উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এক
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব দুই
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফকিুর রশীদ ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব ছয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। শেষ পর্ব
তিন
অফিসের সঙ্গে শওকত আলীর সম্পর্ক সেই তখনই শেষ। তবু শেষবারের মতো আবুলকে দিয়ে চা আনায়। নিজের
টেবিলে ছড়ানো ফাইলপত্র দু’হাতে ঠেলে সরায়। মনে মনে হিসেব মেলায় আর কত! একযুগ তো ওই ফাইল ঘাটতে
ঘাটতেই কেটে গেল। ঝকঝকে তকতকে ফাইল। কাচের মত স্বচ্ছ ফাইল। কেরানিগিরই করেছে বটে দীর্ঘ সময়।
পরিচ্ছন্ন ফাইল ওয়ার্কের জন্যে কর্তাদের কাছে বিশেষ সুনামও হয়েছে তার। প্রমোশন পেয়ে অফিসার হবার পরওঃ
প্রতিটি ফাইল সে গভীর মমতায় নাড়াচাড়া করেছে। এতদিন পর সকল দায় তার ফুরালো। টেবিলের উপরে ফুলস্কেপ
সাইজের একটা সাদা কাগজ নিয়ে সে নড়াচাড়া করে। ভাঁজ করে বাম দিকে প্রয়োজনমত মার্জিন ফ্যালে। তারপর
কলম টেনে নেয়। না, আর কোনো ছুটির দরখাস্ত নয়। এবার সে পদত্যাগপত্র রচনা করবে। সবহস্তে হেমলক পানের
ব্যাপারটা সক্রেতিসকে ঠিক কেমন অনুভূতি এনে দিয়েছিল তা জানা নেই শওকত আলীর, তবু এই অবেলায় সেদিনের
সেই নির্মম শাস্তির কথা মনে পড়ে যায়। হেমলক নয়, চায়ের পেয়ালা হাতে তখনই ঘরে ঢোকে আবুল। বলতে গেলে প্রায়
একই বয়সের মানুষ তারা। চাই কী, এক দু’বছরের বড়ও হতে পারে। অন্তত এ অফিসর চাকরিতে সে-ই সিনিয়ার বটে।
এখানে জয়েন করার পরপরই আবুলই একদিন আগ বাড়িয়ে পরিচয় দেয়,
আমরা এক জেলারই মানুষ স্যার!
এক জেলার মানে? বাড়ি কোথায় তোমার? কৌতূহল দেখায় শওকত আলী।
একগাল হেসে আবুল জানায়, আমার বাড়ি শৈলকূপা। যশোরের শৈলকূপা।
কোথায় শৈলকূপা আর কোথায় নীলগঞ্জ! তেপান্তরের ফারাক। তবু আবুলের উত্থাপিত নৈকট্য প্রস্তাবকে সে প্রথম
থেকেই মেনে নেয়। বিভিন্ন সেকশনে ঘুরে ঘুরে আবুল এখন পারচেজ সেকশনে, শওকত আলীর অধীনে। সেকশন
বদলের এই আদেশ হাতে পেয়ে সেদিন তার চোখেমুখে সে কী আনন্দ উচ্ছ্বাস! বহুদিন পর যেন সে ঘরে ফিরছে।
কেমন অবলীলায় সে ঘোষণা করতে পারে, চইলে আলাম স্যার আপনার সেকশনে! সেই আবুলকেই এখন ফেলে
যেতে হবে বলে শওকত আলী মনে মনে কষ্ট পায়। আবুল কিছু জানেই না। ফলে তার মনে কোনো ভাবান্তরও নেই।
সে ধোয়া মোছা কাপ পিরিচে চা ঢেলে সামনে রাখে এবং জিগ্যেস করে,
আরেক কাপ কোথায় দেব স্যার?
নিজের কাপটা কাছে টেনে নিয়ে শওকত আলী চোখ তুলে তাকায়,
দু’কাপ এনছ?
জ্বি। আপনি তো তাই বললেন।
ঠিকই আছে। এক কাপ আমার। এক কাপ তোমার। নাও, চা
খাও।।
পরে খাচ্ছি স্যার।
পরে না। এখনই খাও। এই চা খাওয়ার পরে আমি আর থাকব না আবুল।
আবুল ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে। থাকব না মানে কী সেটা যেন ধরতেই পারে না সে। শওকত আলী চায়ের কাপে
চুমুক দিয়ে হাতের কাগজে খচ্ খচ্ করে লিখতে শুরু করে আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, কাহারও দ্বারা প্ররোচিত না হইয়া
এই পদত্যাগপত্র…..। হঠাৎ কলম থেমে যায়… প্ররোচিত না হইয়া? নাহ্! চেয়ারম্যানের যে অভব্য আচরণ, তাই তো
আমাকে বাধ্য করেছে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে! নিজের কাছেই প্রশ্ন করে শওকত আলী, তবু সে কথা কি পদত্যাগপত্রে
উল্লেখ করা চলে!
মাথার চুলে দু’বার আঙুলের চিরুনি চালিয়ে সে উঠে দাঁড়ায়, পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে দু’পা এগিয়ে যাবার পরও
আবার পিছিয়ে এসে আবুলের কাঁধে হাত রেখে সে স্পষ্ট ঘোষণা করে,
এই চাকরিটা আমি ছেড়ে দিচ্ছি আবুল।
আবুলের কণ্ঠে আছড়ে পড়ে আর্তনাদ
স্যার!
শওকত আলী আর পিছনে ফিরে তাকায় না। নিজের রুম থেকে বেরিয়ে হন্ধ হন্ধ করে চলে যায় এ্যাডমিন
সেকশনে। পদত্যাগপত্র হাতে করেই যায়। কিন্তু কী ভেবে যেন থম্কে দাঁড়ায়, ঘুরে আসে এবং মনিরুজ্জামান
সাহেবের রুমে পর্দা ঠেলে উঁকি দেয়। চেয়ার ফাঁকা দেখে দাঁতের নিচে ঠোঁট কামড়ে একটুখানি ভাবে, তাঁকে
পাওয়াটা কি খুব জরুরী! কী দরকার মনিরুজ্জামান সহেবের কাছে? তিনি পদত্যাগ না করার পরামর্শ দিলে কি
শুনবে সে? নাহ্! সিদ্ধান্ত তো সে নিয়ে ফেলেছে। আবার এ সব ভাবনা কেন! এবার পা বাড়াতেই সামনে এসে
দাঁড়ায় এরিনা খান। সিঁড়ি ভেঙে সে উপর থেকে নামছে পেন্সিল হিলে টক্ টক্ শব্দ তুলে। সিঁড়ির মুখেই দেখা।
এক প্রকার পথ আগ্ধলেই সে চেপে ধরে,
আপনার কী হয়েছে শওকত ভাই?
শওকত আলী যুগপৎ বিস্মিত এবং বিরক্ত হয়, বলে কী মহিলা? তার সামনেই তো যাচ্ছেতাই অপমানের ঘটনা
ঘটে গেল, তারপরও বলে কী না কী হয়েছে! মেজাজ খিঁচ্ড়ে ওঠে এরিনা খানের উপরে কত ছলা যে জানে মহিলা!
অফিসের সবাই প্রায় মুখিয়ে থাকে এই মহিলার একটুখানি সান্নিধ্য লাভের আশায়, তার এক ঝলক হাসির স্পর্শ
পেলে অনেকেরই সারাদিন মঙ্গলময় হয়ে যায়, অথচ শওকত আলী এই মুহূর্তে এরিনা খানকে এক লাফে ডিঙিয়ে
অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু তার উপায় কী? সামনেই ব্যারিকেড। সে খুব সন্তর্পনে বলে,
পথ ছাড়–ন। আমার কাজ আছে।
এরিনা খানও যেন নাছোড় হয়ে লেগেছে। সে জানতে চায়,
কাজটা কি অফিসিয়াল?
তাতে আপনার কী, বলুন তো!
কার রাগ আপনি কার উপরে তুলছেন শওকত ভাই?
উত্তেজনার লাগাম টেনে শওকত আলী বলে, আপনাদের অফিসটাই আমি ছেড়ে যাচ্ছি। অফিসিয়াল কাজ বলতে
এইটুকু। এই ফর্মালিটিজটুকু। প্লিজ আমাকে সেটুকু করতে দিন।
কথা শেষ না হতেই আচমকা এরিনা খান এক কান্ড ঘটিয়ে বসে। নিজের দু’হাত বাড়িয়ে ঝপ্ করে চেপে ধরে শওকত
আলীর হাত এবং তাকে একরকম টানতে টানতেই নিয়ে আসে নিজের রুমে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখে কেউ
কেউ খুব মজা পায়। কিন্তু কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রুমে ঢুকেই সে বলে,
আপনি কেন রিজাইন করবেন শওকত ভাই?
