প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসকের জন্মদিন আজ

জোহরা বেগম কাজী। যিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক। তিনি ‘ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল অব ঢাকা’ নামেও পরিচিত ছিলেন।উপমহাদেশে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যায় একজন কিংবদন্তীতুল্য চিকিৎসক ছিলেন জোহরা বেগম। এই মহীয়সী চিকিৎসকের জন্মদিন।

তিনি ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পিতার ছিলেন ডাক্তার কাজী আব্দুস সাত্তার ও মা মোসাম্মদ আঞ্জুমান নেসা। তার আদি ছিলো পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার গোপালপুর গ্রামে। তিনি ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম আলিগড়িয়ান হিসাবে এসএসসি পাশ করেন। মাত্র তেইশ বছর বয়সে তিনি দিল্লীর ‘লেডি হাডিং মেডিক্যাল কলেজ’ থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমবিবিএস পাস করেন এবং এজন্য পুরস্কার হিসেবে পান ভাইসরয় পদক।

জোহরা বেগম কাজী কর্মজীবনে প্রবেশ করেন
১৯৩৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করার পর। তিনি প্রথমে ইয়োথমাল ওয়েমেন্স(পাবলিক) হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগদেন৷ এরপর বিলাসপুর সরকারি হসপিটালে যোগ দেন৷ পরবর্তীকালে মানুষের সেবার জন্য মহাত্মা গান্ধী নির্মাণ করেন সেবাগ্রাম৷ এই সেবাগ্রামে অবৈতনিকভাবে কাজ করেন জোহরা বেগম কাজী৷

এছাড়াও তিনি ভারতের বিভিন্ন বেসরকারী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন৷ ১৯৪৮ সালে জোহরা বেগম কাজী ঢাকা মেডিকেল কলেজ  এবং হাসপাতালে যোগদান করেন৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অনারারি কর্ণেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷ মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি গাইনোকোলজি বিভাগের প্রধান ও অনারারি প্রফেসর ছিলেন৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অনারারি কর্নেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেবার পর বেশকিছু বছর হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসাবে চিকিৎ‍সা সেবা প্রদান করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেলে অনারারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন৷

ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্ব পালন করার সময় নারী রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কুসংস্কার তাকে আহত করে। তিনি তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের ভুল ধারণা দূর করতেন। তার কারণে পরবর্তীতে চিকিৎসা শাস্ত্রে এদেশে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসার কর্মদক্ষতার তিনি পুরস্কার হিসেবে তামঘা-ই-পাকিস্তান, বেগম রোকেয়া পদক এবং একুশে পদক পেয়েছিলেন।

গুগল জোহরা বেগম কাজীর জন্মদিনে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডুডল করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *