ছোাটগল্প// ফাঁকি // কানিজ পারিজাত

বিষয়টা বেশ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। মকবুল নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। হঠাৎ করেই গাটা যেন গরম হয়ে উঠল। কান থেকে কেমন একধরনের ভাঁপ বের হচ্ছে। সামনে বসা লোকটার ঠোঁট নাড়ানো দেখা যাচ্ছে শুধু। শব্দগুলো কেন যেন মকবুলের কানে ঢুকছে না। মকবুলের হঠাৎ বাড়ির পেছনে মজাপুকুরে ডুব দেবার স্মৃতি মনে পড়ল। ছেলেবেলায় পুকুরে বেশ কিছুক্ষণ ঝাঁপাঝাঁপি ডোবাডুবি করে ওঠার পর চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে আসত। আরও একটা ব্যাপার ঘটত- কানে তালি লেগে যাওয়া। এই মুহূর্তে মকবুল স্বপ্নদৃশ্যে কি আবার মজাপুকুরে ডুব দিয়ে উঠল? লোকটার সামনে থেকে কোনোরকমে উঠে আসে মকবুল। পেছন থেকে কী বলল কিছুই শুনতে পেল না। দুপুর-রোদ। ঠাঁঠাঁ করছে চারপাশ। যে লোকটির সামনে এতক্ষণ বসেছিল মকবুল, তার নাম ডাক্তার কেশব। ব্যস্ততম বাজারের একপাশে তার চেম্বার। সামনে ওষুধের দোকান- পেছনে চেম্বার। লোকটি জাত ব্যবসায়ী। পেশাকে ব্যবসা করে নিয়েছে। দোকানও তার, চেম্বারও তার। বয়স্ক ডাক্তার বলে রোগীও অনেক। মকবুল বাজারের ভেতর দিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে থাকে। দুপাশের হোটেল থেকে ভরদুপুরে মসলাযুক্ত খাবারের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। মকবুল হঠাৎ আবিষ্কার করল খাবারের ঘ্রাণ অন্য দিনের মতো তার ক্ষিদে জাগিয়ে দিচ্ছে না, ক্ষিদেটা কখন যেন উবে গিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটার পর কী মনে হতে ঘুরে দাঁড়ায় মকবুল, ফিরে চলে ডাক্তার কেশবের চেম্বারের দিকে। কম্পাউন্ডার আলি আগে থাকতেই ওখানে বসা ছিল। মকবুল ডাক্তারের কথা ইশারায় জিজ্ঞেস করতেই সে মাথা নাড়ে- দুপুরের খাবার বিরতি। ডাক্তার আসতে আরো দুই ঘণ্টা। মকবুল চেম্বারের সামনের বেঞ্চিতে বসে। অলস দুপুরে ডাক্তারের চেম্বারের সামনের সাদা পর্দার দোল খাওয়া দেখতে দেখতে মকবুলের হঠাৎ কেশব ডাক্তারের উপর ভীষণ রাগ হয়। অবশেষে অপেক্ষার অবসানে ডাক্তার কেশব এলে, মকবুল কম্পাউন্ডার আলিকে বেশ খানিক বুঝিয়ে ভেতরে ঢুকল। ডাক্তার কেশব চেম্বারে বসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়- মকবুল ক্ষীণকণ্ঠে আমতা আমতা করে বলে ‘এমনে যা বললেন এইডাই কি সত্য?’ কেশব ডাক্তার মকবুলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়লেন। মকবুল অদ্ভুত এক অসহায় দৃষ্টি নিয়ে কেশব ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থেকে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে- ধীর পায়ে। তবে এবার এক পরিবর্তিত মন নিয়ে সে ফিরছে, প্রথমবার চেম্বার থেকে বের হবার সময় সে ছিল অনুভূতি শূন্য; এবার একটি অনুভূতি তার হয়েছে, তা হলো, কষে কেশব ডাক্তারের গলে একটা চড় বসিয়ে দেওয়া। বেশ কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটির পর মকবুল বাজারের শেষ প্রান্তে নদীর পারে একটু নির্জনে গিয়ে বসে। বেলা পড়ে এসেছে। পড়ন্ত বেলার রোদে নদীর পানি রূপার মতো চিক্চিক্ করছে। নদীর পারে জেলেদের নৌকায় মাঝিরা মাটির চুলায় ভাত চাপিয়েছে। সদ্য ফুটে ওঠা ভাত থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাক খেয়ে খেয়ে উপরে উঠছে- সেদিকে এক অদ্ভুত ধোঁয়াটে চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মকবুলের হঠাৎ মনে হয়, জেলেনৌকার মাঝিরা কত সুখী! ওদের সাথে নিজের জীবনটা যদি বদলে নেওয়া যেত! বিকেল গড়িয়ে সন্ধা নামে। মকবুল ওঠে। ধীর পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ায় বাজারের এক কোণে একটি ছোট হোমিওপ্যাথিক দোকানের সামনে- ‘মা হোমিও হল’। সন্ধে হয়ে এসেছে। উপেন এই সময়ে দোকানে সন্ধ্যা দেয়- ধূপ জ্বালে। মকবুল দোকানের ভেতরে ঢোকে- ‘কীরে কী খবর?’ উপেনের প্রশ্নের উত্তরে মকবুলের ছাইবর্ণ পাংশুটে মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উপেন ভেতর থেকে দোকানের ঝাঁপিটা টেনে নামিয়ে দেয়।

দুই

উপেন হঠাৎ মুখ খোলে- ‘কোনো চেষ্টা আত্তি নাই?’
মকবুল নিশ্চুপ। বেশ কিছুক্ষণ হয় উপেনের ঝাঁপিটানা দোকানে সে বসে আছে- চলৎশক্তিহীন জড়পদার্থের মতো। উপেন তার বাল্যবন্ধু- দিনের বেলা একটা হাই স্কুলে কেরানির চাকরি করে- সন্ধ্যার একটু আগে থেকে এসে বসে ‘মা হোমিও হলে- উপেনের নিজের দোকানে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বেচার পাশাপাশি টুকটাক চিকিৎসাও দেয়। ঠান্ডা মাথার উপেন হিসেবে খুবই পাকা। মকবুলকে নিশ্চুপ দেখে উপেন আবার প্রশ্ন করে- কোনো চিকিৎসা কি আছে? পয়সাপাত্তি কেমন লাগতে পারে? মকবুল মাথা নাড়ে।
-‘আর কোনো ডাক্তারের লগে কথা বলবি?’
এবার মকবুল বলে- কেশব ডাক্তার য্যারে ফিরাইয়া দেলে, হ্যারে লইয়া মুই কই যাই? দু’জনে আবার চুপ হয়ে যায়। অসুখটা মকবুলের স্ত্রী খোদেজার। মেয়েলি রোগ আগেই ছিল- সাথে যুক্ত হয়েছে অন্ত্রের অসুখ। রিপোর্ট দেখে কেশব ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে- সময় বেশি দিন নাই। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে মকবুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে- ‘মাডি খাওয়োইন্না কাম করছি।’ কথাটা সে মাঝে মাঝেই হতাশ হয়ে বলে থাকে। খোদেজাকে বিয়ে করার সময় খোদেজাদের বাড়ির পাশের বাড়ির মেয়ে, খোদেজার চাচাতো বোন, সাজেদার প্রস্তাবও এসেছিল মকবুলের জন্য। মকবুল খোদেজাকেই বেছে নিয়েছিল- খোদেজার বাপের তখন বেশ রমরমা অবস্থা- একটা রাইস মিল, সুপারি আর পেয়ারা বাগান তো আছেই। এদিকে সাজেদার বিয়ের তিন বছরের মাথায় সাজেদার ভাগ্য খুলে যায়- ডিভি লটারি পেয়ে সাজেদা এখন আমেরিকায়, সাথে নিয়েছে স্বামী আর সন্তানকেও। সাজেদার যখন রমরমা অবস্থা, খোদেজাদের অবস্থা তখন পড়তির দিকে। মকবুলের শ্বশুরের এমন ব্যামো হলো, চিকিৎসায় এক এক করে খসে গেল রাইস মিল, পেয়ারা আর সুপারির বাগান। সাজেদা যখন স্বামী-
সন্তানসহ বিদেশ থেকে ভারি ভারি স্যুটকেস নিয়ে দেশে আসে, তখন শ্বশুরবাড়ির মলিন উঠানে দাঁড়িয়ে চাচাশ্বশুরের বাড়ির চাকচিক্যের দিকে তাকিয়ে মকবুলের বুক থেকে চাপা এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আপন মনে বলে ওঠে-

‘মাডি খাওয়োইন্না কাম করছি।’
“পয়সাপাত্তি খরচ কইর‌্যা বিদেশ নিয়া কি দ্যাখতে চাও?” এই কথার উত্তরে মকবুল হঠাৎ ঝামটা দিয়ে ওঠে- ‘পয়সা আছে মোর ধারে?’ কথাটা মিথ্যে নয়। খোদেজাকে বিয়ে করার সময় মকবুলের এই মফস্বলের বাজারে ছিল জাঁকজমকপূর্ণ এক স্টুডিও, ‘ভাই ভাই স্টুডিও অ্যান্ড ডেকোরেটরস’। ফটো তোলা আর বিয়ে বাড়ির ডেকোরেশনের জিনিস সাপ্লাই হতো তার দোকান থেকে; ভালোই চলত। অথচ সময়ের স্রোত বেয়ে সেই দোকান যেন ধূসর-মলিন-প্রাচীন এক স্মৃতি। প্রযুক্তির গতিশীলতায় মানুষ স্টুডিওতে এসে ছবি তোলে খুবই কম। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোও এখন হয় চায়নিজ রেস্টুরেন্টে। মকবুলের স্টুডিওতে এখন সম্পদ বলতে একটি পুরনো অ্যানালগ ক্যামেরা যার সামনের কাঁচ ফেটে গেছে, ক্যামেরাম্যান কাউসার, একটি টুইনওয়ান, কয়েকটি পুরনো দিনের ভারতীয় বাংলা গানের ক্যাসেট, আর সামান্য কিছু দরকারি জিনিস- যাতে অধিকাংশ সময় ধুলো জমে থাকে। উপেন আবার বলে- ‘শাহাদাতেরে কি ডাকমু? অয়, কোনো বুদ্দি দেতে পারে কি না?’ মকবুল নিশ্চুপ। কেমন ঝিম মেরে থাকে। সারাজীবন সে খালি ভুল করে গেছে, খালি ভুল হয়ে যায় তার!! ভাগ্য কেন যে তাকে এইভাবে ফাঁকি দেয়…
আনমনে বলে ওঠে- ‘হারাডা জীবন খালি ভাটকি খাইয়্যা গেলাম!’

তিন

একটি সুসজ্জিত ড্রইং রুমের সোফাসেটের একপ্রান্তে বসে আছে মকবুল। মুখোমুখি অপর সোফায় বসা লোকটি পায়ের উপর পা তুলে বসে গল্প ভেঁজে যাচ্ছে-
-‘বাইরের কান্ট্রিতে দেখেন- নো পলিউশান, নো ডিজাস্টার, নো ডিজিজ। এই জন্যেই আমরা বাইরে কমফোর্ট ফিল করি! আর এখানে? পানিটা পর্যন্ত খেতে ভয় করে! আমি তো আমার ওয়াইফকে বলেই দিয়েছি- “লুক, দেশে যাচ্ছ ভালো কথা, বাট ইউ হ্যাভ টু ক্যারি ইউর ওউন ওয়াটার। সত্যিই তাই! আমরা আসার সময় পানি সাথে ক্যারি করে এনেছি।” মকবুল শুকনো হাসি হাসার চেষ্টা করে। ভদ্রলোকের নাম পারভেজ। মকবুলের স্ত্রী খোদেজার ফুপাতো বোন ‘লাবণী’র স্বামী- মকবুলের ভায়রা। ইটালি থাকে। ছুটিতে স্ত্রী সন্তানসহ বেড়াতে এসেছে শ্বশুরবাড়ি। এই লোকের ভাই নাকি বিদেশে ডাক্তার- যদি কোনো উপায় বের হয়! স্ত্রী খোদেজার মরনব্যাধি ধরা পড়ার পর থেকে মকবুল গত কয়দিনে বেশ ছুটেছে, যদি কোনো উপায় বের হয়- তার নিজের সার্মথ্য নাই, শ্বশুরবাড়ি থেকে সাহায্য পাবার আশাও কম। সামনে বসা লোকটি এখনও গল্প ভেঁজে যাচ্ছে। একপ্রস্থ গল্প শেষ হয়ে দ্বিতীয় প্রস্থ শুরু- ‘আপনি এ দেশের কোনো কিছুর ওপর রিলাই করতে পারবেন না, না মেডিকেল রিপোর্ট, না ডাক্তার, না মেডিসিন। আরে বাবা, যেই দেশে মানুষ-গরু-ছাগল একই সাথে রাস্তা পার হয়’… মকবুল হঠাৎ একটু কৌতূহলী হয়ে ওঠে- জিজ্ঞেস করে- ‘ঐ দেশে কি গরু ছাগলের জন্য আলাদা রাস্তা?’
-‘আরে ভাই, ঐ দেশে তো অ্যানিম্যাল রাইট আলাদা। ওদের তো অ্যানিম্যালের জন্য আলাদা হসপিটাল আছে।” ভেতরের ঘর থেকে খাবারের ঘ্রাণ এসে নাকে লাগছে। খুব সম্ভবত পরোটা ঘিয়ে ভাজা হচ্ছে। তাড়াহুড়োয় না খেয়ে বেরোনো মকবুলের খিদেটা পাক দিয়ে ওঠে। আরো কিছুক্ষণ দেশ, রাজনীতি, পরিবেশ নিয়ে গল্প ভাঁজার শেষে মকবুলের ফুপাতো ভায়রা
পারভেজ পুনরায় বিদেশের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে গল্প শুরু করে। -‘আপনি জানেন, ঐ দেশের সিস্টেমই আলাদা, একজন রুগী চাইলে দীর্ঘদিন তার অসুখ ক্যারি করতে না চাইলে কী করতে পারে জানেন?’
-‘কী করতে পারে?’
-‘ইউথেনেশিয়া’। এটাও একটা পদ্ধতি- রুগী স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের জন্য আবেদন করতে পারে!! মকবুল ধূ ধূ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ভেতরের ঘর থেকে খাবারের ডাক আসে; পারভেজ, মকবুলের ফুপাতো ভায়রা উঠে দাঁড়ায়। মকবুল শুকনো মুখে বেরিয়ে আসার সময় পারভেজ বলে- ‘আমার ভাইয়ের সাথে দেখি আপনার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করব। আসলে আমিও এত বিজি, ও এত বিজি- সময় পাব কিনা জানি না।” মকবুল সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। গাছপালা দিয়ে ঘেরা বাড়িটা প্রাচীন হলেও অভিজাত। একটু অবস্থাপন্ন হওয়ায় শুরু থেকেই এরা মকবুলকে পাত্তা দিত না। কেমন নাকসিঁটকে তাকাত। মকবুলও সামনে এলে কেমন যেন কুঁকড়ে যেত। যদিও অবস্থাপন্ন এই আত্মীয় নিয়ে খোদেজার বড়াই ছিল বরাবরই; তবে সে নিজেও কোনো কালে এদের কাছে পাত্তা পেয়েছে কিনা- তা নিয়ে মকবুলের সন্দেহ আছে!হঠাৎ কী হয়, মকবুলের রাগ ওঠে। নির্দিষ্ট কার উপর রাগ ওঠে সে বুঝতে পারে না। বাড়ির অদূরেই ছাতিম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে একধরনের চাপা হিসহিসানি রাগে সে গালি দেয়-

-‘হালার পো হালা- ফুডানি মারো মোর লগে? তুই তো ব্যাডা ঐ দ্যাশে মানেগো থালা-বাডি মাজজো, ডেরাইবারি করছো। আছো তো ঐ দ্যাশে তিরতিয় শেরেনির নাগরিক হইয়া! মুই তো মোর দ্যাশের ফাস্ কেলাস নাগরিক! তুই তো ব্যাডা উমাইন্না মুরগি, হেই দ্যাশে বইয়া জিমাও আর মোগো দ্যাশে আইয়া ফুডানি মারো!!” বেশ কিছুক্ষণ গালি দেবার পর বুকটা যেন হালকা হয় মকবুলের, বাড়ির পথ ধরে।

চার

অদ্ভুত এক পুলকে ভরে আছে মকবুলের মন। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার আড়চোখে ঘড়ি দেখছে সে। কোনো রকমে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই হলো- রিকশা ছুটিয়ে সোজা উত্তরপাড়া বাসস্ট্যান্ড। বাসে উঠে সোজা টানে পয়তাল্লিশ মিনিট পাড়ি দিলেই স্বপ্নের ‘বিনয়কাঠি’। আহা! বিনয়কাঠি! যেন এক স্বপ্নপুরী, রূপকথার রাজ্য!
সোনার কাঠি-রূপার কাঠি
বিনয়কাঠি-বিনয়কাঠি।

মকবুলের মুখের ভাব স্বাভাবিক রেখেছে, কেউ যেন পুলকিত ভাবটা টের না পায়। আলমারি থেকে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল রঙের পুরনো একটা শার্ট বের করে। গায়ে দেবার পর তার মনে হয় গায়ে একটু সেন্ট মাখানো দরকার। পুরনো সেন্টের শিশিটা ঐ ঘরে, যেখানে খোদেজা শুয়ে আছে। খোদেজার অসুখের কথাটা মকবুল জানায়নি। তবে, একে তো মফস্বল তার উপরে দুঃসংবাদ; শুভাকাঙ্খীর অভাব হয়নি। বাতাসের ডানায় ভর করে খবর পৌঁছে গেছে খোদেজার কানে। সেই থেকে খোদেজা নির্জীব। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বিছানা নিয়েছে; যাত্রার পূর্বেই যাত্রার প্রস্তুতি যেন। মকবুল ঘরে ঢোকামাত্রই খোদেজার চোখে চোখ পড়ে যায়। শীতল এক চাহনি। মকবুলের ভেতরটা কেঁপে ওঠে যেন, এই সেই চাহনি- আগুনের ছ্যাঁকা দেওয়া চাহনি- গত বিশ বছরে যা মকবুলকে জ্বালিয়েছে-পুড়িয়েছে বহুবার! অথচ আজ সেই চাহনিতে আগুনের তেজ নেই, ছ্যাঁকা দেওয়া ভাব নেই, কেমন যেন বরফের মতো ঠান্ডা আর শীতল। মকবুলের হঠাৎ কেমন আলগা আলগা লাগে। মনে হয়, বহুদিন সে যেন এক শক্ত দড়ি দিয়ে বাধা ছিল- দড়িটা যেন হঠাৎই ছিঁড়ে গেছে! একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে মকবুল বলে- ‘উত্তরপাড়া যাচ্ছি। উপেন এক কবিরাজের খোঁজ দিল।’ মকবুলের দিকে অদ্ভুত এক শূন্য দৃষ্টি দিয়ে খোদেজা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, তার মলিন শরীরে একটা জিনিস দৃশ্যমান- তার নাকের নাকছাবি। গোল চাকতির মতো ঝকঝকে নাকছাবিটি মকবুল দিয়েছিল বিয়ের সময়। মকবুলের মনটা হঠাৎ যেন দুর্বল হয়ে আসে। তবে খানিক বাদেই, চোখের সামনে ঝিলিক দেয় বিনয়কাঠি -স্বপ্নপুরী- রূপকথার রাজ্য । মকবুল উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, বিনয়কাঠি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে!! মকবুল বাড়ি থেকে বের হবার সময় উঠানের কোণা থেকে ঝুমা দৌড়ে আসে- তার হাতে একটা জামবাটি ভর্তি আনারসের কাটা টুকরা।
-‘আব্বা, কই যাও?’
মেয়ে ঝুমার প্রশ্নের উত্তরে মকবুল একটু দুর্বল কণ্ঠে বলে- ‘কবিরাজের কাছে, তোর মার ওষুধের জন্য।’ পৃথিবীতে ১১ বছরের এই মেয়েটাই মকবুলের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা, তার কাছে মিথ্যা বলতে জিব সরতে চায় না। -‘যাও- তাড়াতাড়ি।’ মেয়ে উৎসাহ দেয়- ‘আসার সময় আনারস আইন্নো, পাশের বাড়ির কাকি বলছে আনারসে নাকি অনেক অসুখ ভালো হয়।’ মকবুল রিকশা নেয়- ব্যবস্থাটা উপেন করেছে। সত্যি উপেন আর শাহাদাত তার কলিজার বন্ধু। তার বিপদে বন্ধুরাই কলিজা দিয়ে দেয় যেন! নিরুপায় মকবুলকে হতাশাচক্রে খাবি খেতে দেখে, বন্ধু হিসেবে উপেনের এই উপকারী ব্যবস্থা- বিনয়কাঠি! সত্যিই, হিসাবে পাকা উপেন বিধ্বস্ত মকবুলকে বুঝানোর ভঙ্গিতে বলেছিল-
-‘বিমারি মোগো আপনজন হইতে পারে, কিন্তু বিমার তো আর মোগো আপন জন না। এই অসুখে তোর বউ শ্যাষ, চিকিৎসা করতে গ্যালে যেডু আছেলে, হেউডুও শ্যাষ। এইয়ার চাইতে এমন কিছু কর ব্যাডা, যেইয়াতে টাকাও যাইবে না, নিজেও ভালো থাকা যাইবে।’
উপেনের কাছ থেকে বিনয়কাঠির এই ব্যবস্থা শুনে, মকবুলের তো প্রথমে চক্ষু চড়কগাছ। তারপর ধীরে ধীরে হিসাবের অঙ্কটা যখন উপেন তাকে বুঝিয়ে দেয়, মকবুলের চোখে তখন আগামীর ঝকঝকে রঙিন স্বপ্ন। উপেনকে সে বলেছিল- ‘এমনি এমনিই দিয়া দেবে’? উপেন হেসে বলেছিল- ‘এমনি এমনি কি আর দেয়? হ্যাগোও খুঁত আছে! ঐ মাইয়ার আগেও দুইবার বিয়া হইছেলে- অর মেজাজ এট্টু চড়া। কেউ অর সাথে লাইগ্যা থাকতে পারে না। ’

চড়া মেজাজ শুনে মকবুল একটু যেন দমে যায়। বিশ বছরে একজনের চড়া মেজাজের মূল্য দিতে দিতে জীবন বিপন্ন! আবারো? তাকে দমে যেতে দেখে উপেন বলেছিল- ‘আরে আগেই দুঃখ পাও ক্যা? লাইগ্যা থাকলে অনেক কিছু পাবি- তিনটা সুপারি বাগান, চাইর/পাঁচটা পানের বরজ। তারপর মাইয়াও কম বয়সী, তোর আরও বোনাস হইলে!’ দুই পাশে সারি সারি পানের বরজ তার মাঝখান দিয়ে মকবুলের বাস ছুটে চলেছে, সেদিকে তাকিয়ে মকবুল কেমন স্বপ্নাতুর হয়ে যায়। বিনয়কাঠির গণি মৃধার মেয়ে আদুরী। তারই সাথে মকবুলের প্রস্তাব দিয়েছে উপেন। একে তো বড়ো অবস্থাওয়ালা ঘরের মেয়ে, তার উপর আহ্লাদী- মেয়ের মেজাজ একটু চড়া বলে আগে দুইবার ঘর ভেঙেছে। মেয়েপক্ষ তৃতীয়বার এমন জামাই চায় যে মেয়ের পোষ মানবে। প্রয়োজনে জামাইকে সম্পদ দেবে অনেক। উপেন মকবুলের প্রস্তাবটা দিয়েছে। চল্লিশোর্ধ্ব মকবুল বড়োই ধৈর্য্যশীল বউটা দুই-এক মাসের মধ্যেই ভিন্ন যাত্রার সওয়ারি। মানিয়ে নেবে সে আদুরী বেগমের সাথে। বাসের মধ্যে এক বয়াতি গান গেয়ে গেয়ে টাকা তুলছে-
নিশীথে নিরজনে গোপনে গোপনে
করিব প্রেমের আলাপন।

সুখের এক ফল্গুধারায় ভাসতে থাকে মকবুল। গানের সুরে মনে বেজে ওঠে স্বপ্নময় এক ছন্দ। আদুরী বেগমদের বাড়ির পেছনে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, উপরে ছাউনি দেওয়া, সেখানে সিমেন্টের বেঞ্চিতে আদুরী বেগমের সামনে মকবুল বসা, তার সামনে চার/পাঁচ রকমের পদ- বিকেলের নাশতা। আদুরী বেগম পরখ করতে চায় মকবুলকে, তার পোষ মানার আগ্রহটাকে। মকবুল বেশ গদগদ হাসি মুখে বলে ওঠে- ‘আপনারে এট্টা পাখির ছাও মনে হইতেছে।’
-‘জ্বি ’ আদুরী বেগম তেজি গলায় জিজ্ঞেস করে- ‘মানে কী?’
-‘না, মানে আপনারে এট্টা হইলদা পাখির ছাও মনে হইতেছে।’
সত্য সত্যই আদুরী বেগম একটা হলুদ শাড়ি পরে বসা, গায়ের রং বেশ ফর্সা তবে স্বাস্থ্যটা একটু বেশিই ভারি, বয়সটা যেন একটু বেশিই দেখায়। মকবুল আরও একটু তরল গলায় বলে- ‘আপনেরে দেইখ্যা আমার কলিজাডা যেনে জুড়াইয়া গ্যালে- আপনেরে দেইখা খুব নরম মনে হইতেছে।’ আদুরী বেগম এইবার যেন একটু খুশি হলো- খানিকটা নরম গলায় বলল- ‘কেমন নরম? বুঝাইয়া বলেন-’ মকবুল আরও খানিক ভেজা গলায় বলে- ‘ডিমের কুসুমের মতোন নরম।’ পেরেছে। আদুরী বেগমের মন মকবুল ভজাতে পেরেছে। মকবুলের দিকে খাবার এগিয়ে দিচ্ছে আদুরী বেগম বেশ যত্ন নিয়েই। ভাগ্যসূর্য কি তবে মকবুলের আকাশে উদিত হতে যাচ্ছে? মকবুল ভেতরে ভেতরে উচ্ছ্বসিত পুলকের জোয়ারে ভাসতে থাকে। হবে- মকবুলেরও দালান হবে দুইতালা- পাকা দালান, রাইসমিলের গদিতে বসবে সে- দোকানটা নতুনভাবে সাজাবে- সুপারি বাগান- পানের বরজ-
-‘আপনের না একটা মেয়ে আছে? তারে কী করবেন?’
মকবুলের গালে তখন নকশিকাটা রসগাজা পিঠের অর্ধেকটা ঢুকেছে। আদুরী বেগমের কথায় আর একটু হলেই গাল থেকে পড়ে যাচ্ছিল। পিঠের টুকরোটা কোনোরকমে গিলে নিয়ে মকবুল বলে- ‘আমার সাথেই…।’ তারপর আদুরী বেগমের কঠিন দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে- ‘না মানে আমার সাথে মাঝে মইধ্যে দ্যাখা করতে আসবে, অর নানুবাড়ি থাকবে, ও আবার তাদের বাইধ্যো।” আদুরী বেগমের দৃষ্টি নরম হয়- দুইখানা দুধখেজুর পিঠা তুলে দেয় মকবুলের প্লেটে। আসার সময় মকবুলের হবু শ্যালক তুরান তাকে মটরসাইকেলে করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। বাস বিনয়কাঠি ছেড়ে উত্তরপাড়ার পথে। মকবুল একটা ফুরফুরে মেজাজে আছে। ভাগ্য তার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে- হবে- তারও হবে রাজত্ব- ফিরবে জৌলুস। মকবুল মনে মনে ঠিক করে সেও দালান তুলে পারভেজকে দাওয়াত দেবে- সাজানো ড্রইং রুমে বসে পায়ের উপর পা তুলে সেও পারভেজকে জিজ্ঞেস করবে-

‘ঐ দ্যাশে গিয়া শুরুতে কি থালা-বাডি মাজতেন?’ দুই পাশে পানের বরজ আর হোগলা পাতার ঝোঁপ পেরিয়ে বাস ছুটে চলেছে। মকবুলের একটু সুখের ঢেকুর ওঠে, মনের মধ্যে গান বাজে-
নিশীথে নিরজনে গোপনে গোপনে
করিব প্রেমের আলাপন।।

পাঁচ

খুব কষে কষে খোদেজার মৃত্যুর ছক এঁকেছে মকবুল। কেশব ডাক্তারের কথা মতো আরো একমাস আগেই তার ভিন্ন যাত্রার সওয়ারি হওয়ার কথা ছিল- অথচ দিন পার হচ্ছে- মকবুলও বিদায় জানাতে অপেক্ষা করছে- খোদেজার ভিন্নযাত্রার গাড়ি আর আসে না। মকবুল ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠছে। খোদেজাকে এমনিতে মলিন-কাহিল লাগলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। মনমরা হয়ে শুয়ে থাকে, খায়-দায় খুবই কম; তবে শরীর যেমন ছিল তেমনি আছে। ভাঙনের কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে গত তিনমাসে মকবুল আদুরী বেগমের পোষ মেনেছে দারুণভাবে। আদুরী বেগমও মকবুলের বায়না খানিকটা মিটিয়েছে। দুইলাখ টাকা দিয়েছে মকবুলের দোকান গোছানোর জন্য। ইদানীং আদুরী বেগম ঘন ঘন জানতে চায় খোদেজার কথা। মকবুল শুকনো গলায় বেশ কাতর কণ্ঠে বলে- ‘আর বেশি দিন নাই, যায় যায় করতেছে।’ কিন্তু ভেতরে ভেতরে চিন্তা বাড়ে মকবুলের, বাড়ি ফিরে খুবই চিন্তিত মুখে অটুট, অক্ষয় খোদেজার দিকে বারবার তাকায়। অবশেষে চিন্তিত মকবুল অনেক ভেবে একটা উপায় বের করে, হাজির হয় শাহাদাতের উঠানে। শাহাদাতের শ্বশুরবাড়ি দুই থানা পরে। সেখানে মকবুলকে কেউ চেনে না। সেই জায়গায় গিয়ে মকবুল করবে ব্যবস্থা। খোদেজার ভিন্ন যাত্রার ব্যবস্থা। শাহাদাত হেসে ওঠে- ‘এইয়াও কিন্তু তোর ভায়রার কথা মতোন হইলে।’
-‘মানে?’
-‘মানে বুঝলি না? ইউথেনেশিয়া’- বলেই হেসে ওঠে শাহাদাত। মকবুল না বুঝে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
-‘আরে ভাই, অরাও অসুখ দিয়া মুক্তির জন্য আবেদন করে, তুইও তো সেইরকমই করতেয়াছো।’ হাসতে থাকে শাহাদাত। মকবুল কোনো কথা না বলে নিশ্চুপ হয়ে থাকে। শাহাদাতের সাথে তার শ্বশুরবাড়ির গ্রামের এক হুজুরের বাড়ি যায় মকবুল, দোয়া পড়াবে সে, জালালি দোয়া। খোদেজার কষ্ট লাঘব করে চিরমুক্তির দোয়া। দোয়া কবুল হলেই মুক্তি। খোদেজার মুক্তি, মকবুলের মুক্তি। একটা বেশ ঠান্ডা-শীতল ঘরে হুজুর তক্তপোশে বসা- আগরবাতি আর আতরের গন্ধে ঘরের বাতাস একটু ভারি। সৌম্যদর্শন হুজুর শান্ত মুখে মকবুলকে বলেন-
‘রুগীর কি খুব কষ্ট? দ্যাখেন, দোয়াটা হইল ‘খতম ই জালালি’ আল্লাহপাক যদি দোয়া কবুল করেন, রুগীর যদি হায়াত থাকে, তাইলে রুগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। আর নাইলে রোগের কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে দ্রুত ইহলোক ত্যাগ করবে।’ রুগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কথায় মকবুল কেমন চমকে ওঠে- বিষয়টা তার জানা ছিল না। হুজুর আবার বলেন, ‘রুগী যদি খুব কষ্ট পায়; এতই কষ্ট যা সহ্য করা খুবই কষ্টের; বাঁচার যদি কোনোই সম্ভাবনা না থাকে। তখন তার এই কষ্ট থেকে মুক্তি লাভের জন্য এই দোয়া পড়া হয়, এইটাই ‘খতম ই জালালি’। সৃষ্টিকর্তা মহান দয়ালু। জন্ম-মৃত্যু সব তাঁর হাতে। আর একটা কথা মনে রাখবেন, তিনি অন্তর্যামী; বান্দার মনের সব কথা তিনি জানেন।’ এমন আরও কিছু কথা শুনতে শুনতে মকবুলের কেমন যেন ভয় লাগতে শুরু করে। অজানা এক ভয়! ঘরের ঠান্ডা-শীতল পরিবেশেও মকবুল কেন যেন ঘামতে থাকে। সে হঠাৎ বলে- ‘তাইলে আর কয়টা দিন দেইখ্যা তারপরে আসি।’ হুজুর উত্তর দেন না- শান্ত চোখে চেয়ে থাকেন মকবুলের দিকে।

ছয়

বিনয়কাঠি থেকে ফিরছে মকবুল। শাহাদাতের শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার পর দুইদিন ধরে মকবুল কেমন গুম মেরে আছে। এক অজানা ভয় তাড়া করছে তাকে। আজ আদুরী বেগম একটু বিরক্ত হয়েই জানতে চেয়েছে খোদেজার কথা। ভয় বাড়ছে মকবুলের, বাড়ছে দুশ্চিন্তা।

সন্ধে হয় হয়, মকবুল বাড়ির কাছাকাছি। আরো কয়েক পা এগোতেই অনেক মানুষের কথাবার্তা কানে আসে তার, দূর থেকে দেখতে পায় উঠানে অনেক মানুষের জটলা। তবে কি খোদেজার গাড়ি এসে গেছে? রওনা দিয়েছে সে ভিন্ন যাত্রায়? দুইদিন আগেই সে ‘খতম ই জালালি’র জন্য গিয়েছিল, দোয়া না পড়ালেও দোয়া কবুল হয়েছে! হালকা ভারমুক্ত পায়ে মকবুল উঠানের চাঁপাফুল গাছটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। একটু বুঝি কষ্ট হচ্ছে মকবুলের। খোদেজা চলে গেছে, চিরতরে! উঠানের কোণে মকবুলকে দেখে জটলার দৃষ্টি ঘুরে আসে তার দিকে, ভীড়ের মধ্যে ঝুমা দৌড়ে আসে-
“আব্বা-আব্বা, জানো, মার না অসুখ নাই! ডাক্তারে বলছে, মার নাকি ক্যান্সার হয় নাই; রিপোর্ট নাকি ভুল ছিল। কিছুদিন আগে বড়ো শালা এসেছিল ঢাকা থেকে, খোদেজাকে নিয়ে বিভাগের ল্যাবে কী সব পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে গেছিল ঢাকায়। ভীড়ের মধ্যে কে যেন বলে উঠল- ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে?’
মকবুল চোখে ঝাপসা দেখছে। কানে তালি লেগে যাচ্ছে তার। ভীড় ঠেলে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায় খোদেজা। একটা ভাঁজ খোলা রঙিন সুতি শাড়ি পরেছে সে। চোখের নিচে কালি, মুখে হাসি নিয়ে সে মকবুলের দিকে তাকিয়ে বলে- ‘দাঁড়ায় রইছো ক্যা? ভিতরে আসো।’
ঘনিয়ে আসা সেই সন্ধ্যায় বজ্রাহত মকবুল উঠানের কোণে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইল।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *