উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এক
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব দুই
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফকিুর রশীদ ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব ছয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। শেষ পর্ব
উনিশ.
মজার বিষয় হচ্ছে! একেবারে বাড়ির সামনে এসে স্বপনের আর পা উঠতে চায় না সিঁড়িতে, হাত উঠতে চায় না কলিং বেল এর নবে। দাঁড়িয়েই থাকে কয়েক দন্ড। স্বপনের মনে হয়, ভুল করে সে বুঝি কোনো নিঝুমপুরীতে চলে এসেছে। ছোটোবেলায় শোনা রূপকথার গল্পে যে রকম নিঝুমপুরীর বর্ণনা পাওয়া যায়, সেই রকম। কোথাও কোনো প্রাণের স্পন্দন নেই। হাসির শব্দ নেই। এমন কি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সামান্যতম ধ্বনিও শোনা যায় না। এমনই সুনসান নীরবতা। এমনই শান্ত শান্তি। এই শান্তি ভেঙে দেয়া কি ঠিক কাজ হবে? এখানে তার জন্যে কেউ তো দরজা খুরে পথ চেয়ে বসে নেই! বাবা না-ই থাক বাড়িতে, মা আছে বোন আছে; এর চেয়ে প্রাণের আকুতিমাখা স্বজন আর কে আছে! আদৌ তারা বাড়িতে আছে তো? যে বাড়ির কর্তাকে নিয়ে যায় পুলিশ ধরে, সে বাড়ির অন্য সদস্যদের মনে শান্তি থাকতে পারে? এ সব কী যে মাথামুন্ডুহীন ভাবনা স্বপনের! সকল দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে কলিং বেল বাজিয়ে দেয় বল্গাহীন। কুণ্ঠাহীন কণ্ঠে ডেকে ওঠে, মা! বহুদিন বুঝিবা খোলেনি এ দরজা। বহুদিন দুল ওঠেনি মায়াবী পর্দা। এই সরু পথে হয়তোবা বহুদিন আলো ঢোকেনি, হাওয়া ঢোকেনি। ছোট্ট ওই ধ্বনিটুকু উচ্চারিত হতেই সহসা সব ওলোটপালোট হয়ে যায়। দরজা খোলার বিলম্বও বুঝি সয় না মায়ের। স্বপনকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আকুল হয়ে কাঁদতে শুরু করে শাহানা বেগম। সে কান্না অতিদ্রুত সংক্রমিত হয় স্বপনের বুকেও। তারও সারা শরীর কাঁপে, অথচ মুখে কিছুই বলতে পারে না। একবার কেবল মুখ তুলে উচ্চারণ করে! মা। সেই মুখ অশ্রুসিক্ত চুম্বনে ভরিয়ে তোলে শাহানা বেগম। কিছুক্ষণের মধ্যে ডিনাও এসে যুক্ত হয় এই কান্নাপ্রবাহে। স্বপনকে জড়িয়ে ধরে ডেকে ওঠে! ভাইয়া! বহুদিন পর এ বাড়িতে রাত্রি যাপন ঘটে স্বপনের। মায়ের কথাও ফুরায় না। বোনের কথাও ফুরায় না। কথার পিঠে কথা এসে রাত বেড়ে যায়। মা খেতে ডাকে। ডিনা হাত ধরে টানতে টানতে ভাইয়াকে এনে খাবার টেবিলে বসায়। স্বপন খুব অবাক হয়ে ভাবে! বাবার কথা কেউ একবারও তুলছে না কেন? এরা দু’জন কি তবে কোনো খবরই জানে না! নাকি সব জেনেশুনেও বেমালুম হজম করে ফেলেছে? এখন এই আনন্দঘন পরিবেশটা নষ্ট করতে চাইছে না! এমনও তো হতে পারে! তহলে স্বপনই বা তুলবে কী করে সেই প্রসঙ্গ? কেমন করে বলবে যে সোনা চোরাচালানের মত জঘন্য অপরাধে পুলিশ এ্যারেস্ট করেছে বাবাকে? সন্তানের পাতে খাবার তুলে দিয়ে কোনোদিনই প্রাণ ভরে না মায়ের, আর শাহানা বেগমের ক্ষেত্রে তো ব্যাপারটা আরো আলাদা। এভাবে একান্তে ছেলেকে খাওয়ানোর সুযোগ পাওয়াই তার জন্যে দুর্লভ। বহুদিন পর সেই সুযোগ পেয়ে সে যা কান্ড করে, তা স্বপনের জন্যে হয়ে ওঠে রীতিমত পীড়ন। এ ছাড়াও পাশে আছে ডিনা। সে নিজের পাতে থেকে এটা সেটা তুলে ভাইয়ের পাতে চাপায়। বোঝার উপরে শাকের আটিই তখন হয়ে ওঠে দুর্বহ। শেষে অসহায় কণ্ঠে আর্তনাদ করে ওঠে স্বপন, এ সব তোমরা কী করছ মা!
ঠিক করেছি। আরো করব। তোকে আমি বেঁধে রাখব। কোথাও যেতে দেব না।
দিনরাত ঘরে বসে থাকব?
হ্যাঁ থাকবি।
এতদিন আমি ঢিল দিয়ে অন্যায় করেছি। এখন আমি শক্ত হব।
শক্ত হবার কথা শুনে ডিনা হি হি করে হেসে ফ্যালে,
তুমি শক্ত হবে মা? হি হি। হি হি।
হবোই তো! দ্যাখ না কী করি আমি।
এবার স্বপনের বিয়ে দেব। বউ আন্ধব। হাতে পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখব।
হ্যাঁ। এমন সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা শুনে স্বপনও হেসে ফ্যালে,
কনে দেখাও হয়ে গেছে, মা?
আমাকে ঠাট্টা করছিস? না।
ঠাট্টা করব কেন?
তবে আমি বলছিলাম কী! মেয়ে পছন্দ যদি না-ই হয়ে থাকে তাহলে এখন থাক। বরং একটা বর পছন্দ করে ডিনার বিয়েটা আগে দিয়ে দেয়া যাক। ডিনা ঠোঁট ফোলায়, বাড়ি এসেই আমার পেছনে লাগা কি ঠিক হচ্ছে ভাইয়া?
পেছনে লাগা নয় তো! আমি নিজে হাতে তোর বিয়ে দেব।
শাহানা বেগমই এ প্রস্তাবে ভিন্নমত প্রকাশ করে, না বাপু, আমি ঘর খালি করতে পারব না। আগে পরের মেয়ে ঘরে আনব। তারপর নিজেরটা বিদায় দেব।
স্বপন আবার হেসে ওঠে, বাব্বাহ! বিরাট পরিকল্পনা তোমার। মাকে ছেড়ে ডিনাকে বলে! যাহ্ আপাতত এ ধাক্কা তুই বেঁচে গেলি ডিনা। পাশের ঘরে টেলিফোন বাজছে অনেকক্ষণ। গল্পের তোড়ে কোউ খেয়ালই করেন। অবশেষে শাহানা বেগমই শুনতে পেয়ে মেয়েকে বলে,
দ্যাখ্; তো ডিনা, এত রাতে কার ফোন!
টেলিফোন রিসিভ করতে সেই যে গেল ডিনা, এ ঘরে ফেরার আর নাম নেই। টেলিফোনেই পাগলের মত উত্তেজিত কণ্ঠে চিৎকার করে, পাশের ঘর থেকেই শোনা যায়…
হ্যালো, কে আপনি? …
সারাদিন এ খবর বলেন নি কেন?
হ্যালো, আপনি একটু শোনেন… কার সঙ্গে কথা বলছিস ডিনা?
কৌতূহলে শাহানা বেগম এ ঘরে উঁকি দেয়। আর তক্ষুণি ডিনা কান থেকে রিসিভার নামিয়ে আর্তস্বরে ডেকে ওঠে, মা! একটু শোনো তো মা! মেহরজান নামে এক মহিলা এসব কী যা তা বলছে…আমাদের বাবা নাকি… মেয়ের হাতে ঝুলন্ত রিসিভার অত্যন্ত ক্ষিপ্র হাতে তুলে নেয় শাহানা বেগম। রিসিভার কানে লাগিয়ে একবার কি দু’বার হ্যালো হ্যালো করতেও শোনা যায়। ওপার থেকে কী যে দেববাণী ঘোষিত হয়, শাহানা বেগম নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্যালে। হাতে ধরা টেলিফোনের রিসিভারসহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে তার সংজ্ঞাহীন দেহ। স্বপন বুঝতে পারে, টেলিফোনের তার বেয়ে এসে সেই ভয়াবহ বোমাটিই এই মধ্যরাতে বিস্ফোরিত হলো; যা সে অনেক চেষ্টা করেও পারেনি। মনে মনে ভেবেছে অনেক। প্রকাশ্যেও দু’বার বাবার প্রসঙ্গ উত্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তার মা সে প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে! বাদ দে তার কথা। কখন কত রাতে বাড়ি ফেরে না ফেরে তার ঠিক আছে! তার জন্যে অপেক্ষা না করে তোরা ’ভাইবোন খেয়ে নে। অথচ নিজে ঠিকই অভূক্ত থেকে অপেক্ষা করেছে তারই জন্যে। চোখেমুখে পানির ঝাপটা দেয়ার পর শাহানা বেগম চোখ মেলে তাকায়। দু’পাশে দুই ছেলেমেয়েকে দেখতে পায়। আবার চোখ বোঁজে। আবার তাকায়। তারপর এক সময় স্বপনের গলা জড়িয়ে ধরে হাহাকার করে ওঠে!
আমার কী হবে বাবা!
কী আবার হবে! কিছুই হবে না!
মাকে আশ্বস্ত করে স্বপন! আজ হোক কাল হোক, বাবা ঠিকই বেরিয়ে আসবে।
সত্যি বলছিস বাবা?
সত্যি না তো কি চিরকাল জেলখানায় পচবে বাবা?
শাহানা বেগম আবার ডুকরে ওঠে। রাতের স্তব্ধ বাতাস আরো ভারী হয়ে ওঠে তার কান্নায়। স্বপন এগিয়ে এসে মায়ের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়। মাকে বুঝাতে চেষ্টা করে! ওখানে চিরদিন কেউ থাকে? এই যে আমি যেমন বেরিয়ে এসেছি, বাবাও বেরিয়ে আসবে। সংশয় ঘোঁচে না শাহানা বেগমের। এ সংশয়ের কারণটাও সে বলে ফ্যালে, সে তো আর তোদের মতো রাজনীতি করে না! করে করে, সেও রাজনীতি করে। তবে তাদের রাজনীতির দিন শেষ। এখনকার রাজনীতি আমাদের। আমরাই তাকে জেল থেকে বের করে আনব। তুমি চিন্তা করো না মা। অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়ে মাকে আশ্বস্ত করার পর স্বপন টেলিফোন নিয়ে বসে। কত জায়গায় কতজনের সঙ্গে যে ফোনে কথা বলে তার ইয়ত্তা নেই। কাউকে ফোন করে আরেকজনের ফোন নম্বর সংগ্রহের জন্যে। কাউকে ফোন করে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করার জন্যে। নিজে যেখানে নাগাল পায় না, সেখানে শক্তিশালী জ্যাক লাগায়। এই করতে করতে কখন অলক্ষে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়। মাকে শেষবারের মতো আশ্বাস দেয় স্বপন! যেভাবেই হোক, বাবাকে আমি বের করে আনবোই।
কুড়ি.
বাস্তবে দেখা গেল কাজটা অত সহজ নয়। স্বপন তবু হতাশ নয়। লেগেই আছে একাজে। যেখানে যতরকম তদবির প্রয়োজন, কোনো সুযোগই সে হাতছাড়া করে না। এ লাইনে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে অচিরেই সে টের পায়! বিগত সরকারের এক মন্ত্রীর সঙ্গে তার বাবার মাখামাখির খবরটা অনেকেই জানে এবং সেটাই যেন বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই ঘুরেফিরে ওই একটি দিকেই ইঙ্গিত করে। একই প্রসঙ্গ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে পুরানো ঢাকার এক পাওয়ারফুর এমপির সামনে স্বপন বলেই ফ্যালে! আমার বিপদের সময় যখন আপনারা কেউ আমার পাশে দাঁড়াননি, সেই সময় আমাকে উদ্ধার করার জন্যে আমার বাপকে যেতে হয়েছিল ওই মন্ত্রীর কাছে। সেইটুকুই তার মাখামাখি। বিগত সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বর্তমান সরকারের কার কতটা নেপথ্য যোগাযোগ ছিল, তার অনেক তথ্যই স্বপনের জানা। একবার ইচ্ছে হয়! সে সব ফাঁস করে দেয়; আবার নিজে থেকেই সে ইচ্ছের মুখে লাগাম পরায়। ভাবে, এদের দিয়েই তো কার্যোদ্ধার করতে হবে। আগের তুলনায় স্বপনের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। কী কাজ তার ব্যাখ্যা দেওয়া মুশকিল, কিন্তু সারাদিনে ছুটাছুটির শেষ নেই। শাহানা বেগম যেভাবে বাঁধতে চেয়েছিল, তা মোটেই হয়ে ওঠেনি। তবে একটি অগ্রগতি হয়েছে! যত রাতই হোক সে রাত কাটাবে এই বাড়িতে এবং রাতের আহারটুকু সে মায়ের সামনে বসে সম্পন্ন করবে। মাস খানেকের মধ্যে এটা এক রকম রুটিন হয়ে গেছে বলা চলে। শাহানা বেগমও আপাতত এটুকুতেই তুষ্ট্ মনে মনে ভেবে রেখেছে! আসুক ওর বাপ, তারপর খাঁচায় পোরার ব্যবস্থা করছি দাঁড়া। এরই মাঝে জেল হাজতে গিয়ে স্বপন একদফা দেখা করে এসেছে বাবার সঙ্গে। সে কী দুঃসহ দৃশ্য! শওকত আলী ভিজিটর এসেছে শুনে এগিয়ে আসে বটে, কিন্তু গরাদের ফাঁকা দিয়ে স্বপনকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়, পিছিয়ে যায়। মনে মনে শিউরে ওঠে! এই তার ভিজিটর! এ যে তার প্রথম যৌবনের বিমুগ্ধ স্বপ্ন! এ যে তার পৌরুষের দুর্বিনীত পতাকা! এর সামনে গিয়ে সে মুখ তুলে দাঁড়াবে কী করে! নাহ্! সে দেখা করবে না স্বপনের সঙ্গে। কিন্তু স্বপন যে দেখা করবেই। ওর হাতে ঢের ক্ষমতা। এই জেলখানার ভেতরেই হয়তো সে ক্ষমতার দাপটও দেখাতে পারে! কিন্তু না, সে সব না করে লোহার গরাদ ধরে সজোরে ডেকে ওঠে, বাবা! আমি স্বপন! বাবা, শোনো! দূর আকাশের চাঁদ কোন্ধ ক্ষমতাবলে নদীতে জোয়ার আনে কে জানে! কে জানে! কোন অমোঘ শক্তি দুর্নিবার আকর্ষণে শওকত আলীকে আবার টেনে আনে! অশ্রুসিক্ত চোখ তুলে চাইতেই আবিষ্কার করে, স্বপনেরও চোখের কোনা ভেজা। কিন্তু সে যেন নিজের উপরে ধনুকটানা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, ভাঙবে তবু মচ্কাবে ন। প্রবল দৃঢ়তায় সে ঘোষণা করে! তুমি চিন্তা করো না বাবা, শিগগিরই তোমাকে বাইরে নিয়ে আসব। শওকত আলীর চোখে উদ্ভান্ত ছায়া। অসংখ্য প্রশ্ন। উত্তর নেই। মুখে কিছু বলে না, তাকিয়ে থাকে ভাবলেশহীন। বাবাকে আশ্বস্ত করে স্বপন, শোনো বাবা, সরকার বদলেছে তাতে কী! মন্ত্রীরা তো ভিন্ধ দেশ থেকে আসেনি! আমরাই আন্দোলন সংগ্রাম করে তাদের ক্ষমতায় এনেছি, আর এখন একটা দাবি মানবে না? তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। এবং সত্যি সত্যি মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই স্বপন তার বাবাকে জেল হাজত থেকে মুক্ত করে বাড়ি নিয়ে আসে। পথিমধ্যে পিতাপুত্রের মধ্যে বাক্য বিনিময় হয় না বললেই চলে। শওকত আলী বেশ কয়েকবার আড়চোখে ছেলের দিকে তাকায় বটে, কিন্তু কী যে বলতে চায় সেই কথা গুছিয়েই উঠতে পারে না। বারবার চোখ ভিজে যায়। বাড়ির কাছাকাছি এসে একবার বোধ হয় একটুখানি ফুঁপিয়েও ওঠে। বাম দিকে মুখ ঘুরিয়ে সেই ফোঁপানি আবার আড়াল করতেও সচেষ্ট হয়! স্বপন মুখ খোলে একেবারে বাড়িতে এসে। বাবাকে সঙ্গে করে বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই চিৎকার করে ওঠে! মা! অ মা! এই নাও বাবাকে ফিরিয়ে এনেছি। শাহানা এতখানি সেয়ানা ছেলের সামনেই স্বামীকে জাপটে ধরে। অবুঝ বালিকার মতো শুরু হয় অশ্রু বিসর্জন। বিরামহীন সেই কান্না প্রবাহের মধ্যে শওকত আলীর কী যে করণীয় তা নির্ণয় করতে পারে না। নিরেট কাঠ পাথরের মত বসে থাকে নিষ্প্রাণ। কিন্তু মা-বাবার এসব সেন্টিমেন্টাল দৃশ্য দেখে বাড়িতে বসে থাকলে তো স্বপনের চলবে না। বাইরে তার অনেক কাজ। বেরিয়ে যাবার আগে রাশভারী অভিভাবকের মতো বিরক্ত কণ্ঠে জন্মদাতা বাপকেই একটুখানি ভর্ৎসনা করে, রাজনীতিটাও দেখেশুনে করতে হয়, বুঝেছ বাবা! আরেকটা কথা! মেহেরজান নামের মহিলাটি ভালো না। তার সঙ্গে তোমার কোনো সম্পর্ক রাখাই ঠিক হয়নি।