ছোটগল্প- পেন্ডুলাম রাসেল রায়হান

এক…দুই…তিন…চার…পাঁচ…ছয়…
আমি মৃদুস্বরে গুনছি। আর আমার পৃথুলা আম্মা কানে ধরে ওঠবস করছেন। চেষ্টা করছি অন্যকিছু দেখার। ঘরে গত বছরের একটা ক্যালেন্ডার আছে—সেটা, কিংবা দেয়াল বেয়ে এক সারি পিঁপড়ে হেঁটে যাচ্ছে—সেদিকে। কিংবা আব্বা ঢাকা থেকে আসার সময় একবার দামি একটা ঘড়ি এনেছিলেন, নিচ দিয়ে বড় একটা পেন্ডুলাম দুলতেই থাকে, দুলতেই থাকে—সেটা দেখার চেষ্টা করছি। অথচ আমার দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে আম্মার দিকে। আম্মা—আমার মা, যিনি আমায় জন্ম দিয়েছেন—কানে ধরে ওঠবস করছেন, আর আমি ঝাপসা চোখে গুনছি—ছাব্বিশ…সাতাশ…আটাশ…উনত্রিশ…
আম্মার পেছনে খবরের কাগজ-মোড়া দেয়ালের ছবিগুলি ঝাপসা হয়ে আসে, লেখাগুলি দুর্বোধ্য লাগে, পিঁপড়ের সারি অদৃশ্য হয়ে যায়। পেন্ডুলামটার দুলুনিও কেমন ধীর মনে হয়। আমার ঠোঁট নড়তে থাকে মন্ত্রোচ্চারণের মতো—তেতাল্লিশ…চুয়াল্লিশ…পঁয়তাল্লিশ…ছেচল্লিশ…সাতচল্লিশ…
সারা গা ঘেমে গেছে আম্মার। লাল ব্লাউজের হাতাও ভিজে খয়েরি হয়ে গেছে, নিঙড়ালে আধ-মগ ঘাম ঝরবে। আমার পৃথুলা, দুর্বল আম্মা!
আঁচলটা খসে মাটিতে পড়েছে—গড়াগড়ি করছে পোষা সাপের মতো। আম্মা ক্রমাগত হাঁপাচ্ছেন। একবার বসে আবার উঠতে খুব সময় লাগছে। প্রথমে যেভাবে শুরু করেছিলেন, ধীরে ধীরে সময়ের ব্যবধান দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দীর্ঘলয়িত হচ্ছে আমার গণনা—ছাপ্পান্ন…সাতান্ন…আটান্ন…উনষাট…
আম্মার চোখেমুখে প্রচণ্ড ভয়ের আভা। সে আভা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। শুরুর দিকে সামান্য লজ্জার ছায়া ছিল চোখে তার, এখন সেটুকু মিলিয়ে কেবল ভয়ের প্রতিবিম্ব। লাল টকটকে হয়ে উঠেছে কপোল। প্রথমে ঘামগুলি বিন্দুভাবে জমছিল, এখন পানির পরত। অথচ আমার শীত লাগছে খুব। ভীষণ! প্যান্ট ভিজে আছে আমার। এমন কুৎসিত একটা মুহূর্তেও আমার মনে হয়, বন্ধুরা প্যান্ট ভেজার কথাটা জানলে খুব হাসাহাসি করবে! এক জগৎ শীত নিয়ে, শীতের কাঁপুনি নিয়ে আমায় জড়ানো কণ্ঠে গুনতে হচ্ছে—ছেষট্টি…সাতষট্টি…আটষট্টি…
আব্বা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। তার একটি আঙুলও নড়ছে না। সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু যেই তিয়াত্তরের পরে সাতাত্তর বললাম, বাঘের মতো গর্জে উঠলেন আব্বা, কুত্তার বাচ্চা, খুন কইরা ফেলব। ভাবছস ঘুমাইছি! শুয়ারের বাচ্চা, একদম খুন কইরা ফেলব।
ভয়ে আমার শরীরের প্রতিটা কোষ কেঁপে উঠল। সবকিছু ঘোলা লাগছে। সেই ঘোলা দৃষ্টির ভেতর দিয়ে দেখলাম আম্মাও আতঙ্কে কাঁপছেন। একটু দ্রুতই ওঠবস করতে লাগলেন। বুঝতে পারছি তিনি যেকোনো সময় পড়ে যাবেন। বন্যার বাঁধের মতো হুড়মুড় করে। আম্মা। আমার পৃথুলা আম্মা ! আমায় পিঠে নিয়ে ঘোড়া সাজেন আম্মা। সেই বাজার পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে আইসক্রিম কিনে আনেন আম্মা। আমার জন্য। আমার আম্মা। আমার একলার আম্মা।
বিরাশি…তিরাশি…চুরাশি…পঁচাশি…
হঠাৎ করেই আম্মা থেমে গেলেন। আমি কিছু বুঝতে না পেরে গোনা থামিয়ে তাকিয়ে রইলাম। এতক্ষণ চোখ মুছতে মুছতে আমার চোখে জ্বলুনি শুরু হয়েছে। আব্বাও তক্ষুনি চোখ মেলেন। কদিন আগে আব্বার হাত ধরে পাশের মাঠে মোরগলড়াই দেখতে গিয়েছিলাম। লম্বা লম্বা সুগঠিত পা, বিসদৃশ পালক আর চোখ হলদে লাল একেকটা মোরগের। আব্বার চোখ সেই মোরগের মতো জ্বলছে অবিকল। আমার গোনা থামানোয় তিনি কিছু একটা সন্দেহ করেছেন।
আম্মার দিকে আব্বা এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন যেন সুদূরের কোনো জগতের অপরিচিত কেউ। তার চোখে এখন সেই মোরগের দৃষ্টি নেই, পাগল কুকুরের দৃষ্টি। ঝন্টুকে অমন একটা কুকুর কামড়েছিল।
আচমকাই আব্বা চেঁচিয়ে ওঠেন, কী রে মাগি, থামছস ক্যা?
আম্মা কেঁপে ওঠেন থরথর করে। ভয়ে কাঁদতে পারছিলেন না একদম। তার ক্রমাগত হেঁচকি উঠছে। অনেক কষ্টে টেনে টেনে বলেন, এট্টু পানি খাব।
আব্বা খোঁকিয়ে ওঠেন, এহ্, পানি খাব! এক শ বারও হয় নাই, এর মইধ্যে পানি খাব! বেশ্যা মাগি।
আম্মা হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠেন।
—বুকটা ফাইট্টা যাইতেছে। এট্টু পানি দেন। এট্টু। বুকটা ফাইট্টা যাইতেছে। এট্টু দেন। এক ফোঁটা পানি—
আমিও হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। চেপে রাখতে চেষ্টা করেছিলাম প্রবলভাবে, পারিনি। আম্মার মতো আমারও বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আব্বা তক্ষুনি বেড়ায় গুঁজে রাখা রামদা এনে গলায় ধরেন আমার। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে থাকেন, চোপ শুয়ার। গলা নামায়া দিব। চোপ।
আমি আতঙ্কে কান্না থামিয়ে ফেললাম। শুধু কান্নার দমকে কেঁপে উঠছি অকস্মাৎ। আব্বাকে আমি বড় ভয় পাই। আব্বা নিজে গ্লাসে পানি ভরে এনে আম্মার হাতে দিলেন। এক ঢোঁক মাত্র পানি আম্মা খেতে পারলেন। এক ঢোঁক খেয়েই হাঁপাতে লাগলেন। এত বেশি টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছেন যেন তার আশপাশে এক বিন্দু অক্সিজেন নেই।
আব্বা গ্লাস নিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেলেন। তারপর পানিটুকু নিজেই ঢক ঢক করে খেয়ে ফেললেন এবং আগের মতোই চোখ বুজে শুয়ে পড়লেন।
আম্মা আবার ওঠবস শুরু করেন। আমি থেমে ছিলাম, আব্বা আবার লড়াইয়ের মোরগের দৃষ্টিতে তাকান। সুতীব্র ভয়ে আমি আবারও গুনতে শুরু করি—ছিয়াশি…সাতাশি…আটাশি…উনানব্বই…নব্বই…
আমার নানিজান, যিনি রান্নাঘরে কিছু একটা করছিলেন, তিনি সম্ভবত শুনতে পেয়েছিলেন আমার চিৎকার। তার খালি পায়ে ছুটে আসার শব্দও আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম। দরজার কাছে এসে তিনি চেচাঁতে থাকেন, ও মনু। কানতেছিলি ক্যা? ও মনু—
আমার কোন সাড়া না পেয়ে তিনি আব্বাকে ডাকতে থাকেন, ও ইসমাইল। ও বাবা, কী হইছে? ও ইসমাইল।… ও মরিয়াম, ও মনির—
আম্মাও উত্তর দেন না। তিনি সম্মোহিতের মতো ওঠবস করছেন তখনো। নানির চিৎকার কি তার কানে পৌঁছায়নি?
আব্বা গলা কোমল করে নানিকে বলেন, কিছু না আম্মা। আপনে ঘুমাইতে যান। কিছু হয় নাই।
নানিজান তবু চেঁচাতে থাকেন, ও মরিয়াম, দরজা খোল। ও মরিয়াম। ও মা, কী অইছে? দরজা খোল।
আব্বা শান্ত স্বরে বললেন, কিচ্ছু হয় নাই আম্মা, আপনে ঘরে যান। মরিয়ামের কিচ্ছু হয় নাই। মনিরেরও কিচ্ছু হয় নাই। আপনে যান।
নানিজান তবু শোনেন না। তিনি চিৎকার করতেই থাকেন, ও মনির। মনু, দরজাডা খোল। ও মনু।
আব্বা এবার রেগে ওঠেন। রূঢ় স্বরে বলেন, আম্মা আপনে ঘুমাইতে যান।
নানিজান আরও গলা চড়ান, ও বাজান। তোমার পায়ে ধরি। বাজান। ও বাজান। আমি সত্যি তোমার পায়ে ধরি। আমার মাইয়াডারে কিস্যু কইও না বাজান।
আব্বা হিংস্র পশুর মতো গজরাতে থাকেন। তার চোখমুখ লাল টকটকে হয়ে ওঠে রাগে।
—আম্মা, আপনে দরজার সামনে দিয়া যান। নইলে আরও খারাপ হইব।
নানি সম্ভবত চলে যান। আর কোনো সাড়াশব্দ পাই না তার। তিনিও আব্বাকে ভয় পান। আব্বাকে আমি ভয় পাই, আম্মা ভয় পান, নানিও ভয় পান। নানা বেঁচে নেই আমার। থাকলে হয়তো তিনিও ভয় পেতেন। তবু আমি কান পেতে থাকি তীব্র আশা নিয়ে, যদি নানিজানের সাড়া পাওয়া যায়। তিনি আছেন ভাবলেও সামান্য সাহস পাই। কোনো সাড়াশব্দ নেই।

আব্বা যখন আম্মাকে পাঁচ শ বার কান ধরে ওঠবস করতে বললেন, আম্মা বললেন, আমার কোনো দোষ নাই, বিশ্বাস করেন।
আব্বা চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, তুই পাঁচ শ বার কান ধইরা ওঠবস কর। তোর দোষ থাকা লাগব না। যা বলছি, কর।
তখন আমিও বলি, আব্বা, আম্মার কোনো দোষ নাই, তারে মাফ কইরা দেন।
তখন অবশ্য ছোট ছিলাম, বুঝিইনি যার দোষ নেই, তাকে কীভাবে মাফ করা যায়।
আব্বা আমাকে ধমক দেন। ভয়ে প্রস্রাব বের হয়ে যায় আমার। অমন ভয়ের মধ্যেও আমার তীব্র ইচ্ছা হয় আব্বার হাত কামড়ে ধরি। আঙুলগুলো কামড়ে ছিঁড়ে ফেলি। আমি পারি না। আব্বাকে আমি বড় ভয় পাই। আমি সচরাচর ভীতু ছেলে।
আব্বা আম্মার দিকে আঙুল তুলে ভাঙা রেকর্ডারের মতো বলেন, তুই পাঁচ শ বার কান ধইরা ওঠবস করবি। এক্ষন—ঠিক পাঁচ শ—
আম্মা আব্বার পা ধরেন। দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন, মাফ কইরা দেন। আমারে মাফ কইরা দেন।
আমিও ঝাঁপিয়ে পড়ি আব্বার পায়ে। ফিস ফিস করে বলি, আব্বা, আম্মারে মাফ কইরা দেন। আর ভুল করবে না। আব্বা—
আব্বার সামান্যও দয়া হলো না। আবার বললেন, শুরু কর। নইলে তোরে আইজই ছাইড়্যা দিব। আইজই তালাক দিব।
…আম্মা কান ধরে ওঠবস করতে শুরু করলেন। পৃথিবীর সবচে কুৎসিত আর লজ্জাকর দৃশ্যটি আমার সামনে দৃশ্যায়িত হতে থাকে।
আমি সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি। তিনি সচরাচরের মতোই আমার ডাক শোনেন না। আব্বা আরও চরম নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে বলেন, মনু, গোন। পাঁচ শ পর্যন্ত গুনবার পারস না? আইজ তোর পরীক্ষা নিব। এট্টু যেন ভুল না হয়। জোরে জোরে গোন।
আব্বা পিঠের কাছে দুটি বালিশ রেখে হেলান দেন। তারপর চোখ বোজেন। আমার কেন যেন মনে হয় পাঁচ শ পর্যন্ত গুনতে পারব না আমি। নির্ঘাৎ ভুল হবে।


…আমার দিকে ফিরে আব্বা ধমকে উঠলেন, কত হইছে?
আমি বললাম, এক শ সাঁইত্রিশ। ক্ষীণ আশা, আব্বা বলেন বুঝি, আর থাউক। আর লাগবে না।
আমায় সম্পূর্ণ আশাহত করে আব্বা আম্মাকে ধমকে ওঠেন, অই, তাড়াতাড়ি কর। ঘুমাব। ঠিক পাঁচ শ বার ওঠবস করবি।
আম্মা শুনলেন কি না বোঝা গেল না। তিনি ওঠবস করেই চলেছেন। ধীরলয়ে। অতিধীরলয়ে।
এক শ উনচল্লিশ…এক শ চল্লিশ…এক শ একচল্লিশ…
আমার চোখ আবার ভিজে উঠছে। অন্যরকম একটা বোধ আমায় আচ্ছন্ন করে ফেলছে। মদিরভাবে আমি তাকিয়ে রইলাম দেয়ালঘড়িটার দিকে। পেন্ডুলামটা দুলছে।
এক শ তিপ্পান্ন…এক শ চুয়ান্ন…এক শ পঞ্চান্ন…একশ ছাপ্পান্ন…
নানিজান চলে গেছেন, নাকি এখনো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন—বুঝতে পারছি না। তার কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না দীর্ঘক্ষণ। সম্ভবত নেই। থাকলে তার কোমরের চাবিটা দু-একবারও কি বাজত না; ট্রাংকের চাবি?
এক শ একষট্টি…এক শ বাষট্টি…এক শ তেষট্টি…
আব্বা সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার নাক ডাকছে। মুখ মৃদু হাঁ হয়ে আছে। আমি পরীক্ষা করার জন্য এক শ চৌষট্টি থেকে এক শ চুরাশিতে চলে গেলাম। আব্বার কোনো ভাবান্তর নেই। তিনি সত্যিই ঘুমিয়েই পড়েছেন।
এক শ চুরাশি…এক শ আটাশি…এক শ নিরানব্বই…
পাঁচ শ শেষ করতে আরও এক ঘণ্টা লাগল। আম্মার সারা গা ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। ফজরের আজান হচ্ছে দূরের কোনো মাইকে। পাশের মসজিদেও এখনই আজান হবে।
আমি বললাম, আম্মা, পাঁচ শ শ্যাষ।
আম্মা শুনলেন বলে মনে হলো না। তিনি কান ধরা অবস্থায় আবার বসলেন। আবার উঠলেন। আবার…
আমি উঠে আম্মার কাছে গেলাম। আলতো স্পর্শ করে বললাম, আম্মা, ও আম্মা, পাঁচ শ শ্যাষ তো!
আম্মা দুলছেন। আবার খুব আস্তে আস্তে বসছেন। তারপর ধপ করে পড়ে গেলেন মাটির মেঝেতে। তখনো দুই হাতে কান ধরে আছেন। তার পা বেয়ে গড়িয়ে নামছে ক্ষীণ একটা রক্তের ধারা—
দূরে দেয়ালে হেঁটে যায় একসার পিঁপড়ে। তারও দূরে একটা দেয়াল ঘড়ি। একটা পেন্ডুলাম দুলছে—ডাইনে…বাঁয়ে…ডাইনে…বাঁয়ে…ডাইনে…
আমি জানতেও পারি না, আম্মার অপরাধ কী ছিল।

৩ thoughts on “ছোটগল্প- পেন্ডুলাম রাসেল রায়হান

  • অক্টোবর ১৯, ২০১৯ at ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    মাও পেন্ডুলামের মতন বিরতিহীন…

    Reply
  • অক্টোবর ২০, ২০১৯ at ১:৪৪ অপরাহ্ণ
    Permalink

    অসাধারণ❤

    Reply
  • অক্টোবর ২০, ২০১৯ at ১১:৩১ অপরাহ্ণ
    Permalink

    কালের ব্যবহারে সমস্যা মনে হলো। স্ট্রিম অব কনসাসনেছ এর ভালো প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি কিছু বাক্যে অতীতকাল ও বর্তমান কাল মিশে গিয়েছে।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *