উপন্যান।। ভালবাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। ভালোবাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব এক
- উপন্যাস।। ভালোরাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। ভালোরাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। ভালোবাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। ভালোবাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। ভালবাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব ছয়
- উপন্যান।। ভালবাসার লাল পিঁপড়ে।। আনোয়ারা সৈয়দ হক।। পর্ব সাত
না , সালমা তার স্বামীর সাথে ভাল ব্যবহার করে নি । হয়ত ক্লাসমেট বলে হাসানকে মনের গভীরে সে স্বামী বলে এখনো মেনে নিতে পারে নি । হাসানের সাথে তার গভীর বন্ধুত্ব হয়েছে ,পার্টনারশীপ হয়েছে ,কিন্তু হাসান স্বামী হয়ে ওঠে নি।
রাস্তা দিয়ে আপন মনে হাঁটতে লাগল সালমা । সে কোনো দিন বিয়ের পর মন দিয়ে সাজে নি। মন দিয়ে গহনাগাটি পরে নি। মন দিয়ে স্বামীর সাথে খুনসুঁটিও করে নি। এমনকী রাতের বেলা স্বামীর শরীরের সাথে লেপ্টে থেকেও ছাদের সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে ভেবেছে, অফিসের টেবিলে ডাটা শিট ফেলে এসেছে। অনেক জরুরি গোপন তথ্য সেখানে। উচিত ছিল ড্রয়ারে রেখে আসা। রাখতে ভুলে গেছে। আগামী কাল সকালেই ছুটতে হবে অফিসে। কেউ পৌছবার আগেই যেতে হবে। সরিয়ে রাখতে হবে কাগজটা। আবার কখনো বা ভেবেছে, ভোরে উঠে ডিপফ্রিজের ভেতর থেকে কিমাটা বের করে রাখতে হবে। নইলে ফিরুটা কখনোই মনে করে কাজটা করবে না। আর কিমা আগে থেকে মশলা মাখিয়ে ফেলে। রাখলে কাবাব খেয়ে কখনো স্বাদ পাওয়া যাবে না। হাসানের প্রিয় খাদ্য তালিকার ভেতরে কাবাব হল একটি। রাতে খেতে বসলে প্রায় সে কাবাবের খোঁজ করে। আর সালমা কখনোই কিমা সেদ্ধ করে নেয় না। তাতে করে নাকি কাবাবের ওরিজিন্যাল স্বাদ নষ্ট হয়। তাই অনেকক্ষণ মশলাপাতি দিয়ে মেখে রাখতে হয় কিমা। সালমার নিজের পদ্ধতিতে তৈরি করা কাবাব হাসানের প্রিয়।
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সালমার মন আবার ক্ষোভে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। সালমা যে। ব্যবহারই করুক সে কি জানত না যে সালমা তার নিজের পরিবারের সকলের অমতে হাসানকে বিয়ে করেছে? কেবলমাত্র হাসানের জন্যেই সে সামাজিকভাবে অনেক বেশি মর্যাদা সম্পন্ন পাত্রকে অবহেলা করেছে? আসলাম যে কথাটা বলার জন্যে আকুলি বিকুলি। করেছিল, সালমা ইচ্ছে করেই সে কথাটা শোনে নি কোনো দিন? আসলাম বারবার তার কাছে এসেছিল এবং বারবারই সে দু’হাতে ঠেলে ফেলে দিয়েছে তাকে?
হাঁটতে হাঁটতে ঘেমে যাচ্ছে সালমার শরীর। ঐ তো তার চোখের সামনে এ্যালিয়াস ফ্রাঁসে। ওখানে কতদিন সে আর হাসান লুকিয়ে বসে ফরাসি ছবি দেখেছে। দু’জনে লম্বা ঘরটার আধো অন্ধকারে বসে একজন আরেকজনের শরীরের উত্তাপ নিতে নিতে উপভোগ করেছে বিশ্বের চলচ্চিত্রে বিদগ্ধতার সৌরভ। মানুষের প্রেম আর মানবিক বোধকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে ফ্রান্সের মানুষ। ফ্রান্সের চলচ্চিত্রগুলো সালমার কাছে মনে হয়েছে শুধু সিনেমা মাত্র নয়, মানস – শিল্পও বটে। কতদিন ছবি দেখা শেষ হলে সে আর হাসান চুপ করে বসে থেকেছে হাত ধরাধরি করে। অথবা রিকশা করে দু’জনে চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে ঘুরেছে। একদিন এমনি ঘুরতে গিয়ে হাসান তার হাতে আলতো চুমু খেয়ে বলেছে, এখন থেকে তোকে আর তুই বলে ডাককবা না, তুমি। প্রেমে পড়ার পর ‘তুই’ ছ্যাবলার মত শোনায় । তারপর সালমার দু’কাঁধ জড়িয়ে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছে, তোমাকে ভালবাসি। তুমিও কি আমাকে? সালমা ওর কথা শুনে দুষ্টুমি করে বলেছে, পঁচিশ পারসেন্ট বেসেছি। এখনো পঁচাত্তর বাকি আছে।
উরে বাবা, পঁচাত্তর? সে তো অনেক। কবে সেটা হবে?
শিগগির মনে হচ্ছে।
দু সপ্তাহ?
না, একমাস।
সত্যি?
সত্যি।
তখন একশো পারসেন্ট ভালবাসবে?
আশা করছি।
আমি কিন্তু তোমাকে এখনই একশো বাসছি।
শুনে খুশি হলাম।
তাহলে খাই?
কী?
একটা চুমু। আমার দিক থেকে তো কোনো ফাঁক নেই।
এই কথা বলে সালমা বাধা দেবার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছে হাসান। আর কী ছাড়তে চায়! তার সে প্রেমবিধুর চেহারা এখনও চোখে ভাসে সালমার। হায়, সে তো বেশিদিনের কথা নয়। প্রেয়সীরা যখন স্ত্রী হয়ে যায় স্বামীরা কি সেসব স্মৃতি মুছে ফেলে মন থেকে?
তখন কি শুধু সকালে ঘুম থেকে উঠে সাজানো দেখতে চায় কেচে ইস্ত্রি করে তোলা শক্ত কলারের শার্ট , ফুটকি তোলা মেরুন রঙের টাই, পালিশ করা চকচকে জুততা আর গুছিয়ে রাখা টিফিনক্যারি? অপার্থিব প্রেম-ভালবাসা বস্তুর ভেতরে ঢুকে লাটুংরি মত ঘোরে? বেরুতে পথ খুঁজে পায় না?
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাল সালমার। আগুনের মত গরম সে পানি সেখানে শোকের চেয়ে উত্তাপ বেশি। একটা সামান্য কাজের ছেরি এতবড় মিথ্যে কথা বলার সাহস কোথেকে পেল যদি তার ভেতরে সত্যির ছিটেফোঁটাও না থাকে?
সালমার মাথাটা এখন দপদপ করছে। স্নায়ুকোষগুলো উত্তাপে ফুলে উঠছে ভেতরে, যেন। এক্ষুণি সেগুলো মাথার তালু ছিঁড়ে খুঁড়ে বেরিয়ে ছিটকে পড়বে রাস্তায়। সালমার চোখের সামনে তার জীবনের সবকিছু ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। নেমে আসছে গোল গোল ছায়া। খররৌদ্রে মিরপুর রোডের ওপর ছায়াগুলো এদিক ওদিক দুলছে। ওগুলো কি চলমান। মানুষ? আকাশে ওগুলো কী উড়ছে? ওগুলো চিল নাকি শয়তানের চোখ? হাসান কী করে এমন একটা কাজ করতে পারল? এরকম কুৎসিত একটি কাজের মেয়ের প্রতি সে আকৃষ্ট হলোই বা কীভাবে? ভার্সিটির বহু ছেলের বেশ্যাবাড়ি যাবার প্রবণতা থাকে। হাসান কি কোনোদিন বিয়ের আগে বেশ্যাবাড়িতে ঢু মেরেছে? সেখানে তো চেহারা বা শিক্ষার কোনো বালাই নেই। তবু তো ছেলেরা আকৃষ্ট হয়। পুরুষের আদিম প্রবৃত্তি তাদের ভেতরে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। হাসান কি তবে ফিরুকে বেশ্যাবাড়ির প্রতিনিধি হিসেবে ধরে নিয়েছিল? সেজন্যে কি সে গোড়াতেই সালমাকে নিষেধ করেছিল ফিরোজাকে বাসায় রাখতে?
বিকৃত মানসিকতাকে সে বাসায় দমিয়ে রাখতে পারবে না ভয়েই কি আগেভাগে সতর্ক হতে চেয়েছিল?
না,আর ভাবতে পারছে না সালমা। তার কানের ভেতরে কীসের যেন আওয়াজ হচ্ছে বুকে। হাতুড়ি পড়ছে দুমদুম করে। সালমা অনুভব করছে সে দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে ভেতরে। সেই ভাগগুলো আবার খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাচ্ছে। আবার জোড়া লাগছে। আবার খণ্ডবিখণ্ড। আবার জোড়া। সালমা নিজের ভেতরে অস্তিত্বের এক মহা সংকট অনুভব করছে। সালমা পাগল হয়ে যাচ্ছে।
আজ আর কাজে ফিরে যাবে না সালমা। সে আর কাজই করবে না। কাজ করলে তার সংসার থাকবে না। চাকুরিজীবী মেয়েদের স্বামীরা কি তাহলে এমনই? না, না চাকুরিজীবী মেয়েরা নয , শিক্ষিত মেয়েদের স্বামীরা কি এরকম? আসলে আদিমতা থেকে বেরিয়ে আসা এই সমাজের পুরুষ কি আদতে শিক্ষিত রমণী পছন্দ করে না? পুরুষের কি প্রয়োজন নেই শিক্ষিত, সংস্কৃত মনের স্ত্রী বা প্রেমিকার? পুরুষের কাছে একদলা অতি বিনীত মাংসের স্তুপই কি সব? পুরুষ নিজেকে কি এতই সুপিরিয়র মনে করে যে তারা রমণীদের সাথে বিদ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অপারগ? একমাত্র পুরুষই কি তাহলে অন্য পুরুষের বিদগ্ধতার সত্যিকার সহচর? আর নারী তার আদিম শয্যাসঙ্গী মাত্র?
হাঃ হাঃ হাঃ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বড় বড় করে শ্বাস ফেলতে লাগল সালমা। এখন সে কী করবে? বাসায় ফিরে যাবে? সেই বাসায় যেটা আর বাসা নেই। না কি আছে? বাসা তার বাসা হয়েই আছে। তারই শুধু মতিভ্রম হয়েছে। তাহলে সে কী করবে? ফিরোজার চুলের মুঠি ধরে কি বলবে, মিথ্যেবাদী বেরো আমার বাসা থেকে। এই মুহূর্তে বেরো। না, হিসেবে ঠিক মিলছে না। বের করলে সেই মুহূর্তে যেদিন ব্যাপারটা টের পেয়েছিল সেইদিনই করা উচিত ছিল। এখন টু লেট। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে যে হাসানের সাথে অনেকদিন ধরেই ফিরোজার সম্পর্ক চলছিল? হয়ত হাসান প্রতিরাতেই সালমা ঘুমিয়ে গেলে নিঃশব্দতার ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে উঠে যেত ফিরোজার কাছে। তখন তো হাসান আর এ জগতের নয়। হাসান তখন সাইকেডেলিক ধাধার ভেতরে ঘূর্ণায়মান একটি ছক। বারবার করে তৈরি হচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে, অপসৃত হচ্ছে, আবার ভেসে উঠছে। পর্দার কোণে। আবার তৈরি হচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে, অপসৃত হচ্ছে, আবার ভেসে উঠছে পর্দার অন্য আরেক কোণে। আর হয়ত এ জন্যেই ফিরোজা এত দুর্বিনীত। কথা শোনে না। বকা দিলে হাসানই এগিয়ে এসে বলে আহা, ছেলেমানুষ, একটু বুঝিয়ে বললেই করবে, এত রাগ করে না। অথবা বলে, তোমার বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে কাজের মেয়ের বিচার করো, কী ছেলেমানুষ তুমি শামু। হয়ত এজন্যেই যেদিন সকাল বেলা ফিরোজার ব্যবহারে রাগ করে সে গালে চড় মারে, সেদিন প্রচণ্ড রাগে ফুঁসে ওঠে ভেতরে। আর থাকতে না পেরে বলে দেয় বেলিখালাকে। কী সাহস মেয়েটার! টেলিভিশন তো নাড়াচাড়া করেই আবার টেলিফোনও করে। বেলিখালা ছাড়া আর কাকে কাকে ফোন করেছে মেয়েটা তা সালমা জানবে কী করে? এমন তো হতে পারে তাদের গ্রামের চেয়ারম্যানের কাছে ফোন করেছে। হয়ত চেয়ারম্যান এখন সলাপরামর্শ করছে গ্রামের মাতবরদের সঙ্গে। সেখান থেকে বিস্তারিত হবে পুলিশ এবং মাস্তানে। তারপর ঘুস, ব্ল্যাকমেইল, হুমকি কত কী। হায়, হাসান এটা কী কাজ করল। আর যদি এরকম কাজ নাও করে থাকে তাহলেই বা নিস্তার কোথায়। ফিরোজা যদি কোনো কারণে মিথ্যে বলেও থাকে তাহলেও বা এর প্রতিকার কী! একমাত্র ফিরোজাই বলতে পারে সে সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে। যদি সত্যি হয়, যদি সত্যিই হয় তাহলে হাসানের সাথে ঘর করা হয়ত সালমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই লুচ্চা স্বামী নিয়ে বসবাস সে করতে চায় না। হয়ত তিরিশ চল্লিশ বছরের দাম্পত্য জীবন হবে তার,
প্রতিদিন প্রতি আনন্দঘন মুহূর্তে মনে হবে, হাসান যে হাত কাজের মেয়ের বুকে রেখেছিল সেই হাত এখন তার বুকে রেখেছে।
ওয়াক করে উঠল সালমার ভেতরটা। এরচে অনেক ভাল হতো হাসান যদি তার কোননা। মেয়ে বন্ধুর গায়ে হাত রাখত। অনেকখানি সহনীয় মনে হতো। চেঁচামেচি করত, হৈচৈ করত কিন্তু নিজেকে ছোট মনে করত না। অনেক মেয়ে অবশ্য বলবে, বাইরের মেয়ের সাথে স্বামীর নটঘটের চেয়ে বাসার কাজের মেয়ের সাথে নটঘট হওয়া অনেক ভাল কারণ কোনো সাক্ষী প্রমাণাদি নেই, কিন্তু সালমার মন মানসিকতা সেইসব নারীর চেয়ে ভিন্ন।
এখন তাহলে কী হল? কাজের মেয়ের কাছে তারা দুজনে জিম্মি হয়ে গেল। এত সহজে দু’জন শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর জীবন উল্টেপাল্টে গেল। সামান্য একটা বক্তব্য, ব্যাস তাতেই তাদের প্রতিদিনের জীবনে জ্বলে উঠেছে তুষের আগুনের মত লুকিয়ে থাকা ক্ষোভ। এত সহজে যে এটা ঘটে যায় না ঘটলে বোঝা যায় না। সালমার জীবনের এই সংকটে বোধ করি সবচেয়ে খুশি হবে তার ভাবিরা। বড় ভাবি একদিন। সাহস করে বলেছিল, শামু, ভেবে দেখ তুমি কী করতে যাচ্ছে। হাজার হোক হাসান গ্রামের ছেলে। শহরে এসেছে, তাও রাজধানীতে পা রেখেছে মাত্র ক’বছর। ওর পুরো অতীতটাই গ্রামের ভেতরে গ্রথিত। শিকড়বাকড় জড়ানো অতীত। ওর অভিধান আর তোমার অভিধান কিন্তু এক নয় শামু।
বড় ভাবি কেন একথা বলেছিল সালমা জানত। তার তখন দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল যে সালমাকে বড় ভাবি ঈর্ষা করে। বড় ভাবির নিজেরও একটা অতীত ছিল যে অতীতে একটি গ্রামের ছেলে ধোকা দিয়ে গিয়েছিল বড় সুচতুরভাবে। শহরে লেখাপড়া, শহরে বেড়ে ওঠা বড় ভাবির ধারণাও ছিল না ছেলেটা এত ধূর্ত হতে পারে। তারপর থেকে গ্রামের মানুষের প্রতি বড় ভাবির ভাবনা পাল্টে যায়। সেই ছেলেটি ছিল অজ পাড়াগাঁর। গ্রামের ধুলোবালি মেখে হাজির হয়েছিল রাজধানীতে। মাথাখানা ছিল তার কোটি টাকার মত দামি। অংককে অংক, ফিজিকসকে ফিজিকস, কেমিস্ট্রিকে কেমিস্ট্রি তার বুড়ো আঙুলের তলা দিয়ে যাতায়াত করত। বড় ভাবীর বাবা এই ছেলেকে যোগাড় করে এনেছিলেন বাসায় পড়াতে। বড় ভাবির অংকে মাথা ছিল না। থাকলেও বোঝা যেত না। এই ছেলের হাতে পড়ে সেবার অংকে একশোর ভেতরে একশো পেল ভাবি। আর তো সে ছেলেকে ভাবির মা-বাপ ছাড়তে চান না। অবস্থা যখন অনেকদূর গড়িয়েছে সেই ছেলে হঠাৎ করে একদিন গ্রামে ফিরে গিয়ে নিজের ফুপাতো বোনকে বিয়ে করে এল। আর বড় ভাবিকে তার বাবা মা আবিষ্কার করলেন কাওরানবাজার রেল লাইনের ধারে। আর একটু হলে বড় ভাবি চট্টগ্রামগামী ট্রেনের নিচে। পড়ে বিনষ্ট করে ফেলত তার অতীত।
তবু যার যার জীবন, তার তার।
সালমা বড় ভাবির কথায় কান দেয় নি। উত্তরও দেয় নি কথার। যে কোনো ভালবাসার ভেতরে এক ধরনের ঝুঁকি থাকে। মাঝে মঝে ঝুঁকিটা খুব বড় হয়ে যায়। সালমা সেটা জানত। কিন্তু জীবনটা হলো ‘নে রিস্ক নো গেইন’-এর মতো। জীবনের প্রতিশ্রুতি কখনোই স্কুরিত হবে না তাকে সুযোগ না দিলে। সুযোগ যে অপপ্রয়োগ হিসেবে দেখা দেবে না তারও কোনো গ্যারান্টি কোথাও নেই।
আর ভাবতে পারল না সালমা। বড় ভাবি যদি ঘুণাক্ষরেও এই সমস্যার কথাটা জানতে পার। তো কী বলবে? কাঁদবে না খুশি হবে? হয়ত কাঁদবে। হয়ত খুশি হবে। কেমন বলেছিলাম, মফস্বলের ছেলের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে না। এখন বুঝতে পারছ মজাটা। আচ্ছা এমনও তো হতে পারে যে কাজের মেয়েটা ওদের দু’জনের প্রেম ভালবাসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছিল, ওর কিশোরী মনে জেগেছিল প্রতিহিংসার দাবানল। কিন্তু কীসের প্রতিহিংসা ? সালমার চোখের সামনে দুপুরটা ঝিলিমিলি পর্দার মত দুলে উঠল হঠকারীর মত একটা চলন্ত বাসের হ্যান্ডেল ধরে উঠে পড়ল সে।