদের নামের পাশে কার্সর রাখলেই নাম উচ্চারিত হয়। আর আনন্দে জয়িতার চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে।
জয়িতা ইংরেজিতে একটি স্ট্যাটাস দেয় যার বাংলা হলো, “প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা হয়তো অনেকেই জানো না যে,
সড়ক দুর্ঘটনায় আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলি। এখন আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাই এতো দিন ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাস দিতে পারিনি।
তোমাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আজকে আমি খুব আনন্দিত যে,
বিজ্ঞানী কান্টিবান্টি দৃষ্টিহীনদের জন্য ফেসবুক চালনার জন্য ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। তিনি কম্পিউটারে রিডিং স্ক্রিন তৈরি করেছেন।
এখন আমি তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব। সমস্ত শব্দের কোড এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চারিত হবে।
আমি শুনে শুনে তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবো। একা একা ফেসবুক চালাতে পারব।
”স্ট্যাটাস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত লাইক আর কমেন্ট পড়তে শুরু করেছে।
মনে হলো এক ঘণ্টার মধ্যে স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেকেই জয়িতা ও কান্টিবান্টির সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেছে। জয়িতাও উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
কান্টিবান্টি চেয়ে চেয়ে দেখছে। আনন্দে তার চোখ থেকেও পানি পড়ছে। কিছুক্ষণ পর জয়িতা চ্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানাল।
বেশ, একজন সুস্থ মানুষের মতই চ্যাটিং করে জয়িতা। কান্টিবান্টি পাশে বসে দেখছে। সব নির্ভুল।
শুধু একটি জায়গায় সমস্যা হচ্ছে, বাংলায় যাদের নাম লেখা সে নামগুলো পড়তে পারছে না।
এখানে ফনিটিক বিভ্রাট আছে। এই বিভ্রাট কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে চিন্তা শুরু করে দিয়েছে কান্টিবান্টি।
অনেকেই জানতে চেয়েছে, জয়িতা তোমার কম্পিউটার কি বাংলা রিড করতে পারে?জয়িতা উত্তর দেয়, না।
বাংলা রিড করতে পারে না। তবে এটাও চালু করতে পারব। তার বন্ধুরা লিখছে আমরা আনন্দে আত্মহারা।
বিজ্ঞানী কান্টিবান্টিকে আমাদের প্রাণঢালা অভিন্দন। কথা বলার জন্য অনেকেই জয়িতার টেলিফোন নম্বর চেয়েছে।
মনে হচ্ছে জয়িতার স্ট্যাটাসটি সারা পৃথিবীতে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে দুই হাজার লাইক পড়েছে।
ইংল্যান্ড থেকে একজন বিজ্ঞানী বললেন, আমি একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
আমি বিজ্ঞানী কান্টিবান্টি ও তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই। জয়িতা লিখেছে, অবশ্যই। আপনি আমাদের দেশে স্বাগতম।
এমন একটা ঘটনা ঘটাবে তা জয়িতা বুঝতে পেরেছিল। কান্টিবান্টি নির্বাক হয়ে শুধু কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল।
কাশেম পাটোয়ারীও নির্বাক। তার চোখ থেকে দরদরিয়ে পানি পড়ছে। এতো আনন্দ কোথায় রাখবেন তিনি।
আতিকনেরও একই অবস্থা। ফেসবুক এতো শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম! কী করে মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল।
তিনি ভেবে কূলকিনারা করতে পারেন না। দুনিয়া এতো এগিয়ে গেছে যা তিনি জানেন না। কাশেম পাটোয়ারীর বাসা যেন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।