ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব- ০২
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।।পর্ব বারো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চৌদ্দ
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পনেরো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের ।। পর্ব ষোল
নাস্তার পর এক এক ক’রে রুম্পা বাবা শম্পা বেরিয়ে যায়। মা থাকে বাসায়; কিন্তু কোথায় কোন কোণে কী কাজে ব্যস্ত, তার উপস্থিতি বােঝা যায় না। সারা বাড়ি ফাঁকা, অস্বস্তি লাগে ইস্তিয়াকের। আজ কি করে সারাদিন কাটাবে, তা এখন ও সে ঠিক করেনি। করেই বা কি, মন মতো তাে কিছুই এগােয় না। ড্রইংরুমে বসে সে কতক্ষণ খবরের কাগজ উল্টোয় পাল্টায়। ভালাে লাগে না তার, সবই তাে গৎবাঁধা এক ধরনের খবর। সে একবার ভাবে ভার্সিটির দিকে যাবে। ভর্তির পর দু’মাস চলে গেছে। তাদের ক্লাস এখনাে আরম্ভ হয়নি। ভার্সিটির দিকে গেলে খবর নেয়া যেত কবে নাগাদ ক্লাস আরম্ভ হতে পারে। এ পরিকল্পনা অবশ্য সে কিছুক্ষণ পরই বাতিল করে দেয়। কি হবে একা একা ভাসিটির দিকে গিয়ে? ওখানে কিছুই চেনে না সে। ভ্যাবা গঙ্গারামের মতো এদিক ওদিক করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। বন্ধুরা দল বেঁধে গেলে অন্য কথা। তাছাড়া ক্লাশ যখন আরম্ভ হওয়ার তখন আরম্ভ হবেই। এ জন্য আগ বাড়িয়ে খবর নেয়ার দরকার নেই। সে এমন কোনাে জরুলী বিষয়ও নয়। ক্লাস যদি কোনােদিন আরম্ভ না হয় তবেও তার কিছুই এসে যাবে না। তবে কি কোনাে বন্ধুর বাসায় যাবে সে এখন? কিন্তু এ ইচ্ছেটাও তার বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না। ভাবতে ভাবতে ইস্তিয়াক ঠিক করে তার চেয়ে বরং মাহমুদ চাচার ওখানে সে যাবে এখন। এখানে অবশ্য ছোট একটা সমস্যা আছে — মাহমুদ চাচা এখন ঢাকায় তাে? ইস্তিয়াকের অবশ্য সে রকমই মনে হয়; হ্যা, নিশ্চয় মাহমুদ চাচা এখন ঢাকায়। মাহমুদ থাকে গ্রামে। এক সময় ঢাকা শহরেই তার বসবাস ছিল। কিন্তু একাত্তরের পর টানা পাঁচ ছয় বছর চেষ্টা করেও এখানে সে স্হায়ী কিছু করতে পারেনি। শেষে এখানকার পাট চুকিয়ে ফেলে সে এখন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। মাঝে মাঝেই আসে ঢাকায়। ইতিয়াকের বাবা তার আপন চাচাতাে ভাই। কিন্তু ও বাসায় মাহমুদ ওঠে না কখনো। সে ওঠে হােটেলে। কিছু বন্ধু – বান্ধব তার ঢাকায়। কিন্তু কখনাে কাউকে জানায় না সে তার ঢাকা আসার কথা। চেনা- জানা মহল থেকে নিজেকে সে গুটিয়ে রাখে। শুধু ইস্তিয়াক কেমন কেমন করে যেন জেনে ফেলে তার ঢাকা আসার কথা।