‘শক্তিমান লেখক হতে হলে আগে সামর্থ্যবান পাঠক হতে হয়’- আবেদীন জনী

শিশুসাহিত্য জগতে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের নাম আবেদীন জনী। জন্ম ৭ জানুয়ারি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার উত্তর পেকুয়া গ্রামে। বাবার নাম শুকুর মামুদ। মায়ের নাম মতিজান। পেশা অধ্যাপনা। মিজাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল। আবেদীন জনী মূলত নেতিবাচক শব্দ এড়িয়ে নিরীক্ষামূলক সাহিত্য রচনায় মনোযোগী। তিনি শিশুকিশোরদের আলোকিত জীবন গঠনে এবং সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখার মতোই উচ্চমানের লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় গ্রন্থ: ‘ছড়ার মেলা রঙের খেলা’, ‘রায়ানের ঘুড়ি ও বানরবন্ধু’, ‘মায়ের গল্প’, ‘শিয়ালপরি’, ‘ছন্দে ছড়ায় নীতিকথা’, ‘মিঠেকড়া একশ ছড়া’, ‘ছড়ার বাড়ি ছন্দপুর’, ‘সুখের ফেরিওয়ালা’, ‘পাতা মা, ফুলবুবু এবং টুই’, ‘রাজকন্যা ও গাছকন্যা’,’ বঙ্গবন্ধুর ছড়া আলো দিয়ে গড়া’ ইত্যাদি। তিনি একজন দক্ষ কবিও বটে। তাঁর কবিতাগুলো মৃত্তিকাসংলগ্ন হৃদয়জ উপাদানসমৃদ্ধ। কবিতায় বহুমাত্রিক শিল্পভাবনার মিশেলে তিনি মুগ্ধতার এক ঘোর সৃষ্টি করে চলেছেন। নিসর্গ, জীবন কিংবা পারিপার্শ্বিক উৎস থেকে শব্দ কুড়িয়ে তিনি রচনা করেন স্বাতন্ত্র্য শব্দজগৎ। শব্দ-ছন্দ-রূপক-উপমার প্রায়োগিক কলাকৌশল, অনুসঙ্গ, চিত্রকল্প ও প্রকাশপ্রকরণের সবদিক বিশ্লেষণ করলে তাঁর কবিতায় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে নতুন বাঁক। আসুন আমরা এই সচেতন লেখকের লেখালেখি ও লেখকের ভালোলাগা এবং একজন লেখক হতে হলে কোন কোন বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়, তা তাঁর থেকে জেনে নিই। তাঁর সাথে কথা বলেছেন শিশুসাহিত্যিক মোস্তাফিজুল হক।

কাব্যশীলন: কাব্যশীলন ওয়েবম্যাগের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও স্বাগত জানাচ্ছি।

আবেদীন জনী: কাব্যশীলন কেউ  ও অজস্র শুভেচ্ছা।

কাব্যশীলন: আপনার লেখালেখি শুরুর ইতিহাস এবং প্রথম লেখা প্রকাশের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

আবেদীন জনী: আমার লেখালিখি শুরু ইশকুল জীবনে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। সেসময় আমি নিজ ইউনিয়নে অবস্থিত বাঁশতৈল এম এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। একই ইশকুলে, সম্ভবত আমার দুবছরের সিনিয়র ছাত্র ছিলেন কবি মাহমুদ নজীর। তখন তাঁর কবিতা ঢাকার পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। ছাপা হওয়ার আনন্দটা তিনি প্রায়ই আমার কাছে প্রকাশ করতেন। আমাকেও পত্রিকায় কবিতা পাঠাতে উৎসাহ দিতেন। একসময় আমিও কবিতা পাঠাতে শুরু করি। প্রকাশ হতে থাকে স্থানীয় এবং ঢাকার জাতীয় পত্রিকাগুলোতে। এস এস সি’র পর থেকে প্রচুর লেখা ছাপা হতে থাকে। তখন সপ্তাহে দু-তিনটা লেখা ছাপা না হলে ভাল লাগত না। সেই নেশাটা এখনো রয়ে গেছে। এখনো একটা লেখা ছাপা হলে যতটা আনন্দ পাই, ততটা অন্য কিছুতে পাই না। তবে আমার প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল আমাদের পাশের উপজেলা সখীপুর থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক ইন্তেখাব’ পত্রিকায়। সেটি ছিল কবিতা- ‘একটি রৌদ্র প্রখর দুপুর’। প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার আনন্দ অপার। সেকথা লিখে বোঝানো যায় না।

কাব্যশীলন: লেখালেখি করতে এসে কোনো বড় বাধার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা মনে পড়ে কি?

আবেদীন জনী: না, বড় কোনো বাধার মুখোমুখি হইনি।

কাব্যশীলন: শিশু-কিশোর উপযোগী সাহিত্যে অধিক মনোযোগী হওয়ার পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কি?

আবেদীন জনী: সাহিত্যে নিয়ে কাজ করার শুরুটা কবিতা-গল্প দিয়ে হলেও এক সময় ছোটদের সাহিত্যে বেশি সময় দিতে থাকি। এখনো সেটা বিদ্যমান। আমার মধ্যে একটা ভাবনা সব সময় কাজ করে। সেটা হলো, একটা মেধাবী ও সৃজনশীল জাতি গড়ে তুলতে হলে সবার আগে নতুন প্রজন্মের সুষ্ঠু মনোবিকাশের প্রয়োজন হয়। শিশুদের হৃদয়জগতে সৃজন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাতে হয়। তাদেরকে মানবিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। তাদেরকে স্বপ্নসড়কে তুলে দিতে প্রণয়ন করতে হয় বিশেষ পরিকল্পনা। আমার মনে হয়, শিশুসাহিত্য নিঃসন্দেহে সেই বিশেষ পরিকল্পনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এটাই মূলত শিশু-কিশোর সাহিত্যে অধিক মনোযোগী হওয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া শিল্পের এ শাখায় কাজ করে ভালোলাগার বিষয়টি তো আছেই।

কাব্যশীলন: টেক্সটধর্মী গল্প, ছন্দোবদ্ধ ছড়া বা কবিতাকে অনেকেই নিছক শিশুসাহিত্য হিসেবে মূল্যায়ন করেন- এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আবেদীন জনী: কোনো সাহিত্যকে শিশুসাহিত্য হতে হলে তাকে শিশুমনের সাথে মানানসই বৈশিষ্ট্যগুণে সমৃদ্ধ হতে হবে। এখানে বিষয়ভাবনাসহ ভাষা ও ছন্দ ব্যবহারেও সীমাবদ্ধতা বা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কাঁচা মাথায় ধারণ করবার মতো সাহিত্য রচনার কৌশল ও কাঠামো থাকাও জরুরি। তাহলেই সেটাকে শিশুসাহিত্য বলা যাবে। ছড়ার কথা যদি বলি, ছড়া তো ছোটদেরও হতে পারে, বড়দেরও হতে পারে। ছন্দোবদ্ধ হলেই সেটা ছোটদের ছড়া, কবিতা বা শিশুসাহিত্য নয়।

কাব্যশীলন: প্রযুক্তির যুগে শিশুদের জন্য রূপকথার গল্প কতটা ফলপ্রসূ?

আবেদীন জনী: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যতই উৎকর্ষ হোক, রূপকথার আবেদন কখনো ফুরিয়ে যাবে না। রূপকথার গল্পের মধ্যে কোনো না কোনো শিক্ষনীয় বিষয় থাকে। ছোটদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সেগুলো জাদুর মতো কাজ করে। কিন্তু কিছু রূপকথার ভেতরে হত্যা, খুনখারাবি ও নগ্নতার মতো উপাদানও থাকে। সেগুলো অবশ্য বর্জনীয়। মোটকথা হলো, রূপকথার গ্রহণযোগ্যতা যতই থাকুক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকেও অধিক গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে।

কাব্যশীলন: যাঁরা প্রযুক্তির উদ্ভাবক, তাঁরাও তো প্রচলিত লৌকিক গল্প পড়েই বড় হয়েছেন- এ বিষয়টা কীভাবে দেখবেন?

আবেদীন জনী: কথাটা অযৌক্তিক নয়। প্রায় সব জাতি বা ভাষার সমাজে কম-বেশি রূপকথা বা লৌকিক গল্প আছে। প্রথমত সেগুলো শুনে বা পাঠ করেই বেড়ে ওঠে শিশুরা। উল্লেখ করবার মতো একটা বিষয় হলো, রূপকথা ও কল্পকাহিনি থেকে ধারণা নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বড় বড় অনেক কিছু আবিষ্কার করাও সম্ভব হয়েছে।

কাব্যশীলন: বর্তমানে সাহিত্যচর্চায় সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবম্যাগের ভূমিকা কতটা ফলপ্রসূ?

আবেদীন জনী: সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুটো দিকই পরিলক্ষিত হয়। এখানে যে কেউ ইচ্ছে করলেই সাহিত্যচর্চা করতে পারে। সেগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরাও সহজ। তবে মানহীন লেখার অতি প্রশংসা সাহিত্যে উৎকর্ষ সাধনের জায়গায় প্রবলভাবে আঘাত করছে। নিবিড় শিল্পচর্চার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ভালো মাধ্যম নয়। কিন্তু ওয়েবম্যাগগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। সব না হলেও কিছু ওয়েবম্যাগের কার্যক্রম সাহিত্যচর্চার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়।

কাব্যশীলন: শিশুরা পাঠক হিসেবে কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেয় বলে আপনার বিশ্বাস?

আবেদীন জনী: এটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। সব শিশুর আনন্দের জায়গা, ভালোলাগার জায়গা, কিংবা আশ্চর্য হওয়ার বা বিস্মিত হওয়ার উপাদানগুলো একরকম না। তবে হ্যাঁ, শিশু উপযোগী সৃষ্টিগুলো হতে হবে স্বপ্নরঙিন। বিস্ময় এবং আনন্দে ভরপুর। আনন্দময় পাঠের মাধ্যমে তারা যেন স্বপ্নজগতে, আলোকিত জীবনে প্রবেশ করতে পারে- সেরকম উপাদান অবশ্যই থাকতে হবে। আরেকটা কথা হলো, একজন শিশুপাঠক কী ধরনের সাহিত্য পাঠ করবে, সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব অভিভাবকের। পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারটি প্রথমেই শিশুদের কাছে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। ভালো কিছু ওদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। ওদের মনে পাঠের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে, কাঁচা মনে কিছুটা আলোর প্রলেপ দিয়ে একবার স্বপ্নডানায় তুলে দিতে পারলেই হলো, তখন ওরা একা একাই লক্ষ্যে ধাবিত হতে পারবে।

কাব্যশীলন: শিশুদের মন বোঝার জন্য কী কোনো সাধনার প্রয়োজন আছে?

আবেদীন জনী: সাহিত্যিকের সৃষ্টিশীল মানসজগত গড়ে তুলতে সাধনার দরকার আছে। শিশুদের সাইকোলজি বোঝার জন্যও কোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যেতে পারে। আমার মতে, এটা খুব কঠিন কাজ। শিশুসাহিত্যিকরা এই কঠিন কাজটাই করতে ভালোবাসেন। শিশুমন বোঝার কাজটা বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। আমি সময় পেলেই শিশুদের সাথে মেশার চেষ্টা করি। নিজেও শিশু হয়ে যাই। শিশুদেরকে নানা রকম প্রশ্ন করি। ওরা কী করে, কীসে আনন্দ পায়, মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। এছাড়া শিশুসাহিত্য বিষয়ক প্রচুর বই তো পড়তেই হয়।

কাব্যশীলন: আপনার দৃষ্টিতে বাংলা ভাষায় শিশুসাহিত্যের সেরা রচনাগুলোর নির্মাতা হিসেবে কাদের নাম অগ্রগণ্য?

আবেদীন জনী: শিল্প-সাহিত্যের সমৃদ্ধ একটি শাখা হচ্ছে শিশুসাহিত্য। এই সমৃদ্ধি অর্জন করতে প্রায় আড়াই শ’ বছর লেগেছে। এক্ষেত্রে যাঁদের অবদান রয়েছে, এত স্বল্প পরিসরে সেইসব বিদগ্ধ শিশুসাহিত্যিকদের তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে যাঁরা সাহিত্যের এই শাখাটির ভিত নির্মাণ করে গেছেন, তাঁদের মধ্যে বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত ‘শিশুশিক্ষা’ গ্রন্থের রচয়িতা মদন মোহন তর্কালঙ্কার (১৮১৭-১৮৫৮), নবজাগরণের আরেক পুরোধা ‘বর্ণপরিচয়’ এর লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক ‘গুপি-গাইন-বাঘা-বাইন’ ও ‘টুনটুনির বই’র বিখ্যাত লেখক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধূরী (১৮৬৩-১৯১৫), ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩), যিনি লিখেছেন আবোল তাবোল, হ-য-ব-র-ল, ও পাগলা দাশু’র মতো তুমুল জনপ্রিয় গ্রন্থগুলো। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার ও যোগীন্দ্রনাথ সরকারসহ আরো অনেকে। এসব অগ্রজদের পথ ধরে এ জগতে আলো ছড়িয়েছেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, সুফিয়া কামাল, জসীমউদদীন, হাবিবুর রহমান, আহসান হাবীব, আবদুল্লাহ আল-মুতী, কাজী কাদের নেওয়াজ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, এখলাসউদ্দিন আহমেদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ও সৈয়দ শামসুল হকের মতো বিশিষ্ট লেখকেরা।

বর্তমান সময়ে পাঠকপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের মধ্য থেকে কিছু নাম উল্লেখ করতে চাই। এদের কেউ কেউ শুধু শিশুসাহিত্যিক নন, সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় ব্যাপক কাজ করেছেন। যেমন, সুকুমার বড়ুয়া, আলী ইমাম, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, আখতার হুসেন, কাইজার চৌধুরী, রফিকুল হক দাদুভাই, লুৎফর রহমান রিটন, আসলাম সানী, খালেক বিন জয়েনউদদীন, ফারুক নওয়াজ, আমীরুল ইসলাম, সুজন বড়ুয়া, ফরিদুর রেজা সাগর, আনজীর লিটন, রহীম শাহ, রাশেদ রউফ, মোজ্জামেল হক নিয়োগী প্রমুখ। জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের তালিকা এখনেই কিন্তু শেষ নয়। আরো অনেক প্রিয়মুখ রয়েছেন—। কিছু তরুণ শিশুসাহিত্যিক কীর্তিগুণেই ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

কাব্যশীলন: সাহিত্যের কোন শাখায় কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং কেন?

আবেদীন জনী: শিশুকিশোর উপযোগী ছড়া, কবিতা ও গল্প নিয়ে কাজ করেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ, শিশুদের আনন্দ দিতে পারলে আমিও আনন্দ পাই। গল্প-ছড়া ছাড়াও ছোটদের জন্য প্রবন্ধ- নিবন্ধ, বিশিষ্টজনদের জীবনী, বই আলোচনাসহ বিশ্বসেরা অভিযানগুলো নিয়েও লিখছি। পাশাপাশি চলছে কাব্যচর্চা।

কাব্যশীলন: শিক্ষকতার পেশা আপনার সাহিত্যচর্চায় কতদূর সহায়ক ভূমিকা পালন করে?

আবেদীন জনী: জ্ঞানচর্চা এবং জ্ঞানদান- দুটোই শিক্ষকের কাজ। ভালো পাঠক না হলে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। তেমনই শক্তিমান লেখক হতে হলে আগে সামর্থ্যবান পাঠক হতে হয়। এ পেশায় পাঠের সুযোগ আছে। সে হিসেবে শিক্ষকতা পেশাটা লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত একটা পেশা বলে মনে হয়।

কাব্যশীলন: আপনি তো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ‘সাপ্লিমেন্টারি রিডিং মেটেরিয়াল’ কার্যক্রমের বেশকিছু মূল্যবান বইয়েও লিখেছেন। এপর্যন্ত কীভাবে এলেন, সেটা জানাবেন কী?

আবেদীন জনী: হ্যাঁ, ছড়া-কবিতা লিখেছি। এতে আমার ১৩টি ছড়া নির্বাচিত হয়েছিল। সেগুলোর মধ্য থেকে চারটি বইয়ে ১২টি ছড়া স্থান পেয়েছে।

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ থেকে বিষয় উল্লেখসহ পত্রিকার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিশুতোষ লেখার নমুনা আহ্বান করা হয়েছিল। ছড়া-কবিতা বিভাগে নমুনা পাঠিয়ে বাংলা ভাষার নামকরা লেখকদের সাথে আমিও নির্বাচিত হই। পরে চিঠি দিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ আয়োজিত ওয়ার্কশপে ডাকা হয়। সেখানে লেখার বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়। লেখাগুলো প্রস্তুত করার জন্য সময় দেওয়া হয় এক মাস। পাণ্ডুলিপি করে জমা দেওয়ার কয়েকমাস পর এনসিটিবি থেকে আসা ফোনে জানতে পারি, আমার লেখা মনোনীত হয়েছে। তারপর লেখা স্থান পাওয়া বইগুলোর লেখক কপি ও সম্মানীও পেয়েছি।

কাব্যশীলন: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অর্জন ও স্বীকৃতি সম্পর্কে জানতে চাই।

আবেদীন জনী: লেখকদের জন্য পাঠকদের ভালোবাসা পাওয়াটাই সরচেয়ে বড় অর্জন। অর্জন ও স্বীকৃতি বলতে পুরস্কারকে ধরা হলে, ঝুলিতে কিছু নেই বললেই চলে। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছি ‘মির্জাপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি সম্মাননা ২০১২’ এবং ‘শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার ২০১৪।

কাব্যশীলন: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

আবেদীন জনী: আমার পরিকল্পনা হলো, যতদিন সম্ভব লিখে যাওয়া। প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। পাঠকদের হৃদয়ে যতটা প্রবেশ করতে পারব, আমার পরিকল্পনা ততটা সফল হয়েছে মনে করব।

কাব্যশীলন: নবীন শিশুসাহিত্যিকদের কাছে আপনার প্রত্যাশা এবং তাদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কি?

আবেদীন জনী: নবীনদের কাছে প্রত্যাশার কথা বলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। জানি, তারা নতুন কিছু করবে। শিশুসাহিত্য জগৎকে আরো বেশি আলোকিত করবে। তাদের জন্য পরামর্শ- পড়ো, পড়ো, পড়ো এবং লেখো।

কাব্যশীলন: আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাকে তথা কাব্যশীলন ওয়েবম্যাগকে সময় দেবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

আবেদীন জনী: আপনার জন্য এবং কাব্যশীলনের জন্য অনেক শুভকামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *