ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ// পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস / কবি আসছে/ ফারুক আহমেদ/ প্রথম পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে //ফারুক আহমেদ// দ্বিতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // চতুর্থ পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // ষষ্ঠ পর্ব
- উপন্যাস //কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পর্ব সাত
- ধারাবাহিক উপন্যাস// কবি আসছে // ফারুক আহমেদ// পর্ব আট
- ধারাবাহিক উপন্যাস // কবি আসছে // ফারুক আহমেদ // পর্ব নয়
- ধারাবাহিক উপন্যাস//কবি আসছে// ফারুক আহমেদ//পর্ব দশ
আপনাদেরই তো ছোটবোন। ও তো আসে মাঝে
-মধ্যে।
- হুম, ও আসলে তো দারোয়ান বিচার দিত না, তুই আর কাকে নিয়া আসছস বল?
- না ভাই, এই দারোয়ান বদমাশকে কিছু না দিলেই এমন করে।
- তোমার নামে কিন্তু আরও বিচার আছে। পিয়াল এবার যোগ করে।
- আর কী বিচার ভাই?
- তুমি কাব্য কাশেমের কাছে আমার নামে কী কী বলছ, বলো তো।
এ কথায় জহির একটু নড়েচড়ে বসে। - আমি কী বললাম। মোমেন খুব একটা বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
- তুমি নাকি তাকে বলছ। আমি কাব্য কাশেমের নামে, কাব্য কাশেমের কবিতা পড়লে নাকি মনে হয় আমি ঘোড়ার পিঠে বইস্যা আছি। কাব্য কাশেমের কবিতা নাকি লাফ দিয়ে পড়া মোরগের মতো আনন্দের ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বেড়াচ্ছি।
- এইটা কেমন কথা, ঘোড়ার পিঠে বসে থাকার সঙ্গে কাব্য কাশেমের কবিতার কী সম্পর্ক?
- সে কী সম্পর্ক তা তুই-ই ভালো জানিস।
- শিলা কুমকুমের সঙ্গে ওর কী সম্পর্ক তা-ও নাকি আমি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছি, তুই বলেছিস।
- ভাই, এসব কী বলেন।
- হারামজাদা, তুই গল্প ছাপাবি ছাপা, কিন্তু বড় ভাইদের নামে কুৎসা রটিয়ে সাহিত্য সম্পাদককে খুশি করতে হবে কেন? এমন করলে কিন্তু তোকে বাসা থেকে একদম বের করে দিব।
- ভাই, গালিগালাজ করেন ঠিক আছে, কিন্তু বাসা থেকে বের করে দিবেন, এ কেমন কথা। আমি তো আর মাগনা থাকি না।
- তুই আমার সামনে থেকে যা। পিয়াল বেদম রেগে যায়।
মোমেন মেহেনি এমন পরিস্থিতিতে টুপ করে চলে যায়। আর জহির তার হাতে রাখা কাব্য কাশেমের কবিতার বইটা বালিশের নিচে চাপা দিয়ে ফেলে।
পিয়াল
কলিম স্যারের ওপর আর্টিক্যালটা ছাপা হওয়ার দুই দিন পর পিয়াল স্যারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়। পিয়ালকে দেখে কলিম স্যার তাঁর অফিসের দুই অধস্তনকে বলেন, তোমরা এখন যাও, আমি ফ্রি হয়ে ডাকব।
ও দুজন বেরিয়ে গেলে পিয়ালকে বসার ইশারা করে। পিয়ালের মুখ হাসি হাসি।
- পিয়াল, তোমার লেখার তো বেশ সাড়া পাওয়া গেল।
পিয়াল মাথা কাৎ করে দেয়। বলে, স্যার আমি এক
ডজনেরও বেশি ফোন পেয়েছি। এর মধ্যে তরুণ লেখকের অনেকে বলেছে, আপনি স্যারের এই বইয়ের ওপর লেখার সাহস পেলেন কীভাবে?
স্যার পিয়ালের দিকে গম্ভীর চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেন, তরুণরা আমার লেখা পড়ে নাকি? - কী যে বলেন স্যার, তবে সবচেয়ে মজার ঘটনাটা ঘটেছে অন্য জায়গা থেকে, স্যার বলব কি-না, ঠিক সাহসে কুলাচ্ছে না।
- বলো বলো, ভয় পাওয়ার কী আছে?
- না মানে স্যার, লেখাটা পড়ে কবি মোহাম্মদ আলী স্যার ফোন করেছিলেন। বললেন, কলিম ভাইয়ের ওপর লেখাটা তো ভালোই লিখেছ, আমার কবিতার ওপর তুমি একটা রিভিউ লিখ না।
- তা-ই নাকি? হা হা হা। গম্ভীর মুখ থেকে এমন একটা হাসি বেরিয়ে পড়বে এটা পিয়াল ভাবতেই পারেনি।
- তুমি আজ আমার সঙ্গে লাঞ্চ করে যেও। আর আমি যে পত্রিকাটা সম্পাদনা করি, তার পরের সংখ্যাটা জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে, জীবনানন্দের কবিতায় ঘাস-লাতা-পাতা। তুমি পারলে জীবনানন্দের কবিতায়।
ঘাস এ নিয়ে একটি লেখা দিতে পারো। আমার তো মনে হয় তোমার, এ নিয়ে কাজ করাই আছে।
- স্যার অবশ্যই, এ আমার জন্য সেরা প্রাপ্তি। বলে সে স্যারের পা ধরে সালাম করে।
স্যার বলেন, এ কী করছ, তুমি থাকো আমি সোহাগকে বলে দিচ্ছি, দুপুরে লাঞ্চ করে যাবে।
পিয়াল ঘাড় কাৎ করে। বলে, স্যার, একটা কথা ছিল। - বলো।
- না মানে।
- বলো।
- স্যার, ইয়াকুব আলী ভাই, তার প্রজেক্টে লোক নিচ্ছেন। আমার কাছ থেকে বায়োডাটাও নিয়েছেন। বলেছেন, আমাকে উনার পছন্দ হয়েছে। এখন যদি আপনি একটু বলে দিতেন।
- আচ্ছা, নন্দনতত্ত্বের ইয়াকুব তো?
- জি স্যার, আপনি বললে, আপনার হাত দিয়ে আমার চাকুরিটা হলে, সেও বিরাট সম্মানের স্যার।
স্যার আবারও গম্ভীর। বাইরে যে সবুজ পাতার খেলা করছে সেদিকে চোখ ফেলেন। - তুমি কোথায় থাকো?
- স্যার মোহাম্মদপুর।
- সঙ্গে কে কে থাকে?
- স্যার, আমার সঙ্গে আমার এক বন্ধু আর ছোটভাই এই তিন জন। অন্য দুজনের পরিচয় সে গোপন করে।
- সবাই ব্যাচেলর?
- জি স্যার।
- আমি তোমার বাসায় আসব ভাবছি।
- আমার বাসায়! পিয়াল চমকে যায়, ঢেকুর তোলে।
- আমার সঙ্গে একজন গেস্ট থাকবে। কিন্তু বাসায় তুমি ছাড়া আর কেউ থাকলে হবে না।
- জি স্যার, জি স্যার। কবে আসবেন স্যার?
- কাল দুপুরে। তোমার জন্যও লাঞ্চ নিয়ে আসব। আর তুমি পরশু ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করবে। আমি বলে রাখব।
পিয়াল আবার উঠে গিয়ে স্যারের পা ধরে সালাম করে। - তুমি তোমার নাম্বার আর ঠিকানাটা লিখে দিয়ে যাও।
পিয়াল নিজের নাম্বার আর ঠিকানা লিখে স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার মনে হলো, এক্ষুনি বাড়িতে ফোন করে মাকে বলবে, মা আমার কিন্তু হয়ে গেছে।
জহির
কবি কাব্য কাশেমকে নিয়ে গুলশানের দিকে রওনা হয় জহির। সেখানের একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার করানোর কথা অর্পা তাবাসসুমের।
সিএনজিতে দুজন যেতে যেতে কিছু সংলাপ আদান-প্রদান করে তারা।
- ভাই, আমি একটা একক কবিতা পাঠের আসর করার পরিকল্পনা করছি।
- একক কবিতা, কার?
- সেটা নিয়েই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
- দশক ধরে ধরে গুরুত্বপূর্ণ কবিদের নিয়ে এ আয়োজন হবে, আপনার তো থাকতে হবেই। আর মোহাম্মদ আলী, কবি কিংকর খাদেমের কথাও ভাবছি। আর কে হতে পারে, আপনি যদি পরামর্শ দেন।
- কিংকর খাদেমটা আবার কে? ও আবার ভালো কবিতা লিখল কবে, পোস্ট কামিয়েছে, কিন্তু কবিতা কামাতে পারে নাই।
- তাহলে বাদ ভাই, এজন্যই আপনার পরামর্শ নেয়া।
- হুম ঠিক আছে, এটা ভালো উদ্যোগ, কিন্তু টাকা পাবে কোথায়?
- সে ব্যবস্থা ভাই আমি করব।
- তুমি কি টিপু সুলতান যে টাকার ব্যবস্থা নিজেই করবা।
জহির কোনো কথা বলে না। - শোনো, শুধু টাকা নয়, কবিতা পাঠের আসর কিন্তু টিপু সুলতানের দখলে। তোমাকে এটাও মনে রাখতে হবে।
- জি ভাই, ওটা আমার মাথায় আছে।
- কেমন মাথায় আছে দেখা যাবে সময়ে।
- জি ভাই, উনাকে আমি ম্যানেজ করব।
- তাহলে ঠিক আছে, আমি তোমাকে কিছু নাম দিতে পারি। আর আমারটার স্পন্সর তোমাকে আমিই পাইয়ে দিব।
- তা-ই, তাহলে খুব ভালো হয়।
এরকম কথা হতে হতে দুজন পৌঁছে যায় গুলশানে। রেস্টুরেন্টে বসে জহির ফোন করলে অর্পা তাবাসসুম জানায়, আর ৫ মিনিট।
- কত দিন পরে দেখা হলো অর্পার সঙ্গে। কাব্য কাশেমের মুখে হাসি।
- তা-ই তো ভাইয়া, আমাদের তো কোনো খোঁজই রাখতে চান না।
- কী যে বলেন অর্পা।
এভাবে দুজনের কথা জমতে থাকে। খাবারের অর্ডার দিলে, তিন জন মিলে খাবার খায়। কিন্তু আলাপ অর্পা তাবাসসুম আর কাব্য কাশেমের মধ্যেই হয়। এর ভেতর জহির কোনোমতেই ঢুুকতে পারে না।
পিয়াল
শিলা কুমকুমের সঙ্গে এভাবে দেখা হয়ে যাবে এটা প্রায় অবিশ্বাস্য। পিয়াল অনেক চেষ্টা করেও তার মুখটা দেখতে পারে নাই, ডেকে রেখেছে। শিলা কুমকুম অবশ্যই একজন সুন্দরী এ নিয়ে সন্দেহ নাই। সে কবিতা লেখে এ নিয়েও সন্দেহ নাই, তার আঁকাআঁকিতেও হাত আছে, সবাই তা জানে। ইয়াকুব আলীর অফিসের দিকে যেতে যেতে এসব কেন জানি পিয়ালের মাথায় বার বার চলে আসে।
মাথাটা কেন যে মাঝেমধ্যে অন্যদিকে চলে যায় পিয়াল কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
ইয়াকুব আলীর অফিসে পৌঁছে পিয়নকে বলে, ভাই কি আছেন?
- জি।
- বলো পিয়াল স্যার এসেছে।
পিয়ন ইয়াকুব আলীর রুম ঘুরে এসে বলে, যান যান স্যার ফ্রি আছেন।
খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছিলেন ইয়াকুব আলী। পিয়ালকে দেখে বলে, বসো।
পিয়াল বিনয়ের সঙ্গে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। - তোমার চাকুরি তো হয়েই গেল, কী বলো, খুশি?
পিয়াল ইয়াকুব আলীর দিকে তাকিয়ে থাকে। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, কী বলবে। ইয়াকুব আলী কি রেগে গিয়ে এসব বলছে, না সত্যি সত্যি। - তুমি তাহলে এখন যাও।
- জি। এতক্ষণে মুখ ফুটে কথা বেরুয় পিয়ালের।
- তুমি এখন যাও। বুঝতে পেরেছ বাছা?
পিয়াল দেখে ইয়াকুব আলী রেগে যাচ্ছেন। সে আর কথা না বাড়িয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে। - শোন।
ইয়াকুব আলীর এই কথায় পিয়াল দাঁড়িয়ে পড়ে।