উপন্যাস// কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে// আলমগীর রেজা চৌধুরী// দ্বিতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস/কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে/আলমগীর রেজা চৌধুরী/ প্রথম পর্ব
- উপন্যাস// কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে// আলমগীর রেজা চৌধুরী// দ্বিতীয় পর্ব
- উপন্যাস/কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে/আলমগীর রেজা চৌধুরী/পর্ব তিন
- উপন্যাস//কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে// আলমগীর রেজা চৌধুরী//পর্ব চার
- উপন্যাস//কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে//আলমগীর রেজা চৌধুরী//পর্ব পঞ্চম
- উপন্যাস//কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে//আলমগীর রেজা চৌধুরী//পর্ব ছয়
- উপন্যাস// কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে // আলমগীর রেজা চৌধুরী // পর্ব সাত
- উপন্যাস// কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে// আলমগীর রেজা চৌধুরী// পর্ব আট
- উপন্যাস//কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে//আলমগীর রেজা চৌধুরী//পর্ব নয়
- উপন্যাস//কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে// আলমগীর রেজা চৌধুরী//পর্ব দশ
- উপন্যাস// কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে// আলমগীর রেজা চৌধুরী // পর্ব এগারো
- উপন্যাস // কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে // আলমগীর রেজা চৌধুরী // পর্ব বারো
- উপন্যাস // কালপুরুষ এখনো দাঁড়িয়ে আছে // আলমগীর রেজা চৌধুরী// শেষ অধ্যায়
হোটেলের দরোজায় নক করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকে পার্থ। দরোজা খোলার কথা জুডির।
জুডির একটি মিষ্টি হাসি দেখতে পাবো। কিন্তু দরোজা খোলার পর নজরে আসে জুডির মেয়ে জানালার পর্দা ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে। দৃশ্যটি দেখে পার্থের প্রাণটা ভরে যায়।
জুডি বলল, ‘ওয়েল কাম, পার্থ।’
পার্থ শুধু মাথা নত করে উত্তর করা ছাড়া আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করে না। শুধু শিশুটির দিকে অপলক চেয়ে থাকে।
জুডি বলে, ‘তোমার কি শরীর খারাপ?’
‘তোমার সন্তান দেখে বাংলাদেশে আমার সন্তানদের কথা মনে পড়ছে। আসার সময় এয়ারপোর্টে কান্নাকাটি করছিলো।’
‘কষ্ট লাগছে?’ জুডির কণ্ঠের সমবেদনার সুর।
‘কী নাম রেখেছো ওর? জুনিয়র এ্যাটকিনশন।’ বলে শিশুটির গাল টিপে দেয় পার্থ।
‘ওর নাম রেখেছি তাতশি।’
শোফায় বসতে বসতে জুডি বলে, ‘কী খাবে কফি না বিয়ার?’
পার্থ বলে, ‘জুডি আমি মাত্র দুই দিন এই শহরে থাকছি। আমার সময় কম। এই সময়ে আমি অনেক কাজ সারতে চাই। আমরা পরস্পরকে জানবো। শুধু তুমি আমাকে সঙ্গ দেবে।’
জুডি হাস্য কণ্ঠে বলে, ‘তোমাকে আমি এ কথাই বলতে চেয়েছিলাম। আমারও ভালো লাগবে। মিঃ এ্যাটকিনশন আসবে এক সপ্তাহ পর। তাকে চমৎকার একটা সারপ্রাইজ দেয়া যাবে। তোমার দুটো চিঠিই সে বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছে। তুমি মুক্তিযোদ্ধা। ওর কত রকম বিস্ময়। জাহাজের মানুষ তো। জলের কোমলটুকু জানে। সুন্দর জানে। ছলনাটুকু দেখেনি।’
‘তুমি ক’দিন এখানে আছো?’ পার্থ জিজ্ঞেস করে।
‘আমরা ছুটি কাটাতে এসেছি। বড় মেয়ে পলিন ছুটি কাটাতে গেছে অকল্যান্ডে ওর নানুর ওখানে। আমরা সিঙ্গাপুরে। এ্যাটকিনশনের ম্যানিলাতে কী এক কাজ আছে। তার হপ্তাখানেক লাগবে। বাচ্চাটাকে নিয়ে আমার নিঃসঙ্গ লাগবে।’ বলতে বলতে জুডি বাচ্চাটার মুখে টিপে দেয়। তাতশি শান্ত সুবোধের মতো হাতের আঙুল নিয়ে চুষতে থাকে।
‘তুমি চশমার ফ্রেমটা বদলিয়ে ফেলেছো? ওই ফ্রেমটাতে তোমাকে কানাই মাস্টারের মতো লাগতো। যুদ্ধাহত হাসপাতালের বেডে শুয়ে কতবার তোমাকে কানাই মাস্টার ডেকে আনন্দ পেতাম।’
‘তুমি হাসতে। এসব কথা তোমার মনে আছে?’
‘কিছু ভুলে যাইনি আমি। ঠিক ঠিক মনে রেখেছি। তোমার কথা, বাংলাদেশের কথা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাতর চিৎকার, তোমার মা’র মাতৃত্বময় চেহারা আমাকে মমত্বময় করে তুলেছে। আমি এসব বিস্মৃত হতে চাই না।’
‘জুডি। উন্মুক্ত কোথাও বসে কথা বলি। সমুদ্রের ধারে কোথাও। কিন্তু বাচ্চার কোনো সমস্যা হবে নাতো?’
‘না। ওর বয়স এখন চার। গত বছর আমরা ফিজিতে গিয়েছিলাম। ও সঙ্গে ছিলো। কোনো সমস্যা বাধায়নি। বরং বাইরে ঘুরলে ওর ভালো লাগবে।’
জুডি দ্রুত বাইরে বেড়োনোর প্রস্তুতি নিতে থাকে।
‘তুমি কি জানো সিঙ্গাপুরে কেউ একা আসে না? সঙ্গী সাথে না থাকলেও জুটিয়ে নেয়। তোমার ওই রকম ইচ্ছে আছে নাকি?’
জুডি ওর ঠোঁটে লিপস্টিকের প্রলেপ দিতে থাকে।
‘আমাকে কি তোমার ওই রকম মনে হয়েছে?’
‘না না তোমরা বাঙালিরা তো আবার প্লাটনিক। এত বড়ো একটি মুক্তিযুদ্ধের পরও তোমরা আগের মতো আছো আত্মকেন্দ্রিক, পুরোনো মূল্যবোধ আঁকড়িয়ে।’
এই মুহূর্তে পার্থের কোনো কিছু শুনতে এবং জানতে ইচ্ছে করে না।
পার্থের যুদ্ধক্ষত চিনচিনিয়ে ওঠে।
নিজের মধ্যে কেবলই ভাঙতে থাকে।