রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ : একজন দ্রোহ ও প্রেমের কবি

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,

ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে-

এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?

যে কবির কবিতা শুধুই সৌন্দর্যের, অনুধ্যান নয়। যাপিত জীবনের বিরূপ জিজ্ঞাসা, সে কবি শুধু ভালোবাসার সুখ-শুখলি রচনা না করে, লেখেন জাতীয় জীবনের রক্তপাত তিনি রুদ্র। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরবর্তী গণতন্ত্রহীন দুঃসময়ে এভাবে বুক চেতিয়ে সত্য বলার সাহস বোধ করি রুদ্রের প্রবল ভাবে ছিল। তিনি তারুণ্যের কবি। অন্তর বাজিয়ে দরদের সুর সৃষ্টির কারিগর রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের আজ ৬৪তম জন্মদিন।

তিনি ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র রুদ্র ঢাকার ওয়েষ্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। কলেজ পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। এরপর শুধু বিভিন্ন পত্রিকায় লিখে যাওয়া। এই লেখালেখির কারণে সাহিত্য অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম।

জীবদ্দশায় বেরিয়েছে সাতটি কাব্যগ্রন্থ। মৃত্যুর পর আরও একটি গল্পগ্রন্থ ও কাব্য নাট্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে ১৯৭৯ সালে ‘উপদ্রুত উপকূল’। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ প্রকাশ পায় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর থেকে একে একে প্রকাশ পায় মানুষের মানচিত্র, ছোবল, গল্প, দিয়েছিলে সকল আকাশ, মৌলিক মুখোশ, রাজনৈতিক কবিতাসহ অন্যান্য গ্রন্থ মৃত্যুর পর প্রকাশিত গ্রন্থ একগ্লাস অন্ধকার ও বিষ বিরিক্ষের বীজ।

‘রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে

সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।

স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-

স্বাধীনতা, সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।

ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।’

দেশপ্রেমিক এই মনুষটির কাজের পরিসর ছিল অনেক বড়। তার মনন ছিল সর্বভুক। তার চিন্তা ছিল নৈর্ব্যক্তিক। তার কর্ম ছিল পরিমাপহীন। তিনি ছিলেন সেই মানুষ যিনি বাংলাদেশকে দেখতে চেয়ে ছিলেন সুখী-সমৃদ্ধির দেশ।

তিনি কবিতাই লিখতেন না শুধু তিনি কবিদের সংঘবদ্ধ হতেও আগ্রহী করতেন। এছাড়াও তিনি ‘অন্তরও বাজাও’ নামে একটি সঙ্গীত দলও গঠন করেছিলেন। গঠন করেছিলেন ১৯৮৭ তে জাতীয় কবি পরিষদ সংগঠনটি।

‘একটা ঠিকানা চাই।

যেই ঠিকানায় সপ্তাহ শেষে একটি করে চিঠি দিব…

প্রেম-প্রেম, আবেগে ঠাসা, ভালোবাসায় টইটুম্বুর!

হবে একটা ঠিকানা?

কারণে অকারণে চিঠি দিব’

বাংলা সাহিত্যের দ্রোহ এবং প্রেমের কবি ছিলেন রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি অভিমানীও ছিলেন। তাই তো একটা ঠিকানার খোঁজে ১৯৯১ সালের ২১ জুন আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলে প্রস্থান করেন আমাদের মধ্য থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *