শিশুতোষ গল্প //সোহানের বাইসাইকেল// তারেক হাসান


সোহান! স্কুলে যাবেনা আজ। তারা বাবা একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে খুব স্বল্প বেতনে চাকুরী করে। যা বেতন পায়, তা দিয়ে সংসারের খরচ,সোহানের স্কুলের খরচ দিয়ে অবশিষ্ট কিছুই থাকেনা।প্রতিদিন দশ টাকা বাস ভাড়া বাঁচানোর ৪কিলোমিটার রাস্তা হেটেই অফিস করে।শুধু সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, সন্তান কে ভালো রাখার জন্য।চিন্তা করে সন্তানের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিতে।-বাবা তুমি স্কুলে যাবেনা আজ?কোন কথা বলেনা –কি হলো সোহান!কোন কথা বলছোনা না যে বাবা ওগো শুনছো, সোহান কে কিছু বলেছো?আমার সাথে কথা বলেনা। -কই না তো!সকাল থেকে খেতে বলছি খাচ্ছেও না। আচ্ছা দেখছি-সোহানে কাছে গিয়ে মাথায় হাত ভুলাতে থাকে বাবা। আর জানতে চেষ্টা করে অভিমানের কথা। যা একজন বাবায় পারে।-রাফি বাবা, তোমায় একটা কথা বলবো?-না! -কেন বাবা? -আমি তোমার সাথে কথা বলবোনা। -বাবা তুমিতো বড় হয়ে গেছো এখন, এইতো দু’বছর পরেই কলেজে যাবে। -না আমি যাবোনা, আমি লেখাপড়াই করবো না। -একথা বলতে নেই বাবা! -কেন বলবো না? -বাবার স্বপ্ন তুমি লেখাপড়া করে অনেক বড় অফিসার হবে। আমার মত যাতে অপরের চা টানতে না হয়। -তাহলে আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে, আমার সব বন্ধুদের সাইকেল আছে। তারা সাইকেল দিয়ে স্কুলে যায়। আর আমারে নানান কথা বলে।-পরের কথা শুনতে নাই বাবা! ওদের বাবার অনেক টাকা তাই তারা সাইকেলে চড়ে স্কুলে যায়। আর তোমার বাবা তো গরীব মানুষ। -আমি কিছু জানিনা সাইকেল দিলে স্কুলে যাবো, না হয় স্কুলে যাবো না।
কি করবে বাবা,, সন্তানের আবদার রক্ষা করতে –ঠিক আছে বাবা, তোমাকে সাইকেল কিনে দিবো। তাহলে স্কুলে যাও।সোহান খুশি হয়ে স্কুলে চলে গেলো।এদিকে চিন্তায় পড়ে গেলো তার বাবা। কিভাবে সাইকেল কিনার টাকা জোগাড় করবে?মাসের বেতন উঠিয়ে তো দোকান আর সোহানের স্কুলের খরচ দিতেই শেষ হয়ে যাবে!ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। সোহান জানে যে বাবা বলেছে সাইকেল কিনে দিবে। এখন প্রতিদিন সোহানের বাবা অফিস শেষ করে বাসায় এসে সন্ধ্যায় আবার বেরিয়ে যায়। তার স্ত্রী একদিন জিজ্ঞেস করে –কোনদিন তো তুমি সন্ধ্যার পরে বাইরে যাওনা! এখন কেন প্রতিদিন বাইরে যাচ্ছো?-সে তুমি বুঝবেনা বউ! তোমাকে পরে বলবো। মাসের ৩০তারিখ আজ, সোহান কোচিং শেষে বাড়ি ফিরছে,তার বাবার কন্ঠের আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ায়। দেখে তার বাবা ঠেলাগাড়ীর যোগালি দিচ্ছে। সোহান সাথে সাথে কেঁদে ফেলে। বাবাকে দেখা না দিয়ে সোজা চলে আসে বাসায়। ঘন্টাখানেক পর বাবাও বাসায় ঢুকে।বাবা সোহানকে নিয়ে খেতে বসে, খাওয়া দাওয়া শেষ করে। সোহান কিছুই বলেনি বাবাকে। সোহান জানে কাল সকালে বাবা সাইকেল কিনে দিবে।সোহান চুপিচুপি বাবার রুমে  ঢুকে। বাবা তখনো সজাগ,,, সোহান রুমে যাওয়া মাত্রই বাবা বুঝতে পারে। বাবা আগেই বলতে থাকে যাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাও। কাল সকালে তোমাকে সাইকেল কিনে দিবো। ওমনি সোহান তার বাবার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে,,, আর বলতে থাকে বাবা আমার সাইকেল লাগবেনা। আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,আমি আর কখনো সাইকেল চাইবো।আমি বুঝতে পারিনি বাবা, আমার সাইকেল কিনতে তোমাকে ঠেলা চালাতে হবে। বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,,, আর বলে আগে বড় হ তারপর বুঝবি সন্তানের চাওয়া পূরণ না করতে পারলে কেমন কষ্ট লাগে,,, সে তুলনায় এই কষ্ট আমার কাছে কিছুই না। সোহানের মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়,,,, পাগল ছেলে,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *