রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
চার
রাতের বেলা। চাঁদ ওঠেনি। সন্ধ্যার তারাও মিলিয়ে গেছে। যখন অন্ধকারের ভেতরে হালকা আলো। তখনি মিঁ। মিঁ মাও। মাও। নরম আওয়াজ থেকে বিকট আওয়াজ। বিড়ালের আওয়াজ। ঘটনার আড়ালে ঘটনা। বিড়াল কি জানে খুনের ঘটনা? রহস্যময় ঘটনা। চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বিড়াল। যখন বাড়িতে কেউ নেই। হাশেম এই বাড়ির বদলে যাওয়া ঘটনা জানার চেষ্টা করে যাচ্ছে। রহস্য উন্মচিত হবে কীভাবে? রহস্য উন্মচনের ভীষণ পটু ছিল কাশেম। সেই কাশেম তো বাড়ি নেই। বাড়ি রেখেই পালিয়েছে। রহস্যময় ঘটনাকে আরও রসালো করে গল্প বলায় পটু সে। গল্পের ভেতরে থাকে নতুনের ছাপ। কাশেম মানেই নতুন গল্পের ভান্ডার। একটি বিড়াল দেখলেও এর ভেতরেও খুঁজে ফিরে রহস্য। কাশেম নামের ভেতর এক রহস্য লুকিয়ে আছে। ইতিহাস লুকিয়ে আছে। বাঙালির বীরদর্পনের কথা লুকিয়ে আছে। আমরা হয়তো মনে করতে পারি। খুঁজে বের করতে পারি। কাশেম নামের ভেতর আবার কী রহস্য লুকিয়ে আছে। রহস্য ঘেরা কাশেম। খুব পরিচিত এক নাম কাশেম। কাশেম, কাশেম, রহস্য ঘেরা কাশেম। কাশেম নামের লোকের অভাব নেই বলইে চলে।
একজন কাশেম রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। একজন কাশেম বসে আছে। একজন কাশেম কাজে ব্যস্ত। একজন ক্রেতা, একজন বিক্রেতা কেউ কাউকে চেনেনা।
এটাই কর্মমুখর শহর। একজন কাশেম বলে ডাক দিলে অন্য কাশেম কান খাড়া করে।
এই বলেই হাশেম দাঁড়িয়ে গেল। রহস্যময় বাড়ির বারান্দায় গোলাম আলী কান পেতে শুনছিল। এবার সে বলে ওঠে- কিন্তু রহস্যঘেরা কাশেম এর অভাব আছে বটে।
না, নেই নামের ভেতরে রহস্য! রহস্য আছে গোলাম আলী, রহস্য আছে।
যদি রহস্য থাকে, তবে কী সেই রহস্য?
খুন, হ্যা, সেই খুনের রহস্য আবার আমাকে খুঁজে বের করতে হবে, আমরা
বোকার স্বর্গে বাস করছি, বুঝলে গোলাম আলী!
আসলে কী আমরা বোকা?
হ্যা আমরা বোকা, বোকা না হলে খুনের রহস্য বের করা খুব কঠিন। সেই কঠিন কাজ নিয়ে কেনো ভাবছি?
আসলে কী যারা খুনের রহস্য বের করতে চায় সেই মানুষ বোকা হয়?
নাকি মানুষকে বোকা বানানো হয়?
হা করে তাকিয়ে আছে গোলাম আলী।
নিজেকে চালাক মনে করার ভেতরেও বোকামি আছে, সে কথা আমরা মনে করি কি?
না, করি না। নরম সুরে বলে গোলাম আলী।
এই ধরো, নিজেকে চালাক মনে করে সুমন ও সিজান। ও দুজনকে বোকা বানানোই কাশেমের কাজ ছিল। সে এখন পালিয়েছে। খুনের দায় মাথায় নিয়ে পালিয়েছে।
আর বোকা সেজে কাশেমের কাছ থেকে ঘটনার আড়ালের কথাগুলো জানাই সুমন ও সিজানের কাজ ছিল।
তারাও পালিয়েছে।
তা হলে, কে বোকা?
কে চালাক?
কে খুনি?
জানতে হলে বোকা সাজার বিকল্প নেই।
অল্প জেনে ফটফট না করাই ভালো।
জানতে হলে, থামতে হবে। ভাবতে হবে। খুজে বের করতে হবে প্রকৃত রহস্য। যত কষ্টউ হোক জানতে হলে হাঁটতে হবে। যত দূরেই হোক সেই খবর আনতেই হবে। যে জানে না তাকে জানতেই হবে প্রকৃত ঘটনা। দেখার মত দেখতে হবে। দেখে ভাবনার জগৎ তৈয়ার করতে হবে। যেমন, তুমি একটি পুকুরপাড়ে দাঁড়ালে,
দেখলে ছোট ছোট মাছগুলো লাফালাফি করছে। এই ছোট মাছ দেখেই যদি তুমি চলে আসো, তা হলে এই ছোট মাছগুলো সর্ম্পকেই তোমার জানা হলো কী?
জানা হলো কী পুকুড়ে বড় মাছ আছে কী নাই?
তুমি বলবে, না, জানা হয়নি। জানার জন্য যতোটুকু ধর্য্য থাকা প্রয়োজন তা কী তোমার আছে?
আর যদি তুমি মাথা ঠান্ডা রেখে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়াও, তা হলে এই পুকুরে বড় মাছও থাকতে পারে সে সর্ম্পকেও তুমি জানতে পারবে, যদি তুমি জানতে চাও। তুমি যা জানতে চাও তাই জানতে পারবে। তোমার ইচ্ছে শক্তি তোমাকে নিয়ে যাবে তোমার ইচ্ছের কাছে।
তা বুঝলাম। কিন্তু খুনের রহস্য জানা হলো না।
জানার গভীরতা বাড়াও। না, হলে খুনের রহস্য মনের গহীণে হারিয়ে যাবে।
যেমন, নিরব হয়ে পর্যবেক্ষণ করলেই তুমি দেখতে পারবে বড় মাছ। বড় মাছ যেমন, গভীর জলে থাকে, তাই তাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।সেই রকম খুনের রহস্য খুজে বের করা খুব কঠিন। সেই কাজটি করে যাচ্ছে দুজন মানুষ। ওরা মাছ দেখছে। গভীর জলের মাছ।
কাশেম মনে করতো জোছনা রাতে ঝিলেরপাড়ে বসে গল্প করার মজাই আলাদা।
আর এই গল্পময় মুহুর্তে সঙ্গী হিসেবে যদি থাকে সিজানের মতো বন্ধু, তা হলে তো কথাই নেই।
সুমন, সিজান, কাশেম ওরা তিনজন সুজন বন্ধু ছিল। এ কথা হাশেম জানতে পেড়েছে অনেক পরে।
প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মিশে যেতে কাশেম বাড়ি থেকে বের হতো। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গুটি পায়ে হাঁটতো। বাড়ির সীমানা তখনো ছাড়েনি। জোছনামাখা রাতে গল্পের আসর বসতো ঝিলপাড়ে। এই আসরে খুনের কোনো আলাপচারিতা হতো না। জানা এবং মজার কথায় ভরপুর থাকতো।
চিরচেনা আম গাছটি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাতাগুলো মেলে দিয়েছে আপন মনে। সবুজ রঙে রঙিন। গাছ আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছে। বোবা গাছ। কথা বলতে পারে না। গাছের পাতার ঝনঝনি শব্দ শুনতে পায় কাশেম। নিরব দর্শকের মতো এখানেই খানিকটা দাঁড়িয়ে রইল কাশেম। হাতে টর্চলাইট। টর্চলাইট জ্বালানো প্রয়োজন পড়ছে না। গোধুলি রঙের আকাশ। অন্ধকার নেমে আসা আকাশ। কিছুক্ষণ পর জোছনা আসবে মনে হতে লাগল কাশেমের কাছে। তাই বাড়ি থেকে বের হলো। একটু এগুতেই গাছের ডালের পাতা নড়াচড়ার শব্দ হতে লাগলো। এডাল ওডাল নড়াচড়া শব্দ বেরেই চলছে। পাখিদের ভেতরে গোন্ডগোল লেগে গেছে। সেদিকে খেয়াল নেই। রাতের বেলা পাখিদের সঙ্গে মারামারি! কাকের কা কা শব্দ! কাকের কা কা শব্দের ভেতর হারিয়ে গেল হাশেম। এমন কান্ড রাতের বেলা এর অগে ঘটেনি। এখন কেনো ঘটছে এমন ঘটনা!
এ কথা ভাবতেই পারে না হাশেম। হঠাৎ নিরব হয়ে গেল। কীকরে উড়ে গেল পাখি। সেদিকে খেয়াল নেই হাশেমের চোখ আটকে গেছে ঝন্টুদের ঘরের দিকে। ঝন্টুদের বাড়িতে কেউ থাকে না। শহরমুখী মানুষ। বাড়ির সবাই শহরেই থাকে। মাঝে মধ্যে বাড়ি আসে ঝন্টু। এই বাড়ি ঝন্টুদের ছিল না।
এখন ঝন্টুদের। এই বাড়ি নাকি কাশেম মুন্সির ছিল। এই বাড়ির মালিক কখন আসে, কখন যায় তা কেউ খেয়াল রাখে না। গতকাল রাতে বাতি জ্বলজজ্বল করে জ্বলছে। বাড়ির মূল ফটক বন্ধ ছিল। হাশেম খেয়াল করে দেখলো বাঘাচোখের একটি বিড়াল। দুটো চোখ থেকে আগুন বের হয়ে আসছে। সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে ঝন্টুদের বাড়ি। চোখের পলক ফেলতেই আগুন নিভে গেলে। বিড়লটি কেউ দেখতে পেলনা। অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে লাগলো। এই বাড়িটি যেনো রহস্য ঘেরা বাড়িতে পরিণত হয়েছে। একটি না একটি ওলটপালট ঘটনা হাশেমের চোখে পড়ে। কাশেম মুন্সি নামের কাশেম। কিন্তু সে মুন্সি নয়। কাদামাটির সহজ সরল মানুষ। বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। হারিয়ে
গেছে। কোথায় হারিয়ে গেছে?
খুন! খুনের আড়ালেই যতো ঘটনা। ঝন্টুদের বাড়ির ফটক তার চোখ এরায় না।
রহস্য যেনো উঁকিঝুকি দিতেই থাকে।
হাশেম দেখছে আর নতুন কিছু ভাবছে। প্রতিদিনে ঘটনা যেনো এক একটি গল্পে রুপান্তরিত হতে লাগলো। শ্রোতা হিসেবে পেয়ে গেছে গোলাম আলীকে। আজকে এই ঘটনাকে আরও রঙচং মেখে উপস্থাপন করাই হাশেমের কাজ। ঝিলপাড়ের দিকে হেঁটে চলছে। ধবধবে জোছনা পথ দেখাতে লাগলো। কাঁঠাল বাগের কাছে এসেই আন্ধার আন্ধার মনে হতে লাগলো। সড়সড় করে কাঁঠাল পাতা পড়তে লাগলো। হাশেম বুঝতে পাড়ে এগুলো কাঁঠাল পাতা পড়ার শব্দ। এদিকে কোন খেয়াল নেই। যেতে হবে ঝিলপাড় সেখানেই বসে আছে গল্পের কান্ডারি। গোলাম আলী তাকিয়ে আছে হাশেমের দিকে। কানপেতে আছে, কাশেম নামের রহস্য খুঁজতে। রহস্যর ভেতরে রহস্য। বিড়াল রহস্য। একটি খুনের রহস্য।
খুনের ভেতরেই চলমান, নাম বদলের খেলা।
এই গল্পটা যতো পড়ছি ততোই রহস্যময় মনে হচ্ছে,,
পরবর্তী পর্ব গুলো তাড়াতাড়ি দিবেন আশা করি।
গল্পটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো কেনো? আর কোনো পর্ব কেনো আসছে না? এতো দেড়ি করে দিলে তো আমরা আশাহত হচ্ছি। তাই যত দ্রুত পারেন উপন্যাসটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করুন।