মোশতাক আহমেদ এর কিশোর কবিতা

পানকৌড়ি ফিঙেরাজা


পুকুরপাড়ে ফুটে ছিল মল্লিকা জুঁই মৌরি
কাজলা জলে হাপুস হুপুস ডুব দিল পানকৌড়ি
পানকৌড়ির ছেলেমেয়ে বেড়ায় হেসেখেলে
দুপুর শেষে পালক শুকায় রােদ্রে পাখা মেলে।
ফিঙেরাজা ডিঙি নায়ের গলুইতে চুপ করে
আলটপকা ঝাঁপ দিয়ে সে পাবদা পুঁটি ধরে
পানকৌড়ি ফিঙেরাজার ঝােপের আড়ে বাস
নেচে গেয়ে যাচ্ছে বয়ে সময় বারাে মাস।
আমিও যদি হতাম পাখি পানকৌড়ি ফিঙে —
সাতসমূদ্র দিতাম পাড়ি ঢেউয়ের পাহাড় ডিঙে।

শীত আসছে


শীত আসছে ধীরে ধীরে
নদীর তীরে পাখির নীড়ে
পানসি নৌকো ভরে,
শীতের সাথে প্রথম দেখা
দাঁড়িয়ে মাঠের প্রান্তে একা
শরৎ শেষের ভােরে।
শীতের সাথে প্রথম দেখা
শিশির ভেজা ঘাসে
বাইরে কোথাও যায় না থাকা
হিমঝরা বাতাসে।
শীতের সাথে প্রথম দেখা
দিঘির কালাে জলে।
আকাশ সাজায় রঙের মেলা
পাখির কোলাহলে।
শীত আসছে ঝিরিঝিরি
ঝরিয়ে মেঘের নিশি
ভােরের শিশির ভিজিয়ে দেবে
মাঠভরা তিল-তিশি।
শীত আসছে বনবাঁদাড়ে
হাটবাজারে ঝিলের ধারে
লােকের চরাচরে —
শীত আসছে বাংলাদেশে
এলোকেশে হাওয়ায় ভেসে
সব মানুষের ঘরে।

আয় কে যাবি

আয় কে যাবি আমার সাথে দূরের মাঠে খেলতে
পাখির মতো মনের সুখে পাখনা দুটি মেলতে।
আয় কে যাবি দেখতে পাহাড়
ঝুমকো ফুলের রঙের বাহার
ঝরনা ছােটে ফিনকি ওঠে
কী মনােরম দৃশ্য তাহার।
আয় কে যাবি আমার সাথে দেখতে দূরের বন
হরেক রকম পক্ষী দেখে হারিয়ে যাবে মন
নদীর স্রোতে মাছের সাঁতার দেখব কিছুক্ষণ
মাঝির গানে উদাস প্রাণে জাগবে শিহরণ।
আয় কে যাবি আমার সাথে দেখতে সাগরপাড়
সাগরপাড়ে সূর্য ডােবে কী যে চমৎকার!
বালিহাঁসের ঝাক উড়ে যায় আকাশ পারাপার
ইচ্ছে করে সেই ছবিটা দেখি হাজার বার।

ছেলেবেলা

আজ সকালে ফুল তুলতে
কুড়িয়ে পেলাম ছড়া
ঘাসের চাদর ফুলে ফুলে
সুবাস পাগল করা।
পানকৌড়ি ডাহুকছানা
জলপিপিরা আসে —
ঝোপেঝাড়ে পুকুরজলে
ভুবসাঁতারে ডাসে।
লজ্জাবতীর লাজুক মেয়ে
আলতো ছোঁয়ায় চুপ
পাতায় পাতায় শিশিরকণা
কী যে অপরূপ।
নদীর ধারে বটের ছায়া
লােক পারাপার ঘাট
সেই ঘাটেতে সকাল থেকে
রবিবারের হাট।
মধুমাসে আম কাঠাল আর
হরেক ফলের ভিড়
ভ্যাপসা গরম তপ্তরোদে
জীবন যে অস্থির।
ছেলেবেলার এসব কথা
দারুণ মনে পড়ে —
আম কুড়াতাম নির্ভয়ে সব কালবোশেখি ঝড়ে।


মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়


ভাইয়া যেদিন যুদ্ধে গেল বঙ্গবন্ধুর ডাকে
সাঁঝের বেলা পালিয়ে ছিল যায়নি বলে মাকে।
মা যে আমার জায়ানামাজে করত কান্নাকাটি
আল্লাহ্ তুমি রক্ষা করাে জন্মভূমির মাটি।
রক্ষা করাে স্বদেশ আমার রক্ষা করাে জাতি
শামস্ রাজাকার ধ্বংস করাে যারাই আত্মঘাতী।
বীরশহিদের রক্তে ভেজা আমার দেশের মাটি
লালসবুজের জয়পতাকা বীর বাঙালির ঘাঁটি।
পশ্চিমারা ভেবেছিল সব বাঙালি নিঃস্ব
যুদ্ধ করে দেখিয়ে দিল চমকে গেল বিশ্ব।
মায়ের দোয়া কবুল হলাে যুদ্ধ হলাে শেষ
বীরছেলেদের জন্য পেলাম স্বাধীন বাংলাদেশ।

One thought on “মোশতাক আহমেদ এর কিশোর কবিতা

  • জুলাই ২০, ২০২২ at ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    I got what you mean , appreciate it for putting up.Woh I am lucky to find this website through google.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *