কবিতা।। কাজী রোজী।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
আমার পিরানের কোনাে মাপ নেই
আমার পিরানাে কোনাে মাপ হয় না।
দর্জি বলে : এ কিরাম শরীল গাে …
মাপ নিতি পারিনে।
আমি বললাম : পা থেকে মাথা …
মাপ নেন। দেখবেন ঠিক হয়েছে।
দর্জি বলল : সে কিরাম কতা,
ও পিরান তাে সবাই পরে না।
মরে গেলি পরাই। মাপ লাগে না।
আমি বললাম : দর্জি ভাই,
আমার দশ দিকে দশটা মরণ ক্রুশ
বিদ্ধ করে আছে।
আমি তাে মরেই আছি।
দর্জি বলল : যেদিন মরে বাঁচবা,
সেদিন তােমার পিরান
বানায়ে দিবানে। মাপ লাগবি না।
আসলে আমার পিরানাের কোনাে মাপ হয় না।
দর্জি ঠিকই বলে : এ কিরাম
শরীল গাে … মাপ নিতি পারিনে।
বছর বছর ধরে
কলস উজাড় করা পৃথিবীর সমুদয়
ভালােবাসা নিয়ে, আমি যখন
কাক্সিক্ষত সত্যের পথে চলেছি—
ঠিক তখনই কে যেন ডাক দিল
ফিরে তাকাবার।
ফেলে আসা পথ – পথের দুধার
লাশের কঙ্কাল —
নদীর থমকে যাওয়া বাঁক
—জঙ্গলে ছড়ানাে মায়ের
দীর্ঘশ্বাস দুমড়ানাে মােড়ানাে
চিঠির পাতা… আলগােছে
সবকিছু তুলে রাখলাম।
এভাবেই বাংলাদেশ তুমি এসেছিলে,
মনে হলাে সবুজ প্রকৃতি ঋণে সূর্য-লাল
পতাকা তুমি উড়িয়েছিলে।
বছর বছর ধরে হাঁটাহাঁটি পথ এই
বাংলায়, তবুও এখনাে কেন চোখের
উপর দিয়ে বিরুদ্ধ চোখেরা চলে যায়।
অবিশ্বাস
দরজা জানালার খােলা পথ দিয়ে
অবিশ্বাস ঢুকে পড়েছিল,
সম্পূর্ণ মিথ্যের বেদীতে তুমি দাঁড়ানাে।
তােমার কোনাে নিজস্বতা নেই–
তুমি বলিদান হয়ে গেছ।
সে তােমার ইচ্ছায় কিনা আমি জানিনে।
এভাবে পুড়লে কেন তুমি?
আমিও যে জ্বলে যাই তাতে
তুমি বােঝ না ?
নিরােলা কংসং প্রতীকী
জমাট সবুজ বনের ভিতর নিরােলাদের বাস
সকাল দুপুর সন্ধে থাকে আমার সাথে বেশ
রাত্রি বেলা তার নিবিড়ে নিরােলা কংসং
মদির আবেশ ছাড়িয়ে ডাকে মরদ ও জোয়ান।
একদিন এক রাত গভীরে এলাে আমার ঘরে
দু’চোখে তার জল ছিল না আগুন ঝরে পড়ে।
নিরােলাকে বােঝায় আমি থাক না পেটের ছেলে
গালমন্দ সটাং চাবুক সে তাে রােজই মেলে
নারে মাইজি না — ছাওয়াল জ্যান্ত নেই
ওর রক্ত ঝইরা গ্যাছে আমার শরীরেই।
আর যামু না ওই ঘরে নিত্যি শরীর বেঁচুম না।
তুই থাকলে থাকুম আমি, না থাকলে থাকুম না
আনন্দ চিত্তে পাঠ করলাম।