সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।পর্ব চার
- কল্পবিজ্ঞান কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব এক
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।পর্ব দুই
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।পর্ব তিন
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।পর্ব চার
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব পাঁচ
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব ছয়
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব সাত
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব আট
- সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।শেষ পর্ব
৪
‘আজকের রাতটা খুব বিচ্ছিরি, তাই না?’
রোবটটার কথা শুনে আসিফ একটু আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘বিচ্ছিরি হওয়ার মতো তেমন
কিছু ঘটেছে নাকি?’
রোবট বলল, ‘অবশ্যই ঘটেছে এবং ঘটছে। আমার এক্সনগুলো কাজ করছে না।
তোমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়া যেন কেমন। তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে আমার সেল ঠিকমত কাজ করতে পারে না। তার উপর বজ্রপাত হচ্ছে। অবশ্য তোমার বুঝতে না পারারই কথা। তোমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো সজীব। আমারটা সজীব নয়। তবু আমাদের সাহায্য নিয়ে তোমরা আরো উন্নত হচ্ছো। কী আশ্চর্য! তাই না? তোমরা মানুষরাই আমাদের সৃষ্টি করেছ। অথচ আমাদের সাহায্য ছাড়া তোমরা প্রায় চলতে পার না। তোমার বাবা কোথায় গেছেন?’
আসিফ বলল, ‘আকাশে।’
‘আকাশে কেন?’
‘স্পেশশিপে করে মেঘের উপর থেকে জ্যোৎস্না দেখতে গিয়েছেন। আজ পূর্ণিমা।
সুপার ব্লু মুন। তোমার তো জানা থাকার কথা।’
‘সুপার ব্লু মুনের কথা জানি। সর্বশেষ কবে হয়েছে সেটাও জানি। এরপর কবে হবে সেটাও আমার সেলে আপলোড করা আছে। বলব?’
‘দরকার নেই। আমিও জানি। যদিও তোমার মতো নিখুঁত ভাবে দিন তারিখ বলতে পারব না।’
‘কিন্তু তোমার বাবা যে জ্যোৎস্না খেতে যান, সেটা জানা ছিল না। তুমি যাবে না?’
‘নাহ।’
‘কেন? তুমিও তো মানুষ।’
‘সব মানুষ সবকিছু পছন্দ করে না। এই যেমন আমি বাবার মতো জ্যোৎস্না দেখতে
পছন্দ করি না। আমার মনে হয় পৃথিবীর থেকে জ্যোৎস্না সৌন্দর্য, সেটা মেঘের উপর থেকে পাওয়া যায় ’
‘তোমরা মানুষেরা এতো কাব্যিক কেন বলতো? গণিত, রসায়ন এসব নিয়ে আরো বেশি মগজ খাটানো উচিত তোমাদের। চল তোমাকে জটিল রাশিমালার অংকটা আরেকটু সহজ করে বুঝিয়ে দেই।’
‘লাগবে না। জটিলটাকে জটিলই থাকতে দাও। বেশি সহজ করতে গেলে আমি হয়ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলব। তারচেয়ে বরং কবিতা শোনাই একটা। এরকম বৃষ্টির রাতে মোমের আলোতে কবিতা শুনতে ভালো লাগবে তোমার।’
রোবট বলল, ‘না থাক। সাহিত্যে আমার উৎসাহ নেই। তোমাদের সাহিত্যগুলো আবেগ দিয়ে মোড়ানো। তোমরা কি গণিত নিয়ে কবিতা লিখতে পার না? কিংবা রসায়ন নিয়ে উপন্যাস?’
আসিফ মুচকি হেসে বলল, ‘বৃষ্টিতে ভিজবে?’
মিস পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘বৃষ্টি হলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় নাকি?’
আসিফ বলল, ‘বৃষ্টিকে ভালোবাসলে ভিজতে হয়। যদিও এমন কোনো নিয়ম নেই।
তোমার ইচ্ছে হলে ভিজতে পার।’
‘তোমার কি ইচ্ছে হচ্ছে?’
‘খুব।’
‘তাহলে তুমি ভিজতে পারো। আমার ইচ্ছে নেই। তোমার বাবা কখন আসবেন?’
‘জ্যোৎস্না স্নান শেষ হলেই চলে আসবেন। এরকম বৃষ্টির রাতও বাবার খুব পছন্দ।’
রোবটটা একটু কাঁচুমাচু করে বলল, ‘তোমার বাবা এলে অনুগ্রহ করে একটা কথা
বলতে পারবে?’
‘কী কথা?’
‘আমার মাথার উপর যে জিনিসগুলো দাঁড়িয়ে আছে, এগুলো চুল নয়। এগুলো আমার এক্সনের শুঁড়। অনেকটা রাডারের মতো। যদিও নতুন সংস্করণ। এগুলো ছাড়া আমি চলতে পারব না। কাজেই বাদ দেয়ার তো প্রশ্নই আসতে পারে না।’
আসিফ বলল, ‘তোমাকে তো কেউ বাদ দিতে বলেনি। খাড়াভাবে থাকে বলে হয়ত বাবার কাছে খারাপ লাগে। তাই শুইয়ে দিতে বলেছেন। নাকি শোয়ানো যাবে না?’
রোবটটা বলল, ‘ঠিক তাই। তুমি বললেও তো পার। আমি বললে যদি আবার বেশি কথা বলার অপবাদ শুনতে হয়।’
আসিফ হো: হো: করে হেসে বলল, ‘ভয়। তাই না? বাবা অমনই। মুখ দিয়ে যা বলার বলেন। মনটা কিন্তু ভালো। কেন, তুমি বুঝতে পারনি?’
রোবটটা এবার যন্ত্রের গলাটায় রিনরিনে মাত্রাটাকে একটু বেশি ঢেলে বলল,
‘আমাদের মন বলতে কিছু নেই। এক্সন আর সেল পর্যন্তই। প্রয়োজনটুকু বুঝতে পারি শুধু। এর বেশি কিছু নয়। ভবিষ্যতে হয়তো…..’
থামিয়ে দিয়ে আসিফ বলল, ‘থাক। আর বলতে হবে না। তুমি তোমার কাজ করো, যাও।’
‘আমার এখন কোনো কাজ নেই। তুমি বরং বৃষ্টিতে ভেজো। আমি তোমার ভেজা দেখি।’
লজ্জা পেল আসিফ। বলল, ‘কোনো মিসের সামনে বৃষ্টিতে ভিজতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে।’
‘কিন্তু আমি তো রোবট!’
‘তাতে কি! তুমি যদি মিস্টার হতে তাহলে হয়ত লজ্জা লাগত না। মিস বলেই লজ্জা লাগছে।’
আর থাকা যায় না। মাথাটা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে ফেলল পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স। তার মানে উল্টোদিকে ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য তৈরি ওটা। তখনই গা থেকে গেঞ্জিটি খুলে ফেলল আসিফ। তারপর যে-ই বাগানে পা বাড়াতে যাবে, অমনি হঠাৎ পিছনে তাকাল। আর তাকিয়ে চমকে ওঠল। ওর দিকে তাকিয়ে আছে রোবটটা।
খালি গায়ে লজ্জা পেল আসিফ। কিন্তু ওর কণ্ঠ থেকে লাজুক নয়, রাগী স্বর বেরুল,
‘তুমি এখনও যাওনি!’
‘একটা কথা না বললেই নয়।’
‘ওটা পরেও বলতে পারতে! এখনই বলতে হবে?’
‘এখনই বলতে হবে। যখন যেটা দরকার, তখনই সেটা বলা ভালো।’
আবার গেঞ্জিটা পরতে পরতে আসিফ বলল, ‘ঝটপট বলো। বৃষ্টিটা কমে আসছে। বর্ষার বৃষ্টি। বেশিক্ষণ থাকে না।’
পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স বলল, ‘তুমিও তোমার বাবার মতো অনেকটা। কখনো আবেগি, কখনো কাঠখোট্টা। হবেই তো? তোমরা হলে গিয়ে প্রকৃতির তৈরি। আর আমরা তোমাদের। তোমরা সবকিছুই পারলে কিন্তু….’
সবটুকু শোনার ইচ্ছে আর হল না আসিফের। আসলেও রোবটটা বেশি কথা বলে। হঠাৎ আবার নতুন করে তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তেমনি হঠাৎ জ্যোৎস্নার আলো ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। আকাশে তাকাল আসিফ। আকাশের ঠিক যেখানটায় পূর্ণিমার চাঁদটা ঝুলে আছে, ওখানে কোনো মেঘ নেই।
এরকম জ্যোৎস্নামাথা বৃষ্টিতে যন্ত্রগুলোই শুধু ঘরে থাকে। আসিফ যন্ত্র নয়। গা থেকে গেঞ্জি না খুলেই নেমে পড়ল বাগানে।