লেখালেখি আমার ভেতরের আনন্দের উদগীরণ— শিহাব শাহরিয়ার

পরিচিতি

শিহাব শাহরিয়ার। একাধারে কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, সম্পাদক, উপস্থাপক, বাচিকশিল্পী, নির্মাতা ও ভ্রমণপিয়াসী। তাঁর লেখালেখির শুরু ১৯৮০ সালে। নিয়মিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও মাঠ পর্যায়ে ফোকলোর বিষয়ে গবেষণা ও দীর্ঘ ৪ যুগ ধরে বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। ২০০৫ সাল থেকে সম্পাদনা করছেন লোকনন্দন বিষয়ক পত্রিকা বৈঠা। বৈঠা’র বেরিয়েছে: ‘জ্যোৎস্না’, ‘বৃষ্টি’ ও ‘গ্রাম’ সংখ্যা। বেরুচ্ছে:‘সমুদ্র’ সংখ্যা।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং এম. এ করেছেন। ২০১০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন। শিহাব শাহরিয়ার-সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ২০০০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপারের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ২৫টি। সর্বশেষ কলকাতা থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটি হলো-’কবিতা সংগ্রহ’। আর ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে-নিঃসঙ্গ নদীছায়া(কবিতা) ভ্রমণসমগ্র।

 তিনি ভ্রমণ করেছেন-যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন, কাতার, মালয়েশিয়া, জার্মানী, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ভুটান, আর্জেন্টিনা, চিলি। তার জন্ম: ১৯৬৫ সালে। জন্মস্থান: শেরপুর। বিবাহিত। তিনি প্রাচুর্য শাহরিয়ার ও সমৃদ্ধ শাহরিয়ার এই দুই পুত্রের জনক।

আশি দশকের অন্যতম কবি, শিহাব শাহরিয়ারের সাথে সাহিত্যে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন কবি বঙ্গ রাখাল।

ক্যব্যশীলন─ শিহাব ভাই এই অবরুদ্ধ সময়কে কিভাবে যাপন করছেন বলবেন কি? 

শিহাব শাহরিয়ার─ লেখকের হাতে সব সময়ই কলম থাকে। ইচ্ছে করলে ক্রান্তিকাল বা দুঃসময় বা অবরুদ্ধ কাল পার করতে পারেন—লিখে, পড়ে আত্ম মনোনিবেশে। তবে যে অবরুদ্ধের কথা বলছেন, সেটি ধরে নিচ্ছি বর্তমান ভয়াবহ কভিড-কাল? হ্যাঁ এটি একটি প্রবল ধাক্কা মানব জীবনে।এই অপমারিতে একজন লেখকও অসহায় বা সমর্পিত, কেননা ভাইরাসটি চোখে দেখা যাচ্ছে না, এটি কোনো বুঝার বিষয় নয়। আমিও এতে আক্রান্ত হয়ে গেছি। কিন্তু বিভীষিকাময় পরিস্থিতেও, মহা-আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যেও; এই বিষয় নিয়েও কবিতা লিখেছি, ফেসবুক লাইভ করে নিজের কবিতা পড়েছি, কিছুটা মনকে ভয় থেকে দূরে রাখারও এক ধরনের ইচ্ছায়।পাঠ করেছি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বই। সময়রে মূল্যটা সব সময়ই সবার মাথায় রাখা উচিৎ।  

ক্যব্যশীলন─ আপনার কবিতা চর্চা কবে থেকে শুরু? আমরা জানি- আপনার বড় ভাইও একজন প্রতিষ্ঠিত কবি- আপনার কবিতাজীবনে তাঁর প্রভাব কতটুকু বলে মনে করেন? 

শিহাব শাহরিয়ার─ কবিতা লেখা শুরু করি আশির দশকের গোড়া থেকেই। আমার অগ্রজ কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের অনেক প্রভাব ও অনুপ্রেরণা রয়েছে। ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি  প্রথম বাংলাদেশ বেতারের তরুণকণ্ঠ অনুষ্ঠানে সরাসরি কবিতা পড়তে আসি, সেই জামালপুর থেকে, সেটি তাঁর মাধ্যমেই, ঢাকায় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকাগুলোতে প্রথম দিকে যে কবিতাগুলো ছাপা হয়, তার সবই তিনি করে দিয়েছেন। এমন কি ১৯৮৪ সালে যখন ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসি, তখন তিনি কবি আহসান হাবীব থেকে শুরু করে যত লেখক, কবি, সাহিত্যিক ছিলেন, সবার সঙ্গেই এক এক করে পরিচয় করে দিয়েছেন। সুতরাং অবদান অনেক—সব তো আর বলে বা লিখে জানানো যায় না?

ক্যব্যশীলন─ কবিসত্তা ও ব্যক্তিসত্তার মধ্যে পার্থক্য কি বলে মনে করেন?

শিহাব শাহরিয়ার─ ব্যক্তির ভিতরেই কবিসত্তা থাকে, এখন এই সত্তা ব্যক্তিকে কতটুকু নাড়াবে; কখনো বলা যায়, কখনো বলা যায় না। তবে যিনি প্রকৃত কবি তাঁর আচার-আচরণ ও বৈশিষ্ট্যে একটা আভা লক্ষ্য করা যাবেই। কারণ কবি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, তাকে ধ্যানে থাকতে হয়, সেই অর্থে একজন ধ্যানী—সেই মানুষটির আচারণ আর অন্য একজন মানুষের সঙ্গে কিছু পার্থক্য তো থাকবেই।

কাব্যশীলন─ গবেষণার কাজ করতে গিয়ে কি কি প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছেন? 

শিহাব শাহরিয়ার─ আমার প্রথম গবেষণা কর্ম ‘বাংলাদেশের পুতুলনাচ’ ছিল মাঠ পর্যায়ের নিবিড় গবেষণা-কর্ম। সুতরাংম আমি ফিল্ড-ওয়ার্ক-ভিত্তিক গবেষণাকেই প্রকৃত গবেষণা মনে করি। কিন্তু এই গবেষণাটির জন্য পরিশ্রম, সময়, অর্থ ও ধৈর্য্য দাবী করে।তাই এই ক্যাটাগরির গবেষণায় অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন আমি হাজং, কোচ ও শেরপুর জেলার লোক-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। এর প্রধান সমস্যা হলো অর্থ, দ্বিতীয় সমস্যা হলো তথ্য-উপাত্ত ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। 

ক্যব্যশীলন─ ‘বাংলাদেশের কোচ জনগোষ্ঠীর সমাজ ও সংস্কৃতি’,‘বাংলাদেশের হাজং জনগোষ্ঠী’ এবং ‘বাংলাদেশের পুতুলনাচ’ নিয়ে গবেষণা করেছেন এদের নিয়ে কাজ করার কারণ কি বিস্তারিত বলবেন কি? 

শিহাব শাহরিয়ার─ ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমিতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থায়ানে জুনিয়র ফোকলোর ফেলোশীপ করতে সাক্ষাৎকার দিতে যাই, তখন ফোকলোর বিভাগের পরিচালক ছিলেন বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং বোর্ডে ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং ড. এম শমশের আলী সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁরা আমাকে পাশ করিয়ে দিলেন।পড়া শুরু করলাম ফোকলোর বিষয়ে নানামাত্রিক গ্রন্থ। এক বছরের মেয়াদকাল ছিল। এরমধ্যে বাংলা একাডেমিতে এলেন ফিনল্যান্ড থেকে বিখ্যাত ফোকলোরিস্ট ড. হান্ড্রু, এলেন আমেরিকার ইন্ডিয়ানা থেকে ড. হেনরি গ্লাসি। শামসুজ্জামান খান তাঁদের অধীনে গবেষণার কলা-কৌশল শিখতে বললেন এবং পরে ড. হেনরী গ্লাসির সঙ্গে আমাকে পাঠালেন মাঠে। তাঁর সঙ্গে আমি ধামরাই, কেরানিগঞ্জ, ডেমরার কাজীপাড়াসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় প্রত্যক্ষ গবেষণা শিখেছি। আর একজন গবেষক ও সংগ্রাহকের নাম আমাকে বলতেই হবে, তিনি মোহাম্মদ সাইদুর। তিনি আমার মাঠ পর্যায়ে গবেষণার সঙ্গী ছিলেন। আমি যখন পুতুলনাচ নিয়ে কাজ করি, তখন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ নানা স্থানে আমাকে নিয়ে গেছেন এবং প্রাথমিক সোর্সের জন্য উপযুক্ত লোকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। লেখালেখিতেও সহযোগিতা করেছেন। সেই থেকে গবেষণার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আছি, তবে গবেষণায় থাকব।

ক্যব্যশীলন─ শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছোটকাগজ কতটা ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন? আপনার জীবনে ছোটকাগজের ভূমিকা কতটুকু ?

শিহাব শাহরিয়ার─ ছোটকাগজ তরুণ লেখকদের প্লাটফর্ম। আর যারা এর সম্পাদক তারাও তারণ্যের স্পর্ধায় পথে নামেন। কখনো সূর্য দেখেন কখনো আলো থেকে ছিটকে পড়েন। এই ছিটকে পড়া অপমানের নয় কিছুতেই। তারা সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি বা দুটি কিম্বা দশটি সংখ্যা দিয়ে প্রায় একশ’ ভাগ অবদান রাখেন।

ক্যব্যশীলন─ আমরা যতটুকু জানি- ২০০৫ সাল থেকে আপনিও লোকনন্দন বিষয়ক ‘বৈঠা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করছেন – আসলে পত্রিকার সম্পাদনায় আসার কালন কি? ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার মাহাত্ম্য জানতে চাই?

শিহাব শাহরিয়ার─ মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক আমার ভিতরে একটি আলো ফেলে, তাঁর পত্রিকার পক্ষী সংখ্যা, নদী সংখ্যা, গণিত সংখ্যা দেখে ও পড়ে আমি বিমুগ্ধ হই। এর পাশাপাশি আমার গ্রামবাস, নন্দন চেতনা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাকে বৈঠা করার মূল প্রেরণা জোগায়। যেমন—জ্যোৎস্না, বৃষ্টি ও গ্রাম এই তিন সংখ্যা করে আমি যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছি এবং একইসঙ্গে পাঠকদের ভালবাসা পেয়েছি।সমুদ্র সংখ্যার কাজ করছি, এই বিষয় ভিত্তিক কাজ করার প্রধান কারণ, একটু পিছন ফিরে তাকান, একটু প্রকৃতির দিকে চোখ মেলা। আমরা যে ক্রমশ যান্ত্রিক, প্রযুক্তির হাতে বন্দি হয়ে মনের নন্দন চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। দেখুন তো, আমরা কী পূর্ণিমার রাতে কী চাঁদের দিকে একবার তাকাই? বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে কানকে কী সতেজ করি কিম্বা গ্রাম যে হারিয়ে যাচ্ছে, তা কী খেয়াল করছি?

ক্যব্যশীলন─ একজন কবি শিহাব শাহরিয়ারের কবিমানস গঠনে পরিবারের ভূমিকা কতটুকু আছে বলে মনে করেন? 

শিহাব শাহরিয়ার─ পরিবার প্রথমত পুরোটাই আবার পরে অর্ধেক আর অর্ধেক বাইরের সমাজ, পরিবেশ, মানুষ, আদর্শ, চেতনা, দেশপ্রেম আর বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু।

ক্যব্যশীলন─ আপনাকে যদি বলি কবিতা কি?তাহলে তাকে- কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?

শিহাব শাহরিয়ার─ কবিতা হলো প্রাণের খোরাক, আমি আমার আর জীবনানন্দের কবিতা কেবল পড়তেই থাকি, পেয়ে যাই কবিতার সংজ্ঞা।

কাব্যশীলন─ আপনার কবিতাকে আপনার সমসাময়িক কবিদের কবিতা থেকে আলাদা বলবেন কেনো? কোন বিষয়কে প্রাধান্য করে কবিতা লেখেন- প্রেম, প্রকৃতি, লোকাচার না রাজনীতি? 

শিহাব শাহরিয়ার─ আপনি যদি আমার কবিতা মনযোগ দিয়ে পড়েন, আপনিই বুঝতে পারবেন অন্যান্যদের চেয়ে আমার কবিতার পার্থক্য কোথায়? আমি কবিতা লিখি—প্রথমতঃ আমার নিজের জন্য। অন্যদিকে আমি জীবনকে লিখি, এই জীবন আমার প্রথমে আর কবিতা হয়ে গেলে, অন্যদের জীবনও ভেসে ওঠে। আর কবিতার বিষয় তো নির্দিষ্ট করা—প্রেম-প্রকৃতি, মানুষ-সমাজ এবং ধর্ম। এর বাইরে কোনো বিষয় নেই। প্রেম-প্রকৃতি এবং মানুষই আমার কবিতার বিষয়।

ক্যব্যশীলন─ কবিতা কাদের জন্য লেখা হয়- সকলের কথা মাথায় রেখে না বিশেষ কিছু পাঠকের কথা ভেবে বুঝিয়ে বলবেন কি?

শিহাব শাহরিয়ার─ কবিতা লেখার সময় কবির মাথায় কেউ থাকে না। লেখা শেষ হলে, পাঠকের কথা আসে। অন্ততঃ আমার কাছে তাই-ই মনে হয়।

কাব্যশীলন─ কবিতায় ছন্দ কিংবা মিথের ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত? 

শিহাব শাহরিয়ার─ একদল বলে, ছন্দই কবিতার আসল কথা, অন্যরা ছন্দের বাইরে গিয়ে অন্যান্য উপাদানগুলোকে যুক্তি হিসেবে খাড়া করে কবিতার পক্ষে কথা বলেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উপমাকেই কবিতার সৌন্দর্য বলে মনে করি। বাংলা কবিতায় প্রচলিত তিনটি ছন্দ এখন কবিরা ব্যবহার করছেন, কিন্তু তরুণ এর ধারে কাছে আছে বলে মনে হয় না। ছন্দের সাথের মিথ? বুঝলাম না?

ক্যব্যশীলন─ কবিতার ভাষা তো জনসাধারণের ভাষা না- এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত জানতে চাই? 

শিহাব শাহরিয়ার─ শোনেন, এর দুই রকম ব্যাখ্যা আছে আমার কাছে। এক—কবিতা হলো সাহিত্যের এক নম্বর ও সবচেয়ে উচ্চ মাধ্যম, কাজেই এই কবিতার ক্লাসিক ব্যঞ্জনা সবার বোধগম্য না হওয়ারই কথা। দ্বিতীয়ত কবিতা জনসাধারণের কেন উপযোগী করে তুলতে হবে? অন্য অর্থে দিন শেষে কবিতা জনসাধারণেরই সম্পদ। যদি সেটি প্রকৃত কবিতা হয়। আবার এখানেও বিতর্ক আছে? যেমন রাজনৈতিক কবিতা সব সময়ই জনপ্রিয় হয়, আবার জীবনানন্দ দাশের কবিতা রাজনৈতিক না হয়ে অসংখ্য জনগণকে ছুঁয়ে গেছে, যাচ্ছে।

ক্যব্যশীলন─ বাংলাদেশে সমালোচনাসাহিত্য সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি-এর বিশেষ কারণ কি? 

শিহাব শাহরিয়ার─ এক সমালোচকের অভাব, দুই বাঙালি লেখকরা খুবই স্পর্শ কাতর, তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, তৃতীয়ত সমালোচক হওয়ার যে ধৈর্য্য ও সময় প্রয়োজন এবং গভীর পাঠ প্রয়োজন সেটি আমাদের মধ্যে নেই বা গড়ে উঠছে না।

ক্যব্যশীলন─ সমকালী কবিতার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাই?

শিহাব শাহরিয়ার─ ‘সমকালীন’ শব্দের ব্যাপকতা ও ব্যাপ্তি অনেক। সুতরাং সমকালীন কবিতার গতি-প্রকৃতি নিয়ে বলতে গেলে বিস্তারিত আলোচনার দাবী রাখে। যেমন সমকালীন বলতে আপনি কী বাংলাদেশের শামসুর রাহমানীয় দশক থেকে ধরবেন না তারও আগে বা তার পরে? তবে এখানকার কবিতার প্রধান বীজ হলো ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি দুঃশাসন, মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের সামাজিক, প্রাকৃতিক, মানবিক ও ব্যক্তিক প্রেম ও আচরণের একটি ধারাবাহিক চিত্র কবিতায় উঠে এসেছে। যদিও বাংলা কবিতার বিশাল পরিসর, চর্যাপদ থেকে আজকের দ্বিতীয় দশক। এক অর্থে পুরোটাই সমকাল। আসলে কবিতা নদীর স্রোতের মতই, বাঁক নেয় কিন্তু বিষয়ের বাঁক নেই। প্রেম-প্রকৃতি, মানুষ-সমাজ ও ধর্ম-আধ্যাতিকতা। জীবন যাপনে যেহেতু পরিবর্তন এসেছে, কবিতাতেও কিছুটা পরিবর্তন তো আছেই।

কাব্যশীলন─ কবিতার ভাষা দিনকে দিন দুরূহ-হয়ে যাচ্ছে এ সম্পর্কে আপনার ব্যাখ্যা জানতে চাই?

শিহাব শাহরিয়ার─ প্রথমতঃ কবিতাকে দুরূহ করার পক্ষে আমি নই, দ্বিতীয়তঃ বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি ও যন্ত্রের জটিল জীবনে মানুষও জটিল এবং বদলে যাচ্ছে। ফলে এই সময়ের কবিদের মধ্যে জীবন-তৃষ্ণা, জীবন ভাবনা পাল্টে গেছে। এবং কবিতায় সেই প্রভাব পড়ছে।এই সময়ের তরুণরা নিজস্ব কাব্যভাষা তৈরিতে আমি বলব উদাসীন। তাদের লেখার মধ্যে ব্যঞ্জনা নেই, কেমন কর্কস।

কাব্যশীলন─ অনলাইন সাহিত্য এবং প্রিন্ট সাহিত্যের মধ্যে কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন? 

শিহাব শাহরিয়ার─ প্রিণ্ট সাহিত্য বেশি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি দীর্ঘ এবং এর একটি ঘ্রাণ আছে।

কাব্যশীলন─ আবু সাইদ কামাল-এর ‘হাজংদের অতীত বর্তমান’ গ্রন্থের সাথে আপনার ‘বাংলাদেশের হাজং জনগোষ্ঠী’ গ্রন্থের কি কি পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন? 

শিহাব শাহরিয়ার─ আমি তার বইটি দেখিওনি, পড়িওনি, পার্থক্য করার প্রয়োজনও মনে করি না।

কাব্যশীলন─ শিহাব শাহরিয়ারকে যদি- আমি গবেষক না কবি দুইটা বিষয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলি- কোনটার পরিচয় দিতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

শিহাব শাহরিয়ার─ পড়িওনি, দুটোই আমার প্রবল, তবে একটি হলে অবশ্যই কবিতা।

কাব্যশীলন─ সামনে আর কি কি নিজে কাজ করতে চান যা আজও করবেন করবেন করেও করা হয়নি? 

শিহাব শাহরিয়ার─ আত্মজীবনী, একটা উপন্যাস, সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণ এবং মাঠ পর্যায়ের কয়েকটি বিষয়ে গবেষণা এবং  কবিতা লিখবই, কবিতা যে অন্তপ্রাণ।

কাব্যশীলন─ পুরস্কার একজন সৃজনশীল মানুষকে কতটুকু অনুপ্রাণিত করে বলে মনে করেন?

শিহাব শাহরিয়ার─ কোনো কোনো ক্ষেত্রে করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরস্কার একজন লেখকের জন্য তুচ্ছ।দেখা গেছে কোনো কোনো লেখক পুরস্কৃত হবার পর, তাঁর লেখা মরে গেছে। আমি পুরস্কার পাবার জন্য লিখি না। লেখালেখি আমার ভিতরের আনন্দের উদগীরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *