ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // চতুর্থ পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস / কবি আসছে/ ফারুক আহমেদ/ প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে //ফারুক আহমেদ// দ্বিতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // চতুর্থ পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // ষষ্ঠ পর্ব
- উপন্যাস //কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ// পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস//কবি আসছে// ফারুক আহমেদ//পর্ব দশ
পাবলিক লাইব্রেরির ছোট অডিটরিয়ামটা ভরে গেছে প্রায়। শ’খানেক লোক হবে। পিয়াল ভেতরে ভেতরে বেশ উত্তেজনা বোধ করে। সে একপাশে এসে চেয়ারে বসে পড়ে। সামনের দিকে দেখতে পায় কুমকুম বসে আছে, অন্যপাশে জহির। মঞ্চে কবি মোহাম্মদ আলী, পাশেই আছে টিপু সুলতান এবং আরও কয়েকজন। অনুষ্ঠান শুরু হতে বেশি দেরি হয়নি।
কবিতা পাঠ শুরু হলে প্রথমেই মঞ্চে ওঠে শিলা কুমকুম। এরপর ডাক পড়ে জহিরের, জহির ওবায়েদ। কবিতার শিরোনাম, ‘তুমি একটি শিরোধার্য ভিমরুল’ শিরোনাম শুনে পিয়াল ফেক করে হেসে ওঠে। মনে হয় আরো দু-একজনের এমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তবে লাউড স্পিকারের শব্দে হাসি একটি ফুলকির মতো তার কাছেই থেকে যায়। জহিরের পরেই ডাক পড়ল পিয়ালের, পিয়াল পাললিক। পিয়াল মঞ্চে উঠে পকেটে হাত না দিয়ে বলল, আমি আমার কবিতা পাঠের আগে তিনটা লাইন শোনাতে চাই, এটা কার কবিতা আপনারা সবাই জানেন, যারা জানেন না, তারা শুনে আমার বিশ্বাস পুরো কবিতা খুঁজে বের করে ঠিকই পড়তে চাইবেন। এ তিনটি লাইন পড়ার পর আমি আমার কবিতায় যাব। পিয়ালের এ কথায় হলের সবাই কৌতূহলি হয়ে ওঠে। একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। পিয়াল আর কথা বাড়ায় না, সে পড়তে শুরু করে আঠালো দুঃখ, তুমি আমাকে ছেড়ে যাও তাতে পাবে মোহন, অন্যের ভালোবাসা খাও। আঠালো দুঃখ তুমি আমাকে যাও গো ছেড়ে।’ পঙ্ক্তি ক’টা শেষ করামাত্র কক্ষে থাকা কবি, দর্শকের হাততালি পড়ল। আর মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কবি টিপু সুলতান হাত দিয়ে মুখ মুছতে লাগল। মনে হলো, এসি রুমের মধ্যেও তিনি ঘেমে গেছেন। পিয়াল এবার নিজের কবিতা পড়তে শুরু করে। কবিতা শেষে হাততালির পরিমাণ এতই মৃদু হয় যে, মনে হয় হাততালি দিতে গিয়ে অনেকগুলো হাত থেমে গেছে শেষ মুহূর্তে।
সবার শেষে কবিতা পড়লেন কবি মোহাম্মদ আলী। সবাই তাঁর কবিতা শোনার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল বলে মনে হচ্ছে। তাঁর নাম বলামাত্র হলজুড়ে হাততালির জোয়ার বইলো। একদিন মোহাম্মদ আলীর বাসায় গিয়েছিল পিয়াল। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। তিন বন্ধু পিয়াল, জহির আর ডাল্টন গিয়ে হাজির হয় কবির বাসায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ছিল, আড্ডা হয়েছে, খাওয়াদাওয়াও। ওইদিন পিয়াল কিন্তু কবি মোহাম্মদ আলীর বিশেষ নজর কাড়তে পারেনি। বলতে পারেনি, তাঁর প্রথমদিকের অনেক বইয়ের নামই মুখস্থ। আজকে ঠিকঠাক মতো দেখাটা হয়ে যেতে পারে কি, পিয়াল মনে মনে হিসাব করে নেয়।
কবিতা পাঠের আসর শেষ হলে কুমকুম এগিয়ে আসে। বলে, ভাই আপনার কবিতাটা ভালো লেগেছে।
পিয়াল একটু লজ্জা পায়, বলে, আপনিও সুন্দর পড়েছেন।
অনুষ্ঠান শেষে সবাই টিপু সুলতানের দিকে ঘেঁষছেন। কবি মোহাম্মদ আলীকে দেখা গেল না। সবার এই ঘেঁষে ঘেঁষে কথার বলার বড় কারণও যে আছে। এই খরার দেশে, এমন উদার মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে। যে কি-না নিজের অর্থ-সময় ব্যয় করে কবিতা পাঠের আসর করে যাচ্ছেন একের পর এক। সামনে পরিকল্পনা আছে একক কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান করার অনুষ্ঠানে তেমন ঘোষণাই দিলেন। এই ঘটনা কবিদের একইসঙ্গে আনন্দিত এবং বিচলিত করেছে। তো সবাই ঝুঁকছে টিপু সুলতানের দিকে, যেন একটি পাতাকপি। অনেক পাতা ঘিরে আছে টিপু সুলতান পাতাটাকে। কুমকুমও সেদিকে চলে গেছে, জহির সেখানেই আছে। পিয়ালও একটু একটু করে এগুচ্ছে কেন্দ্র পাতার দিকে। তখনই কেন্দ্র থেকে ডাক পড়ল, পিয়াল, এদিকে আসেন।
ঘিরে রাখা পাতারা একটু সরে দাঁড়ায়। এতে যে খানিক ফাঁক তৈরি হলো, তার ভেতর দিয়ে পিয়াল ঢুকে যায় কেন্দ্র পাতার কাছে। কবি টিপু সুলতান পিয়ালকে কাছে পেয়ে হাত চেপে ধরে মৃদু টান দেয়। বলে, এদিকে আসেন।
টিপু পিয়ালকে নিয়ে অফিস রুমে ঢুকে। একটা চেয়ারে মোহাম্মদ আলী বসে আছেন। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন, হাতে একটা লিফলেট ধরা। টিপু সুলতানকে দেখে মাথা তোলেন, তোমার আয়োজন তো বেশ হয়েছে।
- ভাই, আপনার কল্যাণে। আপনি মধ্যমণি হিসেবে না থাকলে কোনোমতেই তরুণ কবিদের ভেতর আগ্রহ তৈরি হতো না। থামে টিপু, তারপর বলে, পিয়াল বসো।
- সামালাইকুম স্যার।
পিয়ালের দিকে মোহাম্মদ আলী তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। বলে, কী খবর?
- স্যার ভালো, আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
- হুম, চিনতে পারব না কেন? আচ্ছা টিপু, আমি উঠলাম। বলে বেরিয়ে পড়তে উদ্যত হয় মোহাম্মদ আলী।
- ভাই, এক্ষুনি যাবেন? টিপু জানতে চায়।
- হুম যাই। বলে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে যান মোহাম্মদ আলী।
- তুমি বেশ পাগল আছ হে। বলে টিপু সুলতান পিয়ালের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে থাকে।
পিয়াল এর উত্তরে কিছু বলে না, ঘাড় কাৎ করে লাজুক দাঁড়িয়ে থাকে।
- শোনেন, আজ রাতে আমার বাসায় পার্টি আছে একটা, কবিতা পড়া আলোচনা, আড্ডা, একটু পান এসব আর কি। রাত ৮টায় চলে আসবেন।
- থ্যাঙ্কু ভাইয়া।
- এই নেন আমার কার্ড। আমি এসএমএস করে ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন বাই, অনেক কাজ পড়ে আছে।
পিয়াল অফিস রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে দেখে জটলা বেঁধে সবাই চা খাচ্ছে। ভিড়ের মধ্য থেকেও কুমকুমের হাসি শোনা যাচ্ছে। পিয়াল ওদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। আজ আর কোথাও দাঁড়ায় না সে, সোজা বাসার দিকে রওয়ানা দেয়।