মুক্তিযুদ্ধের শিশুতোষ গল্প।। দিনার স্বাধীনতা।। এনাম আনন্দ

‌ছােট্ট মেয়ে দিনা ইশকুল থেকে বাসায় ফিরে বারবার মা‌’কে জিজ্ঞেস কর‌তে লাগ‌লাে -মা, বাবা কখন অ‌ফিস থেকে ফিরবে? মা বল‌লেন- সন্ধ্যার পর ‌তােমার বাবা বাসায় ফিরবে। দিনা আবার প্রশ্ন কর‌লাে আচ্ছা মা, কখন সন্ধ্যা হ‌বে? এবার জান্নাত বীথি মা‌নে দিনার মা একটু রেগে গিয়ে বললেন, যখন সন্ধ্যা‌ হওয়ার তখনই হ‌বে। পড়াশােনা নেই শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন? যাও খাওয়া- দাওয়া ক‌রে ঘুমাও। দিনা মন খারাপ ক‌রে ঘু‌মিয়ে পড়ে। দিনার মা সংসা‌রের কাজকর্ম সেরে হঠাৎ নিজেকে প্রশ্ন কর‌ল – দিনা বারবার বাবার কথা ‌কেন জিজ্ঞেস কর‌লাে? যাক ওতো সারাদিনই বকবক ক‌রে এই ব‌লে দিনার মা অন্য এক‌টি কাজে ম‌নাে‌যােগ দেয়। সন্ধ্যার পর ক‌লিং বেলের শ‌ব্দে দিনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মা, বাবা আস‌ছে? মা উত্তর দেয়- হ্যাঁ,নন্দ দুলালীর বাবা আস‌ছে। দিনা খাট থেকে নেমে হাউ মাউ শ‌ব্দে কান্না ক‌রে বাবাকে জ‌ড়িয়ে ধরে। দিনার বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে – কি হ‌য়েছে মা? দিনা ‌বলল মা বকা দিয়েছে। ও আচ্ছা, মা’‌র বকায় খুব মন খারাপ হয়েছে? বাবা দিনার চাে‌খের পা‌নি মু‌ছে দিয়ে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ আদর কর‌লাে। দিনাও বাবার আদরে সব কষ্ট ভুলে গেলো এবং বলল বাবা তােমার সা‌থে অ‌নেক কথা আ‌ছে। বাবা বললেন – বল মা। দিনা বলল- আ‌গে ফ্রেশ হ‌য়ে আসাে তারপর বল‌ছি। বাবা ফ্রেশ হ‌য়ে এ‌সে দিনাকে জিজ্ঞেস কর‌লাে, কি কথা তোমার ব‌লাে ত মা? দিনা বলল, বাবা ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা‌ দিবস উপলক্ষে ইশকুল বন্ধ। মিস ব‌লেছে এই দিনে ভাল কাজ করার জন্য। আচ্ছা বাবা স্বাধীনতা দিবস কি? আমরা কেন এই দিবস পালন করব? ও আচ্ছা এই কথা। তাহ‌লে শোন মা, সে এক লম্বা ইতিহাস। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কাল রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরহ জনগণের উপর অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ঘেরাও করে অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবিুর রহমানকে গ্রেফতার করার জন্য। দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে মানে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে (আনুমানি সময় রাত ১২. ২০ মনিটে) বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। এই ঘোষণাপত্র যাতে সবার কাছে পৌছায় এজন্য বার্তাটি তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ওয়্যারলেসযোগে প্রেরণ করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি ছিল ইংরেজিতে যেন সারা বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে। বার্তাটির বাংলা হলো-” ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছো, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।”পরবর্তীতে চট্টগ্রামের ‘কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র’ এবং ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এম.এ হান্নান, মেজর জিয়াসহ আরো অনেকেই এই ঘোষণাপত্র প্রচার করে। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণ,
আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সালের ২২ শে জানুয়ারি সরকারি এক আদেশে এই দিনটিকে অর্থাৎ (২৬ শে মার্চকে) জাতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা করা হয়। সরকারি ভাবে এই দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
যাঁরা এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছে আমরা তাঁ‌দের স্মরণ ক‌রে শ্রদ্ধা জানাই,পতাকা উত্তোলন ক‌রি, জাতীয় সঙ্গীত গাই, দেশাত্মবোধক গান গাই এবং বভিন্নি অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। দিনা বলল এখন বুঝ‌তে পারছি বাবা স্বাধীনতা দিবস কি এবং ‌কেন তা পালন করা হয়। এবার বাবা দিনাকে জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা দিনা মা, তু‌মি এই দিনে কি ভাল কাজ কর‌তে চাও? দিনা বলল – বাবা তােমা‌কে এখন বলব না সকা‌লে বলব। দিনা রা‌তের বেলা বড় এক‌টি কাগ‌জে বাংলা‌দেশের লাল সবু‌জের পতাকা এঁকে এক‌টি বাঁশের খু‌টির মধ্যে সুন্দর ভা‌বে আঠা ‌দিয়ে লাগায়। সকাল বেলা বাবা মা‌কে ডেকে নিয়ে বা‌ড়ির এক‌টি কাে‌ণে পতাকা‌টি উত্তোলন ক‌রে, জাতীয় সঙ্গীত গায় এবং বীর শহদিদের প্রতি সম্মান প্রর্দশন ক‌রে এরপর দিনা বাবা- মাকে সাথে নিয়ে বা‌ড়ির চারপা‌শে ক‌য়েকটি গাছের চারা রােপন ক‌রে। দিনার কা‌জে খু‌শি হয়ে বাব, মা দিনাকে অনেক আদর ক‌র‌লেন এবং এক‌টি রঙ প‌েন্স‌িলের বক্স উপহার দিলেন। উপহার পেয়ে দিনা অ‌নকে খু‌শি হ‌লাে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *