ধারাবাহিক উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল//জাকির তালুকদার//প্রথম পর্ব//
- ধারাবাহিক উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // দ্বিতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস / আমাদের আগুনবিহীন কাল / জাকির তালুকদার / তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস /আমাদের আগুনবিহীন কাল /জাকির তালুকদার /চতুর্থ পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // ষষ্ঠ পর্ব
- উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল// জাকির তালুকদার// সপ্তম পর্ব
- উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল// জাকির তালুকদার// পর্ব আট
- উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পর্ব নয়
- উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পর্ব দশ
- উপন্যাস।। আমাদের আগুনবিহীন কাল।। জাকির তালুকদার।। পর্ব এগারো
পরদিন খুব সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিল ইমরুল। কোনো দিকে না তাকিয়ে বাজার এলাকায় এসে পৌঁছেছে। উদ্দেশ্য ভিড় বেড়ে ওঠার আগেই বাজারের সবগুলো অলি-গলি চষে ফেলা, যাতে স্মৃতিসৌধটার কোনো চিহ্ন অন্তত খুঁজে পাওয়া যায়।
বাজার এখনও ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি পুরোপুরি। একেবারে উত্তর কোণে একটা চায়ের দোকানে ঘুঁটের আগুন জ্বালানো হয়েছে। কেতলি বসানো হয়েছে চুলায়। দূর থেকেও ইমরুল দেখতে পায় কেতলির নল দিয়ে খুব সরু ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। চুলার সামনের বেঞ্চে বসে আছে জনা তিনেক টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ। মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে এখানে জমা হয়েছে তারা চায়ের তৃষ্ণা নিয়ে। তাদের পাশ কাটিয়েই বাজারে ঢুকতে হবে। ইমরুলকে তারা দেখে কৌতূহলী চোখ মেলে। তবে কোনো প্রশ্ন করে না।
পুরো বাজার পাক খায় সে। কিন্তু চোখে পড়ে না আকাক্সিক্ষত কাঠামোর সদৃশ কোনো বস্তু। হতাশায় ছেয়ে যায় মনটা।
সর্বশেষ গলির শেষ মাথায় পৌঁছে আবার ফেরার উদ্যোগ নেয়। পুরোপুরি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় গলির মাথায় লাঠি হাতে খাকি জামা আর লুঙ্গি পরা বেঁটে মতো এক প্রৌঢ় তাকে একদৃষ্টিতে দেখছে। ইমরুল এগোতে থাকে। প্রৌঢ় একটুও নড়ে না। চোখের পলকও পড়ছে না তার। একই ভাবে তাকিয়ে আছে ইমরুলের দিকে। দু’জন যখন একেবারে কাছাকাছি, সেই সময় প্রৌঢ় মুখের দাড়িগোঁফের জঙ্গলের ফাঁক থেকে একটু হাসি বের করার চেষ্টা করে। সালাম দেয় ইমরুলকে। সালামের প্রত্যুত্তর পাওয়ার সাথে সাথেই সে প্রশ্ন করে ইমরুলক কী খুঁজেন? বাজার তো এখনও বসে নাই।
ইমরুলের মনে হয়, এই লোকই বোধহয় চৌকিদার হবে। কী নাম যেন বলেছিল রতন? অনুমান করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে প্রশ্ন করে- আপনিই কি এই বাজারের চৌকিদার?
হ্যাঁ-সূচক উত্তর দেয় লোকটা। তারপরে আবার প্রশ্ন করে- কী খুঁজেন? এখন তো কুনো সদাই-পাতি পাবেন না।
সদাই না। আমি অন্য একটা জিনিস খুঁজি।
কী জিনিস?
উত্তর দিতে গিয়ে একটু ভাবতে হয় ইমরুলকে। স্মৃতিসৌধ শব্দটা কি বুঝতে পারবে মানুষটা? অন্য কোনো প্রতিশব্দও মনে আসছে না। শহিদ মিনার বললে কি চলবে?
তাকে ইতস্তত করতে দেখে একটু সন্দেহের ছায়া ঘনায় প্রৌঢ় চৌকিদারের মুখে। আশ^স্ত করতেই নিজের পরিচয় দেয় ইমরুল- আমি ডাক্তার। এই হাসপাতালে নতুন এসেছি।
সঙ্গে সঙ্গে নির্মল অভ্যর্থনার হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে প্রৌঢ়ের মুখ। সেই হাসি দেখেই যেন ইমরুলের মনে পড়ে যায় তার নাম। রজব আলি।
রজব আলি বলে- হ্যাঁ হ্যাঁ ছার, আপনের কথা কইছে আমাক রতন ডাক্তার। আপনে একটা শহিদ মিনার খুঁজতিছেন।
ঠিক। একটু উদগ্রীব হয়েই জানতে চায় ইমরুল- আপনি জানেন কোথায় আছে সেটা?
তাকে সঙ্গে আসতে বলে এগিয়ে চলে রজব আলি। জয়প্রকাশ আগরওয়ালার ভুসিমালের আড়তের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাতের বাম দিকে একটা বন্ধ ঢোপ-দোকান। সেই দোকানের পেছনে ঢোকে সে। তার ইশারা অনুযায়ী ইমরুলও এগিয়ে যায়। তাকায় রজব আলির ইশারা করা ভগ্নস্তূপের মতো একটা স্থাপনার দিকে। দেখতে অনেকটা রাস্তার ধারের মাইলপোস্টের মতো। উচ্চতায় চার ফুটের কাছাকাছি হবে। একসময় সাদা রং ছিল। কিন্তু এখন শুধু একটা চল্টাওঠা অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনদিকেই ভাঙা। ওটার গায়ে ঘুঁটে শুকানোর দাগ, কফ-থুথু, পানের পিক, চুনের দাগ। তবু কোনো ঘৃণার উদ্রেক হয় না ইমরুলের মনে। ব্যগ্র হয়ে সে এগিয়ে যায় স্থাপনার একেবারে কাছে। হাত বোলায় ওটার গায়ে। তারপর সামনে উবু হয়ে বসে পড়ার চেষ্টা করে প্রায় মুছে যাওয়া বিলীন হয়ে যাওয়া অক্ষরগুলো।
সিমেন্টের ওপর ছেনি দিয়ে কেটে কেটে অক্ষর বসানো হয়েছিল সেই সময়। সেই কারণেই বেশ কিছু অক্ষরের অস্তিত্ব এখনও বোঝা যাচ্ছে। অক্ষরের ওপর ধুলা-মাটি, কাগজসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা লেপ্টে আছে। ইমরুল হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে মাটিতে। কোনো কিছু না ভেবেই গা থেকে টি-শার্ট খুলে বেদিটা পরিষ্কার করার চেষ্টা শুরু করেছে। শশব্যস্ত রজব আলি বলে করেন কি ছার! জামা নষ্ট কইরেন না। আমি ন্যাকড়া আর পানি আনতিছি।
অনতিবিলম্বে ছোট একটা বালতিতে পানি এবং পুরনো টুকরো কাপড় নিয়ে আসে রজব আলি। ইমরুলের হাতে না দিয়ে নিজে পরিষ্কার করতে থাকে বেদিটাকে। ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকে একটা-দুটো করে অক্ষর
সহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
এই স্থানের মৃত্তিকায় প্রাণ বিসর্জ্জন
দিয়াছেন
খাজনা বন্ধ এবং দলিল দগ্ধ আন্দোলনের সহীদবৃন্দ।
তাং ১৯৩১ ইং।
বাংলা সন-তারিখ পড়ার মতো অবস্থায় নেই। শহিদদের নামের তালিকা ছিল নিশ্চয়ই। এখন একজনের নামের পাঠোদ্ধারও সম্ভব নয়।
এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ইমরুলের কাণ্ড দেখছিল রজব আলি। উঠে বসে তাকে ঘাম মুছতে দেখে প্রথম কথা বলে সে- কী আছে ছার ঐ জিনিসটাত?
ইমরুল আস্তে বলে- আপনার বয়স কত চাচা? আপনি কি ব্রিটিশ আমল দেখেছেন?
তখন খুব ছোট্ট আছিনু ছার। ঐ আমুলের কথা কিছু কবার পারি না।
সেদিনই সন্ধ্যার পরে উপজেলা প্রেস ক্লাবে গিয়ে ঢুকেছিল ইমরুল।
টিনের চালের ঘর। ইটের দেয়াল-মেঝে। ঘরের মধ্যে একটা ছোট সেক্রেটারিয়েট টেবিল, আর একটা বড় কনফারেন্স টেবিল। সেক্রেটারিয়েট টেবিলের পাশে গদিআঁটা চেয়ারে বসে আছে দুইজন। আরও গোটা দশেক কাঠের চেয়ার বড় টেবিলটা ঘিরে। সেখানেও বসে আছে ছয়জন। তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় মজলিস-জমানো মানুষগুলো। সালাম দেয় ইমরুল। তারপর নিজের পরিচয় জানায়। সেক্রেটারিয়েট টেবিলের পাশ থেকে একজন উঠে দাঁড়ায় হাত বাড়িয়ে ও আপনেই আমারে নতুন ডাক্তার সায়েব। এই কয়দিনেই সুনাম হইছে আপনার। রুগীরা খুব সুনাম করতিছে আপনার। বসেন বসেন!
তার বাড়ানো হাতের সাথে হ্যান্ডশেক করে ইমরুল। অন্যরাও একে একে হাত বাড়িয়ে দেয়। পরিচয় জানায় একে একে। সবাই সাংবাদিক। আর সাংবাদিক মানেই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। ইমরুল একটা চেয়ার টেনে বসার পরে সেক্রেটারি হাঁক ছাড়ে কদম মেহমান আসিছে। চায়ের কথা ক!
থাক। চা আমি খেয়েই বেরিয়েছি।
আরে খাইছেন তো কী হইছে। চা জিনিসটা বার বার খাওয়া যায়। আপনে একজন সনমানি মানুষ। প্রতথম পা রাখলেন আমারে গরিবদের ক্লাবে। এক কাপ চা তো আর বেশি কিছু না। আন রে কদম চা আন!
তারপরে বলেন ডাক্তার সায়েব আপনের জন্য আমরা ইলাকার সাংবাদিকরা কী করবার পারি?
এই রকম কথার জন্যই অপেক্ষা করছিল ইমরুল। সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩১ সালের প্রজা বিদ্রোহের কথা তোলে- আমি ঐ সম্পর্কে ডিটেইল জানতে চাই। আপনারা কেউ কি ওটা নিয়ে কখনও কোনো ফিচার করেছিলেন? থাকলে সেটা আমাকে দয়া করে জোগাড় করে দিন।
সভাপতি আবার স্থানীয় কলেজের শিক্ষকও। নামের আগে অধ্যাপক বসান। সে এক ঘটনা ঘটেছিল বটে। কিন্তু এদ্দিন পরে তার কোনো গুরুত্ব তো নাই।
কান ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে ইমরুলের। অনেক কষ্টে রাগ চেপে বলে- এতবড় একটা ঘটনা ঘটেছিল এই এলাকায়! গোটা চলনবিল অঞ্চলের মানুষ শরিক হয়েছিল সেই খাজনা বন্ধ আন্দোলনে। জমিদার-তালুকদারদের নাকের পানি চোখের পানি এক করে দিয়েছিল। শেষে ইংরেজ পুলিশ এসে গুলি ছুড়ে হত্যা করল ছাব্বিশজন মানুষকে। এক বড় একটা গৌরবের ঘটনা তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্যই সামনে আনা দরকার।
অধ্যাপক-সভাপতি স্পষ্টতই অপমান বোধ করে। মেকআপ দেবার জন্য বল তা আপনি ঠিকই কইছেন। কিন্তু এইসব ব্যাপারে সরকারের তো কোনো উদ্যোগই নাই। সরকারের উদ্যোগ ছাড়া কি বেশি কিছু করা সম্ভব?
ইমরুল ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। শান্ত কণ্ঠে বলে- আমি ঐ ঘটনাটার ডিটেইল জানতে চাই। আমাকে যদি সেটা সংগ্রহ করে দেন, খুবই কৃতজ্ঞ থাকব।
ডাক্তার সাহেবের কি লেখালেখির অভ্যাস আছে?
না। ওটা স্রেফ আমার ব্যক্তিগত কারণে দরকার। খুবই দরকার। প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন!
তার কণ্ঠস্বরের আর্তিটা স্পর্শ করে ঘরের সব কয়জন মানুষকে।
একজন এগিয়ে এসে তার পাশের চেয়ারে বসে। বলে আমি কথা দিচ্ছি এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনাকে যতটা পারি তথ্য জোগাড় করে দেব। এখন আমাদের এই সস্তা চায়ে একটু চুমুক দ্যান।
তার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় ইমরুল। সাংবাদিকদের সম্পর্কে ধারণা আছে তার। তার সিনিয়র কয়েকজন বন্ধু তো এখন ঢাকার ডাকসাইটে সাংবাদিক। কেউ চ্যানেলে, কেউ পত্রিকায়। তাদের জীবনযাপন যে কোনো বড় আমলা বা ব্যবসায়ীর সমানই বিলাসী। ফারুক ভাই আর তিন্নি দিদি তো এর মধ্যেই ঢাকা শহরে বেশ বড়সড় ফ্ল্যাট এবং গাড়ির মালিক। তিনতারা, পাঁচতারা হোটেল ছাড়া কেউ ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার করে না। দেশ-বিদেশে ঘোরে কখনও মিডিয়ার টাকায়, কখনও কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের টাকায়, কখনও সরকারি টাকায়। ফারুক ভাই বলে- যতদিন ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক চৌর্যবৃত্তি চালিয়ে যাবে, যতদিন সামরিক-বেসামরিক আমলা-পুলিশ দুই নম্বরি টাকা কামাতে থাকবে, যতদিন পলিটিসিয়ানরা পলিটিক্স-ব্যবসা চালিয়ে যাবে, ততদিন পর্যন্ত সাংবাদিকদের হাতে অফুরন্ত টাকা আসতেই থাকবে। ততদিন আমাদের কোনো চিন্তা নাই। যে যত বড় মিডিয়া হাউসে কাজ করবে, তার রেটিং তত বেড়ে যাবে। তারপরে কে কোন বিট কাভার করে, তার ওপর নির্ভর করে প্রাপ্তির পরিমাণ। বাংলাদেশে সাংবাদিকরা এখন যথেষ্ট ধনী এবং পাওয়ারফুল মানুষ।
মফস্সলের সাংবাদিকরাও তাদের রেঞ্জে পাওয়ারফুল। খুব কম পত্রিকাই মফস্সলের প্রতিনিধিদের নিয়মিত বেতন দেয়। যা দেয় তার পরিমাণও সংসার চালানোর উপযুক্ত নয়। কিন্তু দিব্যি খোশহালে থাকে সাংবাদিকরা। বিভিন্ন অফিস, এমনকি থানা থেকেও মাসোহারা আসে সাংবাদিকের নামে। হেড অফিস বেতন না দিলেও কেউ আর রিপোর্টিং ছেড়ে দেয় না।
তার পাশে বসা যুবক সাংবাদিককে একটু ভালোই লাগে ইমরুলের। ধান্ধাবাজি করতে করতে মানুষের মুখে যে চোয়াড়ে-ছাপ পড়ে যায়, তেমন কোনো ছাপ খুঁজে পায় না সে মুখটাতে। নিজের নাম বলে যুবক আমি হাফিজুর রহমান নয়ন। তারপরে জানায় কোন পত্রিকাতে সে কর্মরত।
চা শেষ করে আরেক দফা সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে বেরিয়ে আসে ইমরুল। নয়নও তার সাথে সাথে বেরিয়ে আসে। সিগারেটের প্যাকেট বের করে ইমরুলের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। সে হেসে সম্মতি জানালে তার দিকেও এগিয়ে দেয় প্যাকেট। দু’জনেই সিগারেট জ্বালায়। একগাল ধোঁয়া ছেড়ে নয়ন জিজ্ঞেস করে আপনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের?
হ্যাঁ।
কত তম ব্যাচ?
বলে ইমরুল।
শুনে নয়ন বলে- আপনি আমার বেশ কয়েক বছরের জুনিয়র। আপনাদের ডা. সেলিম আর আমি এক ব্যাচের।
আপনি কোথায় পড়েছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জার্নালিজমে।
এবার চমকে যায় ইমরুল। ঢাকা ভার্সিটি থেকে জার্নালিজমে পাস করা একজন মানুষ পড়ে আছে মফস্সলে। উপজেলায় বসে সাংবাদিকতা করছে! ঢাকায় থাকলে তার তো এতদিনে ফারুক-তিন্নিদের পর্যায়ে উঠে যাওয়ার কথা!
তার প্রতিক্রিয়া খেয়াল করেছে নয়ন। সে হাসে। সম্ভবত তার ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পরে অধিকাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া একই রকমের হয়। এটা দেখে দেখে সে অভ্যস্ত। হেসে বলে এবার নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবেন আমি এখানে পড়ে আছি কেন?
ইমরুলও হাসে। না। জিজ্ঞেস করব না। তবে আপনি বললে শুনব।
আমি এলাকায় ফিরে এসেছিলাম রাজনীতি করব বলে। সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি।
এখন করেন না?
করি। তবে তাকে রাজনীতি করা বলে না। ধরে আছি কোনোরকমে আরকি।
তারপরেই পাল্টা জিজ্ঞেস করে আপনি খাজনা বন্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে জানতে চান কেন? ওই ঘটনাটার কথা তো এলাকার মানুষরাই ভুলতে বসেছে। আপনিও কি…
না। আমি রাজনীতি করি না।
তাহলে?
উত্তর দেবে কি না ভাবে ইমরুল। তারপর বলে- ঐ ঘটনাটার সাথে আমার পরিবারের একটা সংশ্লিষ্টতা আছে।
এবার তার দিকে সমীহর দৃষ্টিতে তাকায় নয়ন তার মানে, সেদিনের সেই আন্দোলনের শহিদদের কেউ আপনার আত্মীয়?
কুঁকড়ে যায় ইমরুল। বলে- আপনাকে আরেকদিন বলব নয়ন ভাই।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমাকে বিদায় নিতে হবে এবার। আমি বামের রাস্তা ধরব। আপনি আপনার মোবাইল নম্বরটা দিন।