শিশুতোষগল্প- ফড়িং প্রজাপতি ও হাতির গল্প- মালেক মাহমুদ

একটি ফড়িং।
দুইটি ফড়িং।
তিনটি ফড়িং।
একটি প্রজাপতি। উড়ছে আর উড়ছে। শব্দ হচ্ছে,
ফরফর ফরফর ফরফর ফরফর ফরফর ফরফর….
ফড়িংয়ের ওড়াউড়ির শব্দে ঘুম ভাঙে হাতির।
মাঝরাত পর্যন্ত চাঁদ দেখে সময় পার করছে হাতি,
সকালবেলা একটু আরাম করে ঘুমাবে তাও পারছে না।
হাতি বলে, কে রে আমার ঘুম ভেঙে দিলি?
দেখতে পায়, কাছেই প্রজাপতি উড়ছে। কিন্তু তার
ডানায় কোনো শব্দ নেই। তবু হাতি, ফরফর ফরফর
ফরফর ফরফর, শব্দ শুনতেই সে। কিন্তু দেখতে পায় না
ফরফর শব্দের ডানার ফড়িংকে।
কি করে দেখবে হাতির চোখ ভীষণ ছোটো।
সাত রঙে রাঙা প্রজাপতি। প্রজাপতিতো নয়, যেন
রঙের বাহার। রঙিন প্রজাপতি দেখতেই, হাতির মন
ভালো হয়ে যায়। ভুলে যায় ফরফর শব্দ।
প্রজাপতি উড়ছে। হাতি, নাচের তালে প্রজাপতি গুনছে-
একটি প্রজাপতি।
দুইটি প্রজাপতি।
তিনটি প্রজাপতি।
না, আর প্রজাপতি দেখছে না। হাতি নাচ থামিয়ে হাঁটতে
লাগলো। খুঁজতে লাগল প্রজাপতি। হাতির কাছে
প্রজাপতি দেখার মজাই অন্যরকম।
হাতি, আবার ফরফর শব্দ শুনতে পেলো। এবার শব্দ
যেনো, আরো অনেক বেশি। কানের কাছে একটু পরে
পরে শব্দ আসে, ফরফর, ফরফর, ফরফর, ফরফর।
হাতি গোনে চার পাঁচ চার পাঁচ। ছয় সাত ছয় সাত।
কতক্ষণ ভালো লাগে এরকম ফরফর ফরফর।
হাতি, বিরক্ত হয়ে যায়। আট নয় বলেই হাতি আবার
রেগে যায়। খোঁজতে লাগল কে ফরফর করছে।
দৌড়াতে লাগলো হাতি। এদিকে যায় ওদিকে যায়।
দশ এগার বার দৌড়াদৌড়ির পর আবার থামলো।
এবার দেখতে পেল প্রজাপতি আপন মনে ডানা
মেলে উড়ে যায়।প্রজাপতির যে রঙের বাহার তাই
অতি সহজেই দেখতে পায়।
হাতি ভাবলো এবার আর প্রজাপতি গুনে কাজ নেই,
এবার প্রজাপতির কাছে জানতে চাই, কে ফরফর শব্দ
করে আমার ঘুম ভেঙে দিল? হাতি, প্রজাপতি বলে
ডাক দিতেই প্রজাপতি এসে হাতির শুড়ের ওপর বসলো।
হা হা করে হাসি দিল। যেনো হাতির মন আনন্দে ভরে
যায়। মন ভরে গেল হাতির।
হাতি বলে, তোকে দেখে আমার মন ভালো হয়ে যায়।
কিন্তু,
কিন্তু কী হাতি ভাই।
তোকে বলে কী আর আমার লাভ হবে?
লাভ হবে কি না জানি না। তবে, ক্ষতি হবে না এটা
আমি হলক করে বলতে পারি।
তবে শোনো, ফরফর শব্দ করে কে আমার ঘুম
ভাঙিয়ে দিল, তুই কি বলতে পারিস?
আমি কী করে বলবো, আমি যখন উড়ি, তখন ফরফর
শব্দই কী হয়? হয় না।
তা তো আমি জানি।
কিন্তু আমি তো তোকেই দেখছি, তাই তোকেই বলছি।
আমি বলি কি দাদাভাই তোমার চোখের চিকিৎসা করা দরকার।
কি বলিস প্রজাপতি? কি বলিস তুই? আমি কী চোখে কম দেখি!
তোমার বয়স বেরেছে দাদাভাই।
তুই আমাকে দাদাভাই বলিস, শুনতে ভালোই লাগে।
কিন্তু আমার চোখ নিয়ে এ তুই কী বলছিস?
আমি ঠিকই বলেছি।
আমার কাছে মনে হয় তুই আমার সাথে মস্করা করছিস!
কি যে বলেন দাদাভাই, আপনে হলেন গিয়ে বুড্ডা দাদাভাই।
আপনার সাথে আমি মস্করা করতে পারি।
কি রে আমি বুড্ডা হইছি !
না, দাদাভাই আপনার চোখের জন্য ডাক্তার দেখান।
ঠিক আছে দেখাব, ভালো ডাক্তার পাবো কই?
তা হলে শিকার করলেন, আপনার চোখে অসুখ হয়েছে?
না করে উপায় কী! দেখছি নাতো। তুই একজন ডাক্তার এনে দে।
প্রজাপতি বলে তা হলে আমি যাই, ডাক্তারের খোঁজে।
যা-ও।
প্রজাপতি উড়ে গেল। দূরে গেল। খুঁজতে লাগলো ডাক্তার।
কোথায় পাবে ডাক্তার? দেখা হলো একটি ছাগলের সঙ্গে।
ছাগলের কাছে সব খুলে বললো। ছাগল, কান পেতে শুনে বলছে,
আমিতো কিছু বলতে পারবো না। প্রজাপতি উড়ে গেল। দূরে গেল।
খুঁজে পেলো একটি বলদ। বলদের কাছে সব খুলে বললো। বলদ,
কান পেতে শুনে বলে, আমিতো কিছু বলতে পারবো না।
প্রজাপতি উড়ে ঘুরে। দূরে গেল। দেখা মিললো শেয়ারের।
প্রজাপতির মন হেসে উঠলো। প্রজাপতি জানে শেয়ালতো
পন্ডিত মশায়, তার কাছেই মিলবে আমার সমাধান।
শেয়ালের কাছে সব ঘটনা খুলে বললো। শেয়াল মশায় কান
পেতে শুনে বলে, এ কোন বিষয় হলো, আমিই পারি হাতির
কানের চিকিৎসা করতে। তুমি যাও আমার কথা বল গিয়ে।
প্রজাপতি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। উড়ে চলে এলো হাতির কাছে।
হাতির কাছে বললো, বুড়ো শেয়ালে চোখের চিকিৎসা ভালো জানে।
হাতি কোন বাকযুদ্ধে না জড়িয়ে, সহজেই বলে দিল।
ঠিক আছে, তা হলে তাকেই নিয়ে আয়।
কথা মতো বুড়ো শেয়াল যেতে ছিল পাশ দিয়ে, তাকে ডাক দিল প্রজাপতি।
প্রজাপতির ডাকে সাড়া দিল বুড়ো শেয়াল।কাছে চলে এলো।
শেয়াল মশায়, হাতির কানে অসুখ হয়েছে। কি অসুখ হয়েছে?
হাতি, ফরফর, ফরফর শব্দ শুনে। যার কারণে সে, ফরফর শব্দ শুনে
তাকে সে দেখতে পায় না। তাই, তাকে দেখার জন্য চোখের চিকিৎসা
করাবে হাতি। আমিতো কানের ডাক্তার। চোখের চিকিৎসা কি করে করবো!
তাও বুঝতে পারো না, তোমাকে আবার সবাই পন্ডিত বলে ডাকে।
এতো সহজ চিকিৎসা করতে পারবে না।
তুমি কি করে বুঝলে,
এ চিকিৎসা এতো সহজ? প্রজাপতি শেয়ালকে বুঝিয়ে দিল।
শেয়াল হাতির কাছে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিল।
কিছুক্ষণ পর প্রজাপতি বললো, ডাক্তার আপনার বেবহারের জন্য দু’টি
সোলা দিয়েছে, যখন আপনি ঘুমাবেন তখন এই সোলা কানে দিয়ে ঘুমাবেন।
যখন ঘুম থেকে জাগবেন তখন খুলে রাখবেন। তার ঔষধে হাতির ঘুম
ভালো হলো। হাতি কিছুই শুনতে পেলনা। ফড়িং ফরফর ফরফর করে
উড়তে লাগল। প্রজাপতি বসে থাকে হাতির শুড়ের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *