ঈদসংখ্যার কি‌শোর ক‌বিতা।। মাসুম আওয়াল

কি‌শোর ও কাঠ‌বেড়া‌লী

কি‌শোর : তুলতু‌লে এই শরীর নি‌য়ে
কেমন ক‌রে কাঠ‌বেড়া‌লী হ‌লে,
যাও না আমায় ব‌লে।

কাঠবেড়া‌লী : জা‌নি না ভাই বু‌ঝি না ছাই
কে দি‌য়ে‌ছে আমার এমন নাম,
অ‌নেক তো ভাবলাম।

কি‌শোর : না‌মের স‌ঙ্গে মানায় না তো
তোমার এমন দ‌স্যিপনা রূপ,
ব‌লো ব‌লো আ‌ছো কে‌নো চুপ।

কাঠ‌বেড়ালী : কী যে ব‌লি কী যে ব‌লি
আমার ম‌তো ছু‌টে চ‌লি রোজ
নে‌বে একটু আমার না‌মের খোঁজ।

কি‌শোর : দে‌খি য‌দি গুগল ক‌রে
তোমার না‌মের কো‌নো মা‌নে পাই,
খুঁ‌জে পে‌লেই ব‌লবো ডে‌কে ভাই।

কাঠ‌বেড়া‌লী : দেখো দে‌খো পা‌বে হয় তো
আমি তো রোজ ঘু‌রি গা‌ছে গা‌ছে
কোথাও হয় তো না‌মের মা‌নে আ‌ছে।

কি‌শোর : (কাঠবেড়া‌লীর না‌মের মা‌নে
খুঁজ‌তে গি‌য়ে ছেঁড়ে মাথার চুল
সেই ছড়াটার খোঁজ মে‌লে যা-
লি‌খে‌ছে নজরুল।)

ক‌াঠ‌বেড়া‌লী : (‌সেই ছড়াটার কথা শু‌নে
কাঠ‌বেড়া‌লী তো‌লে কেবল হাই,
ব‌লে, ওতে লেখা আ‌মি
কী খাই না খাই।
না‌মের মা‌নে নাই।)

কি‌শোর : কোথাও আ‌ছে পা‌বো ঠিকই
তোমায় নি‌য়ে ভাব‌তে ভা‌লো লা‌গে,
ভা‌লো থে‌কো ফু‌লিও না গাল রা‌গে।

কাঠ‌বেড়া‌লী : রাগ ক‌রি‌নি খু‌শি আ‌মি
আমার কথা তু‌মি এতো ভা‌বো!
বু‌ঝি‌নি এই যু‌গে এ‌সে এমন বন্ধু পা‌বো।

কি‌শোর : তোমরা যারা পশু পা‌খি
খু‌শি ম‌নে থাক‌ছো আ‌শে পা‌শে
আ‌ছো ব‌লেই প্রকৃ‌তিটা হা‌সে।

কাঠবেড়ালী : যাই ব‌লো ভাই চলার প‌থে
তোমার ম‌তো খোকা খুকী পে‌লে
তু‌মি ব‌লো কোন দূ‌রে যাই ফে‌লে।

কি‌শোর এবং কাঠ‌বেড়ালীর গল্প চ‌লে ওই
বন্ধু কী চাও খুঁজ‌লে পা‌বে বন্ধু অবশ‌্যই।

কৈশরের বুক পকেট

কৈশর তোর বুক প‌কে‌টে থাক‌তো কি কি ম‌নে আ‌ছে?
‌কৈশর তোর সুবাস আজও লে‌গে আ‌ছে না‌কের কা‌ছে।
র‌ঙিন কাগজ ঘু‌ড়ির সু‌তো
মা‌কে ফাঁ‌কি দেওয়ার ছু‌তো
ফে‌লে রে‌খে হা‌ট্টিমা‌টিম
স‌ঙ্গি ছি‌লো না‌ত্তি না‌টিম
আর কি ছি‌লো আর কি ছি‌লো
একটা নদী একটা ঝিলও
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছি‌লো
‌ছি‌লো ছড়ার অন্তমিলও
স্বপ্নগু‌লো ছ‌ড়ি‌য়ে যে‌তো স্বপ্নগু‌লো খুব ছোঁয়া‌ছে,
কৈশর তোর গন্ধ আজও লে‌গেই আ‌ছে না‌কের কা‌ছে।

কৈশর তুই ম‌নের কো‌নে খুব গোপ‌নে লু‌কি‌য়ে থাকিস,
বড় হওয়ার ভান করলেও ম‌নে কত ছ‌বি আঁ‌কিস।
কৈশর তোর বুক পকেটে
বুনো ফুলের নোলক ছিলো
বাবা হাতের ছোঁয়া এবং
মায়ের গানের শোলক ছিলো
আর কি ছিলো আর কি ছিলো
এখন যা নেই চিলে নিলো
রূপ কথাদের গল্প ছিলো, ছিলো ভুতের ভয়,
এখনও ভয় সঙ্গে থাকে সে ভয় ভূতের নয়।

উঁইতে ধরা পাতার ভেতর রূপকথারা আজও আছে,
কৈশর তোর গন্ধ আজও লে‌গে আ‌ছে না‌কের কা‌ছে।

কৈশর তোর বুক প‌কে‌টে
‌শিউলী ফু‌লের মালা ছি‌লো
নীল ময়ূ‌রের পালক ছি‌লো
দ‌স্যি ঘোড়ার চালক ছি‌লো
‌জোনা‌কি‌দের আ‌লো ছি‌লো
‌মি‌ষ্টি ছি‌লো ঝালও ছি‌লো
আর‌ কি ছি‌লো আর কি ছি‌লো
‌চি‌নির হা‌তি ঘোড়া ছি‌লো
কল‌মি ফু‌লের পুকুর ছি‌লো, ছি‌লো পানার দ্বীপ,
‌নিঝুম নিঝুম দুপুর ছি‌লো, ছি‌লো মায়ার টিপ।

ঘর পালা‌নো দুপুর গু‌লো স্মৃ‌তির পাতায় বেঁ‌চে আ‌ছে,
কৈশর তোর গন্ধ আজও লে‌গে আ‌ছে না‌কের কা‌ছে।

সবার হ‌তে চাই

না না আ‌মি ড্রইং রু‌মে হ‌বো না বনসাই,
শেকড়গু‌লো কে‌টনা প্লিজ বৃক্ষ হ‌তে চাই।
চাই না শুধু রাখুক ঘি‌রে তোমার চো‌খের মায়া,
আ‌মি হ‌বো হাজার লো‌কের মাথার উপর ছায়া।

ম‌নের কো‌নে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন জ্ব‌লে আ‌ছে,
চল‌তে চল‌তে ক্লান্ত প‌থিক বস‌বে আমার কা‌ছে।
ধর্ম বর্ণ নি‌র্বি‌শে‌ষে সবার হ‌বো আ‌মি,
আরও ক‌তো ই‌চ্ছে ম‌নে বল‌তে বল‌তে থা‌মি।

রোদ বৃ‌ষ্টি শি‌শির সবাই কর‌বে মাখা মা‌খি,
মানুষ ছাড়াও বন্ধু হ‌বে সকল পশু-পা‌খি।
আমার শাখায় আমার ছায়ায় থাক‌বে জ‌মে ভীড়,
যার কেহ নাই চাই হ‌তে চাই তার চেনা এক নীড়।

দু`এক জ‌নের জন‌্য তো নয় সবার হ‌তে চাই,
প‌থের ধ‌া‌রের বৃক্ষ হ‌বো হ‌বো না বনসাই।

আমার একটা নদী আ‌ছে

আমার একটা নদী আ‌ছে ভীষণ রকম টা‌নে,
তার কা‌ছে সব খু‌লে ব‌লি সে তো সবই জা‌নে।
মন হ‌লে ভার তার কা‌ছে যাই
নদী জা‌নে আ‌মি কী চাই
অ‌নেক অ‌নেক গল্প ক‌রে ঘ‌রে ফি‌রে আ‌সি,
নদী জা‌নে আ‌মি তা‌কে ক‌তো ভা‌লোবা‌সি।

আমার কথা নদী শো‌নে নদীর কথা আ‌মি,
আমরা দুজন দুজ‌নেরই কা‌ছে ভীষণ দা‌মি।
ব‌াঁচার জন‌্য একট‌া ভা‌লো বন্ধু প্রয়োজন,
নদীর সা‌থেই ভাগাভা‌গি ক‌রে নিলাম মন।

পা‌খির বন্ধু নদী, ত‌ারা ম‌নের কাছাকা‌ছি,
যু‌গের প‌রে যুগ চ‌লে যায় একই রকম আ‌ছি।
নদী শোনায় আমা‌কে গান আ‌মি শোনাই তা‌কে,
আমরা হাঁ‌টি, গ‌াছ পালারা অবাক চে‌য়ে থা‌কে।

আম‌ার একটা নদী আ‌ছে নদীর কা‌ছে গে‌লে,
দেখি আ‌মি আজও আ‌ছি দ‌স্যি কি‌শোর ছে‌লে।
ই‌চ্ছে হ‌লেই প‌কেট থে‌কে নদীটা বের ক‌রি,
ভাসাই তা‌তে কমলা র‌ঙের পাল ওড়া‌নো তরী।

যার যা ই‌চ্ছে ব‌লতে পা‌রো, কর‌তে পা‌রো রাগ,
কেউ পা‌বে না কেউ পা‌বে না এই নদীটার ভাগ।

লু‌কোচু‌রি

আকাশ ছি‌লো কমলা র‌ঙের
তার ভেত‌রে চাঁ‌দের ম‌তো কিছু,
হাঁট‌তে হাঁট‌তে হই বেসামাল
ডি‌মের ম‌তো চাঁদটা নি‌লো পিছু।

আ‌মি হেঁ‌টে যে‌দি‌কে যাই
চাঁ‌দের দেখা সে‌দি‌কে পাই,
কাণ্ড দে‌খে ভয় পে‌য়ে যাই
হঠাৎ হ‌লো কী যে,
চাঁদটা কে‌নো পিছু নি‌লো?
ভাব‌ছি নি‌জে নি‌জে।

ভয় পে‌য়ে‌ছি ভ‌য়ের চো‌টে
বুকটা গে‌লো শু‌কি‌য়ে,
এক দৌ‌ড়ে গা‌ছের ভেতর
গেলাম আ‌মি লু‌কি‌য়ে।

বোকার ম‌তো পাতার ফাঁ‌কে
যেই দি‌য়ে‌ছি উঁ‌কি,
দুষ্টু হে‌সে চাঁদ বল‌লো,
‘মাসুম আওয়াল টু‌কি’।

হা‌রি‌য়ে যা‌বো

আ‌মি হঠাৎ হা‌রি‌য়ে যা‌বো কোথাও
খুঁজ‌বে আমায় যা‌বে না আর পাওয়া,
‌মি‌লি‌য়ে যা‌বো নীল পাহা‌ড়ের ভাঁ‌জে
আমার প্রিয় বন্ধু হ‌বে হাওয়া।

বন্ধু হ‌বে রা‌তের জোনাক তারা
বন্ধু হ‌বে অবাক জোছনারা,
বন্ধু হ‌বে মেরুন র‌ঙের মেঘ
বন্ধু হ‌বে পু‌রো আকাশপাড়া।

আ‌মি হঠাৎ হা‌রি‌য়ে যা‌বো কোথাও
হ‌য়ে যা‌বো সু‌তো ছেঁড়া ঘুড়ি,
উড়‌তে উড়‌তে মি‌লি‌য়ে যা‌বো দূ‌রে
পা‌বে আমায় মি‌ষ্টি চাঁ‌দের বুড়ি।

ভাল্লা‌গে না নিয়ম বাঁধা জীবন
ভাল্লা‌গে না বাঁকা চো‌খের চাওয়া,
খাম খেয়ালী এমন জীবন ছে‌ড়ে
ভা‌লো লা‌গে এমন হা‌রি‌য়ে যাওয়া।

ব‌ন্দি জীবন ভাল্লা‌গে না তাই,
হা‌রি‌য়ে যা‌বো হা‌রি‌য়ে যে‌তে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *