কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্মদিনে প্রাণের প্রণতি।। ফারুক সুমন

প্রখ্যাত কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। শিল্পসাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর সদর্প বিচরণ। দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চা করে বাংলা সাহিত্যের শিল্পভুবনে আলো ছাড়িয়ে এসেছেন।

তিনি বিখ্যাত উপন্যাস ‘নভেরা’র লেখক। শিল্পসন্ধানের তাত্ত্বিক গ্রন্থ ‘শিল্পকলার নান্দনিকতা’ ও ‘সবার জন্য নন্দনতত্ত্ব’ নামক বইয়ের লেখক। এছাড়া কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী তো আছেই। তাঁর লেখা উপন্যাস ‘সুলতান’ ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।

গত বছর ঈদের ছুটিতে ব্যাপক আড্ডাবাজি এবং হৈহুল্লোড়ের ভেতরে থেকেও পড়ে ফেলেছি বেশকিছু বই। তন্মধ্যে ‘সমকাল ঈদসংখ্যা’য় পড়েছি হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘হেমিংওয়ের সঙ্গে’। বইটি পড়ে আপ্লুত হয়েছি।

আপ্লুত হওয়ার কারণ, প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এবং তাঁর পত্নী কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হকের প্রণয়কাহিনি উপন্যাসের মূল আখ্যান। দু’জন সৃজনশীল লেখকের প্রেম ও পরিণয়ের আপাত ইঙ্গিতবাহী এই উপন্যাস। গল্প বয়ানের পাশাপাশি উপন্যাসে উঠে এসেছে সমকালীন বাংলা শিল্পসাহিত্যের নানা অধ্যায় এবং অন্তরালের গল্প।

উপন্যাসের শুরু সৈয়দ শামসুল হক এবং আনোয়ারা সৈয়দ হকের প্রেমের উন্মেষপর্ব দিয়ে। আনোয়ারা সৈয়দ হক তখন ঢাকার একটি নামকরা কলেজে পড়ছেন। তিনি কেন কলেজের হ্যান্ডসাম ছাত্রদের বাদ দিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের সাথে ঘোরাফেরা করেন? এটা কলেজের ছাত্ররা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা সৈয়দ হকের ওপর হামলা করবে এরকম পরিকল্পনা করে। এমন সংবাদ আনোয়ারার কানে আসে। দুশ্চিন্তায় পড়ে আনোয়ারা এখন থেকে লুকিয়ে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সৈয়দ হক ভীরু নন। তিনি সাহসের সাথে কলেজগেটে ওঁৎ পেতে থাকা ঈর্ষাকাতর ছাত্রদের পরাস্ত করেছেন। সেটা জানতে হলে আমাদের উপন্যাসটি পড়া প্রয়োজন।

উপন্যাসে সৈয়দ শামসুল হকের নাম ‘হেমিংওয়ে’। লোহানী তাঁকে এই নামে ডাকতেন। ঔপন্যাসিক হাসনাত আবদুল হাই তাঁর উপন্যাসে ‘হেমিংওয়ের সঙ্গে’ নামটি ব্যবহার করেছেন।

ভাষা-আন্দোলনের অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয় হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ সংকলন গ্রন্থ। উপন্যাসে ব্যক্তিগত একান্ত কথামালা প্রকাশের সমান্তরালে উঠে এসেছে পরস্পরের গমনাগমনের নানা পথ, নানা স্মৃতিবহ স্থাপনা, আড্ডাস্থল। এসবই এসেছে কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই-এর সুনিপুণ উপন্যাসের কথাযাদুস্পর্শে।

তথ্যমতে, হাসনাত আবদুল হাই ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ওয়াশিংটন, লন্ডন ও কেমব্রিজে লেখাপড়া শেষে অধ্যাপনা দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন

তারপর সিভিল সার্ভিস থেকে সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রকাশিত গল্প গ্রন্থের সংখ্যা ৪টি। উপন্যাস লিখেছেন প্রায় ২৫টি।

ভ্রমণ কাহিনী ৭টি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ দুইটি।

হাসনাত আব্দুল হাই মূলত ঔপন্যাসিক ও ভ্রমণ কাহিনীকার হিসাবে অধিক সমাদৃত হয়েছেন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ পুরস্কারও লাভ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:

সুপ্রভাত ভালোবাসা (১৯৭৭), আমার আততায়ী (১৯৮০), তিমি (১৯৮১), মহাপুরুষ (১৯৮২), যুবরাজ (১৯৮৫), প্রভু (১৯৮৬), সুলতান (১৯৯১), সময় (১৯৯১), একজন আরজ আলী (১৯৯৫), নভেরা (১৯৯৫), সিকস্তি (১৯৯৭), এবং লড়াকু পটুয়া (২০১০) ইত্যাদি।

ইতোমধ্যে করোনাকালীন দুঃসময়ে দেশের প্রবীণ শিক্ষক, কবি, কথাশিল্পী, বুদ্ধিজীবী অনেককেই আমরা হারিয়েছি। প্রার্থনা করি, তিনি শতায়ু হোন। শিল্পমুখর থাকুন। জন্মদিনে তাঁকে জানাই প্রাণের প্রণতি।

One thought on “কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্মদিনে প্রাণের প্রণতি।। ফারুক সুমন

  • মে ১৭, ২০২০ at ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    একজন অসাধারণ প‌ণ্ডিৎ সৌম‌্যজন অহংকারহীন ব‌্যক্তিত্ব । জন্ম‌দি‌নে অপার শুভ কামনা ও শতায়ু কামনা।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *