উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।।এহসান মাহমুদ।।প্রথম পর্ব
- উপন্যাস ।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব তিন
- উপন্যা।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ ।। পর্ব ছয়
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব দশ
৮
মারিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। যাওয়ার সময় ওকে স্বাভাবিক দেখাল। আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসতেও চেষ্টা করল বলে মনে হলো। ভেতরে প্রবেশের আগে মোবাইলটা আমার হাতে দিয়ে গেল মারিয়া। একটা অফ হোয়াইট ড্রেস পরানো হয়েছে ওকে। দেখতে অনেকটা নাইট ড্রেসের মতো। দুজন নার্স মারিয়াকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দরজা লাগিয়ে দিল এপাশের সিকিউরিটির লোকটি। বাংলা সিনেমায় যেমন জল্লাদ থাকে, এই লোকটাকে আমার তেমন মনে হলো। অপারেশন থিয়েটারের বাইরের এই জায়গাটা বেশ প্রশস্ত। কয়েক সারিতে সাজানো স্টিলের চেয়ার। দিনের বেলা এখান থেকে বাইরে তাকালে দূরের ধানমণ্ডি লেকের সবুজ গাছগুলো দেখা যায় হয়তো। এখন ছোপ ছোপ অন্ধকার। দেয়াল ঘেঁষে থাকা শেষের দিকের একটি চেয়ারে গিয়ে বসি। আমার সামনেই বসে আছেন এক মধ্যবয়সী মোটাসোটা লোক। লোকটি বসে বসে ঝিমুচ্ছে। জেগে আছে না ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মাঝেমাঝে তার পকেটে থাকা ফোন বিকট শব্দে বেজে উঠছে। ফোনটি বেজে উঠলেই তিনি ধড়ফড়িয়ে বসেন। এক দুই মিনিট কথা বলার পর আবার ফোন পকেটে রেখে ঝিমানো শুরু করেন। এভাবে বার কয়েক হলো। এই মোটা লোকটির পাশেই বসে আছেন বয়স্ক এক পুরুষ। তার হাতে একটা লাঠি। লাঠিতে থুঁতনি লাগিয়ে তিনি বসে আছেন। একহাতে লাঠি ধরা অন্য হাতে তসবিহ। তার ঠোঁট নড়ছে কি-না দেখা গেল না। কিন্তু একটা একটা করে তসবিহ’র দানা তিনি গুনে যাচ্ছেন। এটা বেশ দেখা যাচ্ছে। অপারেশেন থিয়েটারের দরজা খুলে গেলেই চেয়ারে বসা লোকেরা সবাই নড়েচড়ে বসেন। আমি নিজের জায়গাতেই বসে থাকি। এর আগে ডাক্তারদের সাথে আলাপ হয়েছিল, তখন তারা বলেছিলেন কমপক্ষে ৪-৫ ঘণ্টা লাগবে মারিয়ার অপারেশন শেষ হতে। তাই আমার কোনো তাড়া নেই।
‘এখানে রাতুল সাহেব কেউ আছেন? ওটির পেশেন্ট মারিয়ার লোক কে আছেন এখানে? এদিকে আসেন।’ প্রথমে আমার নিজের কানকে বিশ^াস হয় না। এখন কেন ডাকবে? কোনো বিপদ হয়নি তো! সত্যিই আমাকে ডাকছে তো? এইসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে যাই। সবুজ পোশাক পরা একজন নার্স দাঁড়িয়ে আছেন।
অপারেশন থিয়েটারের দরজার সামনে যেতেই বললেন, ‘আপনার নাম কি রাতুল?’
‘জি। আমি রাতুল।’
‘আসুন, ভেতরে আসুন।’ বলেই তিনি দরজা ছেড়ে দাঁড়ালেন। আমার হাতে একটা প্যাকেট তুলে দিয়ে দ্রুত পোশাক বদলাতে বললেন। মেডিকেল অ্যাপ্রনের মতো একটা ড্রেস গায়ে চাপিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি।
মারিয়া বসে আছে একটা চেয়ারের ওপর। ওকে ঘিরে ডাক্তার-নার্স মিলিয়ে প্রায় ছয় সাত জনের একটি দল। আমাকে দেখেই মারিয়া আমার কাছে চলে এলো। কোনো কিছু আড়াল করার চেষ্টা না করেই হু হু করে কেঁদে ফেলল। আমি ওর হাত ধরতেই আমার হাত দুটি শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
‘আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো রাতুল’ বলেই আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। গত কয়েকদিন কঠিন থাকতে পারলেও এইবার আর মারিয়া নিজেকে গোপন করতে পারল না। আমি মারিয়ার পিঠে-মাথায় হাত রাখি।’
কোথা থেকে এত কান্না এলো! মনে হচ্ছে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মারিয়াকে কান্নার সুযোগ করে দিই। এভাবে কতক্ষণ যাওয়ার পর ডাক্তার এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া পর্যন্ত আপনি থাকতে পারেন।’ কথা শেষ করেই ডাক্তার সামনে এগিয়ে গেলেন। মারিয়াকে নিয়ে আমি ওপারেশন টেবিলে বসিয়ে দিই। মারিয়া হাত-পা টান করে শুয়ে পড়তেই আমি পেছন ফিরে বাইরে চলে আসি।