সায়েন্স ফিকশন

ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব সতেরো

আরিয়ানা রাস্তে কোন্ ধরণের কাজের সাথে যুক্ত, তা আশফাককে কখনো বলেনি। আশফাক যেমন নিজের কাজ নিয়েও আরিয়ানা বা আর কাউকে বলেনি। নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই ওরা এরকম চুপ থেকেছে। চোখে চোখে ভাব বিনিময়ে যতটুকু বোঝা যায়, বিস্তারিত চলেনি কখনো।
আরিয়ানা জেনেটিক পরিবর্তনের ভয়ংকর খেলার একজন সঙ্গী। ও চেনে কাকে বলে সিআরআইএসপিআর/কাস৯।
ক্লাস্টারড রেগুলারলি ইন্টারস্পেসড শর্ট প্যালিড্রমিক রিপিটস হয় অসংক্ষেপ করলে। এই এনজাইমটি অনেক ব্যাক্টেরিয়ার ভেতরই পাওয়া গেছে। আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিইক এসিডের সংক্ষিপ্ত, পুনরাবৃত্তি ক্রম ঘটালে ইচ্ছে মতো জেনেটিক সিকোয়েন্স বা ক্রম চাইলে তার সাথে মিলে যায়। এনজাইম কাস৯-এর সাথে মিলে কাজ করলে এটি যৌগ কাঁচি দিয়ে কাটার মতো করে ডিএনএ-কে কাটতে পারে।
প্রথমে সিআরআইএসপিআর/কাস৯ যৌগ কোষের ডিএনএ-এর মধ্য দিয়ে খুঁজতে থাকে, কখন সিআরআইএসপিআর-এর সাথে মিলে যায় এমন ক্রম পাওয়া যায়। যতক্ষণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ খুঁজতেই থাকবে। পাওয়ার পর কাস৯ কাটবে ডিএনএ-কে। শেষমেষ কোষটি এই কাটার ক্ষত সারিয়ে তুলবে। সারিয়ে তোলার জন্য বাইরে থেকে এক টুকরো ডিএনএ-র যোগান দেওয়া হবে কোষে। ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে এই বহিরাগত ডিএনএ-র টুকরো-কে প্রতিরোধের ঘটনা দেখা যায়, আসলে দেখ যেত। আরিয়ানা রাস্তেরা এখন জানে, কিভাবে প্রতিরোধ থামিয়ে দেওয়া যায়। নানা পশুপাখির ডিএনএ ঘাঁটাঘাটি করার পর মানুষের ডিএনএ নিয়েও কাজ করা হয়েছে। জোসেফ মেঙ্গেলেজ ওয়ার্ল্ডে এখন চলছে মানুষের ভ্রুন সংশোধনের কাজ, কোন ধরণের প্রতিরোধ ছাড়াই।
যেদিন নিজের হাতে প্রথম একটি মানব ভ্রুনের শরীরে সিআরআইএসপিআর/কাস৯ যৌগ প্রবেশ করাল আরিয়ানা, তখন মনে মনে নিজেকে বোঝাল, এ তেমন কিছু নয়। বেটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত জিন সারিয়ে তুলতে কাজে লাগবে এই যৌগ। বাছা তুমি রক্তে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন না পেয়ে ধুকছিলে বলে আমি এটা করছি। আসলে আমি তোমার উপকারই করছি। এখন থেকে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়বে, তুমি বেঁচে থাকবে ভালভাবে। বেঁচে থাক বাছা। বেঁচে থাক।
জেনোমের অন্য অংশে বিপদজনক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিল। ভ্রুনের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হ’ল বলে পুরো ভ্রুনটাকেই বাতিল ঘোষণা করে ময়লা হিসেবে ফেলে দেওয়া হ’ল। আরিয়ানা চোখের পানি নিয়ে তাকাল চারিদিক। ওর তো আর কিছু করার ছিল না।
ময়লা হিসেবে ভ্রুনটাই কেবল নয়, মানুষের সকল নীতি-নৈতিকতাও ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে। খোদার উপর খোদকারী করা পাপ, এ শিক্ষা পৃথিবীর সব ধর্মে দেওয়া আছে। কিন্তু শিক্ষার গোঁড়াই উড়ে যাচ্ছে আস্তাকুড়ে, নিজের বিকৃত ইচ্ছের মূল্য দিতে গিয়ে জোসেফ মেঙ্গেলেজ ওয়ার্ল্ডে এটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ধর্ম। আরিয়ানাদের কিছু করার থাকছে না।

Series Navigation<< ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব ষোলধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *