ফারহানা নীলা’র কবিতা

শব্দটা চেনা

বিনির্মানে গড়া এই আমি
পথে পড়ে আছি যেন
খুলে গেছে এক নদী
ভাঁজে ভাঁজে স্মৃতি।

ওখানে আলোর সাথে
তোমার আসার কথা
বলেছিল জল।

গন্তব্য স্টেশন তবু
ভুল করে খেয়াঘাটে
খুঁজি প্লাটফর্ম।

বিগত শতকে বসে
নিভাঁজ মোহনা
ভাঁজ খুলে গেছে
অথচ নদীটা পথে
বিছিয়েছে শোক।

এখনও চলিষ্ণু জল
বুকের গহীনে
পোষা নদী রাখে।

বকেয়া উসুল হয়
ভেবে স্মৃতির সাগর
উথাল-পাথাল।
নিজেকে বন্ধক রাখি
সময়ের কাছে

জোছনা ছিটিয়ে
চোখ মাপে আকাশটা।
আর অনির্ণীত পথে
ফোটে বসন্ত আকাশ
হেমন্ত সকাল
ঘুমন্ত ঘুঙুর বাজে-
শব্দটাকে চিনি।

ভাঙছি আমি

আমি জানি কোন সে বিষে
নীল মেখেছি মনটা জুড়ে
একটা সময় যাচ্ছে পড়ে
পকেট থেকে

দিন গড়িয়ে নামছে আঁধার
মন ফুরিয়ে কাঁদছে কেনো
আমার মতো
একটা নদী, সেই সে পাখি
হয়তো সাগর
বন বনানী।

আমি জানি কোন ব্যথাতে
অচিনঘরে পিদিম নেভে
সলতে পোড়া ধোঁয়া ওঠে
মন পোড়ানো ছাইটা ওড়ে
কার কথাতে জলের মতো ভাসছি আমি।

আমি জানি কোন বিষাদে
আকাশ কাঁদে শিশির জমে এই মনেতে

একটুখানি আড়াল খোঁজে
মনটা ভীষণ একলা কাঁদে
পোড়া চোখে মুখটা দেখি
আয়নার মতো ভাঙছি আমি

টুকরো কাঁচে এই ভেঙেছি
একলা একা একটা আমি।
হরেকরকম ভাঙছি আমি
যেমন ভাঙে নীরবতা তোমার কাছে অবহেলার কষাঘাতে।

অপেক্ষা অসুখ

ধরো তুমি এলে
অনেক অপেক্ষা করে এলে তুমি আজ
পথে প্রান্তরে ঘাসের গালিচা মাড়িয়ে
দোয়েল পাখির ডানায় জোছনার ঢল নিয়ে আবার
তুমি এলে।
শীতের উষ্ণতা নিয়ে কুয়াশার ঘেরে
আড়ালের মতো এলে।

অথচ অসুখ..
ভীষণ অসুখ আজ
অসুখের মতো এলে।

চৌরাস্তার আশেপাশে
ওষুধের দোকানের সেই পরিচিত ঘর- নিরাময় নেই।
খেয়াল করোনি তুমি
তোমার অপেক্ষা জমে আছে দলার মতন পাঁজরের নীচে।

আজ তাই
অপেক্ষা অসুখ!
তোমার আসার কথা
জেনেও বাড়ছে
গভীরতম সে অসুখ।

এসো না তো-
ওসব ওষুধ পথ্য
সব কিছু মিথ্যে।

এই পথ ধরে বেঁকে
গেছে শত প্রহরের অপেক্ষার কুঁচি
কি ভীষণ উপেক্ষায়
তুমিই জানোনি।

সর্বনাম

হারিয়েছি যা সেটা তো
বোঝোনি এই মন্দার সময়ে।
নতুন ফুলের রেণু মাখা দিনের সাথে পরাগের খুব সখ্যতা আজ।
মৌমাছি সেও আজ মৌসুমি
প্রজাপতি মন কেবল ঘুরছে ফুলে
অথচ ফুল তো ফোটেনি –
সে কথাটা জানোনি আর তুমি তখন।
যা কিছু নেই
ছেড়ে গেলে যতটুকু
তার বেশীটা ছেড়েছি আজ-
ছাপহীন দাগহীন
বিচ্ছেদ ঘটে
ফুল আর ফলে।
ছিলো না যা কোনোকালে
সেটুকু আমার নয় তোমারও নয় এতটা –
তটস্থ সে ভঙ্গিমাতে ছেদ চিহ্ন নেই
যতিচিহ্ন কেন খোঁজো?
পাঠ করো নাই
চলন্ত সে বইয়ের নাম
রেলপথ জুড়ে আছে আমার সর্বনাম।

লন্ঠন

টংঘরে ঝুপড়ির টিমটিমে আলোয় এলে খুলে যায় সব বাঁধা
হরবোলা সে আমি –
খিস্তি খেউড়ের মাঝেই ডুবতে ডুবতে
তোমাকে আমাকে আরো গালিগালাজ করতে আসন্ন সময়ে
এলোমেলো হাঁটি।

খ্যাপাটে সাধুর মতো বিলি কাটি চুলে
উকুনের দৌরাত্ম্যের গল্পটা বানিয়ে বলি নিতান্ত অসুখে।
তোমার ভাড়া করা সেই নদী আর আকাশের মধ্যে মুখ চোখ
ডুবিয়ে দিলাম

যা বাবা! সটকে পড়ছে যে কালের বন্দর
আরোহীর মতো বেয়ে উঠি মহাকালে
ধুর! নক্ষত্রের মতো পড়েছি তোমার কোলে
লে ঠ্যালা সামলা!

পেটে পড়েছে বুঝেছি কিছুটা আমার –
মন পুড়ছে- যৌথ সভা ডেকেছিলে তুমি
আমি ঘুরছি তুমি ঘুরছ
নাগরদোলা তুমি কার? ধ্যাত ধুত্তেরি যা-
সেই তো কর্ম কাবার ; লন্ঠন কোথায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *