উপন্যাস।। সুবর্ণ সর্বনাশ।। মনি হায়দার ।। চার
- উপন্যাস।। সুবর্ণ সর্বনাশ।। মনি হায়দার।। পর্ব এক
- উপন্যাস।। সুবর্ণ সর্বনাশ।। মনি হায়দার।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। সুবর্ণ সর্বনাশ।। মনি হায়দার।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। সুবর্ণ সর্বনাশ।। মনি হায়দার ।। চার
- উপন্যাস।। সুবর্ণ সর্বনাশ।। মনি হায়দার ।। পর্ব পাঁচ
মালবিকা হকের বাসা থেকে যাবার পরই হাবীবের চেতনাজগতে আসে এই অদ্ভুত ঝড়। এই অদ্ভুত ও অবাক ঝড় ওকে দিশেহারা করে দেয়। মালবিকা হক ওর চেতনালোকে কামনার নায়িকা হয়ে নৃত্য করতে থাকে। অথচ তিনি বন্ধুর মা। হ্যাঁ—অস্বীকার করার উপায় নেই তিনি রূপসী, তিনি যৌনাবেদনময়ী, তিনি আকর্ষণীয় এক লোভাতুর নারী, তিনি অসাধার , তিনি … । আর ভাবতে পারে না হাবীব। ওর জীবন জগতের যাবতীয় ভাবনা একটি গলির মাথায় এসে থেমে গেছে। অথচ এসব ভাবনা অন্যায়, নীতিবিরুদ্ধ। তারপরও কেন বানের জলের মতো ভাবনায় কামনার চিত্রকল্প ওর করোটিতে বাসা বাঁধছে?
মালবিকা হকের কাছ থেকে যাবার পর চোখ বুজলেও দেখে মালবিকা হককে, চোখ মেললেও দেখে তাকে। ওকে অনিন্দ্র বিহঙ্গের মতো ডানা ঝাপটে ডাকে আর এক লক্ষ ঘুঙুর পরে নাচে। নাচের তালে সমুদ্রের ঢেউ ওঠে হাবীবের মন তরঙ্গে। হাবীব গড়পড়তায় স্বাভাবিক মানুষ — কিন্তু মালবিকা হক ওকে বিভ্রান্তির মোহন জালে আটকে ফেলেছে। দিশেহারা নাবিকের মতো সমুদ্রের ঝড়ে মাতাল হয়ে গত কয়েকটি দিন আর রাত ঘুরে বেড়িয়েছে পথে পথে। আকৰ্ষিক এই মোহ থেকে চেয়েছে মুক্তি।
উল্টো মালবিকা হক ওকে আটকে ধরেছে—কণ্ঠ যেভাবে আটকে ধরে সুর। কণ্ঠ থাকলে সুর থাকবে। সুর থাকলে সুরের সঙ্গম থাকবে। একটি অপরটির প্রাণ। সুতরাং হাবীব বিভ্রান্ত পথিক এক।
বারবার ভেবেছে — কেন এমন হচ্ছে? ভাবনাই সার─মালবিকা হকের নিপুণ আকর্ষণ থেকে কোনোভাবেই মুক্তি পাচ্ছে না হাবীব। এর নাম কি প্রেম? প্রেম কি এমন? নাজুক? ধ্বংসের বাঁশি বাজিয়ে আসে? নাকি সৃজনের নূপুর বাজাতে বাজাতে আসে? হাবীব কূলহীন কিনারাহীন এক মাঠে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকায়─দেখতে পায় ওকে ঘিরে একজন মালবিকা হক অজস্র মালবিকা হক হয়ে নেচে বেড়াচ্ছে — কখনও সবুজপাড়ের মখমল শাড়ি পরে, কখনও সাদা শাড়িতে আগুনের রঙ নিয়ে, কখনও আদিম পোশাকে …
কেন এমন হচ্ছে? নিজেকে খননের কারখানায় দেখতে পায় হাবীব।
কিরে, তুই কখন এসেছিস? চমকে ঘুরে দাঁড়ায় হাবীব। পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে মোহসীন। কলজে বুক তলপেট অজানা আশংকায় থরথর করে নাচছে। না? বিভ্রান্তির মায়াজাল ছিন্ন করে বাস্তবে আসে সে, মোহসীন নয় পানির গ্লাস হাতে এসে দাঁড়িয়েছেন মালবিকা হক।
দাঁড়িয়ে কেন? বসো।
বাধ্য ছেলের মতো বসে হাবীব। তাকায় মালবিকা হকের দিকে। সাদা রঙের শাড়ি মালবিকার পরনে। মাথায় প্রচুর কালোচুল। খোঁপা করা। মাথার উপর ঘোমটা। সামনে প্রসারিত হাতে পানির গ্লাস। অপার্থিব একটি মানবিক দৃশ্য। স্থির চোখে হাবীব পুরো দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
তাকিয়ে কী দেখছো? পানি নাও।
মুখে মৃদু হাসির রেখা মালবিকা হকের রমণীয় ঠোঁটে। হাত বাড়িয়ে পানি নেয় হাবীব। চোখজোড়া স্থির মালবিকার দিকে নিবদ্ধ। মুখের কাছে পানি নেয়। দৃষ্টি মালবিকা হকের আয়ত আঁখির দিকে। পানি খায় হাবীব। চেয়ে আছে মালবিকা হকের অলৌকিক মুখের দিকে। মুখের প্রতিটি বলিরেখা হাবীবকে লেহন করেছে।
পানি পান শেষে গ্লাসটা ফিরিয়ে দেয় হাবীব সামনে স্থির অপেক্ষায় থাকা মালবিকা হকের কাছে। দু’জনার হাতের অনামিকায় স্পর্শ লাগে। হাবীবের রক্তে উত্তেজনায় স্রোতের বান ডাকে। মালবিকা হক প্রাচীনকালের কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা পাষাণ প্রাচীর এক এই মুহূর্তে মীথের বিন্যাসে ওর সামনে অপেক্ষায় রত। স্বাভাবিকভাবে গ্লাসটা পাশের টেবিলে রাখেন তিনি। মসৃণ পায়ে এসে বসেন হাবীবের পাশে। অনাস্বাদিত একটি গন্ধ লাগে হাবীবের নাকে। পা দু’টো সামান্য ছড়িয়ে দেন মালবিকা হক। মাথাটা রাখেন আলতো করে সোফার পেছনে। ঠোঁট দুটো সামান্য ফাঁক। সাদা মসৃণ দাঁত দেখতে পায় হাবীব। চোখ দু’টো অর্ধ নিমীলিত। মরাল চকচকে গ্রীবায় চোখ যায় হাবীবের। ইচ্ছে হয় একটু স্পর্শ করে দেখতে দুধের মতো সাদা ঐ গ্রীবা কতোটা মসৃণ? পাষাণের মতো? নাকি পানির স্রোতের মতো ? টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছেন মালবিকা। হাবীবের চোখের সামনে যাদুর খেলা চলছে। সে দেখতে পায় নিঃশব্দে শ্বাস এবং প্রশ্বাসে মালবিকা হকের বুকজোড়া উঠানামা করছে গাঢ় সন্ধ্যাবেলায় হারিয়ে যাওয়া একজোড়া হাঁসের মতো।
মোহসীন এখনও আসেনি?
না।
কবে আসবে? আমার নোটগুলো খুব দরকার।
ঘাড় তুলে তাকান মালবিকা হক─ এতো দেরি হবার কথা নয়। হয়তো কোনো অসুবিধায় পড়েছে। আমিও চিন্তিত। উহ্ ──অস্ফুট একটা শব্দ বেড়িয়ে আসে কণ্ঠ থেকে। মাথাটা আবার রাখেন সোফায় এলিয়ে দিয়ে।
আপনি কী অসুস্থ? জিজ্ঞেস করে হাবীব।
তেমন কিছু নয়─ হাবীবের দিকে এক পলক তাকান মালবিকা হক। দৃষ্টিতে সুন্দর ক্লান্তি ছায়া ফেলে মাছ ধরছে।
কি হয়েছে আপনার?
মাথাটা ব্যথা করছে।
ওষুধ খেয়েছেন?
খেয়েছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
আমি কী আপনার মাথাটা টিপে দেবো ?
না থাক। আজকাল মাঝেমধ্যে আমার মাথা ব্যথা করে। আগে এমন ছিল না─হয়তো শরীর মন বিদ্রোহ করছে। জীবনের রাখিবন্ধন অনেক তো হলো─আমি ভালো মালিশ করতে পারি। হলে আমার বন্ধুদের মাথা ব্যাথা হলে আমার কাছে আসে। আমি মিনিট দশেক মালিশ করে দিলে ব্যথা চলে যায়। ওরা আমাকে ওঝা ডাকে।
তাই?
হ্যাঁ।
দাও — দেখি তুমি কেমন ওঝা? মালবিকা হকের মুখে বিলোল হাসি।
হাবীব আলো কাছে ঘেঁষে বসে মালবিকার। দু’হাতে উঁচু করে ধরে মালবিকার মাথা। নাগাল পায় না ভালোভাবে। উঠে দাঁড়ায় সে। ধনুকের মতে নুয়ে মালবিকার মাথা এবং কপেলে আস্তে আস্তে খুব আলতো ভাবে মালিশ করতে থাকে পাঁচ আঙুলে। মালবিকা আরামে চোখ বোজেন। মিনিট তিনেক যাওয়ার পর হাবীব জিজ্ঞেস করে─ কেমন লাগছে?
খুব ভালো লাগছে সোনা। আমার মনে হচ্ছে— তুমি সত্যিকারের একজন ওঝা। আর একটু দাও।
হাবীবের হাতের লোমকূপে আঘাত করছে মালবিকার নাকের শ্বাস। কপালে ঘাড়ে হাত দিয়ে বেড়ালের মতো আদর করছে হাবীব। হঠাৎ হাবীব পিঠে ওজন অনুভব করে। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। মালবিকা হকের ডান হাত ওর পিঠের উপর। শরীরের রক্তকোষে ঘুমিয়ে থাকা কামনার বাঘ দুরন্ত গতিতে ছুটতে শুরু করছে। নিমিষে বন-উপবন মাড়িয়ে দিগবিদিক। উত্তেজনায় ঘামছে হাবীব। নিজেকে দুর্বল একটি ঘাস ফড়িংয়ের মতো লাগে। বুঝতে পারছে সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ।
অথচ নিজেকে প্রতিরোধ করার শক্তি নেই। আশ্চর্য বিস্ময়ে হাবীব আবিষ্কার করে কিছুক্ষণ পর মালবিকা হকের অন্য হাতটা তার পিঠের উপর এবং দু’টি হাত ওকে ধীরে ধীরে তিলে তিলে তার বুকের উপরে নামিয়ে আনছে। হাবীব হঠাৎ নিজেকে ছেড়ে দেয় মালবিকা হকের বুকের উপর। মালবিকা হক একটি পাকা আমলকির মতো তাকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং গাল, নাক, চোখ, মুখে আদরে আদরে ভরিয়ে দেন। মিনিট খানেক নির্বিচারে আদরের পর হাবীবকে নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে থাকেন। এতোবড় শরীরের মানুষ হাবীব─ এই মুহূর্তে ছোট একটি কোলবালিশের মতো পড়ে আছে মালবিকা হকের বুকের মধ্যে । দু’জন দু’জনকে দু’হাতে পিষে চলেছে । হাবীবের নাক মালবিকার গ্রীবা ছেড়ে দুই উষ্ণ স্তনের মধ্যেখানে গভীর খাদে । নারীর বুকে এমন শিশিরভেজা বকুল কুড়ানো গন্ধ থাকে, জানতো না হাবীব। ও সারা জীবন মালবিকা হকের বুকের মাঠে নাক ডুবিয়ে থাকতে পারে — ভাবে। নারী পুরুষের শরীরের স্পন্দনে সুখ – ও অসুখের এতো আলোড়ন প্রথম জানলো হাবীব। এর নাম প্রেম? নাকি সুখের অসুখ? এই কেন? সুখের জন্য সহস্র বছর ধরে নারী আর পুরুষের মধ্যে সঙ্গমের গন্ধম ফুল ফোটে?
হাবীব? মৃদুস্বরে ডাকেন মালবিকা হক।
উহ! বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়েই সাড়া দেয় সে।
কেন?
কী?
কেন আমার এমন সর্বনাশ করলে?
বুক থেকে মুখ তোলে হাবীব।তাকায় মালবিকা হকের দিকে। চোখে চোখ রেখে জবাব দেয়─ তুমি এতো সুন্দর কেন ?
কয়েক মিনিটের জাগরণে দুজনের যাবতীয় পার্থক্য, দ্বীধা, সংকোচ, সংকট ধূলিসাত হয়ে যায়। দুজনে─ মালবিকা হক এবং হাবীব সীমারেখার দেয়াল ভেঙে একটি সুতোয় গেঁথে যায়।
সুন্দর?
হ্যাঁ।
আমি?
হ্যাঁ।
এই — এতোটা বয়সেও ?
হ্যাঁ। আর বয়স? জীবনের গাঙ্গে জোয়ার এলে বয়স ভেসে যায় স্রোতে। তখন জীবন, একমাত্র জীবনই পড়ে থাকে জীবনের কাছে। মালবিকা হক তার কোমল ঠোঁটজোড়া নামিয়ে আনেন হাবীবের তৃষ্ণার্ত ঠোটে । হাবীব পাগলের মতো একের পর এক চুমু খায় মালবিকা হকের চোখে, মুখে, নাকে, বুকে, গ্রীবায়।
আহা! থামো না!! হালকা ধমক দেন মালবিকা হক।
ধমক দিচ্ছো কেন?
অবাধ্য হলে শাসন করবো না?
শাসন করো কিন্তু তোমাকে প্রাণ ভরে দেখতে দিও। আদর করতে দিও। ভালোবাসতে দিও।
শোনো।
বলো।
পাশে বসো।
না, আমি এভাবেই থাকবো।
তোমার হাতির মতো একটা শরীর নিয়ে আমি কতক্ষণ বসে থাকতে পারি? ঠিক আছে─ হাবীব বুক থেকে নেমে দাঁড়ায় । গলা জড়িয়ে পাশে বসে । বলো কী বলবে─
মোহসীনের বাবা কামরুল মারা যাওয়ার পর, এই দীর্ঘ বছর ধরে যে চরিত্র, সংযম, মাধুর্যকে আমি লালন পালন করেছি — তুমি সব ভাসিয়ে দিলে? কেন আমার সর্বনাশ করলে তুমি?
অতশত জানি না। আমি জানি তোমাকে ছাড়া আমি অন্ধ।
তোমার বন্ধু, আমার সন্তান মোহসীন, আমার মেয়ে সাবরীনাকে আমি এই মুখ কী করে দেখাবো? সমাজ যখন জানতে পারবে─
চলো আমরা পালিয়ে যাই।
খিলখিল করে ষোড়শী বালিকাদের মতো হাসেন মালবিকা হক — এটা বাংলাদেশের বাংলা সিনেমা পেয়েছো, না? পালিয়ে যাবে কোথায়?
দূরে।
কতো দুরে?
অনেক অনেক দূরে। যেখানে আমাদের পরিচিতজন কেউ থাকবে না।
তো সেখানে গিয়ে কী করবে?
তুমি আমি মিলে সংসার করবো।
সংসার করবে?
হ্যাঁ। সংসার করববো। সুখের সংসার।
সংসার যে করবে, খাবে কী?
কেন? তোমাকে খাবো ।
তুমি না হয় আমাকে খাবে। আমি? আমি কী খাবো?
কেন? আমাকে?
দু’জনের মুখে হাসি। দুটো মানুষের মাঝে বাইশ বছরের ব্যবধান। একজন নারী, অন্যজন পুরুষ। সময় এবং পারিপার্শ্বিকতা দূরত্ব ঘুচিয়ে নিবিড় নিকটে নিয়ে এসেছে। মালবিকা হকের বাধন খুলে গেছে। হাবীবের উদ্দাম ছোঁয়ায় তার জীবনের অতৃপ্তিগুলো মুছে সেখানে ফাল্গুনের হাওয়া লেগেছে। দু’জনে এক অপরিণামদর্শী সর্বনাশের খেলায় মেতে উঠেছে। এই খেলা থেকে তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। মালবিকা হক তার দীর্ঘ জীবনে যে কষ্ট, সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিলেন, স্বার্থ ত্যাগ করেছেন, তা সীমাহীন। তিনি কেবল দিয়েছেন, অন্যরা তা অকাতরে গ্রহণ করেছে। কেউ প্রতিদানের কথা ভাবেনি। তার জীবনে যে শূন্যতার বিশাল একটি জগৎ তৈরি হয়েছিল সেই জগতে হঠাৎ এসে কড়া নাড়লো এক আগন্তুক। কোনো বিচার বা বিশ্লেষণ করার সময় পাননি তিনি। ঝাপিয়ে পড়েছেন পোড়া আগুনে।
হাবীব?
বলো।
সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ । উঠো, রান্না করবো। রান্না হলে খেয়ে যাবে।
আচ্ছা।
হাবীব ছেড়ে দেয় মালবিকাকে। উঠে দাঁড়ান তিনি। হাসেন — জানো, আমাকে আমার কী মনে হচ্ছে?
কী?
উনিশ – বিশ বছরের একটি মেয়ে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। আমার যে বিয়ের যোগ্য একটি ছেলে আছে তোমার বয়সী─ এখন আর মনে হয় না।
আচ্ছা, তোমার যে একটি মেয়ে আছে সাবরীনা সে কোথায়?
সিঙ্গাপুরে।
কী করছে?
চাকরি করছে।
বিয়ে দিয়েছো?
হ্যাঁ। বুয়েটে পড়ার সময় একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক হয়ে যায়। তারপর পারিবারিকভাবে বিয়ে। জামাই সিঙ্গাপুরে চাকরি করছে। সাবরীনাকে নিয়ে গেছে। গত মাসে সাবরীনা ফোনে জানিয়েছে, ও একটি চাকরিতে জয়েন করেছে।
বাহ। চমৎকার সংসার তোমার।
ছিল আমার চমৎকার সংসার। কিন্তু বোধহয় আর থাকবে না।
কেন থাকবে না?
হাসে মালবিকা হক─ থাক এসব কথা। তুমি বসো, আমি চা নিয়ে আসছি। কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যান মালবিকা হক। হাবীব সোফায় দু’পায়ে আসন গেড়ে বসে দোলে আর বেসুরো কণ্ঠে গান গায়─ তুমি কোন কাননের ফুল …। মনে হচ্ছে সে আসমান জমিন এক করে ফেলেছে। নারী একজন পুরুষের কাছে ─প্রার্থনার চেয়েও বড়। জীবনের খানা খন্দক পার হয়ে আজ সে পেয়েছে নারী, পেয়েছে নারী শরীরের গান। সে আসমানের এক গিরিবাজ বাজপাখি যেন─ মালবিকা হক চা তৈরি করে ডাকে হাবীবকে─ এসো।
কোথায়?
ডাইনিংরুমে।
হাবীব উঠে মালবিকার কাঁধ জড়িয়ে ধরে─ চলো।
মালবিকা হকের শরীরের উত্তাপ নিতে নিতে হাবীব চলে আসে ডাইনিংরুমে। বসে চেয়ারে। মালবিকা চায়ের সাথে প্রচুর খাবার দেয় হাবীবের সামনে।
অবাক হাবীব─ এতো খাবার কে খাবে?
তুমি।
একজন মানুষের পক্ষে এততা খাবার খাওয়া কী সম্ভব?
যা পারো খাও, দেখি আমি।
একটা মিষ্টি ভেঙে মুখে অর্ধেক পুড়ে হাবীব, আচ্ছা─
কী?
মালবিকা হক সামনের চেয়ারে বসে চিবুকের নিচে ডান হাত রেখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন হাবীবকে।
আজ বিকেলটা আমাদের জীবনে কী ভয়ংকর সুন্দর হয়ে এলো, না? কী করে সম্ভব হলো? শুরুতে ভয়ে আমার শরীর কাঁপছিল─
তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার।
দোষ বলছো কেন?
কী বলবো তাহলে?
মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে দোষ বলে? নারীর সঙ্গে পুরুষের, পুরুষের সঙ্গে নারীর — এই আদিম মানবিক সম্পর্ক আদিমকাল থেকেই আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। আজকে পৃথিবীতে প্রায় সাতশো কোটি মানুষ। বলো তো এই মানুষগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে? নারীর সঙ্গে পুরুষের এই নিবিড়তম আদিম দেহগত এক মানবিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে নয়? একটা দীর্ঘ বক্তব্য রাখে হাবীব। অবাক চোখে তাকায় মালবিকা হক।
কথা বলছো না কেন? হাবীব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জানতে চায়।
বাঁকা হাসি মালবিকা হকের ঠোটে─ তোমাকে যতোটা নাবালক ভেবেছিলাম হাবীব, তুমি তা নও। তুমি জাত শয়তান, তুখোড় খেলোয়াড়─