ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব- ০২
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চার
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পাঁচ
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব ছয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।।পর্ব বারো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব চৌদ্দ
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের।। পর্ব পনেরো
- উপন্যাস।। পাথর সময়।। মঈনুল আহসান সাবের ।। পর্ব ষোল
ক্লাসে মন বসে না তাদের। আফরিন, বাবলী, রুপা আর শম্পা বসেছে পাশাপাশি। নিজেদের মধ্যে তারা ব্যস্ত। বাবলী সবাইকে আড়াল করে কি যেন অঁকে খাতায়। শেষ করে দেখায় সবাইকে। ম্যাডামের ছবি এঁকেছে সে। সবকিছু ঠিকঠাক। শুধু মডামের মুখ চারকোণা বাক্সের মতো। ‘চারকোণা কেন?’ —আরা জানতে চায়। এইটুকু ভাবে বাবলী — ‘এই যেমন ধর, তুই রসকষহীন কারাে ছবি আঁকবি— কিভাবে আঁকবি সেটা। আমার মনে হয় মুখটা চারকোণা করে এঁকে দিলেই হয়। চারকোণ ব্যাপারটাই কেমন নিরস, তাই না? ‘তাই’—শম্পা বলে — বাবলী, তুই তাে অনেক কিছু ভাবিস।’ ‘তাের দেখি খুব বুদ্ধি।’ –রুপা বলে। ‘হ্যাঁ তাই— আফরিনও যােগ করে— ‘তুই তাে দেখছি শিল্পীমনাও ।’ বন্ধুরা সবাই খুক খুক করে হাসতে আরম্ভ করে।
বাবলী একটু ক্ষেপে — ‘তােদের সব সময় শুধু ইয়ার্কী, কিছু বললেই তােরা খোঁচাতে আরম্ভ করে দিস। ‘
‘তো কি করবে’ — সম্পা মুখ খােলার আগে আড়চোখ ম্যাডামকে দেখে নেয় একবার — ‘তাের কি করে মনে হল আনােয়ারী ম্যাডাম রসকষহীন।’ চোখেও দেখিস না কেমন ফ্যাশনেবল। রােজ শাদা শাড়ি পরে। কলেজে পড়তে আসার সময় শাদা শাড়ি — এটা ফ্যাশন না?’
রুম্পা অবশ্য তখনই মৃদু গলায় প্রতিবাদ জানায় — উহ, ওটা ফ্যাশন নারে শম্পা। ম্যাডামের স্বামী মারা গেছেন — তাই শাদা শাড়ি। শুধু কলেজে না, সব সময়ই।
‘তাই বলে সব সময় শাদা শাড়ি পরতে হবে?’
‘ম্যাডাম পরেন, তার ব্যাপার। ভালবাসাটা বােধহয় খুব গভীর ছিল রে।’
‘হ্যা, তা হতে পারে’ — সম্পা মাথা দোলায়– হয়তাে দু’জন দু’জনের জন্যে একদম পাগল ছিল।’
‘তাতাে বটেই, নইলে এতবছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন।’
শম্পা সরু চোখে তাকায় রুপার দিকে— ‘তুই দেখি অনেক খবর জানিস… তা, কবে মারা গেছেন ম্যাডামের হাজব্যাণ্ড?’
‘সে অনেক আগে, ষোল সতেরাে বছর আগে, একাত্তর সালে।’
‘ও, গণ্ডগােলের সময়।’
তাদের এ আলােচনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। পড়াতে পড়াতে ম্যাডাম বার কয়েক তাদের দিকে তাকান। তারাও বেশ গম্ভীর মুখে ম্যাডামের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ক্লাস শেষ হলে আফরিন বলে— ‘বাবা, সেই কবে গণ্ডগােলে মারা গেছেন ম্যাডামের হাজব্যাণ্ড আর এখনও ম্যাডাম শাদা শাড়ি পরে যাচ্ছেন । কী দিওয়ানা যে ছিলরে ভাই। তারা সবাই একটু হাসে। শম্পা বল— ‘দিওয়ানা তেরা নামকো এসেছে ,
ক্লাস ছিল বিকেল পর্যন্ত । শম্পার ভালাে লাগছিল না, দুপুরের পরই সে কলেজ থেকে ফিরে আসে। ইচ্ছে ছিল পায়ে হেঁটে রাস্তায় ঘুরবে একা। কিন্তু কী ভীষণ রােদ। পাঁচ পা হাঁটলে রোদে ঘেমে যেতে হয়। সুতরাং হেঁটে হেঁটে অনির্দিষ্ট কোথাও চলে যাওয়ার ইচ্ছেটা সে বাদ দেয়। কলেজ থেকে কিছু দূর হেঁটে এগিয়ে সে এক রাস্তার মােড়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এদিক- ওদিক তাকায়, মানুষ জন দেখে। এক ছােকড়া যেন নিতান্তই বেখেয়ালে তার নিতন্বে হাত বুলিয়ে যায়। ছােকড়াকে এক পলক দেখে শম্পা। ব্যাপারটা ভালােই লাগে তার। মুখে সামান্য হাসি ফোটে। ছােকড়া কি সামান্য উৎসাহিত হয়? বড় রোদ শম্পা বাড়ি ফেরে।
এই বিকেলবেলা সারা বাড়ি ঝা খা। নেই, কিছু করার নেই। কেউ নেই বাসায়। কার সঙ্গে সে কথা বলে। বাসায় শুধু মা, দ্যাট ফ্যাট ওন্ড লেডি। কিন্তু তার সঙ্গে কি কথা বলে সে! তার কথা মা বােঝে না, আর মাকেও তার বােঝা হল না এতদিনেও । মা খুব ভালাে, শম্পা জানে, টের পায়। তিন ছেলেমেয়ের ভালাে- মন্দ নিয়ে মা সব সময় উদ্ধিগ্ন। শম্পা বোঝে, তবুও কী যে এক আবরণ, তা ভেদ করে মার কাছাকাছি কখনাে পৌছানাে যায় না। তবু একবার মার ঘরে সে উঁকি মেরেছে। মা সােয়টার বুনছে খুব নিমগ্ন হয়ে। দেখে মুচকি হেসেছে সে। এই গরমকালে সােয়েটার? তাও বাবার জন্য। মার তৈরি কোন কিছুই বাবা পরেনি কোনােদিন। আগের কথা জানে না সে, কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এইরকমই তাে দেখছে। তবু মার অভ্যেস, যেন কর্তব্য, একটা না একটা কিছু করেই যাচ্ছে। এই এখন যেমন সােয়েটার। খুব হঠাৎ করেই পেনেলােপির কথা মনে পড়ে যায় শম্পার। ইস্তিয়াক পড়তে দিয়েছিল বইটা, বলেছিল, ‘পড়ে দেখ, রিয়েলি অ্যা গুড ওয়ান।’ তার পড়া শেষ হলে ইস্তিয়াক জিজ্ঞেস করছিল ‘কেমন, কি বুঝলি?’ শম্পা বলেছিল— ‘আহ, কামান ইস্তি …।’ ইস্তিয়াক হেসেছিল এমনি পড়তে হয়তাে তাের ভালােই লেগেছে, কিন্তু আমি জানি তুই একটা বড় ব্যাপার বুঝিসনি…তকে বলছি দাঁড়া।’ সংক্ষেপে বেশ বুঝিয়ে বলেছিল ইস্তিয়াক, শেষে বলেছিল— ‘ইথাকা শম্পা, ইথাকা ইজ নট ওনলী আ প্রেস , ইথাকা ইজ ডেন্টিনেশন … অ্যাও টেলিং য়ু শম্পা, আই মাস্ট রিচ দেয়ার।’ শেষের কথাগুলাে অত বােঝেনি শম্পা। ইস্তি তাে কত কিই বলে, সে বােঝে না। তবে সেই থেকে ইথাকার পৌছানাের কাহিনীটা তার খুব প্রিয়। তা, মা কি তবে পেনেলােপি? জামা বুনে যাচ্ছে। অবার খুলে ফেলবে, আবার নতুন করে আরম্ভ করবে? কার জন্যে, কার জন্যে মা’র এই পেনোলাপি হওয়া? কোন সে ইউলিসিস এসে মাকে উদ্ধার করবে?– এই ভাবনাটা অবশ্য বেশিক্ষণ চালাতে পারে না শম্পা। পেনেলোপি আর তার পাশ ফ্যাট ওন্ড মা?–– হেসে ফেলে সে।
কিন্তু কি করে সে এখন? মনে হয় কলেজ থেকে অসময়ে ফেরা উচিত হয়নি। ছুটির পর কোনাে বন্ধুর বাসায় যাওয়া যেত, সময় কাটতো। কাটতো কি? নাহ, কাটতাে না, শম্পা মাথা নাড়ে। ঘুরে-ফিরে কিছু অর্থহীন কথা হত শুধু, আর কিছু নয়।
কোনাে কাজও নেই হাতে। সারা বাড়ি এমন নিখুঁত টিপটপ গােছানাে, একটু হাত লাগানােরও সুযােগ নেই। নিজেকে কোন কিছুর সঙ্গে জড়ানােরও সুযােগ নেই। কিচেনে বালুর্চী, আরাে দু’জন যে কোন কাজের জন্য চব্বিশ ঘন্টা এক পায়ে খাড়া, বাগানে মালি গেটে দারােয়ান। শম্পা কোথায় যায়, কি করে? শেষে সে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়, দাঁড়িয়ে থাকে কতক্ষণ। বাগানে নামে, একটা একটা করে প্রতিটা গাছ গুটিয়ে দেখে। গাছে গাছে প্রচুর ফুল। ফুলগুলাে রঙিন আর খুব সুন্দর গন্ধ সব ফুলের। কিন্তু শেষ-মেষ শম্পার ভালাে লাগে না। ফুলগুলাে সব নিরব, যেন আটকে আছে। যদি ফুলগুলাে ইচ্ছেমত নড়তে-চড়তে পারতাে তবে খুব ভালাে হত, তার মনে হয়। বাগানে আর কতক্ষণ থাকা যায়? বারান্দায় উঠে আসার আগে নতুন কেনা বিশাল কুকুরটার মাথায় হাত বুলােয়। বড় আদর খেকো কুকুর, কিন্তু কোন লাফ-ঝাপ নেই, এ কুকুর নিয়ে সময় কাটে না। ফটেরিয়ারটা পড়ে পড়ে ঘুমােচ্ছে। শম্পার একবার মনে হয় জম্পেশ এক লাথি কষে। পর মুহূর্তে মনে হয়, এ ঘুমায় ঘুমাক, আমার কি। বারান্দায় সে আবার দাঁড়ায় কতক্ষণ। ইচ্ছে করে না দাঁড়িয়ে থাকতে। বাড়ির ভেতরে যেতে ইচ্ছে করে না। দাঁতে নখ কাটে সে, কিছু যদি একটা করার থাকতো।
একসময় সে মার পাশে এসে বসে। মার উলের কাটা থামে। শম্পাকে দেখে আপাদমস্তক। উলের কাটা আবার চলতে আরম্ভ করে— ‘তােকে খুব শুকনাে লাগছে, আজকাল বড় অনিয়ম করিস, খাওয়া – দাওয়া …।’ শম্পা ওঠে। ড্রংইরুমে বসে কতক্ষণ ফোনের ডায়াল ঘােরায়। কয়েকজন বন্ধুকে পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের সঙ্গেই বা নতুন আর কি কথা। আজ কলেজেই দেখা হয়েছে তাদের সঙ্গে। শেষে সে ইচ্ছে মতাে নাম্বার ঘােরাতে আরম্ভ করে। আননােন নাম্বার, ওপাশ থেকে কেউ রিসিভার উঠিয়ে ‘ইয়েস কিংবা’ হ্যালাে হ্যালাে বলে চ্যাচাঁয়। কেউ ‘ধ্যাৎ শালা’ কিংবা ‘ব্লাডি হেল’ বলে রিসিভার নামিয়ে রাখে। শম্পা তখন একটু একটু হাসে। কিন্তু এই খেলাটা বেশিক্ষণ ভালাে লাগে না। ছাদে উঠে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকে সে। তবে সেখানেও বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। পাশের ছাদে স্কুলে পড়া ছেলেটা খুব উৎসাহী হয়ে ওঠে। শম্পা আড়চোখে একবার দেখে। আপন, খুব হেলাফেলায় শাড়ির আচল সরিয়ে ব্লাউজের হুক ঠিক করার ভান করে সে। তারপর ছাদ থেকে নির্বিকার নেমে আসে।
নিজের ঘরে এসে টেবিলের ওপর চুপচাপ পড়ে থাকা পাঁচশ টাকায় নােটা নেড়েচেড়ে দেখে। কাগজ, এ কাগজের কোনাে প্রয়ােজন নেই তার। পরশু রাতে বাবার পকেট থেকে নােটটা সরিয়েছে সে। পরত বেশ রাতে বাবা মুখে ভুতুরে গন্ধ নিয়ে
ফিরে সোজা বিছানায়। মুখে এমন গন্ধ প্রায়ই থাকে। তা পরশু শম্পা হাত চালালো। এখন অক্ষও রয়ে গেছে। কি করবে, খরচের কি পথ? সপ্তাহে তার মোটা অঙ্কের হাত–
হাত-খরচ জোটে। সে টাকাই সে খরচ করে কুলিয়ে উঠতে পারে না। আর কখনাে যদি কেনার দরকার পরে কিছু, নাম উল্লেখ করলেই হয়। কিংবা নাম উলেখ করে ইচ্ছে মতাে অ্যামাউট জানালেও হয়। সুতরাং পাঁচশ টাকার নােটটা গত পুদিন হল নিঃসঙ্গই পড়ে আছে। থকুক, ওটা তো একটা অ্যাডভেঞ্চার। অ্যাডভেঞ্চারের স্মৃতি চিহ্ন ভাঙতে নেই। তাছাড়া অ্যাডভেঞ্চার বড় ভালােবাসে সে। টেবিলের ওপর নােটটা রেখে দিতে দিতে একটু হাসে শম্পা। অ্যাডভেঞ্চার তার বাবার প্রিয়। তার বন্ধু রুমঝুমের বড় বোনের সঙ্গে বাবা ইন্ডিয়া ঘুরে এল মাস দুয়েক আগে।
নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সে রুম্পার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। রুম্পার ঘরে ঢোকার ইচ্ছে তার বহুদিনের ।
সুযােগ পেয়ে একা ঢুকতে পারলে চমৎকার একটা ব্যাপার হত। রাজ্যের সব সিক্রেট জিনিস রুম্পার ঘরে। ওসব যদি খুলে-মেলে একটু দেখতে পারতাে সে। কিন্তু রুম্পাটা বড় চালাক। ঘর থেকে বেরোবার সময় সবসময় তালা দেবেই। শম্পা জানে রুম্পা আজ গেছে তার সতেরাে নাম্বার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে। মাসখানেক পর রুম্পার বিয়ে। ছেলের বাবা শহরের বিগ-শট। ছেলে কানাডায় কি এক রিসার্চ ওয়াকে ব্যস্ত। বিয়ের পর রুম্পাকে সেখানেই নিয়ে যাবে। শম্পা এটুকু জেনেছে। রুম্পার আপত্তি নেই বিয়েতে। কানাডা জায়গাটা ভালাে, ছেলের ব্রাইট ফিউচার, সামনাসামনি দেখেছে রুম্পা, বিদেশে আছে বেশ কবছর, তাই শরীরে বেশ তেজী ভাব— রুম্পার না করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে শম্পা যতটুকু জেনেছে— এই সতেরাে নম্বর প্রেমিকটি নাকি ত্যাদোড়, সে গেরাে খুলতে চায় না। অবশ্য রুম্পা পারবে, শম্পা জানে রুম্পা ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। শম্পা তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। এগােতে এগােতে সে ইস্তিয়াকের ঘরের সামনে এসে থামে। ঘর খােলা, শম্পা একটু হাসে, ইস্তির ভাবসাবই এমন। তার ঘর সবসময় খোলাই থাকে, সে নিজে কিছু দেখায় না, তবে কেউ দেখলে দেখুক। ইস্তিটা এখন থাকলে বেশ হত। ইস্তির সব কথা বােঝে না সে। তবু ভালাে লাগে তার। কিন্তু কখন বাসায় থাকবে বা ফিরবে তা তাে ইণ্ডিয়াক নিজেও জানে না। ইস্তিয়াকের ঘরে কোথায় কি তা শম্পার মুখস্থ। এমন হেলাফেলায় সে ছেলে ঘর খুলে রাখে, ঢুকতে ইচ্ছে করে না। তবু শম্পা ঢােকে। কতক্ষণ ক্যাসেট আর রেকর্ড। উল্টে-পাল্টে দেখে। পছন্দ হয় না, ইস্তিয়াকের শুধু মিউজিক পছন্দ, শম্পার তা ভালাে লাগে না। রেকের বইগুলাে নেড়ে-চেড়ে দেখে সে। ইতিহাস, রাজনীতি, বিজ্ঞান। না, পােষাবে না। টেবিলের ড্রয়ার টানতেই শম্পা অবাক। এমন কখনাে ড্রয়ার তালা নেই।
ড্রয়ার খুলে খামােখাই খোলা দরােজার দিকে সে একবার তাকায়। ইণ্ডিয়াক এ বাসায় ফিরবে না। বাসায় শুধু মা, ঐ মহিলাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ড্রয়ারে কিছু কাগজ এলোমেলো হয়ে আছে। কিন্তু এসব কাগজ তার দরকার নেই। ড্রয়ারের এক কোণে নীল সবুজ মোড়কে জড়ানো বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট। ট্যাবলেটগুলো সে নেড়েচেড়ে দেখে। বেশি সরাতে সাহস হয় না। একটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ড্রয়ারটা বন্ধ করে দেয়।
ঘর থেকে বেরিয়ে দরােজা ভিজিয়ে চারপাশে একবার তাকায় শম্পা। না, কেউ দেখেনি। ব্লাউজের গলা গলিয়ে সে ট্যাবলেটটা ভেতরে রাখে তারপর পুরাে বাড়ি চক্কর খায়। নিজের ঘরে এসে ট্যাবলেটটা বইয়ের ফাঁকে রেখে দেয়। মনে হয় খামােখাই সে ভয় পেয়েছে। সে ইস্তির ট্যাবলেট সরিয়েছে, তা কেইবা দেখার আছে। আর দেখলেই বা তাকে কে বলে। শম্পা জানে, এসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানাের কেউ নেই। ইস্তিয়াক কি ট্যাবলেট গুনে রেখেছে? আর রাখলেই বা, ইস্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক চমৎকার। ইস্তি বড়জোর চোখ রাঙাবে, মৃদু ধমক দেবে। বলবে, ‘আর কখনাে নিবি না’ কিবা ‘ইচ্ছে হলে কিনে খা, আমার ড্রয়ার হাতাস কেন’— ব্যস, ব্যাপারটা এভাবেই মিটে যাবে। এই ভেবে তার খুব ফুর্তি হয়। মন ভালাে ছিল না, রােজকার মতাে সারা বাড়িতে কোথাও কিছু করার ছিল না তার, এখনাে নেই, তবু বাকী সময়টুকু তার খুব আনন্দে কাটে।