ভিখারির মতো নিজের অহংকার নিয়ে পালিয়ে বেড়াইনি : পলিয়ার ওয়াহিদ

পলিয়ার ওয়াহিদ। তিনি একজন কবিতার কৃষক। যিনি পকেটে নিয়ে ঘোরেন অঙ্কুরিত ধান। সুযোগ পেলেই সাদা পৃষ্ঠায় লাঙ্গল বসিয়েদেন স্বাতন্ত্র্য সুরে। জল, মাটির সংস্পর্শে হয়ে ওঠেন দৃঢ়তার চিত্রকর। লোকজের সঙ্গে দর্শনের তারতম্য ঘটিয়ে তৈরি করেন উর্বর ধানী জমি। জমিতে ফলে জন্ম, মৃত্যু, প্রেমের রমণ কলা। শুধু কী তাই, সমাজের ঘাত-প্রতিঘাত, সচেতন অধিকার, মানুষের অসহায়ত্ব, বেদনা-বিষন্নতা, সদর্পে উপস্থিত থাকে জমিনের প্রতিটি বিন্দু জুড়ে।

তিনি ২৬ ফাল্গুন ১৩৯২ বঙ্গাব্দে যশোর জেলার পাঁজিয়ার অন্তর্গতো মনোহরনগরে শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এমসি কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে পেশাগত জীবনে তিনি কর্মরত আছেন দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে।

পলিয়ার ওয়াহিদে এপর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ছয়টি কাব্যগ্রন্থ। সাহিত্য জগতে ‘পৃথিবী পাপের পালকি’ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে ২০১৫ সালে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়- সিদ্ধ ধানের ওম, হাওয়া আবৃত্তি, মানুষ হবো আগে, সময়গুলো ঘুমন্ত সিংহের, দোঁআশ মাটির কোকিল।

সাহিত্য জীবনের নানা বাঁকবদলের দিক নিয়ে পলিয়ার ওয়াহিদ মুখোমুখি হয়েছিলেন সাহিত্য বিষয়ক ওয়েবম্যাগ কাব্যশীলনের সাথে। নির্দ্বিধায় কথা বলেছেন কবি ও সাংবাদিক শব্দনীলের সঙ্গে।

কাব্যশীলনঃ- মনোহরনগরের মেঠোপথ থেকে কংক্রিটের ঢাকা, এই যাত্রায় পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা কি কি বাঁক বদলের সম্মুখীন হয়েছে?

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- ওই যে নগরের কথা বলেই আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিলি শহরের বাইরে। শহর মানেই নগর। কিন্তু আমি যে নগরে জন্মগ্রহণ করলাম সেটা একেবারে আলাদা। অনেকবার ভেবেছি এই ‘মনোহর’ নামের সঙ্গে ‘নগর’ কেন যোগ করা হলো? পরে খুঁজে পেয়েছি ওই জনপদের ইতিহাস। রাজা আর জমিদারদের ঘোড়ার গাড়ির শব্দ। দুর্ভাগ্যবশত পশ্চিমবঙ্গ যখন আর বাংলাদেশের থাকলো না তখন আমাদের ব্যথা অনেক। যদি থাকতো হয়তো এই মনোহরনগর-ই হয়ে উঠতো মহানগরের ধুলিধূসর কোনো অলিগলি। আর ইতিহাস জানা লোকে বুঝবেন যশোরই বঙ্গদেশের সবচেয়ে পুরাতন নগরী। প্রথম শহর। ফলে আমার দক্ষিণপুরুষ শহরেরই সন্তান। মেঠোপথ থেকে কংক্রিট আমাকে কেনো বাঁক বদল করতে পারিনি। কারণ আমি অন্য ধাতুতে গড়া এক শ্রমজীবী মানুষ। রক্ত খরচা করে আমাকে পেটের খাবার জোগাড় করতে হয়েছে। জীবনে অবসর বলে কোন পদার্থের দেখা মেলেনি। আর যে কারণে শহর আমাকে বদলাতে পারিনি সেটা হলো আমি কখনো শহুরে হতে চাইনি। নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন আমাকে কখনো লালিত পালিত করতে পারিনি। আমি আসলে লালিত ছিলাম ভালো কবিতা লেখার জন্য। তা যেখানেই বসে যার ইতিহাসই লিখি না কেন, আমি যেন সেরা শব্দে নিজস্ব আগুনে সিদ্ধ করতে চেয়েছি সুস্বাদু কাব্যধান। কিন্তু আধুনিকতার ভাগ্য হলো তোমাকে হারাতেই হবে। হেরে তোমাকে যেতেই হবে। শিকড় তোমাকে কাটতেই হবে। নাড়ি তোমাকে ভুলতেই হবে! ব্যাপার যেন এমন। তবু আমি হেরে যেতে যেতে জেতার চেষ্টা করেছি। এই লড়াই শিল্পীর লড়াই। ফলে আমি জড়ো করেছি নিজের কঙ্গাল। পরখ করেছি বংশের লতিকা। তবু শংকর রক্তের ভেতর আমি হয়েছি এককভাবে চৌচির। মনে হয়েছে আমি বোধহয় এক সুদৃশ্য মাকাল! আমার সব কিছুর জন্য আমি নিজেকে অপরাধী করা এক পাপালি মানুষ। ফলে আমি বাঁক বলে যা বুঝি তা হলো স্বপ্ন! স্বপ্নের বাঁক না ফিরলে চিন্তার বাঁক না ঘুরলে অন্য কোনো বানানো বাঁক দিয়ে বেঁচে থাকা যাবে না! আর এই যে বেঁচে থাকার লোভ, অমর হওয়ার ক্ষুধা। আমাকে বলা যায় ধ্বংস করে দিছে! আমি ধ্বংসের ভেতর বসে নতুন খিদের জন্য নতুন কিছু খাবার বানাতে পারি কিনা চেষ্টা তদবির করছি। কারণ আমার গলার বাল্যকালের মাদুলির কথা আমি এখনো ভুলিনি। ভুলতে না পারলে বাঁক ঘুরানো যায় না। আমি যেদিন হবো ভুলো মানুষ সেদিন হয়তো নিজেই ফাঁক করে নিবো নিজের বাঁক!

কাব্যশীলনঃ- প্রত্যেকেই চায় নিজস্ব ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে ভেঙ্গে-গড়ে লিখতে। আপনি কতুটুকু পারছেন বা পেরেছেন বলে মনে করেন-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- নিজস্ব ভাষা আসলে আস্তে আস্তে তৈরি হয়। প্রচুর লিখতে হয়। ভাবতে হয় তারও চেয়ে বেশি। দৃষ্টিভঙ্গি আসলে চেতন আর অবচেতনের ব্যাপার। এইগুলো বুঝতে হলে ফ্রয়েড কপচাতে হবে। কারণ নিজস্ব বলেই কিছু আর নেই এই আধুনিক কালে। বরং অনেককে দেখেছি নিজস্ব বানাতে বানাতে নিজস্বটাই হারাতে বসেছে। র বলতে যা বোঝাই সেটা আবেগের ঝুড়ি হলেও তার একটা মূল্য আছে মনে। কিন্তু মাথার কাছে তার যোগ্যতা জিরো। তাই মাথা আর মনকে একত্রে করে গড়ে তুলতে হবে নিজস্ব ভাষা। আর এ ব্যাপারে শিল্পে কিছু টেকনিক ব্যবহার করা হয়। সেটাও রপ্ত করতে হয় সাধনায়। শিল্পীর সাধনা তাকে আলাদা আর স্বতন্ত্র করে তোলে। জোর করে নিজস্ব আর আলাদা হওয়া মানে নিজেকে নিজেই মেরে ফেলা। এটা আমার একান্ত মতামত। প্রচুর পঠন-পাঠন রমণ-মরণ আর ভ্রমণের ভেতর দিয়ে যেতে হবে তাহলে একটা সময় দৃষ্টিভঙ্গি বলতে যা বোঝায় দাঁড় হবে।

কাব্যশীলনঃ- ‘হাওয়া আবৃত্তি’ থেকে ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’ পর্যন্ত আপনার ভিতরের বিবর্তন সম্পর্কে বলুন-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- ‘পৃথিবী পাপের পালকি’ দিয়ে শুরু হলেও আমি নিজস্ব ভাষা-ভঙ্গি স্বর-সুর এক রেখে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজ তৈরি করতে চেয়েছি প্রতিটি বইয়ে। পেরেছি কিনা জানি না। প্রথম বইটা দুর্বল হলেও সবচেয়ে ভালো বই। ‘হাওয়া আবৃত্তি’ যৌনগন্ধী কবিতার ষোল পৃষ্টার মাল। ছোট ছোট কবিতা। আমার কবিবন্ধু সেহরাব ইফরান এই বইটা পছন্দ করেছিল। ফোন করে যেদিন বলল, কিরে বোকাচোদা হাওয়ারে তো ঠিক মতো আবৃত্তি করছিস। ভালো লেগেছ। মনে হলো এই বইটা অন্তত সার্থক। ওর মতো পাঠক কম আছে। মিথ্যে প্রবোধ দিয়ে নিজেকে খুশি করাও এক ধরণের ভাঁড়ামি। তাও আমি জানি। কিন্তু গোপাল ভাঁড়ের ভাঁড়ামি কি অমূলক? ফলে ভাব তত্ত্বের চিন্তা নিয়ে আমি বস্তুতত্ত্বকে শরীরী ইমেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ‘দোঁআশ মাটির কোকিল’ সম্পূর্ণ আলাদা। ‘সিদ্ধ ধানের ওম’ কিছুটা পাঠকের সাড়া পেলে আমি এই ধরণের কবিতার মুখোপেক্ষি হয়ে পড়ি। কিন্তু কবিতার সঙ্গে কারো শরিকানা মেনে নিতে পারিনি বলে ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’ আমি সারাজীবন লিখবো। আর বিবর্তন যেটা তো পরিবর্তন। হ্যাঁ, চিন্তা চেতনায় শিল্প দ্যোতনায় অনেক কিছুর পরিবর্তন-বিবর্তন হয়েছে। হচ্ছে। এটা না থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। সেও জড় বন্তু হয়ে যাই। নতুন ধরণের কিছু কবিতা লিখেছি। নানান রকমের ভাবনা আর দর্শন নানা সময়ে আমাকে নাড়া দিয়েছে। সেসব নিয়েও ভাবছি। তবে আমি।
ভিক্ষারির মতো নিজের অহংকার নিয়ে পালিয়ে বেড়াইনি। বরং নিজেকে চেনার চেষ্টা করেছি। এই তো সংক্ষেপে বিবর্তন দর্শন।

কাব্যশীলনঃ- জীবনানন্দ দাশ বলেছেন ‘উপমাই কবিত্ব’। আপনার ও কি তাই মনে হয়, হলে কেনো – (আমরা আপনার কবিতায় উপমার উপস্থিতি দারুণ দেখতে পাই)

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- আমি তো আর জীবনানন্দ নই। দাশও নয়। ফলে আমার কাছে উপমা-ই কবিতা মনে হয়নি। মনে হয়েছে যত বড়ই উপমা হোক না কেন কবিতার চিন্তা এবং সেই চিন্তা অনুযায়ি হাড় মাংস মসলা মেশাতে না পারলে ব্যর্থ হয় শিল্প। আমি আসলে কবিতা লিখতে চেয়েছি। তার জন্য যা যা প্রয়োজন যোগ্যতামত ব্যবহারের সুপ্রচেষ্টা করেছি। তবে এটা স্বীকার করে শিকার হতে চাই যে, আমি মূর্খ মানুষ। তাই আমার অভিজ্ঞতার জগতকে আমি জ্ঞানের পাঠশালা হিশেবে ব্যবহার করেছি। কারণ অভিজ্ঞতা ছাড়া জ্ঞান হয় না। আমি অনেক বই পড়া জ্ঞানী মানুষ দেখেছি যাদের অহংকার বা ভড়ং এতো সস্তা লেভেলের যে তাদের ‍ঘৃর্ণা করতেও খারাপ লাগে।

কাব্যশীলনঃ- ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’ কাব্যগ্রন্থে ইসলামিক উপমা, অলংকরণ বেশ লক্ষণীয়। অনেকের মতে আপনি এক শ্রেণীর পাঠক টানার জন্য এ কাজ করেছেন-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- আমি মাইকেলের জমিদারি নিয়ে যদিও জন্মায়নি। কিন্তু তার জমিনে জন্মেছি। ফলে নিজেকে চিনতে দেরি হলেও ভনিতা করিনি। আগেই বলেছি আমি শংকর। ফলে ইসলাম ও সনাতন আমার রক্ত মজ্জায়। আমি তাই যেভাবে মুহাম্মদ সা: কে শিক্ষক মেনেছি তেমনি কৃষ্ণকে স্মরণ করে রাধাকে পেতে চেয়েছি। কোনো মানবিক চিন্তা তখনই মহৎ হয়ে ওঠে যখন তা সবার হয়ে যাই। আমি শুধু পাঠকের কথা নয়, মানুষের কথা ভেবে লিখি। সে মুছা নবী হোক কিংবা রাজাধিরাজ হোক। ইসলামী ফিলোসফি এবং মিথিক্যাল যে মেটাফোরের প্রশ্ন তুই করলি তাতে আমি আনন্দ পেয়েছি। পাঠক তাহলে এভাবে নিছে? বেশ। আমার কবিতা পড়ছে এটাই বড় ব্যাপার। ইসলামি নাকি হিন্দুজ ব্যাপারটা সেখানের না। টেকনিক বা কৌশল আমি নিয়েছি কিন্তু তা অসৎ ও অসত্য নয়। ফলে আমি হারিনি এটা আশা করতেই পারি। আর শিল্পের জন্য যারা শিল্প করেন, তাদের সঙ্গে আমি আরেকটু যোগ করি শিল্প আসলে অন্যের জন্যই করতে হয়। কারণ শুধু মন দিয়ে যেমন প্রেম হয় না তাতে মাথাও লাগে। তেমনি নিজের সঙ্গে অন্যের যোগ না হলে শিল্প বাঁচে না। এই সত্যিটা শিল্পীরা স্বীকার করতে চান না।

কাব্যশীলনঃ- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিজেকে শব্দশ্রমিক বলেছেন। কবি হতে হলে শব্দশ্রমিক হওয়া প্রয়োজন নাকি কবিতার জন্য প্রয়োজন বলে মনে করেন অথবা কোনটাই না-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- কবি তো শব্দশ্রমিক। তিনি মোটাদাগে মার্কসিষ্ট ছিলেন বলেই হয়তো শব্দের সঙ্গে শ্রমিক বলতে ভালোবাসতেন। কিন্তু শব্দই ব্রক্ষ্ম। শব্দই মানুষ। শব্দ বা ভাষা না থাকলে আমাদের চিন্তার কি দুর্দশা হতো একবার চিন্তা করে দেখেছিস? কবিতার জন্য শুধু শব্দের দাস হলেই খালাস হয় না। তার জন্য আরো অনেক কিছুর শ্রমিক হতে হয়। কবিরা আসলে স্বপ্নের শ্রমিক। শব্দের মাধ্যমে মানুষকে স্বপ্ন বুনে নেয়।

কাব্যশীলনঃ- দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি এবং নষ্ট সময়কে আঘাত করার ক্ষেত্রে কবিতা কতটুটু সফল বলে মনে করেব-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- এসব আসলে অল্প কথায় বলা যায় না। এসব নিয়ে বড় বড় বই আছে। কবিতা তো তত্ত্বের ধার ধারে না। তাই রাজনীতি বা নষ্টসময় কোনো কিছুই পরিবর্তন করা কবিতার কাজ নয়। তবে কবিতা এসবকে প্রভাবিত করতে পারে। এই যা। আর নষ্ট সময় না পেলে শিল্পী লিখবে কি? আঁকবে কী? তাইলে তো শিল্পী আর কবিদের ধরে ধরে বেহেস্তে ঢুকায়ে দিতে হবে আর বলতে হবে এবার কবিতা লেখেন ! কবিরা কি স্বর্গে গিয়ে কবিতা লিখতে চান? প্রতিকূলতা ছাড়া সৃষ্টির আনন্দ পাওয়ার পথ কই? বেহেস্তে নয়, দোজখেই সৃষ্টির আনন্দ অপর।

কাব্যশীলনঃ- কাব্য ভাষা তৈরিতে সচেতন, অসচেতন নাকি অভিজ্ঞতার মনন খুব কাজ করে-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- এটা আগেও বলেছি। এটা আস্তে আস্তে তৈরি হয়। বড় কবিদের বড় শিল্পীদের পাঠ করতে হয়। নিজের যা আছে তুলনা করতে হয়। এক আগুন থেকে আরেক আগুন জ্বালানোর মতো নিজেকে উর্বর করতে হয়। একটা সময় হয়ে যাই। এটা সচেতন ও অবচেতন দুইভাবেই হওয়া সম্ভব। হ্যাঁ আর অভিজ্ঞতা তো আছেনই। মানুষ মাত্রই অভিজ্ঞতার কড়াই।

কাব্যশীলনঃ- দু’টি ডালভাতের যোগান না করে এদেশে সাহিত্য চর্চা করে যাওয়া কতটা যৌক্তিক-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- শিল্প-সাহিত্য তথা কবিতা-গান কখনো পেটের কথা চিন্তা করে হয় না। যারা শিল্পী, যারা কবি, তাদের এসব কোনো বাঁধা নয়। আগুন যে সে জ্বলে উঠবেই। কাজী নজরুল ইসলামের চেয়ে আর কোনো উদাহরণ হতে পারে না। তবুও তাকে নিয়ে ভিন্ন আলাপ আছে। কিন্তু শ্রমের ফলেই তো খনি আবিস্কার হয় আর চেষ্টার দ্বারা হীরেকে ডায়মন্ড বানাতে হয়। শুধু পেটের জন্য কেউ চিন্তাকে দখলি দেয় না। আসলে শিল্পীর সংসার হল স্বপ্নে। তিনি বিশ্বসংসারের মানুষ। ফলে সংসার সামান্য হলেও বিশ্বসংসারে ভাগ বসায়। এটা যার যার ক্যাপাসিটি অনুযায়ি মানিয়ে নেয়। যৌক্তিক অযৌক্তিক দিয়ে এখানে বিচার চলে না।

কাব্যশীলনঃ- কোন দশকের কবিতা আপনাকে প্রভাবিত করতে পেরেছে বলে মনে করেন-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাট। সত্তুর আশিতো ফাপা। নব্বইয়ে আবার কিছু আছেন।

কাব্যশীলনঃ- বর্তমান সময়ে কবিতার প্রসারের ক্ষেত্রে লিটলম্যাগ কতটুকু কার্যকর যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দৌরাত্ম বেশি-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- লিটলম্যাগ সাহিত্যের একটা স্বতন্ত্র জায়গা। কিন্তু তাদের চিন্তায় ঝামেলা আছে। আর লিটলম্যাগের প্রকৃত যে চরিত্র তা কেউ-ই রক্ষা করতে পারিনি। বঙ্গদেশে সব ক্যাচাল নিয়ে মেতে থাকে। কাজের কাজ আর তেমন হয় না। অনেক লিটলম্যাগ যোদ্ধাকে চিনি যাদের কবিতা-ই হয় না। অথচ সারাজীবন এই পথে ব্যয় করেছে স্বাদের জীবন আর যৈবন!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও তো এক ধরণের লিটলম্যাগ। যার যা খুশি লিখছে। তাকে কবিতা বলছে। অনেক পাঠক সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এটা হয়। এটা নিয়ে ভড়কে যাওয়া যাবে না। প্রকৃত কবিতা এর ভেতর দিয়েও সিঁদ কাটার মতো বেরিয়ে আসবে। এটাই সাহিত্যের ধর্ম। কোলাহলের ভেতর তার নির্জনতার স্বভাব চিরকাল।

কাব্যশীলনঃ- যদি বলি কবিতা কেনো লেখেন-

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- মাইরি। আর কবিতা কেন লিখি তার উত্তর অনেক লম্বা। যে কারণে মৌমাছি মধু আহরণ করে সে কারণে আমি লিখি। যে কারণে মাকড়শা জাল বোনে সে কারণে আমি লিখি। লিখি কারণে ও অকারণে। একটা সময় মনে হল, কবিতা লেখা ছাড়া আমি বোধহয় আর কিছু পারি না। আমার পিঠে যে দুটি ডানা গজানো হয়েছে সেখানে সবসময় স্বপ্নোরা উড়োউড়ি করে আর বলাবলি করে যে, তুই অক্ষম! সম্ভাবত অক্ষমদের কাজ-ই শব্দ আর ভাষা দিয়ে সক্ষমতার প্রমাণ মেলানো। কবিতা মানে স্বপ্নো। বিষ পান করে মধু বিতরণের যে স্বপ্নো সবাই দেখতে পারে না তাদের ‘না পারার’ স্বপ্নই আমার কবিতা লেখার কারণ। নিজের পলায়ন জীবনের প্রকাশ হচ্ছে কবিতা।

কাব্যশীলনঃ- ধন্যবাদ আপনাকে।

পলিয়ার ওয়াহিদঃ- তোকে ভালোবাসা শব্দনীল। সেই সাথে সৃজনশীল ওয়েবম্যাগ কাব্যশীলনের জন্য শুভকামনা।

২ thoughts on “ভিখারির মতো নিজের অহংকার নিয়ে পালিয়ে বেড়াইনি : পলিয়ার ওয়াহিদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *