রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
সাত
লাইলির রহস্যময় আচরণ দেখতে পেল লাইলির মা। এলোমেলো কথা বলছে মায়ের সঙ্গে। ভাইয়ের সঙ্গে। রাতে নাকি গ্রাম থেকে ঘুরে এসেছে লাইলি। খুব ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে কথাগুলো বলছে লাইলি। গ্রাম আর গ্রাম নেই। গ্রামের মানুষ এখন শহরের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। একথা বলতেই মিলিয়ে গেল সূর্যের আলো। সন্ধ্যার তারা আকাশে ঝিলমিল করছে। চাঁদের দেখা নেই আকাশে। মাগরিফের নামাজ শেষে জামাল সাহেব বারান্দায় এসে বসেন, নিরিবিলি সময় পাড় করবে বলে, মুক্ত বাতাস যাতে শরীরে লাগে, সুখ সময় পার করতে এই আয়োজন।
হঠাৎ ঝুপকরে কি যেনো পড়ার শব্দ হলো। এককের পর এক ঝুপ ঝুপ শব্দ হচ্ছে।
হুটকরে এমন শব্দ শুনতে পেয়ে জামাল সাহেব বিচলিত হলেন। কান সজাগ রাখলেন, কিছু সময় পরে হু হু শব্দ হচ্ছে বলে মনে হতে লাগলো তার কাছে। কিসের শব্দ তা ঠিক বুঝতে পারছে না তিনি। দেখার এবং বোঝার চেষ্টা করছেন।
না, কিছু দেখলেন না।
কিছু বুঝতেও পারলেন না।
ছোট বারান্দা। গ্রিল দিয়ে আবরিত। সামনের দিক এখনো খোলা। বড় হাইরাজবিলডিং এখনো উঠেনি। একটি পরিত্যক্তবাড়ি ঠিকই দেখা যায়।
দেখা যায় অদূরে নদী। এই শহরে এমন মুক্তপরিবেশ নাই বললেই চলে।
কিসের শব্দ কানে ভেসে এলো!
বোঝার চেষ্টা করে যায় জামাল সাহেব।
না, কিছু বুঝতে পারে না। ভাবতে থাকে, এটাতো গ্রাম নয়। এটা শহর। ইট পাথরের শহর। ঘনবসতির শহর। লাল নীল বাতির শহর। সকালে ঘাসের ঠোঁটে শিশির না দেখার শহর। এই শহরে বসে গ্রামের কথা মনে পড়া খুব কঠিন। এই অদ্ভুত শব্দ তাকে গ্রামের কথা মনে করে দিচ্ছে। গ্রামের কথা মনে করতেই কিশোর জীবনের কথা মনে পড়ে যায়।কিশোর জীবন মানে দুরন্তজীবন।
এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামের ছুটে চলার জীবন।
পাখির বাসা খুঁজে বেড়ানোর জীবন।
হৈ হৈ রইরই করে ছুটে চলার জীবন। মুক্ত আর মুক্তির জীবন।
কিশোর জীবনের কথা মনে পড়ে যায় জামাল সাহেবের। কতরকম ঘটনাই না ঘটেছে সেই কিশোর বয়সে। পাঠে ফাঁকি দেবার মতো ছেলে ছিলেন না তিনি। লেখাপড়া ছিল তার মূল ভিত্তি। মূল থেকে একচুলও সরেননি জামাল সাহেব। কিশোর বেলার একটি ঘটনা ঠিক এরকম-একদিন বিকেলবেলা অংক স্যারে কাছে গেছে পড়তে। বাড়ি থেকে বেশ দূরে অংক স্যারের বাড়ি। পড়া শেষে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বিলপাড় দিয়ে আসতে হবে তার। হালটের হাঁটাপথ। আমগাছ, জামগাছ ডালাপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই পথে সন্ধ্যার পরে লোকজন চলাচল করে না বললেই চলে। নিরজন পরিবেশ।
একা একা হেঁটে চলছে।
মনে ভীষণ সাহস।
ভয়কে জয় করে দৌড় দিয়ে আসবে ভাবছে। কিন্তু সামনে আরও ঘুটঘুটে অন্ধকার। জোরে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়। হোছট খায়। গড়িয়ে যায়। উঁচু-নিচুপথ। সাহস করে ঘুরে দাঁড়ায়। দমে যাওয়ার ছেলে তিনি নন।
হাঁটতে থাকেন। হঠাৎ ধুপ করে শব্দ হলো। ধুপ ধুপ ধুপ। অদম্য সাহস নিয়ে বাড়ি চলে এলেন। মা কাজের মানুষ কাজের রয়েছে। কুপিবাতির আলো জ্বলে। মা খাবার দিয়েছে। খাবার খেয়ে পড়ার টেবিলে। কলম
আর খাতায় যোগ বিয়োগ খেলা খেলতে লাগলেন। হিসাব মিলাতে থাকে।
কীকরে পড়ে গেল মাটিতে। রাতেরবেলা এই গাছপালায় কী বাসকরে?
অশুভ কোনো কিছু?
না, ভালো কিছু?
ভুত-পেতের গল্প শুনেছে দাদির কাছে। ভূত-পেত গাছে থাকে বলে বিশ্বাস করে না তিনি। তাই তার মনে ভয় নাই। তবে কেনো মাটিতে পরে গেলেন! সেই চিন্তা তার মনের ভেতর দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে।
ওরটপালট ভাবনায় তার রাতপার। সকালের সূর্য উঁকি দিতেই চলে যাবে সেই বিলপাড় সেই মনস্ত করেন জামাল সাহেব। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দেখতে পেলো হাশেমের বাবা হালিমকে। দুজনে নানা কথায় মেতে থাকে। ভুলে যায়, কী ভেবেছিল রাতে। ভাবনার জগত থেকেই চেয়ারে বসে দুলছিল।
এমন সময় ঝন্টু চলে এলো।
বাবা।
কোনো কথা নেই। চেয়ারে বসে দুলছে।
বাবা এবাও কোনো কথা নেই। চেয়ারে বসে দুলছে।
এবার শরীরে হাত রেখে বলে, বাবা।
ভাবনার জগত থেকে মুক্তি পেতেই চমকে ওঠে তিনি। তারপর বলে, কিরে কিছু বলবি?
না, কিছু না।
কই গেছিলি? সারাদিন তোরে দেখলাম না।
চাকরির খোঁজে।
কিছু হলো?
না, কিছুই হলো না। চাকরির বাজার এখন খুব কঠিন।
সে, সব সময়ই ছিল, ভেঙে পড়লেতো আর চলবে না, চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
জি, বাবা।
বারান্দা থেকে ঘরে চলে এলো দু‘জন।
লাইলি ও লাইলির মা মোট চারজন। এই পরিবারে আরও একজন আছে, সে হলো লুপাট। এই নাম রেখেছে লাইলি। তার খাবারের আয়োজন একটু ভিন্ন। রাতের খাবার খাবে সেই আয়োজন করে লাইলির মা। টেবিলে খাবার সাজানো। এদিকে লাইলির বিড়াল মানে লুপাট মাও মাও করে ডাকতে লাগলো।
লাইলির মায়ের পাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। বিড়ালকে খাবার দিবে এই জন্য মাছ সিদ্ধ করতে গেল লাইলির মা। হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে এসে বসে ঝন্টু ও জামাল সাহেব। লাইলিও আসে। সবার চোখ বিড়ালের দিকে। একটি মাত্র শব্দ দিয়ে বিড়াল কীভাবে বোঝাতে পারে আমাকে খাবার দাও। মাছ সিদ্ধভাত মাখিয়ে দিলো। মাও শব্দ বন্ধ করে বিড়াল খেতে লাগলো। এদিকে লাইলি ভাত বারতে গেলেই থালাবাসুনের টুনটন শব্দ। এভাবেই খাবার শেষ করে ঘুমাতে যায়, সকলেই। ঝন্টুর চোখে ঘুম নেই। একটি চাকরি তার খুব প্রয়োজন। লাইলির চোখেও ঘুম নেই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তাকে। নিজের মনের সঙ্গে নিজেরাই লড়াই করে যাচ্ছে। কোথায় লুকিয়ে আছে বিজয়, তা জানে না, ঝন্টু।
লাইলি কী জানে? নারীর মুক্তি কোথায়?
ভাবনার অতল গহীনে রোপন করে বিজয়ের নিশান। রাত শেষ মানেই সূর্য উঁকি দিবেই।