কিশোর উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব বারো

১২.

দুপুরে ভাত খেতে বসেছি এমন সময় আবু এসে খবর দিল ছোট মামা, ইনজাম মামা আইছে। হেগো বাসায় মানুষে ভইরা গেছে। আবুর কথা শুনে আমার খাওয়া আর পেটে গেল না। থালায় ভাত রেখেই হাত ধুয়ে চম্পট লাগাই। আবুর কথাই ঠিক, ইনজামদের বাসার সামনে অনেক মানুষ। গেট দিয়ে কোনো রকমে ভেতরে ঢুকে দেখি মানুষের গাদা গাদি অবস্থা। যে ঘরে ইনজাম বসে আছে সে ঘরে ঢোকা মুশকিল। তাই এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইলাম বোকার মতো। পাড়ার একজন মুরুব্বি আরো চারজন মুরুব্বিকে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বেশ আলাপ জমিয়েছে। এই মুরুবিব একটু বেশি কথা বলে। পাড়ায় অনেকে তাকে বাচাল বলে চেনে। পান খায় আর বকবক করে, এই যেমন এখন অন্যদের বোঝাচ্ছে ইনজামের কেসটা আসলে একটু জটিল। এখন বলছে আমার মনে হয় কেউ শত্রুতামূলক জ্বিন-পরী চালান করেছিল। সেই জ্বিন-পরী এতদিন ইনজামকে কোথাও আটকে রেখেছিল। দেখেন না কোনো কথা বলে না। নিশ্চয়ই খুব টর্চার করেছে ওকে। লিন্টু বলে কে যেন ডাক দিল হঠাৎ। সামনে তাকিয়ে দেখি ইনজামদের পেয়ারা গাছের ডালে পল্টু। অনেক কষ্টে বেচারা ওখানে উঠেছে বোঝা যাচ্ছে। ওখান থেকে বোধহয় জানালা দিয়ে ইনজামকে দেখা যায়।
আয় আয়–পল্টু হাত ইশারা করল।
পরে, ভিড় কমুক। বললাম।
কিরে তুই কখন এলি? ভিড় থেকে বেরিয়ে অপু বলল।
এইতো এলাম মাত্র। তুই দেখেছিস?
হ্যাঁ।
কেমন দেখলি?
ব্যাপারটা খুবই রহস্যময় ঠেকল–অপু বলল।
কেমন রহস্যময়? আমার কৌতূহল বেড়ে গেল।
কোন কথা বলছে না। শুধু সবাইকে দেখছে ইনজাম।
চেহারা কেমন দেখলি?
স্বাস্থ্য ভাল হয়েছে আগের চেয়ে। চেহারাও সুন্দর হয়েছে।
হাসে-টাসে?
হঠাৎ হঠাৎ, একটু মুচকি হাসে।
আমার ভেতরে কৌতূহল আর বাধ মানছে না। ইনজামকে দেখতেই হবে।
অপু ব্যাপারটা তোর কেমন মনে হচ্ছে? বললাম।
তুই আগে দেখে আয়, তারপর বাইরে যাই–অপু বলল।
পল্টুকে দেখেছিস? বললাম।
হ্যাঁÑখোকাও ভেতরে আছে।
তাই নাকি ?
হ্যাঁ।
আমিই তা হলে শেষের মক্কেল। তোরা কখন শুনেছিস?
ইনজাম একটা রিক্সায় করে পাড়ায় ঢুকেছে এটা দেখে বাজারের কয়েকজন দোকানদার চিৎকার করে দৌড়ে ইনজামদের বাসার দিকে আসছিল। আমি তখন খেয়ে মাত্র বিছানায় গিয়েছি। ওদের চিৎকার শুনে আর দেরি করিনি এক দৌড়ে এখানে চলে আসি। আমি আসার পর ইনজাম রিক্সায় করে বাসায় ফেরে। ওর পেছনে কয়েকশ মানুষ। সেই ফাঁকে আমি একদম ইনজামের সঙ্গে সঙ্গে ওদের ঘরে ঢুকেছি। কিন্তু আর বের হতে পারিনি। ইনজামের রিক্সার পেছনে পেছনে খোকা আর পল্টুও এসেছে। ওরাও ঢোকার চেষ্টা করে প্রথমে ঢুকতে পারেনি। পরে কেমনে যেন ঢুকেছে। পল্টু দেখিস না এখনও গাছেই বসে আছে। বোধহয় সামনে গিয়ে ইনজামকে দেখতে পারেনি।
ওর মা বাবা কোথায়? বললাম।
ইনজামের পাশেই।
তারা কি করছে?
মা কথা বলেই যাচ্ছে ইনজামের হাত, মাথা, মুখ ধরে। কোথায় ছিল এই ক’দিন জানতে চাইছে। দুধ দিয়ে গোসল করানোর কথা বলছে মাঝে মাঝে ।
ভিড় কিছুটা কমে এসেছে। পল্টু গাছ থেকে নেমে আমার কাছে এসে বলল, কিরে দেখবি না?
তুই দেখেছিস?
হ্যাঁ, একদম ক্লিয়ার দেখা যায় ওই পেয়ারা গাছ থেকে। কয়েকজন মুরুব্বি ইনজামের বাবাকে নিয়ে বেরিয়ে এল ঘর থেকে। একজন বলছে, পুলিশকে জানানো দরকার।
ইনজামের বাবা হাত উঠিয়ে বলল, ওসব আর করা দরকার আছে? ঝামেলা বাড়বে। ওদের ডাকা মানে আবার নতুন করে ঝামেলা তৈরি করা।
না, আমি বলছিলাম কি– যেহেতু নিখোঁজ হবার ব্যাপারটা পুলিশকে জানানো হয়েছিল তাই বোধহয় ফিরে এসেছে এটাও জানানো দরকার। একজন বলল।
ওটা আমিই দেখব– থাক এ মুহূর্তে ইনজামের বাবা রকিব সাহেবকে থানায় পাঠানোর দরকার নেই। আরেকজন বলল।
আমি সুযোগ পেয়ে ইনজামদের ঘরে ঢুকে যাই। বেচারার বোকা বোকা চাহনি আমাকে খুব অবাক করল। কি ছেলেটা কি হয়ে গেছে। খোকা দাঁড়িয়ে আছে ঘরের ভেতর।
অপু বলল, চল যাই পরে আসব।
ইনজামকে দেখে আমার কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে। ইনজাম আসলে এতদিন কোথায় ছিল? কি খেয়েছে? কোথায় ঘুমিয়েছে? এসব জানতে ইচ্ছে করছে।
অপু আমার হাতের কব্জি ধরে বলল, চল।
আমি বুঝলাম না কেন আমাকে ধরে অপু বেরিয়ে এল।
বাইরে এসে বলল, আমাদের কাজ মনে আছে?
খোকা বলল, ইনজাম তো চলে এসেছে, আর কি প্রয়োজন আছে?
পল্টু বলল, কথাটা ঠিকই।
আমরা এর মূল রহস্য বের করব– তাই আজ রাতেই তার সঙ্গে দেখা করব– অপু বলল।
আমরা চারজন ইনজামদের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসি। হাঁটতে থাকি।
অপু বলল, তোরা কি বাসায় বলেছিস রাতে বাসায় না থাকার কথা?
খোকা বলল, আমি বলেছি।
বাসায় রাজি হয়েছে? বললাম
হ্যাঁ।
পল্টু তুই বলেছিস? অপু বলল।
না। এখন গিয়ে বলব।
অপু তুই বলেছিস? বললাম।
হ্যাঁ রাজি করে ফেলেছি মাকে।
আমি এখনো বলিনি– বললাম।
যা যা লিন্টু আর পল্টু ঘরে রাজি করা। অপু বলল।
আমরা যার যার বাসায় ফিরে যাই।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারোকিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। তেরো >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *