অণুগল্প।। মামলাবাজ।। আলমগীর খোরশেদ

কিসমতপুর বাজারে যাবার পথে, তেমাথা মোড়ে বুড়ো বটগাছটা সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে, কোন কাল থেকে কালান্তর, কেউ সঠিক ইতিহাস বলতে পারেনা। এখানেই পাগলটা থাকে। সে ও অনেক দিন ধরে। আনুমানিক ষাটোর্ধ বয়সের মানুষটা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে কি যেনো বকতে থাকে। লাফ দেয়, মাটিতে লেখালেখি করে। হাসে, চিৎকার দেয়।

” আমারে ঠগাইছে বেকতানে, তিন গন্ডা কম বাড়ির সীমানাত, মামলাডা করুইন গেলোনা, আই হাইরে।
কুড়ি, বিশ, আঠারো, বাড়ির উত্তরের ক্ষেত, বন্দের ক্ষেতটা, আরো বারো শতাংশ ফাই, পুস্কুনীত ও ফাই, দেসনা কেরে কুত্তার বাইচ্চেয়ারা, হালার ফুত,,,,কেইস লাগাইতাছি, কারো,,,,,দেকবামনে কেলায় তরারে বাঁচাইতো আইয়ে,,,,,,

এলাকার অল্প বয়সী ছেলেরা উৎসুক হয়ে শোনে, পাগলের কথাগুলো, কিছুই বুঝেনা ওরা। গোলাম রইস স্থানীয় কলেজে পড়ায়। খুব জানার ইচ্ছা নিয়ে ভয়ে ভয়ে পাগলটার কাছে যায় সে। পাগলটা মাটিতে টাকার হিসাব করছে কাঠি দিয়ে লিখে। গোলাম রইস জিগ্যেস করে,
” শোনছেন, আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

পাগলটা সন্দেহের চোখ নিয়ে তাকায় রইসের দিকে। মাথায় লম্বা চুল, তা– ও পিছনে, সামনের দিকে খালি, টাক পড়া। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে, পাগলটা রইসকে বল্লো,
” কুন কৌডো মামলাডা, ফৌজদারি? তুই কেলারে, ক্ষেত নিবেগা আমারটানতে? কারো,,,,,আইতাছি, হান্দাইয়া দেম,,,,,

রইস বলে উঠে,
” না, না, আপনার ক্ষেত জমি নেবো না, এমনিতে আপনার সাথে কথা বলা,
” খাজুইরেয়া, যা এইহানতে,,,,,ক্রিমিনাল উহিল ধরুন লাগবো, নাইলে এইতান রে সিধা হরুইন যাইতোনা। আমারে দালালীর ট্যাহাও দেসনা, দহল হরছি তর ঘর বাড়ি, তরে ভিক্কা হরাইয়াম, চিনোস আমারে, বান্দির পুত, দেহি কেমনে, ঘর নেস।

রইস কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। তবুও সাহস করে কথা বলে,

” আপনাকে কে টাকা দেয়না? বলুন,,,,
” তুই কেডারে, কইত্তে আইচোস, মামলাত ফালবাম, তহন বুঝবাইন,,,,,কার লুক তুই, বাইয়ানের?

” না না, আমি কারোর লোক না।
” লুফাইয়া কাওলা দিলে কি বালডা অয় রে? ট্যাহা আর ট্যাহা। তরা দুইডেয়া কেইস হরলে, আমি হরবাম চাইরটেয়া কেইস। কয় লাখ ফাই ভুইল্যেয়া গেচোস? ফির লইয়া দশলাখ। আয়া পর, মাতাডা ভাঙ্গি বাইরাইয়া।
রইসের দিকে তেড়ে আসে পাগলটা।

গোলাম রইস চলে আসে। আর জানা হলো না লোকটাকে। দেখলে বেশ ভালো ফ্যামিলি’র বলে মনে হয়। বাড়িতে গিয়ে অবসরজীবনে যাওয়া স্কুল মাস্টার বাবাকে জিগ্যাস করে, রইস।
” আব্বা, বটতলার পাগলটা কি আমাদের এলাকার?
” বটগাছ তলের হাসু ফাগলা?
” জ্বি আব্বা, হাসু, পাগলের নাম?
” হ, আমরার লগের গ্রামো, হাসু ফাগলার বাড়ি। বাবার বহুত জমি জমা আছিন। বাপ মইরা গেলে ছোডু ভাই বইনরারে ঠগাইয়া হাসু সব দখল ভোগ করে। ছুডু ভাইদের জমি দখল, বাসা দখল করে নেয়। একটার পর একটা মিথ্যা, সাজানো মামলা চলতে থাকে। সব শেষ হয়ে যায়, সহায় সম্পদ।
” এমন কেনো?
” লোভ, বাজান।
সব জমি জমা বেইচ্চা যহন খালি অইছে, তহন সব আড়াইয়া, হুঁশ অইলো, নামকরা বাবার সংসারটা ধবংসের জন্য হাসুই দায়ী। হের লাইগ্যেয়াই হেরার বাবার নাম, খ্যাতি, মাটির সাথে মিশে গেছে। এই বোজডা যহন মাথাত আইলো, হের পর থেইক্যেয়া হাসু পাগল অইয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *