কিশোর উপন্যাস

সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব আট

সায়েন্স ফিকশন “পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স’’ আহমেদ রিয়াজ


লোকটা রোবটের খেলা দেখিয়ে বেড়াত। অনেক অনেক আগে পৃথিবীর মানুষ যখন অতিমাত্রায় আবেগি ছিল তখনকার মতো। অবশ্য তখনকার আবেগ ছিল প্রকৃতি ভিত্তিক। আর এখনকার আবেগ হল যন্ত্র নির্ভর। এজন্যই সত্যিকারের হাতি, ঘোড়া, কুকুর, বানর এসবের জায়গায় এসেছে রোবট হাতি, রোবট ঘোড়া, রোবট কুকুর ইত্যাদি। তবে লোকটা দেখাত রোবট ভূতের খেলা আর খেলাটা সারাবিশ্বে এতই জনপ্রিয় ছিল যে, মিস্টার ফিলফিল নামে লোকটাকে কেউ আর চিনত না। মিস্টার রোবট ভূত নামে একডাকে দুনিয়ার মানুষ তাকে চিনত। রোবট ভূতের খেলাটাও ছিল অসম্ভব মজার। মিস্টার ফিলফিলের মাথায় এই আইডিয়াটা আসে ট্রয়ের ঘোড়ার কাহিনী থেকে। ট্যাকিয়ন আবিষ্কারের প্রথম দিকে এর ব্যবহার ছিল যত্রতত্র। একটু বুদ্ধি খাটিয়েই যে কেউ এই অণুকে কাজে লাগাতে শুরু করে। মিস্টার ফিলফিল তাদের মধ্যে একজন।

লোহালক্কড় দিয়ে রোবট না বানিয়ে তিনি বানাতেন প্লাটিনাম দিয়ে। এতে যন্ত্রটা হালকাও হতো ট্যাকিয়নের প্রভাবও লোহার চেয়ে বেশি পড়ত। প্রথমে সবাই দেখত একটা রোবট। মানব রোবট। মানব রোবট দিয়ে নানারকম শারীরিক কসরতের খেলা দেখিয়ে তারপর সমস্ত যন্ত্রটাকে অদৃশ্য করে ফেলতেন। মানব যন্ত্রটা মুহূর্তে হাওয়া হয়ে যেত ট্যাকিয়নের প্রভাবে। অদৃশ্য অণুগুলোকে এরপর হয়ত ঢোকাতেন সিংহ আকৃতির ফাঁপা কোনো ছাঁচের ভেতর। ট্যাকিয়নের প্রভাব মুক্ত করে ছাঁচটাকে বাইরে থেকে ভেঙে ফেলতেন। আর অমনি বেরিয়ে আসত যন্ত্র সিংহ। হালুম হালুম শব্দে কাঁপিয়ে তুলত বাতাস। আবার হয়ত বাঘ আকৃতির ফাঁপা ছাঁচ থেকে বের করে আনতেন আরেকটা বাঘ। আর এভাবেই সারা পৃথিবীতে নিজের নামটাকে মিস্টার ফিলফিল থেকে মিস্টার রোবট ভূতে রূপান্তর করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি।

পরে অবশ্য আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংস্থার সেন্সরে তিনি আর তাঁর সেই বিজ্ঞানের জাদুময় সার্কাস দেখিয়ে বেড়াতে পারেননি। তবে বুদ্ধিটাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাশালী হোমড়া চোমড়ায় পরিণত করেছেন নিজেকে। এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংস্থার অন্যতম পরিচালক হিসেবে বিশোষণের গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। মিস্টার ফিলফিল তাঁর রুমেই ছিলেন। এল টু এসে বলল, ‘স্যার কী খুব বিমর্ষ?’
‘তোমার কি তাই মনে হয়?’
‘জী স্যার।’
‘তাহলে তোমার ধারণা ঠিক।
মিস্টার ফিলফিলের কথায় এল টু’র মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এল টু হল তোষামোদে রোবট। বিজ্ঞানীদের তোষামোদ করার জন্যে কিছু পঞ্চম শ্রেণির রোবট তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক বিজ্ঞানীর জন্য একজন করে এরকম ব্যক্তিগত রোবট রয়েছে। যাদের কাজ হচ্ছে বিজ্ঞানীরা যখন কোনো কারণে প্রচণ্ড রেগে যান তখন তাদের হাতে থাপ্পড় খাওয়া, বিজ্ঞানীদের খুশির সময় খিল খিল করে হেসে বেড়ানো আর যখন তখন তোষামোদ করা। মিস্টার ফিলফিল ভেবেছিলেন এরকম রোবটের চাহিদা হবে প্রচুর। কিন্তু তাঁর ধারণা ভুল প্রমাণিত হল অল্প ক’দিনের মধ্যে। এরকম রোবটের চাহিদা খুব একটা নেই। কারণ? কারণ এরকম মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগল। নিজের চেয়ে একটু ক্ষমতাশালী মানুষকে তোষামোদ করার মানুষের অভাব হলো না। তা সে ক্ষমতা যে বিষয়েই হোক। অর্থ ক্ষমতা, সম্মান ক্ষমতা, মেধা ক্ষমতা, প্রশাসনিক ক্ষমতা কিংবা নিজের চেয়ে একটু বেশি তোষামোদে পারদর্শী ক্ষমতাই হোক। আবার কিছু মানুষ আছে যারা যাকে তাকে তোষামোদ করে। কাউকে পেলেই তোষামোদ করে। তোষামোদ করার জন্যই যেন এদের জন্ম।

ফলে গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া তোষামুদে রোবটের চাহিদা দেখা গেল না। লস প্রজেক্টে পরিণত হলো তোষামুদে রোবটেরা। অসংখ্য তোষামুদে রোবট বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রইল। কয়েকবার নিলাম ডাকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ফিলফিল। আসছে বাৎসরিক রোবট উৎসবে শতকরা সত্তর ভাগ ছাড় দিয়ে বিক্রির একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। দেখা যাক কি হয়। যদিও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংস্থার বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকেই একটা করে এরকম রোবট রেখেছেন। বলা যায় রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সংস্থার বাইরে কোনো বিজ্ঞানী রাখেননি। এজন্য পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানীদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে আছেন ফিলফিল। আইন করতে চেয়েছিলেন-থিসিস জমা দেওয়ার সময় প্রত্যেক বিজ্ঞানীকে একটা করে ‘ও-এম’ জাতের রোবট কিনতে হবে। সংস্থার অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এতে মত না দেওয়াতে তাঁর আশা নিরাশাই রয়ে গেল।

একথা মনে হলেই যখন তখন তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। ও এম জাতের রোবট এল টু যখন তাঁর বিমর্ষের কথা শুনে হাসল তিনি থমকে গেলেন মুহূর্তে। কোনো রকমে বললেন, ‘ও কি! তুমি আমার বিমর্ষের কথা শুনে হাসলে কেন? তোমার মেশিনে কোনো গণ্ডগোল দেখা দিল না তো আবার? এখন তো তোমার কাঁদার কথা। নাকি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছ?’

এল টু কিছু বলল না। শুধু হাসতে লাগল। ঝন ঝন শব্দে হাসি। এল টুর কণ্ঠে কখনো হাসি শোনেনি ফিলফিল। অত্যন্ত গম্ভীরভাবে বললেন, ‘আমি মিস্টার ফিলফিল। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংস্থার সম্মানিত একজন পরিচালক। এল টু তোমাকে কমা- করছি, এই মুহূর্তে হাসি থামাও। নাকি সুরে কাঁদ। আমি তোমার কান্না দেখতে চাই এল টু।’

Series Navigation<< সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব সাতসায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।শেষ পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *