রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
আট
একটি রাত। আলোরাত নাকি কালোরাত?
রাত যতো গভীর হয়, সকাল তত নিকটে।
সকাল আলোর ছড়া ছড়িয়ে দিবেই দিবে।
এই কথা ভাবছে আর ভাবছে। ভাবনা তো ভাবনাই। এপাশ ওপাশ করছে হাশেম।
রাত যেনো ফুরায় না। কখন হবে সকাল? ভাবছে আর ভাবছে, রাত আর কতদূর?
অর্ধরাত হতে পারে, তা অনুমান করেছে হাশেম!
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমাতে চায়। না, ঘুম আসে না হাশেমের।
ঘুম নেই।
কে কেড়ে নিল ঘুম?
বিড়ালের চোখ তাকে ঘুম হীন করে দিয়েছে। চোখের সামনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে বিড়াল। গতরাতের ঘটনা তাকে তাড়িত করছে। ঝন্টুদের ফাঁকাবাড়ি। এখনো যে বাড়িটি বাবুমিয়ারবাড়ি হিসেবে মূল ফটকে লেখা আছে। আরবি হরফে। জমিদারি প্রথা বিলিনের পরে শেওলায় ঢাকা পরে গেছে নাম। না, ঝন্টুর কথা মনে পড়ছে না। কাশেমের কথা মনে পড়ছে। সুমন ও সিজানের কথা মনে পড়ছে না। মনে পড়ছে তিন বন্ধুর গল্প।
রাত হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তো ওরা তিনজন।
ওদেও কাছে জোছনামাখা রাত প্রিয় ছিল খুব।
জোছনা রাত হলেই ঝিলপাড়ে বসতো ওদের তিনজনের আড্ডা। এই আড্ডা চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। আজ জোছনা রাত। প্রথমজন বাড়ি থেকে বের হয়েছে। ছুটছে ঝিলপড়ের দিক। ২য়জনও বাড়ি থেকে বের হয়েছে তার গন্তব্য ঝিলপাড়।
৩য়জনও বাড়ি থেকে বের হয়েছে তারও গন্তব্য ঝিলপাড়।
প্রথমজন, আগে এসে বসে আছে। এরপর ওরা দুজন এলো। ওদের দেখে প্রথমজনের মুখে খৈ ফুটতে শুরু করলো।
প্রথমজন কথা বলছে, পাশের ওরা দু‘জন কানপেতে শুনছে।
আজ ঝিলপাড়ে আসার সময় আমি একটি ঘোড়া দেখেছি। আমার আগে আগে এসেছে ঘোড়াটি। আমি এখানে আসতেই ঘোড়াটি পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে দিল। আমি অবাক হয়ে এখানেই বসেপড়ি। আমি বসা মাত্রই ঘোড়টি জলে ডুব দিল।
২য় জন, কী বলিস!
৩য়জন, কী বলিস! গাজাখড়ি গল্প নাকি?
প্রথমজন, গাজাখড়ি গল্প হবে কেন? আমি ঠিকই দেখেছি, ঠিকিই বলছি।
৩য়জন আমি তোদের চেয়ে বয়সে বড়ো বুঝলি। আমি তোদের চেয়ে আগে থেকেই এইখানে আড্ডা দেই। রাত যতো বাড়ে আড্ডার মজাও তত বাড়ে। এমন অদ্ভ’ত কথা কারও মুখে শুনিনি। এবং আমি দেখিওনি।
২য়জন, আমিও এমন কিছু কখনো, দেখিনি।
প্রথমজন, তা হলে তোমরা কি মনে করো,আমি কী মিথ্যে কথা বলছি?
২য় ও ৩য়জন এক সঙ্গে বলে, মিথ্যে কি সত্য তা তো আমরা বলতে পারছি না।
প্রথমজন, তা হলে তোমরা কেমন কেমন কথা বলছো?
৩য়জন, যা আমাদের কাছে মনে হলো তাই বললাম।
প্রথমজন, তোমরা বিশ্বাস করছো না, আমি ঠিকই দেখেছি।
এমন সময় মাও মাও বিড়ালের ডাক শুনতে পেলো প্রথমজন।
বলছে, বিড়াল ডাকছে।
কই বিড়াল ডাকছে! ২য়জন বললো, ৩য়জন সায় দিল। উড়িয়ে দিল প্রথমজনের কথা। তারপর ওকে উদ্দেশ্য করে বলে, এমন এলামেলো কথা বলছিস কেনো?
তোমরা কি যে বলছো! আমি এলোমেলো বলছি, আমি ঠিকই শুনেছি।
প্রথমজন, যা বলছে তাই যেনো ভুল প্রমানিত হচ্ছে, ২য় ও ৩য় জনের কাছে।
প্রথমজন বোকা হয়ে গেল, চুপচাপ বিড়ালের ডাক শুনে যাচ্ছে। এক সময় প্রথমজন মনে ভয় এসে বাসাবাঁধলো। তা হলে তোরা বিড়ালের ডাক শুনছিস
না।
না।
সত্যি?
বলছিতো, না, না, না।
প্রথমজন. কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
বাড়ি যাবো।
কেনো?
ভালো লাগছে না তাই। বাড়ির কথা বলতেই বিড়ালের ডাক আর শুনতে পায় না সে। এমন সময় টিনের চালে ধপকরে আওয়াজ হলো। হাশেমের ভাবনার মোড় ঘুরে গেল। লাইলির মুখ ভেসে ওঠে চোখের পাতায়। লাইলি লাল শাড়ি পরে সাদা বিড়াল কোলে নিয়ে বাড়ির আঙিনায় পায়চারি করছে। বিড়াল ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে হাশেমের দিকে। হাশেমের মনে পড়ে এই বিড়াল সাতদিন আগে বস্তায় ভরে জগনাথপুর বাজারে ছেড়ে দিয়ে এসেছি। এই বিড়াল তার মাছ খেয়েছে। দুধ খেয়েছে। চোরা বিড়াল। চুরি করে খায়। একদিন নয়।
দুইদিন নয়। বেশ কয়দিন এমন কান্ড ঘটিয়েছে বিড়াল। কোনো অবুঝ প্রাণিকে হত্যা করতে চায় না হাশেম। তাই জগনাথপুর বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। এই বিড়াল নিয়ে লাইলি কীকরছে।
কোথায় থেকে এলো লাইলি?
কীভাবে এলো বিড়াল, তাও লাইলির কোলে!
সব যেনো ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।
হ্যা, এবার বারান্দায় পায়ের শব্দ। চটি স্যান্ডল পায়ে হাঁটছে। রাত যেনো গভীর থেকে গভীরে। সময়ের পথধরে এগিয়ে চলছে রাত। সকাল হচ্ছে না কেনো?
উঠে দাঁড়লো হাশেম। গ্লাসে পানি ভরে যেই পান করতে যাবে। ঠিক কখনি দেখে গ্লাসে পানি নাই। যখন পানি ডালছিল পানি পড়ার শব্দ ঠিকই অনুভব করছিল হাশেম। এখন এই গ্লাসে পানি নাই কেনো? কোথায় গেল গ্লাসের পানি? হাশেমের মাথা গোলমেলে হয়ে গেল।
লাইলি নেই।
লাইলির কোলে বিড়ালও নেই। তবুও বারান্দায় কে যেনো পায়চারি করেই যাচ্ছে।
প্রতি রাতে হাশেমের পাশে গোলাম আলী ঘুমায়। আজ গোলাম আলী নেই।
কার কাছে বলবে তার মনের কথা। মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলে হাশেমের ভালো লাগতো। অন্যরাতে এমন কিছু তার কাছে মনে হয় না।
আজ কেনো এমন মনে হতে লাগছে!
তা হলে কী হাশেম ভয় পাচ্ছে!
না, হাশেম ভয় পাবার ছেলে নয়।
হাশেম কে ঘুমাতেই হবে। কীভাবে ঘুমাবে! তা সে ভেবে পাচ্ছে না। এমন সময় মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। মমতাময়ই মা। মা তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর বলছে ঘুমাও হাশেম, ঘুমাও। তোর মাথার চুলগুলো বড় হয়ে গেছে।
কতদিন হলো নাপিতের কাছে যাসনে!
এই তো দিন পনের হলো চুল কেটেছি।
পনের দিনের চুল এতো বড় হয় নাকি?
আমি কী মিথ্যে বলেছি তোকে।
তা, তুই ভালো জানিস পাগল ছেলে আমার।
হ্যাঁ।
মা বলেই তো তুই আমরে পাগল করিস। ঘুমারে পাগল ঘুমাও।
মায়ের মায়াবি মুখ দেখতে দেখতে কখন যেনো হাশেম ঘুমিয়ে পড়েছে, তা হাশেম বলতেই পারেনি। সময়য়ের কাটা ঘুরতে থাকে। সূর্যের কিরণ জানালা ভেদকরে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।
গোলাম আলী দরোজায় লক করে। হাশেমের কোনো সাড়াশব্দ নেই।
বারান্দায় বসে থাকে গোলাম আলী।
প্রতিক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। কখন জাগবে হাশেম। পাখির কিচিরমিচির যেনো বাড়তেই থাকে। হাশেমের শান্তিময় ঘুমের অবসার ঘটে। দরোজা খুলতেই দেখা মিলে গোলাম আলীর মুখ।