সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব পাঁচ

সায়েন্স ফিকশন ‘’পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স’’ আহমেদ রিয়াজ

৫.

ওহিও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ স্কুল অব মেডিসিনই প্রথম চোখ খুলে দেয় বাবার। অনেকদিন থেকেই এরকম একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। বাবা সাহিত্যের ছাত্র। কিন্তু মনে প্রাণে একজন বিজ্ঞানী। সাহিত্যের মুখোশ পরে বিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। এছাড়া উপায়ও ছিল না। বিজ্ঞান সংস্থা কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সেন্সর করা হয়েছে অনেক কিছু। ইচ্ছে করলেই যে কেউ যখন তখন যে কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারে না। সংস্থার অনুমতি থাকতে হয়। আগে থেকে থিসিস জমা দিয়ে তারপর অনুমতির অপেক্ষা করতে হয়। এমনও ঘটনা ঘটেছে অনুমতি মিলতেই সময় লেগেছে বারো বছর। কিন্তু তার আগেই বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে বারো হাজার বছর। যেমন বিজ্ঞানী মরগানের ঘটনা।

ট্যাকিয়ন গান আবিস্কারের থিসিস জমা দেয়ার ছয় বছর পর তাঁকে গবেষণার অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতি পাওয়ার চার বছর আগেই আমেরিকান বিজ্ঞানী ফোর্টগার্ট ট্যাকিয়ন গান এর জন্য নোবেল পেয়ে বসে আছেন। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংস্থার উপর কারো আর আস্থা নেই। আড়ালে অনেকে এটাকে আন্তর্জাতিক চৌর্যবৃত্তি সংস্থা হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এদের মধ্যে বাবাও একজন। গোপনে তিনি পৃথিবীর তিনশ ফুট গভীরে চমৎকার একটা গবেষণাগার তৈরি করেছেন। থিসিসের পয়েন্টগুলো কবিতার মতো। কখনো গল্পের মতো সাংকেতিক ভাষায় ডিস্কে ভরে রাখেন। তাছাড়া সাহিত্যের প্রফেসর হওয়াতে মাথা মোটা সংস্থাও বুঝতে পারেনি কিছু। তাই সন্দেহও হয়নি বাবার উপর। থিসিস জমা দিলে ওদের চোখে পড়ে যেত। তাঁর এই গোপন গবেষণাগারের কথা তিনি ছাড়া পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনো প্রাণি জানে না। তবে আপাতত পাঁচটা উন্নতজাতের কুকুর তাঁর গবেষণাগারে ঢোকার প্রবেশপত্র পেয়েছে। এসব কুকুরের মগজকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন। গত বাইশ বছর ধরে সবগুলো মগজকেই জিইয়ে রাখতে পেরেছেন বাবা। শুধু জিইয়ে রেখেই ক্ষান্ত হননি। মগজগুলোকে নানারকম নির্দেশ দিয়ে দেখেছেন। তাতেও সাড়া মিলছে। সাইবার্নোটিক অর্গানিজম অর্থাৎ সাইবর্গ তৈরির পরিকল্পনার প্রায় শেষ মাথায় এসে পৌঁছেছেন তিনি। যে মগজ এখনো জগৎ চিন্তায় অস্থির হয়নি, ভারাক্রান্ত হয়নি সুখ দু:খের বেড়াজালে, আবেগের থাবা আঁচড় কাটেনি যার কোষে, এরকম মগজ হলেই তাঁর কাজ চূড়ান্ত হবে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ঠেসে দেওয়া হবে মস্তিস্কের অনুপরমানুগুলো। তারপর পাঠানো হবে মহাকাশে মুক্ত ও উদার মনের উন্নত মানুষের খোঁজে। পৃথিবীর মানুষগুলো সংকীর্ণতা আর হিংসা বিদ্বেষের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এরচেয়ে রোবটই ভালো। ধর্ম বোঝে না, হিংসা চেনে না, সংকীর্ণতা খোঁজে না। তার পরেও মানুষ হয়ে রোবটের সাথে বাস করতে রাজি নন বাবা।

বাবার বুদ্ধিটা ভালই। যন্ত্র মস্তিস্ক দিয়ে স্পেসশিপটাকে পাঠিয়ে দেন জ্যোৎস্নমাখা আকাশে ঘুরে বেড়াতে। সবার অগোচরে নিজে ঢুকে পড়েন গবেষণাগারে। কোনো কোনো সময় টানা দুই তিন দিন চলে যায় গবেষণাগারে। স্পেসশিপটাও মেঘের আড়ালে আড়ালে ঘুরতে থাকে। এ পর্যন্ত যন্ত্র মস্তিস্ক (সাইবর্গ) ঠিক ঠাক মতোই তাঁর আদেশ পালন করেছে।
তবু আজ কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে তাঁর।

গবেষণাগারে ঢুকতেই তাঁর মনে অজানা একটা তোলপাড় শুরু হলো। এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু উপস্থিতি আছে। প্রবল উপস্থিতি। তিনি নিশ্চিত তাঁর…

হঠাৎ প্রচণ্ড ক্রোধে ফেটে পড়লেন বাবা। রাগে কাঁপতে শুরু করেছেন। তাঁর চরিত্রের প্রধান দুর্বলতা এখানেই। রাগলে তিনি স্থির থাকতে পারেন না। তাঁর চিন্তা চেতনা, ভাবনা, যুক্তি-সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। তাঁর কথা বার্তা এলোমেলো হয়ে যায়। তাঁর মস্তিষ্ক সঠিক চিন্তা করতে পারে না। কিন্তু এ সময় মাথা গরম হলে তো চলবে না। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।

তাঁর গবেষণাগারে কে ঢুকেছে, সেটা নিয়ে না ভেবে কিভাবে রাগটা দমিয়ে শান্ত হওয়া যায়, সেটাই ভাবতে লাগলেন। কিন্তু পারছেন না। মাথাটা গরম থেকে গরম হয়েই যাচ্ছে। যেন চুলার ওপর কড়াই বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আগুনের তাপে সে কড়াই গরম থেকে গরম হচ্ছে। কিছুতেই সে উত্তাপটাকে নিরুত্তাপ করতে পারছেন না। যতই নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন, ততই যেন আরো তেতে উঠছেন। এখন উপায়?
হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল।

আসিফের মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন বিষয়টা। একদিন রান্নাঘরে ঢুকে দেখেন গনগণে চুলার ওপর খালি একটা কড়াই বসানো। দেখে বড্ড অবাক হলেন। নিশ্চয়ই আসিফের মায়ের কাজ। চুলার উপর কড়াই বসিয়ে চুলা জ্বালিয়ে রেখেছে। বড্ড ভুলোমনা।

হাত বাড়িয়ে চুলাটা যে-ই বন্ধ করতে যাবেন, অমনি পিছন থেকে শীতল কণ্ঠ, ‘চুলা নিভিও না।’
‘খালি খালি চুলা জ্বালিয়ে রেখেছ কেন?’
বিরক্ত হলেন আসিফের মা, ‘খালি খালি জ্বালিয়ে রাখিনি। দরকারেই জ্বালিয়েছি।’
‘কিন্তু আমি তো দেখতে পাচ্ছি…’
‘আহ্! সবকিছুতে নাক গলাও কেন?’
‘কিন্তু এভাবে শুধু শুধু…’
ব্যাখ্যা না করলে লোকটার বক বক চলতেই থাকবে। আসিফের মা বললেন, ‘কড়াইটা কেমন তেল চিটচিটে হয়েছে দেখতে পাচ্ছ?’
‘হু। কালো হয়ে গেছে।’
‘ঠিক। কড়াই গরম করে এই চিটচিটে অংশটা তুলে ফেলব। কড়াই আবার আগের মতো হয়ে যাবে।’

তারপর নিজের চোখেই দেখলেন বাবা। কড়াইটাও ততক্ষণে ভীষণ গরম হয়ে গেছে। প্রায় লাল হয়ে উঠেছে। এবার চুলা নিভিয়ে কড়াই থেকে চিটচিটে অংশটা লোহার খুন্তি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে ফেললেন মা।

কৌশলটা জানা ছিল না বাবার। সে কৌশলটাই এখন নিজের ওপর প্রয়োগ করলেন। এবার আর নিজেকে শান্ত বা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করলেন না। বরং মাথাটাকে আরো গরম করার চেষ্টা করলেন। শুধু তাই নয়, পুরোনো অনেক মাথা গরমকরা বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে লাগলেন। আরো রাগী হওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। এবং একসময় প্রচন্ড রাগে পুরো শরীর থর থর করে কাঁপতে শুরু করল। আর কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।

Series Navigation<< সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।পর্ব চারসায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব ছয় >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *