ঈদসংখ্যার কবিতা।। মাসুদ পথিক
আমার সম্পদ
সন্দেহ করলো তারা, আমি নাকি বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক!
তদন্ত করতে চলে এলো, আমার ডেরায়।
তন্নতন্ন করলো, সম্ভাব্য সবকিছু, তেমন সম্পদ না-পেয়ে হলো বিরক্ত।
বললো, কোথায় লুকিয়েছিস সব? বল!
দ্রুত বল!
নিরূপায় হয়ে, তাদের একজনের হাতে আমার চোখ দুটো তুলে দিলাম।
বললাম, ভেতরে আছে।
লোকটি আমার চোখ দুটো নেড়েচেড়ে আরো বিরক্ত হলো,
এতে তো কিছুই নেই। এটা তো শুষ্ক, মৃত নদী!
অন্য একজন বললো, এইসব ভাওতাবাজি ছাড়,
কোথায় আছে বল, কোথায় রেখেছিস তোর বিপুল অবৈধ সম্পদ?
আমি বললাম, আছে আপনাদের বিপুল সন্দেহে।
তারা ক্রুদ্ধ হলো, আবার খুঁজতে থাকলো।
ঘরের মাটি খুঁড়েও কিছু পেলো না।
অবশেষে তারা টুকরো টুকরো করলো আমার শরীরের সবকিছু।
বুকের ভেতর পেয়ে গেলো পৃথিবীর সব হারানো শিশু! আর
হৃদপিণ্ড হাতড়ে তুলে আনলো কিছু আউশ ধানের বীজ!
তারা একে-অপরের দিকে তাকালো, বিস্মিত!
একজন বললো, উন্মাদ! পাগল!
কেউ তোর আপন নয়
তো, ‘কেউ তোর আপন নয়’
বুকের থেকে নাভি বেয়ে নামে এই সত্য বীজ
কবরের যোনি দিয়ে জীবনের গর্ভে থিতু হয়
চোখ বেয়ে আর আকাশ থেকে অথবা অতীত হতে
বৃষ্টি ঝরে বা ঝরে না, তবুও
জলের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে কবরের গায়
কবরের শূন্যতায় জন্মায় প্রষন্ন শূন্য, ফসল!
প্রেমিক বা তোর সকল স্বজন
হিংসায় ঘৃণায় ভরিয়ে দেয় গোলাঘর
ভাতের মতো ছিটিয়ে ছড়িয়ে রাখা মিথ্যা ও মায়ায়
আমাদের দুধভাতের সংসার!
নদী ভাঙনের কবলে পড়ে কবরস্থান
লালসা, আমিত্ব আর সংশ্লিষ্ট কোলাহল
শস্যের চাঁই ছাড়িয়ে সাঁতারে উঠে সমূহ আগাছা তবুও
তোর আপন হয়ে জাপটে আসে কেউ, স্তব্ধতা!
চৈত্র ও বৈশাখ মেয়ে দুটি, আর
এইসব, অথবা এইসব করপোরেট বাগবিস্তার থেকে, বল;
কে তুমি? আর যে তুমি কুড়িয়ে নিলে দুটি শব্দ, দুটি কোমল!
জেনো, ও যেনো আমি তার মাঝখান দিয়েই বয়ে চলেছি,
অবিরত আর গড়ে তুলেছি মাঠ বরাবর সে-এক আলপথ,
কেননা এরপরই আমার শৈশব, আমার খেলা,
কাঁদা ও কাদা ভূমি সংক্রান্তি, কাঙ্খিত গ্রামীণ মেলা;
আলের শেষে দেখো রঙিন ঘুড়ি হাতে ডাকছে প্রিয় বিক্রেতা, আর
তাকে চিনবে সহজেই তার গায়ে বেঁচে আছে ন্যাশনালিটি আমার
তথাপি আজও দেখি; মেয়ে দুটির মাঝ-সীমানায় আমার অতীত মুখটি উপুর,
কিংবা, মালটি-মার্কেট উপমাটি, চৈত্র ও বৈশাখের দু’পাশে শব্দ-কলা-মূখর…!
পান্তা বিক্রেতার হাসিটি ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছি, মাইরি…মাইরি
আরো আছে আমার শব্দহীন পাখালি, দুটি মলিন মুখ স্মৃতিমাখা বর্ণিল ডাইরি!