এরিনা খানের কণ্ঠ সহানুভূতিতে আর্দ্র, তবু শওকত আলীর মেজাজের তিরিক্ষিভাব কমে না,
সে কথা আপনাকে বলতে হবে কেন?
না। বলতেই হবে তার কোনো মানে নেই। কিন্তু আপনি এ কাজটা করবেন না। আমি অনুরোধ করছি, রিজাইন করবেন
না।
শওকত আলী শান্ত চোখে এরিনা খানের দিকে তাকায়। নতুন করে দ্যাখে। উদ্ধার করতে পারে না এই মহিলার আজ
হলোটা কী! তাকে পদত্যাগে নিবৃত্ত করার এই জোরটা সে পায় কোথায়! কী লাভ তার! এই অফিসের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির
সঙ্গে যার নিবিড় এবং মধুর সম্পর্ক, সে কেন শওকত আলীর মতো একটা পেটি অফিসারকে এতটা পাত্তা দেবে!
তা কখনো দেয়নি আগে, এখন হঠাৎ এভাবে পথ আগ্ধলে দাঁড়াবার কী যে মানে কে জানে! সে তবু দৃঢ়তার সঙ্গেই
জানায়,
অনুরোধ আমি রাখতে পারছি না বলে দুঃখিত। কিন্তু আপনি কেন এভাবে অনুরোধ করছেন, সেটাই তো আমি
বুঝতে পারছি না!
এক আঁজলা বিষণ্ন তা ছল্কে ওঠে আইরিন খানের চোখেমুখে। একটি দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে সে বলে, থাক সে কথা। আপনি কি
অন্য কোনো চাকরি পেয়েছেন?
নাহ্! খুঁজিইনি তো পাব কোথায়!
আগে একবার খুঁজে দেখুন চাকরির বাজারটা। তারপর না হয় ছাড়বেন।
শওকত আলী নিজের সিদ্ধান্তে অনড়, নাহ্! এ দোজখ যত তাড়াতাড়ি ছাড়া যায়, ততই ভালো।
উঠে পড়ে শওকত আলী। এরিনা খানও গভীর প্রশান্ত ভঙ্গিতে উচ্চারন করে,
বেশ।
এরিনা খানের মধ্যে সম্পূর্ণ অচেনা এক মানুষকে দেখে শওকত আলী ওই রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আরো একবার
উঁকি দিয়ে দেখে মনিরুজ্জামান সাহেবের চেয়ার তখনো ফাঁকা। না, কারো জন্যে আর অপেক্ষা নয়, সোজা গিয়ে
পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসে। কোনো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নয়, ভেতরে ভেতরে সে পরম প্রশান্তি অনুভব করে। পদত্যাগপত্র
নয় শুধু, এ যেন অনেকক্ষণের চাপ ধরে থাকা মলমূত্র সে কেবলমাত্র ত্যাগ করে এলো। বড্ড স্বস্তি, বড্ড আরাম। অফিস
থেকে বেরিয়ে সে পথ চল্তি এক রিকসায় উঠে বসে। কোনোরকম পথনির্দেশ নেই, গন্তব্যের উল্লেখ নেই; কেবল একবার
মাত্র হাত ইশারায় রিকসার গতি অব্যাহত রাখে। সহসা এ রকম অভাবনীয় এক ঘটনা ঘটে যাবার পরও শওকত আলী
রিকসায় বসে দিব্যি গুনগুনিয়ে গান গাইতে পারে। কী গান যে গাইছে সে নিজেই খেয়াল করেনি। নির্দিষ্ট একটি গানের সুরে
হুঁ হুঁ হুঁ করে বিশেষ এক প্রকার ধ্বনি উচ্চারণ করে মাত্র। রিকসাঅলা কিন্তু গানটা ঠিকই ধরতে পারে। একবার পিছনে ফিরে
আরোহীর মনমেজাজ জরিপ করে নেয় সে। তারপর সাহসে ভর করে বলেই ফ্যালে, আব্দুল জব্বার গাইছে, একখান গান!
আহ্! কেমুন তার গলা…
শওকত আলীর সুর ভাঁজা বন্ধ হয়ে যায়। নিজেকে সংযত করে নেয়। কিন্তু রিকসাঅলা তখন নিজেই মনের আনন্দে গলা
ছেড়ে দেয়…. তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়…। গান গায়, তবে ঘুরে ফিরে ওই প্রথম কলিটুকুই। তারপর আর এগোয়
না। বোধহয় বাকি গান তার মনে পড়ছে না। বাসায় ফিরে কাপড় বদ্ধলানোর সময় শওকত আলী আবারও গুণগুনিয়ে ওঠে।
নাহ্ এবার অস্ফূট স্বরে নয়। স্ফট কণ্ঠেই সে গায়… আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়…।
পাশের ঘর থেকে গিন্নি এসে উঁকি দিয়ে যায়, সঙ্গে কপট মুখ ঝাম্টা ফ্রি বাব্বা! অসময়ে অফিস থেকে ফিরে গান ধরেছ যে বড়!
রঙ ধরেছে মনে!
এ্যাই! শোনো শোনো! দীনা কই গো?
অফিস থেকে ফিরে এ মেয়েটিকে না দেখলে শওকত আলীর প্রাণ জুড়ায় না। মেয়েও তেমন। ওই এক দন্ড ঠিকই বাপের সামনে
গিয়ে দাঁড়ানো চাই। কিন্তু নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সে-ই যদি আগাম চলে আসে বাসায়, তাহলে দীনাকে পাবে কোথায় সামনে
তার পরীক্ষা। এখনো স্কুল থেকেই ফেরেনি। গিন্নি কটাক্ষ করে,
কটা বাজে সে হুঁশ আছে? ওর তো এখনো স্কুল ছুটিই হয়নি!
অ আচ্ছা।
ভাত খাবে, এসো।
শওকত আলীর খুব ভালো লাগে, তাঁর স্ত্রী কিছুই ধরতে পারেনি দেখে। এমন কি আগাম বাসায় ফেরার কোনো কারণও জিগ্যেস
করেনি। শাহানা মানুষটাই এইরকম নিরুদ্বেগ নির্বিকার। স্বামী আগাম ঘরে ফিরেছে, এ নিয়ে আর প্রশ্ন কী! তার জন্যে এটা সুখবর।
দীনা থাকলে ঠিকই প্রশ্ন করে জেরবার করে দিত মুখ শুকনো কেন, কী হয়েছে বলো, শরীর খারাপ কী না বুড়ো মানুষের মত পাকা
পাকা প্রশ্ন। হয়তো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চাকরি ছেড়ে আসার তথ্যটা টেনে বের করেই ফেরত! সেই অস্বস্তি থেকে বেঁচে যাওয়ায় আবারও
সে গান ধরে… কেউ তো বোঝে না প্রাণের আকুতি, বারে বারে সে কী চায়…।
অফিসের পুরো ঘটনাটা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারায় নিজেকেই একটা ধন্যবাদ দেয়ার কথা ভাবে শওকত আলী। কিন্তু হঠাৎ
ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ পড়তেই সব ভন্ডুল হয়ে যায়। এতক্ষণের আত্মপ্রসাদ দিল্লিকা লাড্ডু হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
ভয়ানক চম্কে ওঠে কে ওখানে? ওই আয়নায় ওটা কার ছবি? চোখ রগ্ধড়ে ভালো করে তাকায় ওই আয়নাজুড়ে উদ্ভাসিত
অবয়বে ও কি কোনো মুক্তিযোদ্ধার ছবি? শওকত আলীর কপালের দু’পাশে শিরাউপশিরা দাপায়, সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে
থুতু ছুঁড়ে দেয় ওই ছবিতে। দলা দলা থুতু গিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধার চোখেমুখে। তবু পুরো চেহারাটা ঢাকা পড়ে না। থু থু করতে
করতে মুখের থুতুই ফুরিয়ে যায়। গলা শুকিয়ে কাঠ। কিন্তু ওই মুখটা পুরোপুরি ঢাকা যেন তার খুবই প্রয়োজন। ওয়াক ওয়াক
করে থুতু তুলতে গিয়ে কণ্ঠ ছিঁড়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। সেই রক্তমাখা থুতুই দু’বার ছুঁড়ে দেয় আয়নায়। তারপর নিষ্ফল আক্রোশে
মুঠো পাকিয়ে আয়নায় ভেসে থাকা থুতুলিপ্ত চেহারায় ঘুসি চালিয়ে দেয়। ঝন্ধঝনাৎ শব্দে ভেঙে পড়ে ঢাউস আয়নার কাচ।
শাহানা বেগম এসে এই ভয়াবহ কান্ড দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। তারপর স্বামীর রক্তাক্ত হাত বুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে।