উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চৌদ্দ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব- ০২
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।।পর্ব বারো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চৌদ্দ
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পনেরো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের ।। পর্ব ষোল
আবদুল্লাহ সাঈদ মাথা চুলকোয়— ‘হ্যা, তা একটু সেলিব্রেশন তাে দরকার।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, বি ফ্রাঙ্ক’— সে কথা ফেলতে দেয় না─ ’বিডি ইজ সিম্পলি মার্ভেলাস। সবকিছুই অ্যারেঞ্জ করতে পারবে।’
আবদুল্লাহ সাঈদ একটু লাজুক হাসি হাসে— ’সেভেন্টি–ওয়ানে
আমার এক কাজিন ছিল এখানে আর্মীতে। হি টোন্ড মি…মানে বাঙালী মেয়েরা নাকি খুব সফট, নরম…
বিডি আর সে দু’জনেই হাসে। বিডি বলে— ‘ব্যবস্থা হবে, খুব সফট অ্যাণ্ড এ্যাট না সেম টাইম রিয়াল কোজি— এমন কাউকে
নিয়ে আসবাে। তা আবদুল্লাহ সাহেব, আর কুচ চাহিয়ে তাে বলিয়ে, বন্দোবস্ত হাে জায়ে গা।’
আবদুল্লাহ সাঈদ লাজুক হাসি হাসে—‘ থাঙ্কু। না, না, আপাতত আমার আর কিছু দরকার নেই। আসুন আমরা সবাই স্বাস্থ্য পান করি।’
দিন কয়েক পর ইস্তিয়াককে তার অভিজ্ঞতা খুলে বলে শম্পা। বলবে কি বলবে না─ এই ধিদায় অবশ্য বেশ সময় কেটেছে তার।
একবার তার মনে হয়েছে কি দরকার। ইস্তিয়াককে জানানাের। ক্ষেপে যেতে পারেও, দরােজা আর ড্রয়ারে তালা দিতে পারে।
সুতারাং ইস্তিয়াক কেন, কাউকেই জানানাের দরকার নেই। ওটুকু তার নিজের হয়েই থাক। আবার পরে মনে হয়েছে, তাই কি হয়,
কাউকেই না জানিয়ে কি থাকা যায়! কাউকে না কাউকে তাে জানাতেই হবে, নইলে মজা কোথায়! সুতরাং শেয়ার করে যদি কারাে
সঙ্গে করতে হয় তবে ইস্তিই ভালাে।
সে ইস্তিয়াককে ধরে এক সকালে। রুম্পা একটু আগে বেরিয়েছে। তার কোন বন্ধুর বাসায় বিরাট গেট-টুগেদার। ফিরতে দেরি হবে।
বাবা বেরিয়েছে আরাে আগে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তার কলেজ নেই। সারাটা দিন পড়েই আছে, কি করে যে ইস্তিয়াককে বেরােতে
দেখে সে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়। পেছন থেকে ডেকে নামায় ইস্তিয়াককে।
‘ইস্তি, একটা কথা শুনবি?’
দরােজার কাছে থামে ইস্তিয়াক, বিরক্ত হয়েছে সে— ‘জলদি করে বল, আমার তাড়া আছে।’
শম্পা ভেংচি কাটে— ’আহা, কি আমার কাজের লােকরে, তুই না গেলে যেন সব কিছু থেমে থাকবে।’
ইস্তিয়াক কিছু বলে না, সে এগােয়।
‘আরে ইস্তি’— শম্পা অবাক গলায় বলে—’সত্যিই তুই যাচ্ছিস নাকি? বললাম না, কথা আছে।’
‘হ্যাঁ যাচ্ছি’— ছােট করে বলে ইস্তিয়াক পাশ কাটাতে চায়।
‘প্লিজ ইস্তি, শােন না, জরুরী কথা।’
’সেই কখন থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করছিস। এতক্ষণে তাে বলে ফেলতে পারতি।’
‘বলবাে, চল বাগানে গিয়ে বসি’– শম্পা ইস্তির হাত ধরে। ইস্তিয়াকের মধ্যে বাগানে বসার কোনাে ইচ্ছেই লক্ষ্য করা যায় না। সে বলে—
‘বসাবসির ব্যাপার যখন তখন বােঝাই যাচ্ছে অনেক সময় লাগবে। আমার অতাে সময় নেই।’
‘না না’— শম্পা তখনই মাথা নাড়ে— ‘বেশী সময় লাগবে না। তা, তুই যাচ্ছিস কোথায়?’
‘তুই কি এ কথাই জানতে চাস? সেটা তাের জানার কি দরকার?’
ঠিক আছে, দরকার নেই। তা আমার ব্যাপারটা শােন। বেশী বড় না, ’কিন্তু সিক্রেট।’
সিক্রেট শুনেও কোনাে উৎসাহ পায় না ইস্তিয়াক। শম্পার সিক্রেটগুলাে কেমন হয়, তা সে জানে।
‘তােকে বলছি বটে, তবে একটা শর্ত আছে। তুই কিন্তু আমার ওপর রাগ করতে পারবি না’– শম্পা প্রাথমিক ভণিতা সেরে নেয়।’
’বেশ, রাগ করবাে না’ — দ্রুত কথা শেষ করে ইস্তিয়াক সরে পড়তে চায়।
‘জানিস, আমি না একদিন ট্যাবলেট খেলাম।’
ইস্তিয়াক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যেন ব্যাপারটা সে বুঝতেই পারছে না। তাই দেখে শম্পাও অবাক হয়। সে আবার
বলে— ‘আমি ট্যাবলেট খেলাম।‘
’কি খেলি?’ ইস্তিয়াক একটু ভু কুঁচকোয়।
‘ট্যাবলেট, ট্যাবলেট। ঐ যে তুই খাস।’ শম্পার গলায় উৎসাহ ফোটে
’খেলি, তাে কি হয়েছে?’ শম্পা এবার যারপর নাই নিরাশ হয়।
ইস্তিয়াক একটু হাসে— ’আর কোনাে কাজ পেলি না খুঁজে?’
শুধু নিরাশ হওয়া নয়, শম্পার এখন একটু রাগও হচ্ছে ইস্তিয়াকের ওপর।
‘তো কোথায় পেলি তুই ওটা’─ ইস্তিয়াক জানতে চায়।
এবার মুচকি হাসি ফোটে শম্পার মুখে ‘তাের ড্রয়ারে।‘
’বড় বাড়াবাড়ি করিস তুই’─ ইস্তিয়াক সামান্য ধমকায় — ’তবে তাও ভালাে যে বাইরে কারাে কাছে হাত পাতিস নি।’
শম্পা আবার অবাক হয়, ইস্তিয়াক যে কিছুই বলছে না তাকে!
’কতটা খেয়েছিলি?‘
’হাফ। বেশী সাহস হয়নি। বাব্বা, ওটুকু খেয়েই যা অবস্থা।‘
’ওর বেশী খাবি না কখনাে।’
‘পাগল । বললাম না ওটুকু খেয়েই যা অবস্থা।’
ইস্তিয়াক হাসে — ’কি অবস্থা মানে? তাের কি ওড়ার ইচ্ছা হচ্ছিল?
’ওরকমই তাে’─ ’শম্পা খুশিতে দু’হাত নাড়ে — ‘কিন্তু ওড়ার চেয়েও একটা বড় ব্যাপার আছে।’
‘আমি ঐ অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় এসেছিলাম। তারপর গেটের কাছে।
তারপর আবার বারান্দায় উঠে শরীরে জোর পাইনি, একটা থামে হেলান দিয়ে বসে পড়েছিলাম। তখন হঠাৎ চোখের সামনে কি
দেখেছিলাম জানিস? দেখেছিলাম জ্বল জ্বল । লাল অক্ষরে লেখা নাে-এক্সিট। ইয়ার্কি না ইস্তি, ভুলও না, আমি সত্যি দেখেছি।
‘দেখেছিস তুই, সত্যি?‘
’হ্যা, এক বিন্দুও মিথ্যে নেই, সয়্যার। নাে এক্সিট …. তুই দেখিস নি কখনাে?’
ইস্তিয়াক একটু মাথা দোলায় — ‘দেখেছি আগে। এখন আর দেখি না।’
’ওমা কেন!’ শম্পা আবার অবাক হয়।
একটু ভাবে ইস্তিয়া — ‘সম্ভবত জানা জিনিস বারবার দেখা যায় না। তাই, যেমন ধর, সেদিন তুই দেখলি — তুই হয়তাে ওরকম কিছুই ভাবতি।
অবস্থা যে ওরকম সেটা তাের সাব-কনশাস মাইণ্ডে ছিল। কিন্তু তাের ঠিক ঠিক জানা ছিল না। সেদিন দেখে ফেললি, তাের ঠিক ঠিক জানা হয়ে
গেল, আর দেখবি না। কিংবা হয়তাে দেখবি। আরাে বার কয়েক। ব্যস, তারপর আর দেখবি না। জানা জিনিস বারবার চোখের সামনে আসে না।’
‘আসে না’ — শম্পা একটু যেন নিরাশই হয়।
তার ভঙ্গি দেখে ইস্তিয়াক হেসে ফেলে— ’না আসুক, তাতে কি? এক জিনিস বারবার দেখে কি লাভ! বরং নতুন কিছু দেখবি। সেটাই তাে দরকার।‘
’কিন্তু তুই ওসব কি বললি, সাব কনসাস ফাইন্ড-ফাইন্ড, কিছু বুঝলাম না।’
ইস্তিয়াক দু’কোমরে হাত রেখে সামান্য হাসে — ’তা বটে। আমারই বােঝা উচিত ছিল আমি কার সঙ্গে কথা বলছি।’
’আরে যা যা।’
ইস্তিয়াক সে কথা শুনে হেসে পা বাড়াতে নিলে শম্পা তাকে থামায়— ’কোথায় যাচ্ছিস তুই?’
’সেটা তাে তাের মাথা-ব্যথা না।’
’তা না হল। কিন্তু জানতে দোষ কি? তুই তাে খুব যাচ্ছিস? কিন্তু আমার যে কোথাও যাওয়ার নেই। একা একা কি করি বল?’
’নেই মানে’ — ইস্তিয়াক কপালে তােলে চোখ— ’আর একা একাই বা তাের থাকার কি দরকার। বন্ধুর বাসায় যা । দল বেঁধে নরক গুলজার কর।‘
’না’ — শম্পা মাথা নাড়ে── ওসব এখন ভালাে লাগবে না।’
’তাের ঐ মরা খেকো চেহারার বন্ধুটা আসবে না আজকে?’
’তুই ঝােরা’র কথা বলছিস? ……. আচ্ছা, তাের কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই ওর প্রেমে পড়েছিস? চেষ্টা চালাবাে নাকি, কি বলিস? শি ইজ গুড।’
’আরে যা’─ ইস্তিয়াক হাত নাড়ে — ’এ বয়সে তাে ওসব প্রেম-ফ্রেম ছাড়া কিছুই বুঝিস না।’
’অ্যা, ভারী আমার মুররীরে। তাের বয়স কত? আমার চেয়ে মাত্র দেড়-বছরের বড় তুই।’
‘বুঝবি না’ – ইস্তিয়াক হালকা গলায় বলে— ’আমি জানতাম। আমি মানসিক বয়সের কথা বলছিলাম।’
’অলরাইট’ — শম্পা মাথা দোলায় — ‘তুই অনেক জ্ঞানী। সক্রেটিস। এখন তুই আমাকে সঙ্গে নিবি কি না বল।
ইস্তিয়াক যাবে মাহমুদের ওখানে। গতকাল সে জেনেছে, মাহমুদ চাচা এখন ঢাকায়। দেখাও হয়েছে সামান্য সময়ের জন্যে। আজ কথা
হবে অনেকক্ষণ, এই প্রতিশ্রুতি সে আদায় করেছে তখন। এখনাে সময় হয়নি। তবে শম্পার সঙ্গে বকবক করতেও তার ভালাে লাগছে না।
সে চোখ-মুখ বাঁকিয়ে বলে— ’তােকে সঙ্গে নেব?……. আমি তাে যাব মাহমুদ চাচার ওখানে। তুই ওখানে গিয়ে কি করবি?
আর মাহমুদ চাচা আমার একার সঙ্গেই কথা বলতে চান না, তােকে সঙ্গে নিয়ে গেলে তাে বসতেও বলবেন না।’
যেন বিরাট কোনাে তথ্য জেনে ফেলেছে, এমন ভাবে শম্পা হাসে— ’আচ্ছা আচ্ছা, তুই তাহলে মাহমুদ চাচার ওখানে যাস।’
’যাই’ — ইস্তিয়াক অবাক হয়ে বলে— ’না যাওয়ার কি হল? তুই এমন ভাবে বলছিস!’
’দাঁড়া, পাপা শুধু জানুক। হি উইল টেক সার্চ আ সিভিয়ার অ্যাকশন যে তুই ….।’
’আরে যা যা’─ ইস্তিয়াকের চোখে মুখে তাচ্ছিল্য খুব প্রকট ভাবে ফুটে ওঠে — ’সে আবার কি অ্যাকশন নেবে রে! আই নাে হিম থরােলী।
বেশি ক্রাইম করলে মনে জোর থাকে না।‘
’তুই তাহলে পাপাকে ক্রিমিনাল বলছিস’ — শম্পা চোখ কপালে তােলে— ’ঠিক আছে, ওয়ান কণ্ডিশন, আমি কিছু বলবাে না পাপাকে।
তুই আমাকে সঙ্গে নে, ব্যাস।’ ইস্তিয়াক হাত নাড়ে — ’ফরগেট ইট ম্যান। পাপাকে হাজার বার বললেও আমার কিছু এসে যাচ্ছে না।
সুতরাং আমি তােক সঙ্গে নিচ্ছি না। দ্যাটস ফাইনাল।’
’কিসের ফাইনাল রে’ — শম্পা ঘাড় বাঁকায়— ’দরকার হলে রিপ্লে হবে। শােন, আমি তােকে একটা এক্সকুসিভ ইনফরমেশন দেব।
তুই আমাকে সঙ্গে নিবি। ….. ইস, সেই কতদিন দেখি না চাচাকে। আচ্ছা, গণ্ডগােলের সময় চাচার একটা পা খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল, ওটা ভালাে হয়ে গেছে?’
ইস্তিয়াক ছােট বােনের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ — ‘তুই একটা ছাগল, বুঝেছিস? গুলি লেগে কেউ খোঁড়া হলে সেটা আবার ভালাে হয়ে যায় একসময়,
এই প্রথম শুনলাম।