ধারাবাহিক উপন্যাস //এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা//পর্ব দুই
- সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা// প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস //এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা//পর্ব দুই
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব তিন
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট // নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক// উপন্যাস // এক্সপেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব দশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস // এক্স-পেরিমেন্ট// নাসরীন মুস্তাফা // পর্ব একাদশ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব বারো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব তেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব চৌদ্দ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব পনেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব ষোল
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। পর্ব সতেরো
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। আঠারো পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। এক্স-পেরিমেন্ট।। নাসরীন মুস্তাফা।। শেষ পর্ব
আশফাক হা হয়ে যায় আরিফের কথা শুনে। স্বগতোক্তির মত করে গড়গড় করে কথা বলছে আরিফ। বছর পনের আগে, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে যখন, তখন প্রেম হল একজনের সাথে। সে কী তুমুল প্রেম ! শরীরের ভেতর আগুন ধরিয়ে দিত মুহূর্তগুলো। সেই শরীরই কাল হল শেষে।
তারপর ?
মেয়েটা ঝামেলায় পড়ে গেল।
মানে ?
মানে আর কি ! পেট হয়ে গেছে বলে হাহাকার করে উঠল। আশফাকের মনে হ’ল কষে একটা চড় বসিয়ে দেবে এই উজবুকটার গালে। কী ভাষা! পেট হয়ে গেছে! পেট হয়ে যাওয়াটা মেয়েটার ঝামেলায় পড়ে যাওয়া! পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তখন এসে কান্নাকাটি শুরু করল। জেদ ধরল, এক্ষুণি বিয়ে করতে হবে। চাকরি-বাকরি না পেয়ে বিয়ে করি কি করে? আব্বাজান শুনলে আমাকে আস্ত রাখবেন? দিনের পর দিন মেয়েটা এভাবে বিরক্ত করছিল। হলের অন্যদের কাছে যদি ফাঁস হয়ে যায় ব্যাপারটা, এই ভয়ে পড়তে পারছি না। শেষে বুঝ দিলাম, বিয়ে করব। পরীক্ষাটা শেষ হলেই বিয়ে করব। মাত্র তো দুই সপ্তার ব্যাপার।
তারপর ?
খুব খুশি হ’ল। দুই সপ্তা পর দেখা হবে, আমার এই শর্তও মেনে নিল খুশি মনে। আমি মন দিয়ে পড়তে লাগলাম। পরীক্ষা দিলাম। ডাক্তার আশফাক আরিফের ঘেমে ওঠা মুখ দেখে শিউরে উঠছে। তবুও কৌতুহল হল, জানতে চাইল, তারপর?
তারপর ? ডুব দিলাম। পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র আমি স্রেফ ডুব দিলাম। পালিয়ে বেড়ানোর মত আর কী! বাড়িতে বললাম, পরীক্ষা শেষ, কিছু দিন ঘুরব ফিরব। ইন্ডিয়া নেপাল শ্রীলংকা ঘুরে টুরে —আর জানি না!
তারপর?
তারপর আর জানি না। আর কখনো দেখা হয়নি তার সাথে।
কি হয়েছে তার, জানেন না ?
না।
জানতে চেষ্টা করেননি ?
নাহ্ ! কী দরকার আবার ঝামেলা ঘাড়ে নেওয়ার ? আমি শিওর, সে-ও ভাল আছে। গোপনে পেট-টেট খসিয়ে ফেলে লক্ষ্মী মেয়ে সেজে গেছে। হয়তো বিয়েও করেছে। সুখে-শান্তিতে স্বামীর ঘর করছে। এমনি তো হয়। ডাক্তার আশফাক রায়হানের বুকটা শুকিয়ে গেছে। এক গ্লাস পানি খেল ঢক ঢক করে।
আরিফ ওদিকে স্বগতোক্তির মত করে বিড়বিড় করছে, আমার সুখটা হয়েও হচ্ছে না। অলওয়েজ সাকসেসফুল এই আমি। কি নেই আমার ? ভালবেসে বিয়ে করা বউ…
সোহাকেও ভালবেসেছিলেন বুঝি ?
বেসেছিলাম। ঐ মেয়েটার বেলায় যেমন, তেমন বেহিসাবী প্রেম নয়। রীতিমত ছক কাঁটা, হিসাবী চাল ফেলে জিতে যাওয়া প্রেম। পরিণত বয়েসের প্রেম তো এমনি হয়, তাই না? আরিফ নিজের উরুতে কষে একটা ঘুষি বাগিয়ে বলে, কোন পরীক্ষায় হেরে যাইনি আমি, কিন্তু এখন…আমি বুঝতে পারছি না ডাক্তার, এখন কেন হেরে যাচ্ছি? এখন কেন বাবা হতে পারছি না? আমি স্পার্ম তৈরি করতে পারি না, অথচ তখন…তখন তো ঠিকই পেরেছিলাম। এর মানে কি?
সব প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই।
আরিফ মরীয়ার মত কাকুতি মিশিয়ে বলে, আপনি কি আরেকবার…আরেকবার ঠান্ডা মাথায় সব কিছু দেখবেন? আমি কনফিডেন্ট, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে।
আশফাকের ভাল্লাগছিল না আরিফের সাথে আর একটা মুহূর্তও কাটাতে। প্রফেশনাল ডাক্তার হয়ে গেল আবার। সোহার স্বামীকে নয়, কেবল মাত্র মিস্টার আরিফকে পথ দেখিয়ে দিল। বলল, নেক্সট টাইম আরেকটা এপয়েন্টমেন্ট করে আসুন তাহলে। অথবা চাইলে অন্য কোন ডাক্তারকে দিয়ে চেক করাতে পারেন। য়্যু বেটার টেক য়্যুর ডিসিশান। ওকে, ভাল থাকবেন।
ডাক্তার ওকে উঠবার ইঙ্গিত দেওয়ায় আর বসে থাকা হয় না। চেয়ার ছেড়ে পা বাড়ায় সামনের দিকে। দরজা অর্ধেক খুলেছে, তখন পেছন থেকে প্রশ্ন করে ওঠে ডাক্তার আশফাক, মেয়েটার নাম কি ছিল?
আরিফ থেমে যায়। মনে আছে, নামটা মনে আছে। শুধু কি নাম? সেই মেয়েটার মুখ-চোখ-নাক এমনকি শরীরের গোপনতম অঞ্চলে নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বলে সেই তিলখানার কথাও ওর মনে আছে। ডাক্তারের দিকে ফিরে বলে, দোলা।
ডাক্তারের মুখটা কেমন কঠিন হয়ে যায় দেখে আরিফ আর কিছু বলার সাহস পায় না। দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।
ইদানীং প্রায়ই মনে হয় আশফাকের, প্রকৃতি যদি ভ্রুন তৈরির আগেই নির্দিষ্ট স্পার্ম এবং ডিম্বাণুটির স্ক্যানিং সিস্টেম রাখত তো আরিফ কিংবা লাদেন কিংবা বুশের মতো এরকম আজে বাজে প্রোডাক্ট সম্ভব হতো না। প্রকৃতি কেন ওরকম সুযোগ রাখেনি? প্রকৃতি দোষে গুণে ভরা মানুষ চেয়েছে, ফেরেশতা কিংবা শয়তান না। তাই কি?
ডাক্তার হিসেবে মানুষের জন্মরহস্যের অনেক কিছুই জানা, তবুও আশফাকের বিস্ময় কাটে না। নিজের জন্মের পেছনে ওর নিজেরও কোন হাত নেই। ওর বাবা-মাও জানতেন না ও আসছে। এমন তো নয় যে, ওর বাবা কেবল মাত্র ওকেই চেয়েছিলেন। তাহলে? স্রেফ ভাগ্যের ভরসা নিয়ে আমরা পৃথিবীতে আসি, বাবা-মায়েরা ভাগ্যে যা পায়, সেরকম বাচ্চাই লাভ করে স্রষ্টার উপহার হিসেবে। মিরাকল্, স্রেফ মিরাকল্। ক্ষুদ্রাণু ক্ষুদ্র স্পার্ম আগামী জীবনের পুরোটা তো বটেই, হাজার হাজার বছরের বংশানুক্রমিক ইতিহাসকে সাথে নিয়ে ছুটে আসে জীবনের স্বাদ গ্রহণের জন্য। আসে তো গাদা গাদা, অথচ জীবন-দৌড়ে সফল হয় মাত্র একটি।
এই দৌড় কি থামে?
