উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।।এহসান মাহমুদ।।প্রথম পর্ব
- উপন্যাস ।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব তিন
- উপন্যা।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ ।। পর্ব ছয়
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব দশ
৯
পান্থপথের এই জায়গাটা আগে এভাবে ধরা দেয়নি। হয়তো আজকের রাতের মতো করে কখনো তাকাইনি, সেটাও একটা কারণ হতে পারে। হাসপাতালের সামনে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই একটি লাশবাহী ফ্রিজিং কার। লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িগুলোর দিকে আগে কখনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বড় অক্ষরে লেখা ‘২৪ ঘণ্টা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সার্ভিস’। আচ্ছা, এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন মৃত মানুষের কোনো কাজে লাগে? মৃত ব্যক্তির কাছে কী মূল্য এর? আমরা যারা রয়েছি, তাদের জন্যই তো এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্রিজিং গাড়ি। যাতে করে লাশে পচন না ধরে, দুর্গন্ধ না ছড়ায় এইসব কারণ ছাড়া আর কী হতে পারে?
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সামনে এগিয়ে যাই। পান্থপথ নামটার মতোই মায়াময় মনে হচ্ছে এই সময়টাকে। আবু সায়ীদ আইয়ুবের একটি বই রয়েছে— ‘পান্থজনের সখা’ নামে। আচ্ছা, পান্থপথের এই নামটা কি ‘পান্থজনের সখা’ থেকেই নেওয়া হয়েছে? জানি না। না জানলেও ক্ষতি নেই।
নামকরণ না জানলে যেহেতু কোনো সমস্যা নেই তাই এটা নিয়ে আর ভাবনারও কিছু নেই। আসলে আমি এই রাতটাকে কোনোক্রমে পার করতে চাইছি। এখন চাইলে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যায়। দিনের দৃশ্য আর এই মধ্যরাতের দৃশ্য মেলানো যাবে না। এখানে দাঁড়ালে আকাশ দেখা যায় না। দেখতে হলে উঁচু বিল্ডিংয়ের ফাঁক দিয়ে তাকাতে হয়। এখানেই দেখি একটি ভবনের নাম ‘গগন শীরিষ’। বেশ উঁচু বিল্ডিং। আকাশ ছোঁয়ার একটা চেষ্টা ছিল মনে হয় ভবন মালিকের। আচ্ছা, এই ভবনের ছাদ থেকে কেউ লাফিয়ে পড়লে নিশ্চিত মারা যাবে তো? অনেক আগে একবার খবর বেরিয়েছিল মতিঝিলে কোনো বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে একজন লাফিয়ে পড়ার হুমকি দিয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে লোকটিকে উদ্ধার করেছিল। পান্থপথের এই সড়ক বিভাজনের ওপর বেড়ে ওঠা গাছগুলো বেশ ছোপ ছোপ অন্ধকারের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই দুটো কুকুর একটি মৃত ইঁদুর নিয়ে টানাটানি করছে। খানিক দূরেই আরেকটি কুকুর জট পাকিয়ে শুয়ে আছে। স্বজাতির দুজনের কোলাহলে সামান্য বিরক্ত মনে হলো। মাথাটা জাগিয়ে একবার ঘেউ করে আবার চোখ বন্ধ করল। একটা টহল পুলিশের গাড়ি ভাঙা হেডলাইট জ্বালিয়ে ঘরঘর শব্দে এগিয়ে গেল ধানমণ্ডির দিকে। পান্থপথের সিগন্যালের কাছে আসতেই ফজরের আজান শোনা গেল। হাতের ডানে মোড় নিলেই গ্রিনরোড। সামনে কয়েক মিনিট এগোলেই বাসা। কিন্তু আমি তো এখন বাসায় ফিরব না। কারওয়ান বাজারের দিক থেকে আসা সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাক আমার শরীর ঘেঁষে চলে গেল। কাঁধের ব্যাগটা দমকা বাতাসে ছিটকে পড়ল। মুখ থেকে বেরিয়ে এলো- ‘শুয়োরের বাচ্চা’। ব্যাগটা তুলে হাত দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে গিয়েই মনে পড়ল গত দুদিনে একই জামা গায়ে দিয়ে ঘুরছি। ঢাকার ধুলোবালি, হাসপাতালের ভিড়, অপারেশন থিয়েটারের সামনে দীর্ঘ অপেক্ষা- সবকিছুর নীরব সাক্ষী হয়ে আছে।