গুচ্ছ কবিতা- এনামুল হক

নিগৃহীত অংকুর

সবুজের বুকে চলে হাহাকার,
চৈত্রের খরতাপে ফেটে চৌচির মৃত্তিকা;
শুধু এক ফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষা।
হঠাৎ অচেনা এক ঝড় এসে
দুমড়ে মুচড়ে দেয় সবুজ ঘাসগুলো,
ঝড় থেমে যায়, চলে যায় চিরতরে।
সবুজ ঘাসে নতুন পাতা গজায়,
সেই পাতার উপর সুশীল সমাজ,
এঁকে দেয়,
শিলমোহরে-
একটি শব্দ-
“নিগৃহীত অংকুর”।

কোথায় নেই আমি?

কি ভাবছো আমি হারিয়ে গেছি?
না,কখনো হারাবো না
আমি আছি,থাকব।
কোথায় নেই আমি?
ধল প্রহরে যখন পুব আকাশে সূর্য ওঠার হাতছানি,
রক্তিম আভায় আধো আধো আলোর ঝলকানি;
ওটাই আমি।
নব সূর্যের আহ্বানে নতুন কোনো বার্তা নিয়ে জানালার ফাঁক গলে তোমার আঙিনায়।

কোথায় নেই আমি?
ষোড়শীর বুকে যখন উথাল পাথাল ঢেউ,
বালিশ চাপড়ে এক পরম সুখের অনুভূতি,
ওটাই আমি।
অতৃপ্তিতে তৃপ্তি খোঁজার রসদ।

কোথায় নেই আমি?
স্বামী সন্তান হারা সকিনা বিবির বিলাপ,
তৃণ লতাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়া,
ফরিদার মিথ্যা সান্ত্বনায় আবার বাঁচার আশা।
ওই সান্ত্বনা টুকুই আমি।

কোথায় নেই আমি?
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার লগ্ন,
জীবন বাঁচাতে শ্যাওলাকে ভেলা ভেবে জড়ানো,
শিশুর স্বপ্নে নতুন চাঁদ,চাঁদের বুড়ির গল্প।
মেঘমালায় আকাশের পরী,
তাকে নিয়ে কত কল্প।
কোথায় নেই আমি?
আমি তো এদের মাঝেই।

দেয়ালের কার্নিসে উড়ে বেড়ানো চড়ুই,
ঝাউবনে জোনাকীর আনাগোনা,
জলের সাথে মাছের পিরিত,
লুঙ্গি গুটিয়ে ছমির আলীর হালচাষ,
লেজ উঁচিয়ে ষাঁড়ের ভো-দৌড়,
শিশির বিন্দুতে জমানো যত কথা,
শাপলা শালুকের কষ্টগাঁথা,
কাগজের নৌকোয় পুতুল বিয়ে,
বাবরের ছোট ছেলেটির অঝোরে কান্না,
কোথায়?কোথায় নেই আমি?

শীতের রাতে যুবকের রসের হাঁড়িতে ঢিল,
চপলা তরুণীর খিলখিলিয়ে হাসা,
যে হাসিতে ঝরে অব্যক্ত হৃদয়ের কথা,
দাদির মুখে শোনা বউ ঠাকুরাণীর গল্প
দাদার মুখে হাতেমতায়ীর পুঁথি।
কোথায় নেই আমি?
আমি তো এখানেই,প্রতিটি রূপকল্পে।

আমি আছি সন্ধ্যা তারার আকাশে
আমি আছি দোলায়মান ধানের শীষে
আমি আছি বাংলার মাঠ ঘাট প্রান্তরে
আমি আছি সবুজের সবুজ শাখায়
আমি আছি কোকিলের কন্ঠে
আমি আছি তোমাতে,আমার এই কবিতায়।

ব্ল্যাক হোল

আহা!
এ যে করুণ পরিনতি
প্রতি রাতেই চলে অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়ার খেলা।
নক্ষত্রের পানে ছুটে চলে আরেক নক্ষত্র
হয়তোবা আগ্নেয়গিরির লাভা পথ বেয়ে।
এই দৃশ্যে আকাশ জুড়ে অভিমান;
তাইতো বুকফাটা আর্তনাদে মেঘের গর্জন!
যখন এ গর্জনেও হয়না আত্মশুদ্ধি;
তখনই শুরু হয় বৃষ্টি।
যা গড়িয়ে চলে পাহাড় বেয়ে–
অবশেষে পৌছে যায় লোক লোকান্তরে।
বৃষ্টির দাগ গুলো খানিক দাগ কাটে মানবহৃদয়ে
কিন্তু কিছু সময় পড়েই সূর্যদেব তা শুষে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
আবারো বিলীন হয় আরেক নক্ষত্র
ক্ষতটা মুছে যায় পৃথিবী থেকে,
কিন্তু রয়ে যায় নক্ষত্রের গায়ে
ঠিক ব্ল্যাক হোল এর মত!

কবিতার মৃত্যু

আমি শুধু সাপ্লিমেন্টারী হিসেবে নিযুক্ত।
আমি কবি নই,কবিদের উত্তরসূরীও নই।
এমনকি কবিতারও উত্তরসূরী না;
এবঙ—তুমি যাহা কবিতা বলে ঢকঢক করে গিলছো;সেগুলো কবিতা নয়।
ওগুলো কেবল ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা
কিছু ঝরাপাতা!
কবিতার জীবনাবসান হয়েছে।
কবিতা এখানে মৃতঃ।

ঔপন্যাসিক

আখ্যানভাগে চরিত্রের বিস্তার।
হরেকরকম মশলা আর রুচিবোধ
জেলেপাড়ার মাঝি কিংবা জমিদার বাবু
সব একই বায়ু-কুঠুরিতে আবদ্ধ!
করুণ রস কিংবা বীর রস
ট্রাজেডি! আরো ট্রাজেডি!
নিত্য নতুন উপন্যাস
একই চরিত্রের পুনরাবৃত্তি
কতশত চরিত্র রূপায়ণ
নানা আয়োজন, হট্টগোল
আর এসবের যিনি স্রস্টা—ঔপন্যাসিক।
কি আর কাজ তাঁর–
শূন্যে বসে শুধু দাঁত কেলিয়ে হাসে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *