রওশন রুবী’র কবিতা
তুই কবে গণতান্ত্রিক হবি
তুই কবে গণতান্ত্রিক হবি
জানিস্ কাল যখন আমি মরতে গিয়েছিলাম,
তুই এসে সামনে দাঁড়ালি, ঘোলা চোখ না ঘুরিয়ে বললি-
দৃশ্যত মৃত্যুএকা হলেও একা নয়, অন্য সত্তাকে মেরে ফেলে,
কেউ সেই আপন মৃত্যুর খবর জানে না।
তুই কেমন বদলে গেছিস, আমি তোকে দেখে হতবাক।
তোর জলের টিসু ডাস্টবিনে ঘুমচ্ছিল, তাদের শরীরে
সংসারের উচ্ছিষ্ট আর পতঙ্গের বিষ্ঠা দখল করে নিল,
জামায় শুঅঁকিয়ে ছিল যেটুকু-
তার যত্ন করি আজো।
যে কথা জানিস নি তুই; সে কথা জানবি না মিলা।
জানবি না কোনদিন।
একটা হাত এসে কাপাল ছুঁতেই উপলব্ধি হলো- নিঃসঙ্গতার চেয়ে সঙ্গ জরুরী।
ঠোঁট কপালে নেমে এলে বুঝলাম –
কেন মানুষ ভালোবাসার জন্য
অপেক্ষা করে। নিস্তরঙ্গ শরীর বেয়ে তরঙ্গ উঠেছিল যেদিন-
সেদিন প্রথম খুন হয়ে ঘরে ফিরে ছুঁইনি রাত অথচ,
পুরোটা রাত আমার পাশেই ছিল,
ধ্যানে ও ধৈর্যে আড়ষ্ঠ অনড়।
একথা বলতে আজ দ্বিধা নেই –
তেল, নুন, উনুনে, আড্ডায়
আমাদের থাকা ভীষণ জরুরী জেনেও- থাকা হয়নি যখন;
আমি ভেঙেছি; খুব ভেঙেছি। তোর পাশে দাঁড়িয়েছেন কল্যাণ দা।
বৃষ্টি কোলে ভাঙনের শব্দ লালন করতে করতে সেই প্রথম খুন হয়েছি।
এক জীবনে কতবার খুন হলে জীবন আর চায় না জীবন?
তখন শুধু ওপারের টান; বলতে পারিস্?
জানি, তোর ভেতর সিগারেটের ইচ্ছেটা মরে গেছে।
কামে, ক্রোধে তুই ভীষণ শান্ত এখন,
বসন্তে হলুদ আর লাল রঙে রঙিন হবার ইচ্ছেও নেই,
মানিয়ে নেয়া স্বাধীনতাকে হত্যা করে,
এটুকু উপলব্ধি করা আর হবে না তোর।
রমনী হয়ে ওঠার আগে-এঁকে ছিলি একটা গন্ডি।
যেখানে গণতন্ত্র ছিল না। তুই কবে গণতান্ত্রিক হবি?
কবে হবি রমনী থেকে রণবীর? কবে হবি?
ভালোবাসা রূপে অরূপে এই ফড়িংজীবনে
এতো বার বদলে যায় কেন রে?
কেন বারংবার খুন হতে হয়; বলতে পারিস?
আমাদের আর হলোই না গান শোনা
আমাদের আর হলোই না গান শোনা,
পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে নেমে যায় না বলা অভিমান,
আয়নায় দেখে আসো ক্ষণে ক্ষণে চুরমার মুখ,
তড়িঘড়ি কথা না বলে শার্সির ওপারে দেখাও
বিকেল ক্রমাগত রাত্রির দিকে ছুটে যায়।
আমাদের দিকে হাঁটছে আমাদের চোখ,
অদ্ভুত বিষণ্নতা, প্রতিমার মতো সরল মায়া,
একাগ্র ভক্তের প্রাণ চেয়েছিল আরো কিছু শোনাও;
চুপিচুপি দিয়ে যাও গান, দিয়ে যাও গোপন অভিমান।
দাওনি! শুধু কপালের ভাঁজ জ্বলে উঠে
ঘরে ফেরা পাখিদের বুকের উল্লাস যেমন।
আর নিরবে বলো,
আমরা যতোটা কাছের তার চেয়ে দূরত্বই হলো বেশি
ভালো থাকার নাম করে জলে ধুয়ো না চারিদিক,
মানুষ সহমর্মী হয়ে করুণায় ঠেলে দেবে নিরর্থক মেঘ;
তুমি আর একা একা কতটুকু হবে কাতর!
তুমি তো ভালোবেসে হয়েছো আগুনের আবেগ,
ক’জন নিজেকে হারায়ে আগ্নেয়গিরি হয়?
ক’জন পুড়তে জানে এমন অন্ধ সর্বনাশে?
আমাদের আর হলোই না গান শোনা,
ছুঁয়ে যায়, ছুঁয়ে যায়, শুধু ছুঁয়ে যায়
অভিন্ন বিষাক্ত সত্যের অনল।
যখন চিরকাল আগুনের ধর্ম পোড়ানো
তখন আমাকে পুরোপুরি পুড়িয়ে দাও
ওগো একরোখা সত্যের অনল।