এই যেমন এখন ইণ্ডিয়াকের মনে হচ্ছে মাহমুদ চাচার হােটেলে খোঁজ নিলেই লাভ হবে। আর যদি নাই এসে থাকে চাচা, সে ভাবে, তাতে অসুবিধে কি, সে ঘুরে অন্য কোথাও চলে যাবে। মনস্থির করে সে আর অপেক্ষা করে না। পােশাক পাল্টে নিয়ে রাস্তায় নামে। রিক্সা ধরে সোজা চলে যায় মাহমুদের হােটেলে। আর কী আশ্চর্য, মাহমুদকে সে ঠিক ঠিকই পেয়ে যায়। হাসি ফোটে তার মুখে— ‘ঠিক জানতাম তুমি ঢাকায়।’ কিন্তু মাহমুদ তাকে দেখে যেন একটু অস্বস্তিতেই পড়ে। সেটা সে লুকোয়ও না। খুব সকালে সে কাজে বেরিয়েছিল। ফিরেছে এই একটু আগে। এমন নয়, এই মুহূর্তে একদম একা থাকতে চায় সে। তবে ইস্তিয়াককে নিয়ে ঝামেলা। কম বয়সী অপরিণত এই ছেলেটিকে সে কখনাে কখনাে বুঝতেও পারে না। শেষে সে একটু পর জিজ্ঞেসই করে বসে— ‘তুই এখানে কেন আসিস, বলতাে?’ এই অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে ইস্তিয়াক অবাক চোখে মাহমুদের দিকে তাকায়। সে ঠিক ধরতে পারে না এটা মাহমুদের স্রেফ প্রশ্ন না বিরক্তি। কিছু না বলে সে অপেক্ষা করে। ‘আর বলতো, আমি যে ঢাকা এসেছি— এ খবরই বা তুই পেলি কি করো?’ এবার হাসে ইস্তিয়াক— ‘তাতো আপনি না চাচা, কিন্তু কিভাবে যেন ঠিক বুঝে ফেলি। হয়তো আমার কোনাে সুপার- ন্যাচারাল পাওয়ার আছে।’ মাহমুদ রেগে যায়—‘ ওসব ফালতু কথা বলিস না আমাকে, কক্ষণাে না। এর আগেও তােকে বলেছি, আমি সুপার- ন্যাচারাল কোনাে কিছুতেই বিশ্বাস করি না। আর তােরা এ যুগের ছেলেরা— তােদের ধ্যান- জ্ঞান- মন সবই ঐ সুপার ন্যাচারালে আতুষ্ট, সীমাবদ্ধ।…..কিছু হবে কি করে?’ ‘তুমি কি হওয়ার কথা বলছাে?’ ‘কিছু না, তুই বুঝবি না।’ ‘বেশ। বুঝলাম আমি বুঝবে না। কিন্তু ঐ যে কথা— সুপার- ন্যাচারাল কোনো কিছুতে তুমি বিশ্বাস কর না; তবে তুমি কিসে বিশ্বাস করো?’ মাহমুদ কঠিন চোখ তুলে ইস্তিয়াকের দিকে তাকায়। না, ইয়ার্কি মারে নি, বােঝে সে, নিছক সরল একটা প্রশ্ন করেছে। এ ছেলেটাকে নিয়ে এটাইতাে ঝামেলা। চোখ সে নামিয়ে নেয়। ‘যা ঘটতে পারে’— বলে সে – আমি একটা ঘটনার সঙ্গে আরেকটা ঘটনার যােগসূত্রে, কার্যকারণ সম্পর্কে বিশ্বাস করি।….. একথা বােধহয় এর আগেও আমি তোকে বলেছি।’ইস্তিয়াককে উৎফুল্ল দেখার— ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি তাে এজন্যেই তােমার কাছে আসি। আমিও না আসলে ওসবই বিশ্বাস করি।…… কিন্তু চাচা, আমি যে একটা ঘটনার সঙ্গে আরেকটির যােগসূত্র খুঁজে পাই না!’ শেষ দিকে তার গলা নিরাশ শােনায়। কি বলে মাহমুদ, সে ছোট করে জানায়—’ পাবি, আরেকটু বড় হ। ইস্তিয়াকের পরণে গাঢ় নীল আমেরিকান জীনস। গেঞ্জিতে তার নাম লেখা। সে পা তুলে বসেছিল বিছানার ওপর। পা নামিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। পুরাে ঘর চক্কর খায় একবার। ঠিক মাহমুদের সামনে দাৃড়িয়ে বলে— ‘সমস্যা কি জান? বলতাে, ঘটনার পারস্পরিক সুত্র খুঁজে বের করতে আমাকে আর কত বড় হতে হবে? আমি যে ধরতেই পারি না কিছু। এভাবে চললে তাে একদিন হঠাৎ করে পুরাে বড় হয়ে যাব। আর দেখবাে— কিচছু আমি বুঝতে পারছি না, কিচছু আয়ত্তে নেই। ‘সেটা সমস্য বটে। তবে ধরতে – বুঝতে তুই – ই ঠিকই পারবি— তােকে শুধু একটু সচেতন আর সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে।’ইস্তিয়াক আড় চোখে তাকায়— ‘সংশ্লিষ্ট থাকা বলতে কি তুমি মিলেমিশে থাকার কথা বলছো?’মাহমুদ মাথা দোলায়– ‘হ্যাঁ, অনেকটা সে রকমই।’ ‘ধ্যাৎ’— ইস্তিয়াক সবেগে মাথা নাড়ে— ‘কার সঙ্গে মিলেমিশে থাকবাে আমি! যেমন ধরো, বাবার অনেক কিছুই বুঝি না আমি। তাই বলে কি বাবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে আমাকে? উহু, সেটা তাে সম্ভব নয়, হিজ আ পিকুলিয়র গাই।’ ‘তবু তুই কোনো না কোন ভাবে তোর বাবার সঙ্গে জড়িয়ে আছিস।.. আছিস যখন তখন চোখ – কান খোলা রাখলে নিজেই তাে দেখবি সবকিছু।.. এভাবেই হয়। ‘ইস্তিয়াক চোখ বড় বড় করে তাকায়— ‘তুমি মনে হয় বাবার বিরুদ্ধে আমাকে প্রভোক করছো?’মাহমুদ রেগে যায়— ‘তাের যদি তাই মনে হয় তবে আসিস না আমার কাছে। কেন আনিস? আমি তাে তােকে আসতে বলি না কখনাে।’ তুমি ক্ষেপে গেছ চাচা’– ইডিয়াক অনেকক্ষণ হাসে— ‘অথচ এতদিন ধরে তোমাকে দেখছি— তুমি ক্ষ্যাপা না কখনাে। শুধু বাবার কথা বললেই তুমি ক্ষেপে যাও।… কেন?’ মাহমুদ চুপ করে থাকে, একসময় বলে—’তাের বাবার কথা বললে আমি ক্ষেপে যাই এটা তুই কোখেকে আবিষ্কার করলি?’ ইস্তিয়াক অল্প অল্প হাসে— ‘আহ চাচা, সত্যি কথাটাই বলাে না। বলাে না কেন বাবার ওপর তোমার এতো রাগ!’ ‘ওসব আজে – বাজে কথা বাদ দে দেখি। তাের আম্মা কেমন আছে? রুম্পা-সম্পা?’ ‘সেটা তাে বলতে পারবাে না’— ইস্তিয়াক মাথা নাড়ে— ‘সেটা তো ওরা জানে। তবে তুমি যদি একান্তই আমার কাছেই জানতে চাও তবে বলবাে— গুড, ভালাে আছে ওরা।’ ‘এই না বললি তুই জানিস না। ওরা ভালাে আছে— এটা তাহলে বলি কি করে?’ একটু ভাবে ইস্তিয়াক— ‘আমি জানি মানুষ যে যার মতাে ভালাে থাকে। ওরা সেরকম আছে। না থাকলে আমার কিছু করার নেই।’ ‘কেন নেই’— মাহমুদ গম্ভীর গলায় জানতে চায়— ‘তুই না ও বাড়ির ছেলে।’ ‘তা ঠিক। তবে ভালো থাকার দায়িত্ব মানুষের নিজের।’ মাহমুদ অনেকক্ষণ ইস্তিয়াকের দিকে তাকিয়ে থাকে— ‘প্রচুর বোধ হয় মার্কিনী বইপত্র আর পত্রিকা পড়িস?’