উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব সাত

  


মারিয়া একটানা কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ওর ব্যাগের ধুলো পরিষ্কার করে কাঁধে রাখে। তারপর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রাখে। আমি হাত এগিয়ে দিলে টেনে তুলে ধরে। পুকুর পেরিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাই। ক্যাম্পাসে ফেরার সময়ে আমরা একটা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করি। সন্ধ্যার অফিসফেরত মানুষের বাসায় ফেরা, ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম, অ্যাম্বুলেন্সের হর্ন, পুলিশের গাড়ির সাইরেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির অনবরত গগনবিদারী হুইসেল সব এড়িয়ে আমরা নিজেদের নিয়ে থাকি।
মারিয়া আমার কাঁধে নিজের শরীর এলিয়ে দিয়েছে। কেমন নির্ভার মনে হচ্ছে। এত কাছে পেয়েও আমার মারিয়াকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে না। চুমু খেতে ইচ্ছে করছে না। আশ্চর্য বুকে আঙুল রাখতে ইচ্ছে করছে না। মনে হয় এই ভালো। কোনো তাড়া নেই। ভয় নেই।

 
মারিয়া ফিসফিসিয়ে কথা বলে।

আমরা একদিন হেঁটে হেঁটে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াব।


আমার জবাব না পেয়ে মারিয়া আমার হাতে চিমটি কাটে। একসময় আমাদের সিএনজি এসে টিএসসিতে থামে। মারিয়া হলে ঢুকে গেলে আমি আমার হলের দিকে এগিয়ে যাই। সেই রাতে আমার খুব ভালো ঘুম হয়। সকালের দিকে ঘুম ভেঙে যায় ভয়ানক এক স্বপ্নে। আমি শুয়ে আছি, কালো মুখোশ পরিহিত এক লোক ছুরি হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসে। ধীরে ধীরে ছুরিটি নিয়ে আমার গলার দিকে বাড়িয়ে দেয়। লাফ দিয়ে বিছানায় বসে পড়ি।

 
পাশের বিছানায় জোবায়ের ঘুমিয়ে আছে। আমার রুমমেট। সারা দিন রুমের মধ্যেই থাকে। কোথাও যায় না। ক্লাসে যায় আবার সোজা রুমে ফিরে আসে। মাঝখানে ডানে বামে কোথাও যায় না। প্রথম দিকে ভাবতাম সারাক্ষণ হলে বসে পড়াশোনা করে। পরে দেখি কাহিনী ভিন্ন। একদিন সন্ধ্যার দিকে রুমে এসে দেখি চেয়ারে বসে কী যেন করছে। চোখ টেবিলের ওপরের দিকে রাখা। হাত দুটো টেবিলের নিচে। হয়তো দরোজা লাগাতে ভুলে গেছে। চুপিচুপি এসে দেখি লুঙ্গির মধ্যে দুই হাত ওঠানামা করছে দ্রুতগতিতে। টেবিলে বইয়ের আড়ালে মোবাইলে সানি লিওনি অন টপ অবস্থা।

 
ঘুমের মধ্যে আমি চিৎকার করেছি কি-না মনে করতে পারছি না। বসে হাঁপাতে হাঁপাতে পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে গলায় পানি ঢালি। স্বপ্নে কী দেখেছিলাম মনে করার চেষ্টা করি। সব মনে পড়ে না। শুধু একটা লোক ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে। আর কিছু মনে পড়ছে না। লোকটির মাথার ওপর কয়েকটি বাল্ব জ¦লজ¦ল করছে। বাল্বের আলোয় আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।  



নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ‘মাই মেডিকেল চয়েস’ নামে একটি লেখা পেলাম হলিউডের অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির। জোলি সেখানে লিখেছেন তার খালা ডেবি মার্টিন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে জোলি নিজেই ক্যানসার থেকে বাঁচতে তার দুটি স্তন অপসারণ করেছেন। তারও আগে জোলির মা মার্সেলাইন বার্ট্রান্ডও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ জিনের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় দুটি স্তনই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করেছেন অস্কার বিজয়ী হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।  


জোলির মা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। মায়ের সেই ক্যানসারের জিন জোলির শরীরে ধরা পড়ার পর চিকিৎসকরা বলেন, তার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৮৭ শতাংশ এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ। জোলি বলেছেন, মায়ের মতো অল্প বয়সে মারা না গিয়ে নিজের সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকতে চান তিনি। এই আকাক্সক্ষা থেকেই উভয় স্তন অপসারণের সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি।


জোলি লিখেছেন, ‘আমরা প্রায়ই আমার মায়ের মৃত্যু নিয়ে কথা বলি। তিনি যে অসুখে মারা গেছেন, তা সন্তানদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। ওরা জানতে চায়, আমারও একই অসুখ হতে পারে কি-না। আমি সব সময় বলতাম, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমার শরীরে সেই সমস্যাযুক্ত জিনটি আছে। যখন জানতে পারলাম এটাই বাস্তবতা, তখন আমি যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। দুটি স্তনই অপসারণের মাধ্যমে ক্যানসার ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। অস্ত্রোপচারের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু এটা করতে পেরে আমি খুবই খুশি। চিকিৎসার পর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি এখন ৮৭ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে’।
আহা! অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। টুম রেইডার, চেঞ্জলিং, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ-এর অভিনেত্রী জোলি।

Series Navigation<< উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ ।। পর্ব ছয়উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব আট >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *