কবিতা।। শ্যামসুন্দর সিকদার।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

অনঙ্গের শাসনে যাবাে

আজ অনিরুদ্ধ সাজে যাবাে তার অনঙ্গ শাসনে
এখন আমার ভয় লজ্জা নেই নীলাম্বু আসনে
ভাঙ্গা আয়নায় ছবি এঁকে চলি দ্বিধাহীন চিত্তে
নিঃসঙ্গ সময়ে মদির অধীর ক্লান্তি থাকে বিত্তে।

শরীর পাতনে সমুদ্র উত্তাল বুননা আমন্ত্রণে
শাসনের জন্যে দুঃশাসন করি, বসি সিংহাসনে
বৃক্ষের মতন দুইহাত রাখি পল্লবী শাখায়
স্বপ্ন বুনি তার , প্রজাপতি ভেবে পতঙ্গ পাখায়।

দ্বিধা যদি থাকে মনের ভেতর অরণ্য নিবাসে
তবে যুদ্ধে যাবে বিমূর্ত – বিশাখ, ছিল যে বিবাসে!
আর কোনাে ভয় নেই, শুভময় তিথির ডম্বরে
বিস্তীর্ণ বিবশ নির্লজ্জতা দূর হবে সাড়ম্বরে।

বৈপরীত্য-কথা ও কাজে

মাঝে মাঝে দেখি কত বিপরীত মেরু
অন্তরে আঁধার – আর মুখে তার চারু
ভাবনায় ও প্রকাশে দেখি দিনেরাতে
নানাভাবে কথা আর ভিন্ন অজুহাতে।

বলে এক, করে ভিন্ন – কত চাতুরীতে
সততায় অনাচারে, দেখি বিপরীতে
দিনভর মিথ্যাচারে দেখি সুনিদিষ্ট
ভদ্রতায় আচরণে থাকে অবশিষ্ট।

জায়গা মতােই করে সে যে কত শ্রদ্ধা,
অন্য কোথাও দেখায় যত যত স্পর্ধা
মুখে বলে – দূর করি অন্তরের পশু
অহংকারী হয়ে – ভাব দেখায় সে যীশু।

রক্তানু বিন্দু থেকে

প্রাণপাখি চলে গেলে ফিরে আসে না আপন নীড়ে
যেমন, সময় গেলে – আর আসে না পিছনে ফিরে
মুখ থেকে কথা গেলে ফিরে না – মুখের অভ্যন্তরে
চলে গেলে বন্দুকের গুলিও ফিরে না জন্ম ঘরে।
অন্য সবাইকে ফিরে যেতে হয় – ফিরে যায় তীরে
শেষ গন্তব্যে শুরুর নতুন আলেখ্য পায় ফিরে!

এই বােধের কাছেই আজ আমি মাথানত করি
আমি তােমার কাছেই তাই আত্মসমর্পণ করি
যেখানে করেছিলাম শুরু তােমার রানু বিন্দু থেকে
যেখানে তােমার সুখ চোখের কোণায় তপ্তজল রেখে।
সােহাগী চুমােয় ভরেছিল তার পৃথিবীর পুণ্যতম মুখ
সবকিছু দান করেছাে আমায় দিতে পৃথিবীর সব সুখ।

জলযাত্রা

মেঘের চোখ – রাঙানি দেখে থেমে আছে যত ভালােবাসা
আকাশের দূত হবে বৃষ্টি মাথায় আশ্রয় নেবে এসে।
আগ্রাসী বৃষ্টির সঙ্গে গােপন বৈঠকে হবে সমঝােতা,
সিঞ্চিত জলের ছোঁয়া নরম আদর মাখা – স্বর্গসুখ!
আপন স্বার্থের বারান্দায় করবে বরণ একখানি
‘অন্তরঙ্গ’ সুখ, আর প্রসারিত প্রেম – হবে আলিঙ্গন।

শখের ফুলেরা জোছনায় সুগন্ধ ছড়াবে চারিদিকে
ভােরের বাতাসে প্রজাপতি এসে দিয়ে যাবে নিমন্ত্রণ
রঙের মেলায় নিয়ে যাবে মেঘের ভেলায়! জলযাত্রা-
হবে, থামবে না প্রেম – মেঘ মাটি জল হতে রুদ্র দৃষ্টি
সরে যাবে; বাধাহীন আকাশের পায়ে পায়ে পূজা হবে
এবং প্রেমের আলতা পরাবাে রবি – রশ্মির আলাে দিয়ে।

মেঘের দু’চোখে প্রেম আজ ওঠেছে জাগিয়া-বৃষ্টিজলে
নতুনেরে অতি কাছে পাইয়া – বন্ধনে থাকে সুখ ‘হিয়া’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *