উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এক
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব দুই
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফকিুর রশীদ ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। র্পব ছয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ায় খেলা।। রফিকুর রশীদ।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। বৈরী ছায়ার খেলা।। রফিকুর রশীদ।। শেষ পর্ব
আট.
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, ক্লিয়ারিং-ফরোয়ার্ডিং, ইনডেন্ট-ইনভয়েসের আলো আঁধারি অলিগলি ঘাঁটতে ঘাঁটতে অচিরেই শওকত আলী গোলকধাঁধাঁর তালগোল কাটিয়ে ওঠে। পৌঁছে যায় ভিন্ন এক জগতে। সে এক হাজার দুয়ারী জগৎ। কে কখন যে কোন দুয়ার ঠেলে ঢুকছে বেরোচ্ছে সেই হিসেব রাখা দায়। এ জগতে প্রবেশ করার সময় সবাই আপন আপন মুখোশ খুলে রেখে আসে দুয়ারের বাইরেই। ফলে স্পষ্ট দেখা যায় মুখ। সে মুখে লোভ-লালসার ছায়া আছে, কাম-ক্রোধ-হিংসার রঙ লেগে আছে, হিংস্রতা-নিষ্ঠুরতার উত্তাপ ছড়িয়ে আছে। দেশের বহু রথি মহারথির সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এ জগতে। শওকত আলী অনেকদিন চমকে উঠেছে। চোখ রগড়ে ভালো করে তাকায়। এরা সবাই বাইরে যখন থাকে মুখোশ এঁটে থাকে; ফলে ওই মুখোশ আঁটা চেহারাটাই চোখের পর্দায় সাঁটা হয়ে যায়। শওকত আলীরও তাই হয়েছে। এখন এ জগতে মুখোশখোলা মুখগুলোর সঙ্গে শওকত আলীর নতুন করে চেনাপরিচয় ঘটে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, ক্লিয়ারিং-ফরোয়ার্ডিং, ইনডেন্ট-ইনভয়েসের আপাত নির্দোষ এই সব ইংরেজি শব্দবন্ধের আড়ালে গড়ে ওঠা এই হাজার দুয়ারী জগতে কত মানুষের ভিড়! বাইরে থেকে তো মনে হয় এরা ভাজা মাছটা উল্টে খেতেও জানে, নির্লোভ মুনি ঋলি এক একটা। সামরিক-অসামরিক আমলা, বুলি কপচানো রাজনীতিবিদ, বদঢেকুর তোলা সংস্কৃতিসেবী কে নেই এ জগতে! দিন যত গড়ায়, শওকত আলীর বিস্ময়ের মাত্রা ততই বেড়ে যায়। এই বিস্ময়বোধ সময়ের পাথরে ঘা খেয়ে খানিক থিতিয়ে আসার পর থেকে শওকত আলী প্রকৃতপক্ষে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতি মনোযোগী হতে পারে। অল্পদিনেই চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে ব্যবসা। তৌফিক এবং সে দু’জনে মিলে দৌড়ঝাঁপ করেও কুলিয়ে উঠতে পারে না। আরো লোকবল বাড়াতে হয়। এই সুযোগে বড় ছেলে স্বপনকে কাজে লাগানোর কথা মাথায় আসে। লেখা নেই পড়া নেই, কারো কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই; আবার সে করে ছাত্ররাজনীতি। আদৌ যে ছাত্রই নয়, তার আবার ছাত্ররাজনীতি কিসের! পলিটিক্স নয়, ও সব হচ্ছে মাস্তানি। একটা কাজে কর্মে লাগিয়ে দিলে যদি রোগ সারে এই ভেবে মনিরুজ্জামান সাহেবের কাছে কথা তুলতেই তিনি বললেন, দাও না ওকে চিটাগাঙের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে দাও। এ প্রস্তাব শুনে স্বপনের মাও খুব খুশি। কিন্তু যার জন্যে এত আয়োজন তিনি বসলেন বেঁকে। এ সব নাকি করা হচ্ছে তাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্যেই। তিনি কিছুতেই আটটা পড়তে রাজি নন। অগত্যা অন্য লোকজন নিয়োগ করতে হয়। পরপর কয়েকটা ব্যবসা অভাবনীয় সাফল্যের মুখ দেখায় শাজাহানপুরের যে বাসায় ভাড়াট হিসেবে বেশ কয়েক বছর যাবৎ বাস করছিল, সেই বাড়িটাই সাতটা ভাড়াটে ফ্যামিলিসহ কিনে ফ্যালে শওকত আলী। শাহানা বেগম শিউরে ওঠে।
গভীর রাতে স্বামীকে একান্তে আঁকড়ে ধরে ডুকরে ওঠে আমরা এরকম বড়লোক হয়ে যাচ্ছি কেন বলো তো!
শওকত আলী বিরক্ত হয়,
বাজে বোকো না। ঘুমাও।
জানো, ঘুমও আসতে চায় না। চিন্তা হয়, তোমাকে হারিয়ে ফেলছি না তো!
বাব্বা! মধ্যরাতে ফিলোসোফারের মত কথা বলছ যে!
এ বাড়ির দাম কত পড়ল গো!
সে তোমার জানার দরকার নেই সোনা। তোমার জন্যে গ্রামে বাড়ি তৈরি করব।
গ্রামে?
গ্রামে মানে গ্রামে। আমার পৈতৃক ভিটেয়। সম্ভব হলে আগামী বছরই করব।
শাহানা বেগম আঁৎকে ওঠে, আমি একা গ্রামে থাকব? শহর ছেড়ে কেউ গ্রামে যায়!
যায়। অনেকেই যায়। যেতে হয়।
তোমাকে ছাড়া আমি কিন্তু যাব না, বলে রাখছি।
স্বামীকে জাপটে ধরে শাহানা বেগম। কানের কাছে মুখ নিয়ে আবদার জানা,
তুমি আর বড়লোক হয়ো না।
কেন?
বড়লোক হয়ে দূরে চলে যাচ্ছ। আজ চিটাগাঙ, কাল খুলনা। আমাকেও আর ভালোবাসছ না। বলতে বলতে ফ্যাঁচ করে একটুখানি কেঁদেও ফ্যালে। এদিকে মুখ ফিরিয়ে বহুদিন পর দু’হাতে স্ত্রীর মুখ তুলে ধরে শওকত আলী দার্শনিক তত্ত¡
ছড়িয়ে ফ্যালে,
বড়লোক হওয়াটাও গরীব হওয়ার মতই রাতের ব্যাপার। রাতে টানলে, কে তাকে ঠ্যাকাবে সোনা! নামাতেও রাতে, ওঠাতেও সেই রাতে।
এই বিবরণ শুনতে শুনতে শাহানা বেগমের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সে যেন দিব্যচোখে দেখতে পায় প্রবল এক রাতেধারা তার স্বামীকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে দূরে কোথাও, নদীপাড়ে একেবারে ভাঙনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে আকুল হয়ে ডাকছে, কিনতু শওকত আলী কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। এত ব্যাকুল আহব্বানেও সে সাড়া দিচ্ছে না। আতঙ্ক, আশঙ্কা, অভিমান মিলেমিশে শাহানা বেগমের অন্তরে মমতামদির এক আবেগ সৃষ্টি হয়। নিবিড় মমতায় সে আঁকড়ে ধরে স্বামীকে। প্রথম যৌবনের মত আবেগঘন প্রগাঢ় চুম্বনে রাঙিয়ে দেয় তাকে। বহুদিন পর শওকত আলীরও দেহের দেউড়িতে জ্বলে ওঠে ঝাড়লণ্ঠন। শরীর এবং মনের অলিতে গলিতে জমে থাকা অন্ধকার ডানা গুটিয়ে পালায়। হাজার বাতির আলো এসে উদ্ভাসিত করে সমগ্র চরাচর। সেই আদিম আলোর প্লাবনে মধ্যরাতে ভেসে যায় দু’জন মানব মানবী। সে রাতে হয়তো নিকটে কোথাও হাস্নাহেনা ফুটেছিল সংগোপনে।
নয়.
এরই মাঝে হঠাৎ এক সন্ধ্যায় মনিরুজ্জামান সাহেব অফিসে এসে জানান, তার মন ভালো নেই। তিনি আজ বেশিক্ষণ বসতে পারবেন না। শওকত আলী শুনেও প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এ আর নতুন কথা কী! আজকাল তো এমনই হচ্ছে। আজকাল শুধু নয়, এ নিয়ম চালু হয়ে গেছে বহুদিন আগে থেকেই। কথা ছিল প্রতি সন্ধ্যায় এখানে একবার আসবেন, খুঁটিনাটি সব কিছুর খবর নেবেন, প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দেবেন। এ সব করেছেনও মাস ছয়েক। তারপর ধীরে ধীরে নিয়ম ভেঙে পড়েছে। মনিরুজ্জামান সাহেবের সান্ধ্যকালীন আসা যাওয়া একেবারে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ইচ্ছে হলে দশ-পনের দিন পরও আসেন। এমন কী এক মাসের মধ্যে খোঁজ নেয়ার অবকাশ হয়নি, এমন ঘটনারও দৃষ্টান্ত আছে। কথা ছিল যত শিগগিরই সম্ভব, ওই কর্পোরেশনের চাকরি ছেড়ে তিনিও চলে আসবেন ব্যবসাতে। দেখতে দেখতে দু’আড়াই বছর গড়িয়ে গেল, তিনি তাঁর প্রিয় আর্মির বাচ্চা আর্মির সংসর্গ ত্যাগ করতে পারলেন না। কী যে দুর্নিবার আঠায় জড়িয়ে আছেন তিনি, কে বলবে তাঁকে সে কথা! এমনিতে খুব বড় মাপের মানুষ। সবকিছু বিলিয়ে দেয়ার মত দিলদরিয়া অন্তর তার। তবু শওকত আলীর ইদানীং মনে হয় এই লোকটার মধ্যেও প্রচুর স্ববিরোধ আছে। এইচএমভি কোম্পানির গ্রামোফোন রেকর্ডের বুকে পাছা লেপ্টে বসে থাকা সারমেয়টির মত মনে হয়। দৃষ্টি কেবল প্রভুর মাইকের প্রতি। এইসব দেখে শুনে শওকত আলীও ভেতরে ভেতরে খানিকটা নিস্পৃহ হয়ে পড়েছে। প্রিয় মনির ভাইয়ের মন খারাপের সংবাদও তাকে উৎকণ্ঠিত করে না, কৌতূহলি করে না। সে বরং সোজাসুজি কাজের কথা উত্থাপন করে, খয়েরি রঙের একটা ফাইল মেলে ধরে সামনে, ইউনিক গার্মেন্টসের সঙ্গে আমাদের এগ্রিমেন্টটাতে একবার চোখ বুলাবেন মনির ভাই? মাথার চুলে খাড়াখাড়ি আঙুল চালাতে চালাতে মনিরুজ্জামান সাহেব বলেন, নারে ভাই। আমি তো বললাম মনটা আমার ভালো নেই!
সিগারেট জ্বালিয়ে হুসহুস করে ধোঁয়া ছাড়েন বেশুমার।
ধস নামা দেহটা হেলিয়ে দেন চেয়ারের পেছনে। যেন কোনসুদূরে তাকিয়ে থাকেন অর্থহীন। কিন্তু শওকত আলী কী করবে এখন? কেন মন খারাপ জানতে চাইবে? বেফাঁস কিছু যদি বেরিয়ে আসে। এই তো দিন পনের আগে তাঁর মেজো মেয়ে মনি আপন বড় বোন মুক্তার কপাল ভাঙলো। ইঞ্জিনিয়র পাত্রের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। দিনক্ষণ পর্যন্ত সারা। অথচ কী বেআক্কেল মেয়ে সে কী না দুলাভাইয়ের গলায় ঝুলে বসে থাকল। কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে মুক্তা এখন যায় কোথায়! করে কী! এত সব কেলেঙ্কারীর মধ্যে বাবা হিসেবে মনির ভাইয়ের মন খারাপ থাকতেই পারে। কিন্তু এখন সে প্রসঙ্গ তুলে শওকত আলী আবার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবে কী করে! সে বিন্ম্রর ভঙ্গিতে ফাইলটা গুটিয়ে নিয়ে বলে, স্যরি মুনির ভাই। এ সব যা করার আমিই করব। আপনি…
বাক্য শেষ করতে দেন না মনিরুজ্জামান সাহেব। সহসা ভিন্ন এক প্রসঙ্গের অবতারনা করেন,
এরিনা খানকে মনে পড়ে শওকত?
এরিনা মানে আপনাদের পিআরও এরিনা খান?
হ্যাঁ। মনে পড়ে তাকে?
আমি তো প্রচন্ড অহংকারী মনে করতাম তাকে। কাউকে বিশেষ পাত্তা দিত না। কিন্তু একেবারে শেষ দিনে আমার ধারণা পাল্টে গেল মানুষটা খারাপ না।
তুমি তার ব্যাকগ্রাউন্ড জানো?
নাহ্! কিন্তু তার প্রসঙ্গ উঠছে কেন মনির ভাই?
শওকত আলীর এ প্রশ্ন যেন মনিরুজ্জামান সাহেসের কর্নকুহরে প্রবেশ করে না। চেয়ারে হেলান দিয়ে তিনি
আনমনা তাকিয়ে থাকেন দূরে কোথাও। আঙুলের ফাঁকে সিগারেট পুড়তে থাকে নীরবে। শওকত আলী আবার প্রশ্ন করে,
কী হয়েছে মনির ভাই?
জীবন বড় হেঁয়ালিভরা শওকত। কখন যে কোথায় কাকে ঠেলে পাঠায় কে জানে! জীবনের তাগিদ কোনো ব্যাকরণ মানে না।
ধস নামা কণ্ঠে দার্শনিকের মত তত্ত¡ ছড়ান মনিরুজ্জামান সাহেব। কান খাড়া করে থাকে শওকত আলী, কিন্তু এতদিন পর আজ এসব কথা কেন উঠছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারে না। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অপলক। মমতামাখা কণ্ঠে উচ্চারণ করেন মনিরুজ্জামান সাহেব, ওই অহংকারটুকু ছিল তার আত্মরক্ষার পাঁচিল। কৃত্রিম, তবু ওই পাঁচিল তুলে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছিল।
এটাই ছিল তার রণকৌশল। মুক্তিযুদ্ধ তার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে অসময়ে, ছেলেমেয়ে দুটো নিয়ে তাকে তো বাঁচতে হবে! সেই বাঁচার জন্যে ওই চাকরি নেয়া, বাঁচার জন্যেই ওই কৌশল।
শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে শওকত আলীর কই, এ সব কথা তো সে শোনেনি কোনোদিন। তার মনে পড়ে যায়
চাকরিতে রিজাইন করে আসার দিন এরিনা খানের ভূমিকার কথা, মনে পড়ে যায় মাস ছয়েক আগে নিউমার্কেটে হঠাৎ দেখা হলে সে খুব উচ্ছসিত হয়েছিল, বলেছিল শওকত ভাই, একদিন হুট করে আপনার বাসায় বেড়াতে চলে যাব কিন্তু! সেই একদিন তার আজো হয়নি। এরই মধ্যে কী এমন ঘটে গেল! সে উৎকণ্ঠায় যেনবা আঁৎকে ওঠে,
এরিনা খানের কী হয়েছে মনির ভাই?
কী আর হবে! ওই পাঁচিল তুলেও নিজেকে বাঁচাতে পারল কই! অথচ ওই আর্মির বাচ্চা আর্মির হিংস্র ছোবল থেকে তোমাকে বাঁচানোর জন্যে সে কী না করেছে।
সেদিন আমি কিছুই করিনি শওকত, করেছে এরিনা খান।
এ সব আপনি কী বলছেন ভাই! আগে বলেন নি কেন?
আমি কী বলব! সে নিজেই কথা বলবে বলে তোমার এই
অফিসের ফোন নম্বর জেনে নিয়েছে। কথা বলেনি তোমার সঙ্গে?
শওকত আলী আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে আছড়ে এ কি সেই টেলিফোনের রহস্যময় নারীকণ্ঠ! যে কোনোদিন নিজের পরিচয় দিতে চায়নি! বিগত দু’আড়াই বছরে অন্তত চার পাঁচবার ফোনে কথা হয়েছে, কিন্তু রহস্যেরঅবগুণ্ঠন কিছুতেই উন্মোচিত হয়নি! কেবল এই টুকু কবুল করেছে মনে করুন আমি আপনার একজন হিতাকাক্সক্ষী।
কিন্তু কী হয়েছে তার? জিজ্ঞাসা নয়, আর্তনাদ ফুটে বেরোয় শওকত আলীর কণ্ঠে। অথচ জবাব আসে অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে,
কিচ্ছু হয়নি তো! এরিনা খান গলায় আঁচল পেঁচিয়ে কেবল সুইসাইড করেছে।
বলার সময় খুবই নিস্পৃহ কণ্ঠে বাক্যটি উচ্চারণের চেষ্টা করেন। কিন্তু বাক্য শেষ না হতেই শওকতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তাঁর গলার স্বরে ছল্ধসঢ়;কে ওঠে অবরুদ্ধ বাষ্প কেন এমন হলো বলো দেখি!
এরই মাঝে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অকস্মাৎ নেমে আসে নিকষ কালো প্রগাঢ় অন্ধকার। সাত্তার মিয়া মোমবাতি জ্বেলে আঁধার তাড়াবার আয়োজন করার পূর্ব পর্যন্ত দু’জনই অন্ধকারের গহরবে ডুব মেরে স্বস্তি খোঁজে। কিন্তু কোথায় স্বস্তি! কোথায় শান্তি পারাবার!
পরদিন সকালে খবরের কাগজ বেরুলে দেখা গেল অধিকাংশ কাগজেই এরিনা খানের আত্মহত্যার খবরটি ছাপা হয়েছে। তবে সেই খবরের গায়ে যে যেমন পেরেছে রঙ চড়িয়েছে। কেউবা এ মৃত্যুকে ঘনঘোর রহস্যমেয় করে তুলেছে। কেউবা তার অহংকারী চলাফেরা এবং আধুনিক জীবন যাপনকে কালিমা লিপ্ত করেছে কাল্পনিক গালগল্পের ডালপালা ছড়িয়ে। তবে অধিকাংশ সাংবাদিকের নজর পড়েছে মেজর ইমরান চৌধুরীর সঙ্গে এরিনা খানের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার প্রতি। অত্যন্ত কদর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়ে কেউ কেউ উপসংহার টেনেছে মৃত্যুভিন্ন অন্য কোনো নিয়তি ছিল না। কোথাও কেউ লেখে না কেন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর জন্যে স্বাধীন দেশে এরকম নিয়তি অপেক্ষা করে? কেন পিতৃহীন দুটি ছেলেমেয়ে এই অসময়ে এভাবে মাতৃহীন হয়?