মৃত্যুতে থামে কি?
মৃত্যুর পরের বিষয়টা জানে না, জানতে চায়ও না। জীবন সৃষ্টির মুহূর্তটুকু নিয়ে ওর কাজ। এটুকুই ওকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে রাখে। বেশি কিছু ভাবার ফুরসত এই জীবনে পাবে বলে মনে হয় না।
আরিফের দাদা তিন বার বিয়ে করেছিলেন। তিন ঘরে তার সন্তান সন্ততির সংখ্যা মোট বাইশজন। আর তার নাতি আরিফের ঘর খালি, কেননা অকেজো স্পার্ম নিয়ে চলাফেরা তার!
ডাক্তার আশফাকের ওখান থেকে চলে আসার পর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। হন্ হন্ করে হাঁটছিল। কেন যেন সেই বুড়ো দাদার কথা মনে পড়ছিল খুব।
বুড়ো কালে দাদাকে প্রশ্ন করত নাতিপুতিরা, দাদা আরো বিয়া করবা?
দাদা মাথা দুলিয়ে মজার ভঙ্গি করে বলত, করবাম, করবাম।
সোহার সাথে প্রেমের সময়ে দাদার গল্প বলেছিল আরিফ। সোহা চমকে উঠে বলেছিল, স্বামীকে অন্য নারীর সাথে থাকতে দেয় কী ভাবে! ঘেন্না ঘেন্না!
আরিফ ছিল দাদার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ঘরের নাতি। দাদিকে দাপট দেখাতে অবশ্য কেউ দেখেনি, বিশাল সংসারের কাজ করতে করতে বেচারা কুঁজো হয়ে গিয়েছিল। আরিফ ওর দাদিকে প্রশ্ন করেছিল, দাদা যে আরো বিয়া করল, তুমি কান্দ নাই?
দাদি অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছিল, কান্দুম কিল্লায়? আমিই তো হ্যারে কইছি আরো বিয়া করতে।
তুমি! তুমি নিজে থেকে সতীন চাইলা?
সংসারের কাম একখান বউ ক্যামনে করত? ধান যহন পাকত, কামলা আইত ডজনে ডজনে, হ্যাগো ভাত রান্ধনের লাইগাই তো বউ লাগত দুই খান। তর দাদা তো কম-ই করছিল।
আচ্ছা!
হ্যায় তো কাউরে ঠকায় নাই। মাথায় ঠাঁডা পড়ব, মানুষটার বদনাম করলে। ত্যাল-সাবুন কন্ডার কমতি ছিল কার?
আরিফ গলা খাঁকারি দেয়, স্বামীকে অন্য নারীর বিছানায় দেখতে কেমন লাগত দাদির, সোহার প্রশ্নটা কিভাবে করবে বুঝতে পারে না। পেটের মধ্যে গুড়গুড়ি মারে কৌতুহল, শেষ মেষ বলে ফেলে- দাদা অন্য দাদিরে সোহাগ করত তো, করত না?
করব না ক্যান্! দাদি বুঝতে পারে না কিছু।
তুমার বুক জ্বলে নাই?
কী কস্ বুঝি না। বুক জ্বলব ক্যা?
বুড়ি দাদি পান মুখে পুরে ইদানিং ঝাল জাতীয় কিছু খেলে কিভাবে পেট জ্বলে তার ব্যাখ্যান দিতে শুরু করে। আরিফ অগত্যা দাদাকেই ধরে। মনে কর তো দাদা, তুমি মাইঝা দাদির ঘরে গেলা, কুন দিন বড় দাদি কান্দে কি কান্দে নাই।
ক্যান্ কানব?
হিংসায়। মমতাজের গানটা শোন নাই, বন্ধু যখন বউ নিয়া, আমার বাড়ির সামনে দিয়া, রঙ্গ কইরা হাঁইটা যায়—-
বুড়ো হাসতে হাসতে গান ধরে- ফাইট্টা যায়! বুকটা ফাইট্টা যায়!
কোন্ দাদির বুক বেশি ফাটত, কও না দাদা?
দাদা বুদ্ধিমান, বুঝতে পারে আরিফের মেয়েলি কৌতুহলের মর্ম। আগেকার দিনের নারীকূল মোটেও হিংসুটে ছিল না। নিজের ভাগটা পেলেই খুশি থাকত। স্বামী পালা করে ঘরে আসে, পেটে সন্তান দেয়, মুখে খাবার দেয়, আর কি দরকার তার? বরং সারা দিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পর চোখ জুড়ে গভীর ঘুম আসত, সেই ঘুমে তলিয়ে যেতেই আনন্দ বেশি ছিল। স্বামীসঙ্গের পালা যার, সে বরং মন খারাপ করে অপেক্ষা করত রাত্রির। বাকিরা ফুরফুরে মন নিয়ে সন্তানদের জড়িয়ে ধরে বিছানায় যেত।
দাদা ঠাট্টায় মজে, ঘটনা কি নাতি? বিয়া কয়ডা করবার মন চায়?
আরিফ লাজুক হাসি হাসে। এখন তো হিসাবের দুনিয়া দাদা। এক বউ, বড় জোর দুই বাচ্চা, এই হিসাবের বাইরে পা ফেলাটা বোকামি।
রাখ তোমার হিসাব-কিতাব। নয়া জমানার মরদগুলান লাউয়ের কচি ডগা য্যান্, ডাল পাইলে জড়াইয়া ধরে। এক বউ খুশ্ রাখতে ফার্মগেটের পার্কে ছোটে, শুনছি আয়ুর্বেদিক বড়ির ব্যবসা ম্যালা লাভজনক। চড়–ই পাখির মতন ফুড়–ৎ ফুড়–ৎ, কাম শ্যাষ তো ভুঁশভুঁশ ঘুম। বউ মাতে পরকীয়ায়। বোঝ তাইলে, কোমরের জোর কম যেগুলান, হেগুলানের হিসাব-কিতাব এক এককে এক আর দুই এককে দুই ছাড়া হইবটা কি?
আরিফ লজ্জায় সরে এসেছিল। সোহার সাথে বিয়ের পর বউ নিয়ে গ্রামে গিয়েছিল দাদা আর তিন দাদির দোয়া নিতে। দাদা আর দাদিরা দোয়া দিল প্রাণ ভরে, ঘর ভরা পোলাপাইন হউক।
বছর তিনেক পর বাড়ির সবাই যখন কেন এখনো বাচ্চা হচ্ছে না বলে প্রশ্ন করা শুরু করল, তখন আর ইচ্ছে হয়নি বুড়ো মানুষগুলোর কাছে যেতে। মৃত্যু শয্যায় দাদা নাকি তাকে দেখতে চেয়েছিল, আরিফ যায়নি। দাদা তার কোমরের জোর নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে করতে পরকালে যাত্রা করবে, সেরকম ঘটতে দেয়নি ও। যদিও তখন পর্যন্ত সবাই, এমনকি আরিফ নিজেও সোহার দিকে আঙ্গুল তুলে রাখত। সন্তানবতী হওয়ার জন্য কি করা যায়, তার গাদা গাদা উপদেশ দিত সবাই, আরিফও। সেসব সহ্য করাটা সোহার জন্য কষ্টকর ছিল। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের গন্ডি সে কারণেই কমিয়ে ফেলতে হয়েছিল আরিফকে।
মৃত্যুপথযাত্রী দাদার মুখ থেকে উপদেশ শুনতে সোহার ভাল লাগত না। সোহা নিজে থেকেও যেতে চায়নি।
ফার্মগেটের পার্কে সত্যিই বিক্রি হয় আর্য়ুবেদিক অব্যর্থ দাওয়াই। ওরা বলে, সেক্স ও যৌন রোগের মহৌষধ। শেয়ালের পুরুষাঙ্গ নিংড়ে বের করা তেল থেকে শুরু করে নিমের বড়ি এবং এরকম আরো হাজারো টোটকা আছে, দাম খুবই কম-দশ টাকা দশ টাকা দশ টাকা।
যে লোকটা মহৌষধ পানির দামে বিক্রি করে জনসেবা করছে, তার নাম রাজ্জাক। লোকে বলে, সেক্স রাজ্জাক। মাঝ বয়সী লোকটার পরনে নোংরা লুঙ্গি। সাথে দশ-এগারো বছরের এক কিশোর থাকে সাহায্যকারী হিসেবে। ঔষধের গুণাগুন বর্ণনা করার পর রাজ্জাক দুই হাত বাড়িয়ে দেয় কিশোরের দিকে। কিশোর ঝাঁপ দিয়ে কোলে ওঠে। এরকম কষ্টসাধ্য কান্ড ঘটানোর পর লোকটা হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, দ্যাখেন ভাই, দ্যাখেন। এই পোলা পাইছিলাম ঔষধের গুণে। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর। যে ভদ্রলোক বিশ্বাস আনবেন, সুফল পাইবেন। বিফলে মূল্য ফেরত।
রাজ্জাকের কাস্টমার ছিল সে আর সোহা। প্রায় বছর দু’এক তো হবেই। কাজ হয়নি। বিফলে মূল্য ফেরতের অঙ্গীকার করলেও আরিফের ধামকিতে কাবু হয়নি সেক্স রাজ্জাক। কিশোর ছেলেটা ঘুষি বাগিয়ে তেড়ে এসেছিল। আশে পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়া গুন্ডা প্রকৃতির লোকগুলো দেখে ভয় আরো বেড়েছিল আরিফের। পিছু হটেছিল অগত্যা।
নান্দাইলের এক হুজুরের পানি পড়ার গুণগান শুনে মরীয়া হয়েছিল ওরা দু’জন। যে ভাবেই হোক, পেতে হবে সেই পানি পড়া। অফিস ম্যানেজ করে নান্দাইল যাওয়া হ’ল। বাস মালিক সমিতির হরতাল থাকায় রাস্তায় কী পরিমাণ কষ্ট হ’ল, তা বলার নয়। হুজুরের বাড়ির কাছে যেতে না যেতে পড়ে গেল দালালের খপ্পরে। সিস্টেম করে তড়িঘড়ি পানি পড়া পাওয়া যাবে, এই বিশ্বাসে গুনে গুনে পাঁচশ’ টাকা দিতে হ’ল নগদ নগদ। সিস্টেম করতেই সে ব্যাটা ভেতরে গেল, কোথায় যে উধাও হ’ল এরপর, আরিফ আর তাকে পেল না। ভোরের দিকে মুখোমুখি হ’ল হুজুরের।
খাদেম উঁচু করে তুলে ধরেছে পানির গ্লাস। হাই তুলতে তুলতে বিড়বিড় করল হুজুর, পানিতে ফুঁ দেওয়ার অপেক্ষা। আরিফের কোন কথার জবাব না দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এক সময় মনে হ’ল, মৃদু নাক ডাকার শব্দ পাওয়া গেল। হুজুর ঘুমিয়ে পড়েছে কি না, আরিফের এরকম প্রশ্নে রেগে উঠল খাদেম। পাক পবিত্র পানিপড়া পাওয়ার উপযুক্ত নয় সে, রীতিমত ঘোষনা দিয়ে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হ’ল ওকে। বাসে ওঠার পর আবিষ্কার করল, পকেট থেকে মানিব্যাগটাও নিয়ে গেছে ওরা।
সোহার বোনের ননদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল নান্দাইলের হুজুরের ঠিকানা। এই ঘটনার পর আরিফ আর কোন দিন সোহার বোনের সাথে আত্মীয়তা রাখতে আগ্রহ দেখায়নি। সন্তানের আশায় কোন টোটকার পেছনে ছোটাছুটিও আরা করেনি। কপালের লেখা খন্ডাবে কে, এরকমত হতাশাব্যঞ্জক দর্শন ওর আগ্রহ দমিয়ে দিয়েছিল। সেই সাথে সোহার সাথে রাত্রি যাপনের আগ্রহও কমে গিয়েছিল অনেকখানি। কী হবে আর ওসবে!