উপন্যাস

উপন্যাস //কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পর্ব সাত

তোমার ইউনিভার্সিটির বড় ভাইকে আগে জানতে হবে, ভালো করে জানতে হবে। শুধু জানা নয়, বেয়াদপ ছেলে বুঝলে হে, ইউনিভার্সিটির বড় ভাইকে ঠিকঠাক সম্মানটাও করতে হবে।’ এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে যায় কাব্য কাশেম।

  • সরি ভাই। বলে জহির খুব কাবু হয়ে যায়। তবে কাবু হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতেও তার খুব বেশি সময় লাগে না।
  • ভাই, একটা দাওয়াত রাখতে হবে।
  • কীসের দাওয়াত?
  • মানে আপনাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে বসতে চায়।
  • কে? তুমি?
  • না, আমি না, কবি তাবাসসুম।
  • তাবাসসুম মানে অর্পা তাবাসসুম?
    -জি।
  • তা বসবে, সেটা তোমার কেন বলতে হবে?
  • না মানে আমাকে বলতে বললেন, উনি লজ্জা পাচ্ছেন, আপনি কী মনে করেন।
    হা হা হা করে হেসে ওঠে কাব্য কাশেম। তাবাসসুমের মতো একজন সুন্দরী দাওয়াত করলে কোনো শালার কোনোকিছু মনে করার মতো বুকের পাটা আছে, বলো?
    জহির হা হা হা করে হেসে ওঠে।
  • তুমি আজকে রাতে গিয়ে একটা কবিতা পাঠিয়ে দিও আমার মেইলে, ঠিক আছে?

জহির বাসায় এসে ল্যাপটপ খুলে প্রথমে কাব্য কাশেমের ই-মেইলে কবিতা পাঠায়। তারপর ফেসবুকে ঢুকে দেখে নেয় কে কে চ্যাট লিস্টে আছে। না অর্পা তাবাসসুম এখনো আসেনি, তবে শিলা কুমকুম আছে। কিন্তু তাকে এ মুহূর্তে নক করা যাচ্ছে না। ফলে এই ফাঁকে কবি কাব্য কাশেমের ‘ও চাঁদ এসো একসঙ্গে হাঁটি’ কবিতার বইটি নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকে জহির।
জহির একদিকে কাব্য কাশেমের কাব্যগ্রন্থ নিয়ে এক-দুই লাইন লিখছে, অন্যদিকে চ্যাট লিস্টে নজর রাখছে। এর মধ্যে দেখা গেল অর্পা তাবাসসুমের একটা স্ট্যাটাস জহিরের ওয়ালে ওপরের দিকে লটকে আছে নারীকবি বলে আলাদা কোনো ব্যাপার আছে নাকি, কেন বলতে হবে স্যাফো প্রথম নারীকবি, কেন বলতে হবে চন্দ্রবতী বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীকবি। কবিতারও কি লিঙ্গভেদ আছে?
অর্পা তাবাসসুমের এই স্ট্যাটাসে একের পর এক লাইক আর কমেন্ট পড়তে থাকে। তার মানে তাবাসসুম অনলাইনেই আছে, হয়তো চ্যাটে ধরা দিচ্ছে না। জহির স্ট্যাটাসে লাইক দিয়ে কমেন্ট করে, ঠিক বলেছেন, প্রকৃত কবিতা শেষ পর্যন্ত কবিতাই, আর কিছু নয়।
কমেন্ট দিয়ে কিছুক্ষণ সে অপেক্ষা করে। দেখে তাবাসসুম কমেন্টে লাইক দিয়েছে।
জহির ইনবক্স করে, আপু আছেন?

  • হুম আছি।
  • চ্যাটে যে আপনাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
  • আর বলো না, ছেলেদের মতো আমরা চাইলেও অনলাইন হয়ে থাকতে পারি না। অনলাইন হলেই একের পর এক নক করতে থাকে, কেমন আছেন, আপনি দেখতে খুব কিউট, ফালতু সব।
  • এটা একটা সমস্যাই বটে। তার ওপর আপনার মতো সুন্দরী কাউকে পেলে তো কথাই নেই।
  • তুমিও একইরকম বলছ কিন্তু!
  • সরি আপু।
  • হা হা হা, তোমার দোষ কী। একটু আগে এক ছেলে কী বলল জানো, বলল, আপু আপনার ঠোঁট দুটা দেখলে গোলাপের পাপড়ি বলে মনে হয়, মনে হয় ছুঁয়ে দিই।
    জহির কিছু লিখে না, না লিখে লজ্জা পাওয়ার একটি স্টিকার পাঠিয়ে দেয়।
  • আপু, আপনার কথা কিন্তু বলেছি আজ কাব্য কাশেম ভাইকে?
  • তা-ই নাকি? কী বললে?
  • বললাম, আপনি উনাকে ইনভাইট করেছেন।
  • আমি! ওরে ফাজিল, হা হা হা। তো কী বলল?
  • বলল ওকে। আপনার কথা শুনে বেটার না করার সাহস আছে?
  • হা হা হা, ফাজিল তুই। ঠিক আছে এর মধ্যে একদিন ফ্রি হয়ে বলছি, যেদিন বাসায় ঝামেলা থাকবে না।
  • আপু, বাসা নয়, কোনো রেস্টুরেন্টে।
  • আচ্ছা, তাহলে যেকোনো দিন তুই আমাকে জানাস।
    এই যে তুমি থেকে তুই-এ নেমে এল কবি অর্পা তাবাসসুম, তাতে জহিরের মনে হলো এখনই মোক্ষম। সে কথাটা বলে দিল।
  • তবে আমাকে কিন্তু বাসায় একদিন দাওয়াত করবেন। আপনার হাতের খিচুড়ি খাব, কতদিন বাসার রান্না খাই না।
  • আহারে, ওকে তুই কালই চলে আয়, কাল রাতে।
  • কাল রাতে? কিন্তু ভাইয়া আছে না…
  • তোর ভাইয়া আছে, ও থাকলে অসুবিধা কী, তুই একটা পুঁচকে, তোর ভাইয়া কিছু মনে করবে না।
  • না মানে।
  • আচ্ছা, ঠিক আছে যেদিন তোর ভাইয়া থাকবে না ওইদিন আসিস, আমি জানাব।
    জহির নড়েচড়ে বসে। এ কথার কোনো উত্তর দেয় না, ম্যাড হয়ে গেছে এমন একটি স্টিকার পাঠিয়ে দেয়।
    ওদিক থেকে কোনো উত্তর আসে না। জহির আবার নক করে, আপু আছেন? কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায় না।
    কোনো সাড়া না পেয়ে পিয়ালের দিকে নজর দেয়। জহির পিয়ালকে বলে, দেখছিস সাহিত্য করতে আসা নির্লজ্জটাকে?
  • না, কী হইছে?
  • দেখ হালারপুত সাজ্জাত বখতিয়ারকে। আগে ক’টা অনুবাদের বই বেরিয়েছে, এবারই তাঁর প্রথম গল্পের বই বেরুল। তাই নিয়ে সেমিনার, আয়োজক সে নিজেই। তাতে আলোচক হিসেবে আছেন ইয়াকুব আলীও, আর আছে তার গুরু চলন শাহরিয়ার।
  • বলিস কী! ওকে অবশ্য প্রতিদিনই পোস্ট দিতে দেখা যায়, তার বই অমুক পড়ে মুগ্ধ, তমুক পড়ে জানিয়েছে নতুন প্রতিভার আবির্ভাব ঘটলো বাংলা সাহিত্যে।
    জহির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা কাজে লাগায়, মনে হচ্ছে, তোকেও ছাড়িয়ে যাবে।
    খোঁচাটা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিয়াল একটা প্লাস্টিকের স্কেল জহিরের দিকে ছুড়ে মারে। জহির অবশ্য হা হা হা করে হাসতে হাসতে তা ধরে ফেলে।
    পিয়ালের রাগ কমাতে জহির বলে, দোস্ত, মোমেনের কাজ-কারবার দেখছস?
  • না, কী করছে? মিনমিন করে পিয়াল। যেন উত্তর দেয়ার ইচ্ছা নাই, তবু দিল।
    জহির গলার স্বর উঁচু করে মোমেন মেহেদিকে ডাকে। মোমেন এসে বলে, বলেন জহির ভাই।
  • তুই কিন্তু আর এই বাসায় থাকতে পারবি না।
  • কেন ভাই, আমি কী করলাম আবার।
  • তোর নামে আজকে দারোয়ান আবার বিচার দিছে।
  • আমার নামে বিচার দিবে কেন?
  • তুমি আজকে আবার কাকে নিয়া আসছিলা, বলো?
    -ভাই এইডা কী বলেন, আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে,
Series Navigation<< উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // ষষ্ঠ পর্বধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ// পর্ব আট >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *