কাব্যশীলন বর্ষাসংখ্যা-২০২৩ ইপেপার
ছোটগল্প শিশুতোষগল্প
Read Moreছোটগল্প শিশুতোষগল্প
Read Moreলোকালয় ঝড়ের গতিতে ছুটছে পেছনে- গাছপালা-ক্ষেতখলা-কাজকরা মানুষজন- ঘরবাড়ি সবশুদ্ধ মুহূর্তে দৃষ্টির আড়াল। জানালায় চোখ রেখে মনে হয়- ছুটেচলা সব কিছু
Read Moreআমাদের এলাকার বরকত আলীর বড়লোক বনে যাওয়ার কাহিনী আলাদা বয়ানের কোনো প্রয়োজন পড়ছে না এই কারণে যে স্বাধীন সোনার বাংলায় যারা যারা বড় বড় বড়লোক হয়েছে, তাদের সবার বড়লোক হওয়ার গল্প প্রায় একই রকম।প্রত্যেকেরই একটা করে আলাদ্দিনের জিন পাওয়ার ঘটনা রয়েছে। তবে বড়লোক হওয়ার পরে কেউ আর একরকম থাকে না। তাই তাদের প্রত্যেকের গল্প আলাদা আলাদা করে বলা বা লেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই আলাদাদের মধ্যেও বরকত আলী আবার বিশেষ রকমের আলাদা। বড়লোকরা বড়লোক হবার পরে বেশিরভাগই ধার্মিক হয়ে যায়। কেউ কেউ অবশ্য সংস্কৃতিবান হওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগে। তবে বরকাত আলী সেপথে যায়নি। সে-ও ধর্মপথেই যেতে চেয়েছে। ইহকালে আল্লা তো অনেক অ-নে-ক অ–নে–ক দিলেন, এখন সেই অনেকের খানিকটা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলেই পরকালের পথটাও খোলাসা হয়ে যায়। বরকত আলী তাই ধার্মিকই হতে চায়। তবে অন্য বড়লোকদের চাইতে অন্যরকম ধার্মিক। একেবারে ছহি ও আসল ধার্মিক। ছোটবেলায় কয়েক বছর মাদ্রাসা-মক্তবেই পড়েছিল বরকত আলী। গরীবের ছেলেরা পড়তে চাইলে মাদ্রাসা ছাড়া আর কোথায় যাবে! সেই কারণে কিছু কিছু আরবি-ফারসি শব্দ এখনও মনে আছে তার। সেই শব্দগুলির অন্তর্নিহিত ওজন এতদিনে তার মনে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে। ছহি! আহা শব্দটার তাৎপর্য যে কত ব্যাপক! ছহি। খাঁটি, আসল, পুরোপুরি ভ্রান্তিহীন, যেখানে কোনো রকমের বেদাতের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। সেই ছহি পথে ধর্ম পালন করবে বরকত আলী। ধর্মের পাঁচ খুঁটির মধ্যে কালেমা তো তার মুখস্তই আছে। নামাজ শুরু করে দিয়েছে কয়েক মাস থেকে। আরবি উচ্চারণ যাতে সঠিক হয়, সেজন্যে এই শহরের সবচেয়ে দামী আরবিশিক্ষককে মাইনে দিয়ে পড়তে শিখেছে কোরআনের ভাষা। রোজা করাটা কঠিনই হবে। কিন্তু আগামী বছর থেকে সেটা সে করবেই করবে। হজ তো হাতের মুঠোয়। চাইলেই ভিআইপি কোটায় গায়ে সাদা কাপড়ের এহরাম বেঁধে উড়াল মেশিনে মক্কায় গিয়ে জিলহজ মাসে হাজরে আসওয়াদে চুমু খেয়ে আসা যাবে। সে এই মৌসুমেই সেটি পালন করবে। আগে বিভিন্ন ব্যবসায়ী দলের সাথে, মন্ত্রী-এমপিদের সাথে কয়েকবার ওমরা করে এসেছে সে। নিয়ম-কানুন সব মুখস্ত। বড় হজ এবারেই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সবচেয়ে ছহিভাবে সে পালন করতে চায় পঞ্চম খুঁটি জাকাত। এই জায়গাতেই তার সাথে অন্য সব বড়লোকের তফাৎ। তারা সবাই বছর বছর জাকাত দেয় বটে, কিন্তু তাদের একজন হিসাবেই বরকত আলী জানে যে ছহি জাকাত কেউ আদায় করে না। একটা কোনোরকম থোক টাকা হাতের মুঠোয় গমের দানা নিয়ে জংলি পায়রাদের মধ্যে ছিটিয়ে দেওয়ার মতো করে বছরান্তে ছিটিয়ে দেয় পেয়ারের নারী-পুরুষদের মধ্যে। বরকত আলী সেটি করবে না। সে ছহি মতে, ছহি পরিমাণে, এবং ছহি পদ্ধতিতে জাকাত দেবে। সেই পরিকল্পনা মতো বরকত আলী নেমেও পড়েছে কাজে। জাকাত দিতে হবে একেবারে সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ হিসাব করে। একই সঙ্গে দেবার পদ্ধতিও হতে হবে নির্ভুল। এমন লোককে দিতে হবে, যে সত্যি সত্যি জাকাতের হকদার। তার ওপর জাকাত বিতরণ করতে হবে গোপনে। কোনো এক মওলানার সুরেলা ওয়াজ-কণ্ঠ ভেসে আসে তার কানে- এমন ভাবে জাকাত-সদকা দিবে গো ভাইরা যাতে তুমি ডান হাত দিয়ে দেওয়ার সময় তোমার বাম হাতও তা টের না পায়… গ্রামের রাস্তায় জষ্টিমাসের ধুলো-ওড়ানো বাতাসের মতো নোংরা এক সন্ধ্যা উতড়ানোর পরপরই তৈরি হতে শুরু করে বরকত আলী। যা যা সঙ্গে নিতে চায় এমন সব জিনিস নিজে স্টোর রুমের পাশের একটা ঘরে আগে থেকেই জমা করে রেখেছিল। তার বিশাল বাড়ির অগুনতি ঘরে প্রায় গোপনেই যে কোনো কাজ সারা যায়। কত গোপন কাজ সে এই বাড়িতে সেরেছে! তার কোনো কাজে কাঁধের ওপর দিয়ে বা দূর থেকে উঁকি দেবার সাহস এবাড়িতে কারও নেই। আছে কেবল তার বউয়ের। কিন্তু তার সময় নেই বরকত আলী কী করছে না করছে তার খোঁজ নেবার। কারণ সে এখন লেডিস ক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠনের ওপরের দিকের সদস্য। কোথাও সংবর্ধনা, কোথাও বিচিত্রানুষ্ঠান, কোথাও সেমিনারÑ এইসব নিয়ে মহাব্যস্ত। কাজেই বরকত আলী পুরোপুরি নিজের মতো করে নিজেকে গুছিয়ে নেবার সময় পায়। এশার আজান হতে হতেই তার বোঁচকা গোছানো শেষ। এখন এই বাড়িতে একজন মাইনে করা ইমাম রাখা হয়েছে। তিনি আজানও দেন। নিচতলার বড় একটা হলঘরকে নামাজের ঘর বানানো হয়েছে। পাঁচঅক্ত জামাতে নামাজ হয়। বাড়িতে যারা যারা থাকে, আত্মীয়-আশ্রিত এবং কাজের লোক, সবাইকে নামাজ পড়তে হয় পাঁচঅক্ত জামাতে। এশার নামাজের পরেই বোঁচকা নিয়ে বরকত আলী একাকি বেরিয়ে পড়ে বাঁধের পথে। বাঁধের ওপর বুনো পানির তাড়া খাওয়া মানুষদের ঘর। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, দশ বছর আগেও এরা অনেকেই ছিল সম্পন্ন চাষী, কেউ ছিল ভাগচাষী। চরের জমিতে ফসল ফলানো ছিল এদের কাছে ধর্মপালনের মতো নিয়মিত ব্যাপার। কিন্তু অনেকদিন থেকেই নদী যে তাদের জমির তলার জমিনটাকে ফোঁপরা করে তুলছিল, সেটা টের পায়নি কেউই। একবারে এক বড় জলভাঙনের ধাক্কায় পুরো জমি নদীর ঘোলা পানিকে আরও ঘোলা করে পানির সাথে একাকার হয়ে গেলে কেবল তখনই টের পায় যে এই মুহূর্ত থেকে তারা ভূমিহীন। নিজেদের চর হারিয়ে তারা যায় আরেক চরে। কিন্তু সেখানেও টিকতে পারে না। একদিকে আছে নদীর আক্রমণ। আরেকদিকে থাকে চরদখলযুদ্ধের আক্রমণ। যারা কোনো একটা যুযুধান দলের সাথে ভিড়ে যেতে পারে, কোঁচ-ট্যাঁটা-বল্লম-সড়কি চালাতে পারে, তারা টিকে যায়। বাকিরা নানা জায়গায় তাড়া খেয়ে খেয়ে কেউ কেউ টেম্পোরারি ঘর পায় বাঁধের ওপর, অন্য সবাই হারিয়ে যায় শহরের জঙ্গলে। বরকত আলীর মনে হয়েছে, এই রকম বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সবহারানো মানুষগুলোই জাকাতের সবচেয়ে ছহি হকদার। বাঁধের ওপর তখন গভীর রাত। অথচ বরকত আলীর হাতঘড়িতে রাত্রি মাত্র নয়টা। বাতি জ্বলছে না প্রায় কোনো ঘরেই। রেডিয়ো-টেলিভিশন চলার প্রশ্নই ওঠে না। তবে চর-চাষের মানুষ। গান-টান অথবা শাস্তরকথা তো কিছুটা জানা থাকার কথাই তাদের। সেসব নিয়ে আসর বসানোর কথা কোনো এক কোণে। আসরও হবে, সুখ-দুঃখের কথাও হবে। কিন্তু কোনো শব্দই নাই। নিজেদের জমিজিরাত, নিজেদের ঘরের কথার মতো নিজেদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে বয়ে চলা সেইসব কথকতা-গীতও কি স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেল মানুষগুলোর! যেখানে মানুষ বাস করে, সেই জনপদ এমন নিঃশব্দ থাকে কী করে! বাঁধের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় নিজেকে ভূতের মতো একাকি মনে হতে থাকে বরকত আলীর। কাঁধে বোঁচকা। বোঁচকার মধ্যে চাল-ডাল, কয়েকটা শাড়ি, লুঙ্গি, কয়েক গজ ছিটকাপড়। নগদ টাকা পকেটে আছে বেশ কয়েক হাজার। কিন্তু অনভ্যস্ত কাঁধে বোঁচকা বইতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কাঁধের নুনছাল উঠে গিয়ে জ্বালা শুরু হয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে, এরপর কাঁধ এবং হাত পুরোটাই অবশ হয়ে আসতে থাকবে। কাজেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, কাঁধের এই বোঝা তাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। চেনা-পরিচিত কেউ তাকে এই অবস্থায় দেখলে মুখের ভাব কী রকম হবে, ভাবতে গিয়েও হাসি পায় তার। কোটিপতি বরকত আলী, যাকে কি না অন্যেরা কাঁধে তুলতে পেলে বর্তে যায়, সেই লোক নিজের কাঁধে বোঝা নিয়ে হাঁটছে অচেনা অন্ধকার রাস্তায়। নিজেকে একবার তার দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর বলে মনে হয়। পরক্ষণেই জিভ কাটে। তওবা তওবা! কার সাথে নিজেকে তুলনা করছে সে! তার মতো কয়েক লক্ষ বরকত আলীকে জোড়া দিলেও ওমরের একটা চুলের সমান ওজন হবে না আল্লার দাঁড়িপাল্লায়। বাঁধের ওপরের ঘরগুলো একটা থেকে আরেকটা বেশ খানিকটা তফাতে। এমন দূরে দূরে কেন একেকটা শরণার্থী পরিবার। সম্ভবত এভাবেই থাকতে বলা হয়েছে তাদেরকে, যাতে তারা কোনো সমাজ গড়ে তুলতে না পারে। সমাজ মানেই কিছুটা জোটবদ্ধতা। তাহলে তাদের যখন-তখন উচ্ছেদ করা সহজ হবে না। প্রথম ঘরটার কাছে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে বরকত আলী। ধপ করে মাটিতে পড়ে যেতে দেয় কাঁধের বোঝাটিকে। কিছুক্ষণ হাঁফায় সশব্দে। বসে পড়তে ইচ্ছা করে। কিন্তু নোংরা মাটিতে বসার মতো এতটা সাধারণ বলে নিজেকে ভাবতে অন্তত রাজি নয় বরকত আলী। কোনো শব্দ আসছে না ঘর থেকে। যাহ কেউ নাই না কি ঘরে? আর সত্যি সত্যি এটা কি একটা ঘর? একটু পরে নিজের নিশ্বাসের শব্দ কমে স্বাভাবিক হয়ে এলে বরকত আলী টের পায়, সে যেটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা আসলেই একটা ঝুপড়িঘর। এবং ভেতরে মানুষ আছে। একাধিক মানুষ। ঘুমন্ত মানুষের গাঢ় নিশ্বাসের শব্দ তাকে আশ্বস্ত করে। সে ঠিক জায়গামতোই এসে পৌঁছেছে। সে শব্দ করার জন্য দরজা খুঁজতে থাকে। কিন্তু অন্ধকারে ঘরটাকে কেবলমাত্র একটা চৌখুপি ঝুপড়ি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। একবার সে ঘরটার চারপাশ দিয়ে চক্কোরও দেয়। কিন্তু কোনটা দরজা আর কোনটা বেড়া ঠাহর করতে পারে না। সে তাই আবার বোঁচকার কাছে ফিরে এসে খলপার বেড়ায় আলতো থাবা দিয়ে দিয়ে ডাকতে শুরু করেÑ বাড়িতে কেউ আছেন? আছেন না কি ভাই? প্রথমে ভদ্রোচিত নিচু গলা। তারপরে গলা চড়াতে হয় তাকে। চড়াতে চড়াতে এক পর্যায়ে যখন মনে হয় তার কণ্ঠনালী ফেটে যাওয়ার উপক্রম, তখন ভেতর থেকে চাপা মেয়েলি কণ্ঠে সাড়া আসে- কেডা? সব পরিবারে নারীরাই আগে সজাগ হয়। নারীকণ্ঠের সাথে কথোপথনে প্রস্তুত ছিল না বরকত আলী। সে একটু ইতস্তত ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করেÑ বাড়িতে পুরুষ মানুষ নাই? আমি তার সাথে একটু কথা বলতে চাই। নারীকণ্ঠ ঘরের ভেতর থেকে বলেÑ তাঁই অসুখ্যা মানুষ। ঘুমায় পড়িছে ওসুদ খায়্যা। জাগনা করা মুশকিল। কী কতে চান, আমাক কন! কে আপনে? কুন জাগাত থাক্যা আইছেন? এইভাবে কথোকথন হয়! একটু বিরক্তি জাগে বরকত আলীর মনে। কিন্তু আজ তো তাকে বিরক্তি চেপে রাখতেই হবে। সে কণ্ঠস্বর মোলায়েম করে বলে- আমি একজন সাধারণ মানুষ মা। আল্লার নির্দেশে আমি কিছু মাল-সামান এনেছি আপনাদের জন্য। দয়া করে এগুলো আপনি গ্রহণ করলে খুশি হবো।
Read Moreবাসার বাইরে এসে থমকে দাঁড়াল নদী। বেশ গরম লাগছে। ঘরে টের পায়নি গরমের ছোঁয়া। হঠাৎ বদলে গেছে প্রকৃতি। তার পরনে
Read Moreতিনি আজ গভীর রাতে আমার ঘরে এসে উপস্থিত হবেন আমি ভাবতে পারি নি। আমি আসলে কল্পনাও করতে পারি নি, কখনো
Read Moreঅ্যারোপ্লেনকে সোহান লিখত পাখি। অণুকেও। ছাদের কার্নিশে এক পা তুলে সে যখন দাঁড়াত, তখন তার চোখ থাকত বন্ধ। অণুরও। অণু
Read Moreপুরুষ [বাসররাতে কমল সওদাগর তার নয়াবিবি কুলসুমরে চারখান শর্ত দিয়া পরের ভোর বিহানে রওনা দিল বাণিজ্যযাত্রায়। মৈমনসিংহ গীতিকা খুইলা দেখেন
Read Moreউত্তরের হাওয়া কার কথা কীভাবে বলব আমি? বন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঝরাপাতা─কারা তাতে লেখে আর কারাই বা পাঠক-পাঠিকা?কার কাছে বলা
Read Moreরেমিটেন্স যোদ্ধাদের নিয়ে এবার গাইলেন কিংবদন্তী অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী ফজলুর রহমান বাবু। কথাশিল্পী রনি রেজার কথায় গানটিতে সুর দিয়েছেন আরেক
Read Moreকথাটা অনেকদিনের। ওঁর কবিতা নিয়ে, কিছু কাজ করা প্রসঙ্গে। এখনও ওই প্রত্যয়ে মনসমেত যে প্রস্তুতি নিতে পেরেছি─ তা মন থেকে
Read More