ঈদসংখ্যার ছড়া।। মোস্তাফিজুল হক

ঈদের খুশি

ঈদ মানে তো চাঁদের হাসি
মনরাঙানো খুশি,
ভেদ ভোলানো এই খুশিকে
উচ্ছ্বাসে তাই পুষি।

সবার হাতে চাঁদ আঁকানো
সবার নতুন জামা,
কোলাকুলি হাত মেলানো
খুশির পথে নামা।

বুকের পাশে টেনে নিয়ে
ভেদ ভুলে যাই শেষে,
গরিবদুখী টেনে এনে
একসাথে খাই হেসে।

কিন্তু এবার করোনাটা
খুব দিয়েছে আড়ি,
এবার ঈদে এসব মানে
অধিক বাড়াবাড়ি।

তারচে’ বরং ঈদের বাজেট
বিলিয়ে দিই আগে,
এবার নাহয় ঈদের খুশি
এইভাবে নিই ভাগে।

ঈদের খুশি বান ডেকেছে

বাঁকা চাঁদের চিকন হাসি
ঈদ এনেছে ডেকে,
কণ্ঠে খুশির সুর জেগেছে
ছোট্ট হৃদয় থেকে।

কেউ আমাকে মই এনে দে,
চাঁদটাকে আজ ধরি!
পূণ্যেভরা রোজার শেষে
আনন্দ ভাগ করি!

ঘর গোছাবো সবাই মিলে
ঘুম ভুলে আজ রাতে,
লাল-মেহেদির পাতা বেটে
ফুল আঁকাবো হাতে।

ক্ষীর-লুচি আর পায়েস খাব
একসাথে সব মিলে,
শত্রু এলেও বুকে টেনে
সুখ পাবো খুব দিলে।

ভরবে পকেট সেলামিতে
চকচকে সব নোটে,
ঈদের খুশি বান ডেকেছে,
আজকে সবার ঠোঁটে।

ঈদ ভাবনা

আপু পেল ছয়টা জামা
আমার হলো সাত,
এসব ভেবে ঘুম আসে না
হলো অনেক রাত।

আমার মতোই বয়স পরির
সে আমাদের দাসী,
দু’শো টাকার একটা জামায়
ফুলের মতো হাসি!

আমিই যদি হতাম পরি
এই আমাদের ঘরে,
বাবা, তুমি একটা জামা
কিনতে কেমন করে?

ঈদের দিনে মা তুমি কি
মারতে কি চড় গালে?
আপু, তুমি টানতে কি চুল
সামান্য ভুলভালে?

আপুই যদি পরি হতো
কেমন হতো তবে?
মামণি কি ডাকতে তখন
মধুর কলরবে?

ঈদ কি তবে ধনীর শুধু
ভাবছি আপন মনে,
বাবা, তুমি এসব কথা
ভাবতে কিশোর ক্ষণে?

বিলাসিতা এই ঈদে নয়

খুকি ঈদে চায় না জামা
চায় না রঙিন চুড়ি,
খোকাবাবু পণ করেছে
কিনবে না সে ঘুড়ি।

ঈদের জামা কিনতে যত
খরচ হতো টাকা,
এসব টাকা তাদের দেবে
হাতটা যাদের ফাঁকা।

বলছে খুকি উপোস মুখে
খাবার দিয়ে হাসি,
বিলাসিতা এই ঈদে নয়
পরকে ভালোবাসি।

ঈদ মানে সম্প্রীতি

ঈদ মানে তো সবাই জানি
মনরাঙানো খুশি,
হিংসা-বিভেদ ভুলে যাব
অন্তরে ভাব পুষি।

বুক মেলাতে হাত বাড়াব
ভেদ তাড়াব হেসে,
দুঃস্থ-দুখী আনব ডেকে
থাকব না একপেশে।

কার সাথে খুব ছিল আড়ি
তার বাড়ি যাই আগে,
ঈদ হলো সেই ফুলের কলি
খুশবুটা পাই ভাগে।

ছোট্ট হাতে চাঁদ আঁকানো
নেই শাসনের ভীতি,
সবার সাথে হাত মেলানো
ঈদ মানে সম্প্রীতি।

ঈদানন্দ

মেঘ পাাঠাল বরফ গলা ঝরনাধারার চিঠি এঁকে,
অঝর বেগে বৃষ্টি নামে ঝুমঝুমিয়ে আকাশ থেকে।
বৃষ্টি ছিটায় ধুয়েমুছে শুদ্ধ হলো গাছের পাতা,
বনের পাখি খুলল যেন নতুন করে গানের খাতা।

গাইছে পাখি পাতার ফাঁকে স্নিগ্ধমধুর দিনের সুখে,
দুচোখ মেলে দেখছে তা কেউ কী অপূর্ব হাসিমুখে!
হয়তো মধুর আবেগ থেকে মনবাগানে কেয়া ফোটে,
মনময়ূরী পেখম মেলে সেই আনন্দে নেচে ওঠে।

সাতটি রঙের পালক দেখে
হয়তো এ-ও ভাবতে শেখে
স্বর্গ ছেড়ে আজকে কেন বৃষ্টি ভূতের পালক মেলে!
বর্ণচোরা আবহাওয়ায় ঈদানন্দ কেউ কি পেলে?

এসব কিছু ভাবতে গিয়ে মুখ কিছুটা মলিন হলো,
হয়তো ঈদের নামাজ শেষে চোখ তখনই ঢলঢল।
ক্লান্ত দুপুর শান্তমতি আনন্দময় ঘুমের শেষে,
ফটিকজলের মধুর সুরে ঘুম ভাঙাবে বিকেল এসে।

কালবোশেখি এমন দিনের হয় কখনো তুলনা কি?
যার দুচোখে দেয় না ধরা, তার দুচোখের মূল্যটা কী?

One thought on “ঈদসংখ্যার ছড়া।। মোস্তাফিজুল হক

  • এপ্রিল ১৫, ২০২৩ at ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
    Permalink

    আপু পেল ছয়টা জামা

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *