উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এক
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব দুই
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফকিুর রশীদ ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব ছয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। শেষ পর্ব
সতের.
সব সম্ভবের দেশ এই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়, তা কেবলই উপরিকাঠামোগত; তলে তলে সেই যাহা বায়ান্ন, তাহাই তিপ্পান্ন হয়ে থাকে। নীতিগত অবস্থান তো প্রায় অভিন্ন, তফাৎ কেবল নেতার নেতৃত্বে। আর সে কারণেই বোরকার আড়ালে কিংবা বউয়ের শাড়ির আঁচলে গা ঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষা করে যে মন্ত্রী, তার পক্ষেও সম্ভব হয় গুহার আঁধারে বসে ছড়ি ঘুরানো এবং এত বড় এক বিজনেস নেটওয়ার্কের কলকাঠি নাড়ানো। জনতার চোখমুখ থেকে রুদ্ররোষের উন্মাদ ঝাঁয়াল খানিক সরে গেলেই সে আবার গুহা ছেড়ে বাইরে আসবে, হা হা অট্টহাস্যে গোটা আন্দোলনকেই করবে বিদ্রপবিদ্ধ। সামান্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য পেরিয়েই এখানে আসে আষাঢ় শ্রাবণ। রৌদ্রদগ্ধ রুদ্র দিনের পরেই ঘনিয়ে আসে শ্যামল ছায়া, আসে বৃষ্টিধোয়া জলজ কোমল শান্ত দিন। এরই মাঝে একদিন শাহানা বেগম বাড়িতে হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে বসে। প্রথমে দুদিন তার সেই রাত্রিকালিন কান্নাপ্রবাহ দিয়ে ভেতরের আগ্নেয়গিরি নিভিয়ে ফেলতে চেষ্টা করেছে। নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করেছে! ছেলেমেয়ের বয়স হলে অনেক রকম পরিবর্তনই হতে পারে, হয়। বড় ছেলে স্বপন তো কম কান্ড ঘটায়নি! রেপ থেকে একেবারে মার্ডার পর্যন্ত! কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, দু’চারটি প্রেমপত্র তো তার নামে আসতেই পারে! বইয়ের ভাঁজে চালান হতে পারে, হাতে হাতে কিংবা ডাকযোগে আদান প্রদান হতে পারে। এতে এতটা অবাক হবারই বা কী আছে, উতলা হবারই বা কী আছে! কেন, তার নিজের জীবনেই কি এমন ঘটনা ঘটেনি! ক্লাস এইটে পড়ার সময় প্রথম প্রেমপত্র পেয়েছে পাড়ার ছেলে শরিফুলের কাছ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে সে চিঠি দেখিয়েছে তার বাবাকে। বাবা আবার রাগে গরগর করতে করতে তেড়ে গেছে শরিফুলের বাবার কাছে। শেষ পর্যন্ত পিতাপুত্র উভয়ে মাফটাফ চেয়ে একাকার! কই ডিনা তো কোনোদিন বাপকে কী মাকে এসব চিঠি দেখায় নি! অবশ্য ক্লাস টেনে উঠে যখন সে নিজেই উদ্যোগী হয়ে শওকত আলীকে চিঠি লিখেছিল, তখন কি সে চিঠি কাউকে দেখিয়েছিল, না কি কারো অনুমোদন নিয়েছিল? খুব ভেবে দেখেছে শহানা বেগম! সে চিঠি না লিখে উপায় ছিল না যে! ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ, প্র্যাকটিক্যার হয়ে গেলেই লজি! বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে শওকত আলী; অথচ তাকে জানানোই হবে না যে শাহানার খুব ভালো লাগে তাকে! মাথা গুঁজে বইপড়া ছাড়া অন্য কিছু ত সে বোঝেই না, এ বাড়ির কোন মেয়ে খুব নিভৃতে তাকে একটুখানি ভালোবেসে ফেলেছে চিঠিতে না লিখলে সে টেরই পাবে না! শাহানা কি জানত যে তার বাবাও মনে মনে এই শওকতকেই পছন্দ করে রেখেছে! মেয়ের ম্যাট্রিক পরীক্ষা হয়ে যাবার পর বাবা নিজে খুঁজে পেতে শওকতদের বাড়ি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। শওকত আলী তখন গ্রামের স্কুলে জুনিয়র টিচার হয়ে ঢুকেছে। নিজের দারিদ্র্যের কথা তুলে শাহানাকে যেমন সে নিরস্ত করতে চেয়েছিল, শাহানার বাবাকেও সেই একই যুক্তি বুঝাতে চেয়েছিল। তবু অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের বাইরে সে যেতে পারেনি। কিন্তু এত বছর পর কেন সে সব কথা মনে আসছে শাহানা বেগমের! মেয়ের প্রেমপত্র তার হাতে পড়েছে, সেই জন্যে? মেয়ে নিজে মুখে কিছুই বলেনি, সেই জন্যে? কারণ বুঝতে পারে না, অথচ বুকের মধ্যে তার প্রবল কষ্ট। স্বমীকে ডেকে সেই চিঠি দেখায়, তার সীমাহীন নির্লিপ্ত তাকে প্রচন্ড আহত করে। তখন সে কেঁদে কেটে চিৎকার করে সারা বাড়ি মাথায় করে। শওকত আলীর কি তখন এ সব প্যান্ধপ্যানানি শোনার সময় আছে! বাইরে তার কত কাজ! কতজনের সঙ্গে কত রকমের যোগাযোগ! কত রকমের তোয়াজ-তদবির, দর কষাকষি! আগের চেয়েও ব্যস্ততা যেন বেড়ে গেছে কয়েক গুণ! মেয়েলী গীত শোনার সময় কোথায় তার! মেয়ের ব্যাপার, মায়ে বুঝুক! ডিনা কলেজ থেকে বাড়ি এলে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে শাহানা বেগম। কেন এই কান্না, মুখে তার কিছুই বলে না। ডিনা ভয়ে ভয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকায়। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। জবাব দেয়ার বদলে সে আরো প্রবলভাব আঁকড়ে ধরে মেয়েকে। যেনবা কূলের মুখে কালি দিয়ে এখনই এই কূলটা মেয়ে ঘরে ছেড়ে পালাচ্ছে কোথাও। আসলে প্রকৃত ব্যাপারটা বোধ হয় ওরকম নয়। যার এক ছেলে আছে জেল হাজতে, এক ছেলে বিদেশ বিভূঁয়ে প্রবাসে; স্বামীও রয়েছে নিজস্ব জগতে নিমগ্ন, তারই শেষ সন্তান এই মেয়েটিও যদি নিজের মত দূরত্বে চলে যায়, তাহলে সেই মানুষটি থাকবে কী নিয়ে, কোন অবলম্বনের ভরসায়! শাহানা বেগমের বুকভাঙা কান্না এসে আছড়ে পড়ে কল্পিত সেই শূন্যতার উপলভ‚মিতে। এভাবে সব হারিয়ে একেবারে নিস্ব হয়ে সে সামনের দিনগুলো কীভাবে গুজরান করবে!
আঠার.
মাস তিনেক পরে শওকত আলীর পরিবারে একই সঙ্গে দুটি ঘটনার অভিঘাত এসে আছড়ে পড়ে। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি যেমন, অনেকটা সেই রকম। ঝড় আগে নাকি বৃষ্টি আগে, তাতে কী যায় আসে! যুগপৎ দুটি ঘটনারই ফলাফল এই প্রকৃতিকে সইতে হয় এবং বইতেও হয়। ঝড়ের ঝাপটা সোজা দক্ষিণ থেকে না এসে এলো নৈঋত কোন্ধ থেকে।
সেই এক টোকেন দেখিয়ে মুকুট যে পথের সন্ধান দিয়ে গেল, এবারের এ দফায় সে পথে নামতে শওকত আলীর খুব গা ছমছম করে। বিশেষ করে শাহানা বেগমের আপত্তি তাকে খুব দ্বিধা এবং দুর্ভাবনায় ফ্যালে। প্রবল আপত্তি সে করেনি বটে, তার অভিমত জানিয়েছে! যা করতে হয় স্বপন এসে করবে। এ কথার মানে কী? স্বপনের কাঁধে সংসারের জোয়াল চাপাতে চায়! মাথা খারাপ! ওই জোয়াল টানবে স্বপন! এত ভরসা আসে কোত্থেকে? আর শওকত আলী কি তবে বাড়িতে বসে কেবল অন্ন ধ্বংস করবে? মুকুট এসে পথঘাট পরিষ্কার করে দেয়ার পর আর হাত গুটিয়ে বসে থাকে কী করে? দু’লাখ টাকা নগদে পেমেন্ট দেয়ার পরও অদৃশ্য এক দ্বিধার কাঁটা খচ্খচ্ করে বিঁধেছে অন্তরে অন্তরে! কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? পথঘাটের নিশ্চয়তার টোকেন তাকে দেয়া হয়েছে বটে, তবু তো সময়টা বৈরি বটে! এ সময়ে এ সবের মধ্যে মাথা দেওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে না তো? পুরানো সেই মন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে বিস্তারিত আলাপও সেরে নেয় কাজে নামার আগে। মন্ত্রী তো একটু রুষ্ট হয়েই বলে, নতুন সরকার আসছে তাই কী? যারা সরকারে থাকবে, তারাও এই দেশেরই মানুষ। আকাশ থেকে ফেরেশতা তো নেমে আসছে না!
না মানে, আরো কিছুদিন ওয়েট করলে হতো না!
মন্ত্রী তখন ভাববাদী বাউল হয়ে যায়, এদিকে বাস্তববাদিতার বাণী শোনায় সময় গেলে সাধন হবে না, বুঝেছেন? পরে আশ্বস্ত করে! আপনার কাজ আপনি করুন, সরকারের কাজ সরকার করবে। আফটার অল আমি তো এখনো আছি, নাকি?
ক্ষমতায় নেই, প্রাণে তো বেঁচে আছি!
আপনি বলছেন তাহলে।
হ্যাঁ রে ভাই বলছি! রিস্ক আমার, আপনি কাজে লাগুন তো!
আমি মাঝে মধ্যে মেহেরজানকে পাঠাব, আপনাকে অ্যাসিস্ট করবে। কেমন!
কিন্তু বাস্তবে হলোটা কী?
কদিন থেকেই শোনা যাচ্ছে! শিগগিরই স্বপন মুক্তি পাবে। অভিযোগ বা অপরাধ তার যা-ই থাক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবেই পার্টি তাকে গণ্য করেছে। গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যে তালিকা ওদের পার্টি প্রস্তুত করেছে, স্বপনের নাম সে তালিকার একেবারে প্রথম দিকেই আছে। সরকারের বিবেচনার জন্যে সে তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জমাও দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় হয়ে সে তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যে কোনোদিন অর্ডার হয়ে যেতে পারে! এ খবর পর্যন্ত পেয়েছে শওকত আলী। তারপর একদিন ডিনা এবং ডিনার মাকে সঙ্গে নিয়ে জেল হাজতে গিয়ে দেখাও করে এসেছে। শাহানা বেগম কেঁদে কেটে ছেলের মাথায় হাত ছুঁয়ে কথা আদায় করে নিয়েছে, এবার বাইরে এসেই সে সংসারী হবে এবং সংসারের দায়দায়িত্বও কাঁধে নেবে। সবাই বুঝতে পারে! সবপনের মুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে কোনোদিন হয়ে যেতে পারে।
তাই বলে এ রকম একটি শুভ ঘটনা ঘটবে অশুভ একটা দিনে?
অশুভ দিন বই কী!
সকাল হন্তদন্ত হয়ে বেরুনোর সময় সিঁড়িতে পা হড়কে যাচ্ছিল প্রায়। শাহানা বেগম ছুটে এসে জাপটে ধরে
রক্ষা করে এবং মুখে গজগজ করে! কীসের এত তাড়াহুড়ো বলো দেখি! কবে যে সর্বনাশ হবে, তাই ভাবি।
কীসের তাড়াহুড়ো তা ওই মূর্খ মহিলা বুঝবে কী করে? তাকে এখনই একবার দৌড়–তে হবে বিমানবন্দরে। বিদেশী মেহমান আসবে, তাদের রিসিভ করতে হবে। হোটেল স্যুট বুকিং দেয়া আছে, সেটা কনফার্ম করতে হবে। কাজ কি একটা!
গিন্নির মুখের সর্বনাশের আশংকাকে করতালিতে সমর্থন করে উড়ে গেল দুটো কালো কুচকুচে নাগরিক
কাক। কিন্তু এ সব পাখ্ধসঢ়;পক্ষীর বেহিসেবী রিটলেমী দেখার সময় কোথায় তার! সে কোনো দিকে না তাকিয়ে ভোঁ করে বেরিয়ে যায়। উড়ে গিয়ে একেবারে সোজাসুজি শিকারীর পাতা ফাঁদে পা দেয়। কাস্টম্স ইমিগ্রেশনসহ ছোটবড় সব ঘাটে ঘাটে যথাযোগ্য ফুলজলের অর্ঘ্য নিবেদন করেই ব্যবসা চালাতে অভ্যস্ত শওকত আলী। তবু সেদিন কোথা থেকে কে যে কলকাঠি নাড়ায়, বিস্কুটের পুরো চালানটাই ধরা পড়ে যায়। মেহেরজান অনেক আগে থেকেই বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিল। কিন্তু সে ধরা পড়ে না। বেশ অনায়াসে সবার নামের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যায়। সে গিয়ে নিশ্চয় সবগুলো একযোগে কাজে লাগিয়ে শওকত আলীকে ঠিক উদ্ধার করবেই। সোনার বিস্কুট। সুনির্দিষ্ট ইনফর্মেশনের ভিত্তিতেই ধরেছে। যারা ধরেছে, তারা সহজে ছাড়বে কেন? শওকত আলী নানা প্রক্রিয়ায় টাইম পাস করায়। কিন্তু কোথাও উদ্ধারের ইঙ্গিত পায় না। নতুন সরকারের মধ্যে হ্যালো করাবার মন্ত্রীইবা সে তখন পাবে কোথায়!
কাজেই থাইল্যান্ডের দুই নাগরিকসহ শওকত আলীর হাজতবাস।।
কিন্তু সেই দিনটা কবে?
কাকতালীয় কিংবা নাটকীয়! যেভাবেই বলা যাক না কেন, দুটি ঘটনার মধ্যে দৃশ্য অদৃশ্য কোনো সম্পর্ক থাক বা না থাক, শওকত আলীর গ্রেফতার এবং স্বপনের মুক্তিলাভ একই দিনে ঘটে।
পিতৃকীর্তির ঘটনাটা তৎক্ষণাৎ চাউর না হলেও পুত্রের কারামুক্তির ব্যাপারটা রীতিমত উৎসবের মর্যাদা লাভ করে। বিপুল সংখ্যক হর্ষোৎফুল্ল কর্মীবাহিনী জেলগেটেই বিরাট এক ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নেয়। কতিপয় অতি উৎসাহী তরুণ কর্মী তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে নাচতে নাচতে রাস্তায় নামে। একটুখানি বিজয় মিছিলও হয়ে যায়। তারপর পুরানো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী টমটম গাড়িতে চড়ে অলি গলি প্রদক্ষিণ হয়ে গেলে স্বপন জানায়, সে আক্কাস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চায় এবং সেটা এখনই।
সৈয়দ আক্কাস হচ্ছে তাদের দলের যুব সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা। তার আশীর্বাদ না হলে ওই বিশেষ তালিকায় নামও উঠতো না, এত দ্রুত মুক্তিও মিল্ত না। কাজেই ফুলের তোড়া হাতে গিয়ে যুব নেতার সঙ্গে দেখা যায় স্বপন। দন্ত বিকশিত করে হাসি হাসি মুখে পোজ দিয়ে যুব নেতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে একটা ছবিও তুলিয়ে নেয় ভাড়াটে ক্যামেরায়। সেই যুব নেতাই প্রথম ভিড়ের মধ্যে থেকে স্বপনকে একান্তে ডেনে নিয়ে গলা খাটো করে জানতে চায়,
তুমি কি তোমার বাবার খবর জানো স্বপন?
স্বপনের চোখেমুখে বিস্ময়! বাবার খবর মানে!
ওই যে লম্বামত শওকত আলী সাহেব তোমার বাবা নয়?
হ্যাঁ। কী হয়েছে বাবার?
যুবনেতা খুব দ্বিধায় পড়ে। সদ্য কারামুক্ত ছেলেটিকে এরকম একটি দুঃসংবাদ দেয়া ঠিক হবে কী না সিদ্ধান্ত
নিতে একটু সময় নেয়। কিন্তু স্বপন অস্থির হয়ে ওঠে,
কী হয়েছে লিডার?
পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি দেখছি! কী করা যায়।
বাবার সঙ্গে স্বপনের হার্দিক সৌহার্দ্যরে সুতো ছিঁড়ে গেছে অনেক আগেই। তবু জন্মদাতা পিতা বলে কথা। তার এই দুঃসংবাদে মনটা ভীষণ খারপ হয়ে যায়। মায়ের ম্লানমুখ মনে পড়তেই এতক্ষণের সমস্ত আনন্দ আয়োজন ফিকে হয়ে আসে। এর একটুও দেরি না করে সবার সঙ্গে বিদায় নিয়ে সে বাড়ি চলে যায়।